করোনা আবহে ঢাঁক ঢোল পিটিয়ে ইতিমধ্যেই সপ্তম দফার ভোট শেষ হয়েছে বঙ্গে ।প্রথম দিকের ভোট চালচিত্রের দিকে তাকালে বোঝাই যাবে না এ রাজ্যে করোনা বলে কিছু ছিল কিনা।কিন্তু ধাপে ধাপে ভোট যতই এগিয়ে গেছে ঠিক তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়…
তরুন চট্টোপাধ্যায় |
ইভিএমে বন্ধী জনগনের রায় যাবে কোন দিকে তা নিয়ে আগাম ভবিষ্যত বানী করা আর সূর্য নামক গ্রহে মহাকাশ যান পাঠানো প্রায় একই ।কিন্তু তা বলে তো আর চুপচাপ কলম ঠোঁঠে ঠেকিয়ে বসে থাকা যায় না।আকার ইঙ্গিতে একটা ছবি আঁকার চেষ্টা তো করা যেতেই পারে।তা মিলুক আর না মিলুক।
কেউ বলছেন বিজেপি দল ক্ষমতায় এলো বলে।শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।আবার কারো কারো মত হলো মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উন্নয়নের রথে চড়ে বাংলার নীল বাড়িতে কোন পরিবর্তন ঘটবে না।মা মাটি সরকার ই আবার আসতে চলেছে নবান্নে।আবার কারো মত হলো নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দৌলতে এবার ভোটে নিজের ভোটটি ঠিক জায়গায় দিতে পেরেছি।ফলে যেই জিতুক জনতার সেই রায় মাথা পেতে নিতে অসুবিধা হবে না।নানা মানুষের নানা মত থাকতেই পারে।সকলের পছন্দ তো কখনোই এক হয় না।পছন্দের বদল আছে বলেই তো সরকার বদলায় ।তবে একথা সত্য যে এবারের ভোটে কোন দলই খুব একটা স্বস্তি তে নেই জয় নিয়ে ।জয় আসতেও পারে আবার নাও আসতে পারে।আগাম জিতছি হয়তো বলছেন নেতারা, তবে তা মন থেকে নয়।বলতে হয় বলা গোছের।আমরা বরং একটু পিছনের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখি অতীতে এই রাজ্যের ভোট নিয়ে ঠিক কি কি ঘটেছিল ।
রাজ্য বাসীর মনের কথা হলো বাংলাতে যতবার পরিবর্তন ঘটেছে তার পিছনে সব সময় একটি না একটি বড় কোন ঘটনার ছায়া লুকিয়ে ছিল।খুব বেশি খেপে না গেলে বাংলার জনগন কখনোই কোন বড় সড় পরিবর্তন করেন নি।
হয়তো বিজেপি দল বলতেই পারেন তাঁরা লোকসভা ভোটে ভাঙাচোরা দল নিয়ে এই রাজ্যের 18 টি আসন দখলে রেখেছিলেন।তারপর দল বদলের খেলা খেলে সেই সংখ্যা কে আরো বাড়িয়ে ও নিয়ে গেছেন।আর এখন তো দল হিসেবে বিজেপি খুবই শক্তিশালী এ রাজ্যে ।তবে কেন পরিবর্তন আসবে না।
হতে পারে তাদের দলের পক্ষে এ যুক্তি ঠিক।আবার তৃনমূল দলের বক্তব্য হলো সরকার চালাতে গিয়ে দু একটি ছোট ভুল সকলেই করেন।তাঁরা ও তা করেছেন।তবে এতে করে এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যাতে করে সরকার বদল ঘটবে।তৃতীয় ফ্রন্টের বক্তব্য মানুষ তো ভোট দিয়ে ছেন।ফল নিশ্চয় তাদের অনুকূলে থাকবে।কারন বিজেপি ও তৃনমূল কে মানুষ বর্জন করবেন এবারের ভোটে।গনতন্ত যখন তখন যা হোক কিছু হতেই পারে।তবে তৃনমূল ও বিজেপির মতো দুটি দলকে একেবারে ধরাশায়ী করে ভোট যুদ্ধে একেবারে প্রথম সারিতে যে তৃতীয় ফ্রন্টের আশার কোন লক্ষন এখনো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।তবে ভোট কাটাকাটিতে এদের যে একটা ভূমিকা থাকছে তা তো বলা যেতেই পারে।
বলে ছিলাম অতীতের কথা একটু স্মরন করবো।ফিরে যাই 1967 সালে।যে বার প্রথম দোদন্ড প্রতাপ কংগ্রেস ক্ষমতা হারালো।আর তার আগে রাজ্য জুড়ে দেখা দিয়েছিল প্রচন্ড খাদ্যাভাব।চাল গমের পরিবর্তে মাইলো খাবার সেই সব দিন আজও বাঙালি প্রবীন দের স্মৃতি তে উজ্জ্বল ।কাঁচা কলা হাতে দেওয়ালে দেওয়ালে কংগ্রেস নেতাদের ছবি আজও ভাস্কর।1966 সালের খাদ্য আন্দোলনের সেই সব দিন।পুলিশের গুলি গোলা।তারপর প্রথম যুক্ত ফ্রন্ট।যদিও সে সরকারের মেয়াদ ছিল খুবই কম দিন।আর দ্বিতীয় যুক্ত ফ্রন্ট নিয়ে অবস্থা সেই তথৈবচ।দেশ জুড়ে নকশাল আন্দোলন।1972 সালে আবার কংগ্রেসের ক্ষমতা দখল।সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের কংগ্রেসের মন্ত্রী সভা।কিন্তু মেয়াদ সেই পাঁচ বছর।আর এরি মধ্যে দেশজুড়ে ইন্দিরা গান্ধীর এমারজেন্সি ।ফলে 1977 সালে ক্ষমতার মসনদে বামফ্রন্টের আবির্ভাব ।কারন রাজ্যের মানুষ তখন এমার্জেন্সি কে ভালো চোখে দেখেননি বলেই বামেদের ক্ষমতায় আসা।তারপর টানা চৌতিরিশ বছরের ক্যারিশমা।জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের টানা শাসন কাল।বামেরা এ রাজ্যের মসনদে অজেয়।
