Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন 
একটি অতি সাধারণ ঘটনাদিঘী চক্রবর্তী 
বুকটা হাপরের মতো উঠছে নামছে। লোকটা কিছুক্ষণ দা টা ফেলে রেখে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল। আজ আবার কাজের মাসি আসেনি। বাড়ির গিন্নি চা আর রুটি করে কলাই করা সানকিতে নিয়ে লোকটাকে দিতে গিয়ে…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন 


একটি অতি সাধারণ ঘটনা

দিঘী চক্রবর্তী 


বুকটা হাপরের মতো উঠছে নামছে। লোকটা কিছুক্ষণ দা টা ফেলে রেখে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল। আজ আবার কাজের মাসি আসেনি। বাড়ির গিন্নি চা আর রুটি করে কলাই করা সানকিতে নিয়ে লোকটাকে দিতে গিয়ে দেখেন, চোখদুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। যেন এক্ষুণি অজ্ঞান হয়ে যাবে। ওই অবস্থা দেখে তিনি ভয় পেয়ে চিৎকার করে স্বামীকে ডাকেন,"ওগো শুনছ? শিগগিরি এসো এদিকে। দেখে যাও কী কান্ড!" কর্তা হাতের কাজ ফেলে ছুটে এসে দেখেন রাজমিস্ত্রির শ্বাসকষ্ট প্রবল আকার ধারণ করেছে। গিন্নি বলেন, "এ কাকে ধরে নিয়ে এলে বলো তো! এ কি কাজ করতে পারবে আর? আমার তো মনে হচ্ছে এখানেই না কিছু একটা ঘটে যায়!" লোকটি এবার অতিকষ্টে বলে উঠল, "না না গিন্নিমা, কোন চিন্তা করবেন না। গরম চা গলায় পড়লেই ঠিক হয়ে যাবে এখন।"  ব‍্যস্তসমস্ত হয়ে সে কলাই করা কাপটা হাতে তুলে নিল। 


ঘরে আসার পর গিন্নি কর্তাকে মুখঝামটা দিয়ে বললেন, "তোমার যেমন আক্বেল! বলেছিলাম ওই রুগ্ন ব‍্যাটাকে কাজে রেখোনা।" কর্তা কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, "আহা কতদিন ধরেই পেছনে পড়ে আছে কাজটা যেন আমি ওকে দিই। কী করে বুঝব বলো তো!" গিন্নি বললেন, "তোমার কি চোখ নেই?দেখছ হাড় পাঁজরা অস্থি সার! যা মনে হয় করো বাপু!"


লোকটা বসে বসে ভাবছিল, আজ লকডাউনের পনেরো দিন হতে চলল। ঘরে একটা চালও নেই। সে ও তার বৌ তো জল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, ছোট ছেলেটা ভাত ভাত করে চেঁচায়। তার মা খালি হাঁড়িতে জল চাপিয়ে ফোটায় আর বলে,"এই তো ভাত ফুটছে বাবা, নামলেই খেতে দেব এখন।" সেই হাঁড়ি আর নামেনা। অপেক্ষা করতে করতে ছেলে ঘুমিয়ে পড়ে। অনেক কষ্টে এ কাজটা যোগাড় করা গেছে। এ তাকে করতেই হবে। যেভাবেই হোক।


গিন্নি এসে দেখেন লোকটার গলা থেকে বিচিত্র শব্দ বেরিয়ে আসছে। এর মধ‍্যেই সে হাতে তুলে নিয়েছে তার যন্ত্রপাতি। এবার গিন্নির পক্ষে অসহ‍্য হয়ে ওঠে। তিনি ঝঙ্কার দিয়ে বলেন,"অনেক হয়েছে বাপু। নেমে এসো। আর কাজ করতে হবেনা তোমাকে।" লোকটা হতবুদ্ধির মতো ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাকায়। বলে, "আমায় আরেকটা সুযোগ দিন মা গো। কথা দিচ্ছি কোন কাজ অসম্পূর্ণ থাকবেনা।" লোকটি হাত জোড় করে। এক নিঃশ্বাসে এত কথা বলায় কাশির দমকে যেন তার গলা বন্ধ হয়ে যেতে চায়। গিন্নি বলেন, "আমি তোমাকে পুরো টাকাই দেব। নেমে এসো।" লোকটি ইতস্ততঃ করে। গিন্নি বলেন, "নেমে এসো বলছি। "


লোকটি বিদেয় হ'লে কর্তা গিন্নিকে বলেন, "তোমার আর আক্বেলজ্ঞান হ'লনা দেখছি। ব‍্যাটাকে এমনি এমনি এতগুলো টাকা দিয়ে দিলে!" গিন্নি স্থির চোখে কর্তার দিকে চেয়ে বললেন,"মনে হয় তুমি আমার পিসশাশুড়ির কথা ভুলে গেছ।" 


কিছুক্ষণ পর গিন্নি ফিরে এসে দেখলেন, কর্তা নিজেই বাকী থাকা কাজটুকু সেরে ফেলছেন। গিন্নি বললেন, "ও কী! ও আবার কী রঙ্গ বুড়ো বয়েসে চালের ওপর উঠে!" কর্তা হাতের কাজটুকু রেখে বললেন, "সত‍্যিই ভুলে গিয়েছিলাম গিন্নি। আমার পিসির হাঁপানি ছিল বলে বিয়ের একমাসের মধ‍্যে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরত  পাঠিয়ে দিয়েছিল। বাকী সারাটা জীবন কেটেছে পিসির বাপের বাড়িতে গলগ্রহ হয়ে। উদয়াস্ত খেটেও কারো মন পায়নি।"