তবে দিন কাহারো সমান নাহি যায় ।মমতা বন্দোপাধ্যায় আওয়াজ তুলেছিলেন রোজ।বামফ্রন্ট কে হঠানোর।বরকত গনি খান চৌধুরীর সেই আহ্বান বামফ্রন্ট কে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবার।কাজ হলো 2011 সালে।পতন হলো বামফ্রন্ট সরকারের ।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আওয়াজ তুলেছিলেন কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত ।কিন্তু মমতার তৃনমূল দল তখন আগেই বেরিয়ে এসে নিজে দল খুলেছেন।লড়াইয়ের ময়দানে পরিচ্ছন্ন মুখ তখন মমতা।বাংলার অগ্নি কন্যা ।লড়াইয়ের ময়দানে আপোসহীন মহিলা ।
পরিবর্তন এলো বাংলা তে।চৌতিরিশ বছরের পাকা ইমারত তাসের ঘরের মতো খসে পড়লো ।সিঙুর আর নন্দীগ্রামের আন্দোলনের ফসলের সব ভাগ গিয়ে জমা হলো মমতার তৃনমূলের হাতে।এরপর এলো 2016। আরো বেশি ভোট নিয়ে ক্ষমতায় মমতা।উন্নয়নের জোয়ার দেখলো বাঙলা ।কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের মুকুট সহ নানা প্রকল্প ঘিরে ধরলো বাংলা কে।
কিন্তু 2021 ।সেই তৃনমূল দলের ভার যখন পিকের মতো পেশাদারের হাতে।তখন আবার দলে ভাঙন।একঝাঁক তরুন তুর্কি দল ছেড়ে বিজেপির ছাতার তলায় ।কেউ কেউ আগে ভাগেই চলে এসে বিজেপির মুখ হয়ে উঠলেন।আবার কেউ কেউ তৃনমূল দলে টিকিট না পেয়ে বিজেপি দলের ছাতার নীচে।দলত্যাগের কারন হিসাবে আঙুল উঠলো পিকে ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের দিকেই।কেউ কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দিকে আজও আঙুল তোলেন নি।সে ইচ্ছে বা অনিচ্ছায় যাই হোক হতে পারে।
এবার তৃনমূল দলের চলে যাওয়া নিয়ে তেমন কোন বড় কারন আজও দেখা যায় নি।তবে সংখ্যা লঘু তোষন নিয়ে বিজেপি দল ভোটে ধর্মের মেরুকরণের চেষ্টা প্রথম দিন থেকেই করে গেছেন।আর সেই কাজ করতে গিয়ে একশো পারসেন্ট সফল না হলেও একেবারে খালি হাতে ফেরেন নি একথা সত্য ।
আবার অন্যদিকে তৃনমূল দল যে সংখ্যা লঘু ভোটের সবটাই নিজের দখলে রেখেছেন সে কথাও সত্যি নয়।কারন সেই ভোটেও অন্য দল ভাগ বসিয়েছেন।ফলে এক জটিল অঙ্ক আমাদের সন্মুখে।
শুরুটি করেছিলাম করোনা আবহে ভোট নিয়ে ।তারপর ভোটের ফলাফল ।অতীত ভোটের ইতিহাস ও চলে এসেছিল এই প্রতিবেদনে।আর সব থেকে বড় কথা হলো সরকার যতবার বাংলা তে পরিবর্তন হয়েছে তখনই দেখা গেছে বড়সড় কোন কারন।তবে এবারের ভোটে তেমন কোন বড় কারন এখনো চোখে পড়েনি।আর যারা দল ছেড়ে বিজেপি তে এসেছেন তাঁরা ও তেমন কোন বড় কারন দেখাতে পারেননি মমতার দলের বিরুদ্ধে ।বরং সেখানে ব্যাক্তিগত আশা আকাঙ্ক্ষার কথাবার্তা ই উঠে এসেছে।
কি হবে ভোটের ফলাফল ।প্রথমেই বলেছি ফল নিয়ে আগাম কোন মতামত রাখবো না।তবে মমতার তৃনমূল ক্ষমতাচ্যুত হবে এমন কোন বড় কারন এই ভোটে বিরোধী রা সামনে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন।খুচরো খাচরা নানা কারন নিশ্চয় আছে।তবে তা দিয়ে কি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার কে হঠানো যাবে।
যাক বা না যাক 2 রা মে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।আজ হাতে পেন্সিল নিয়ে আমরাও অপেক্ষায় ।ইভিএমের বোতাম টিপেছেন জনগন।তাঁরাই জানেন কি আছে এর অন্তরালে।আমি শুধু আগাম কিছু আলোচনা সেরে রাখলাম ।ভোট প্রকাশের পর তো এই আলোচনা বৃথা।