Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বাবরের প্রার্থনার কবি শঙ্খ ঘোষ খসে পড়লেন বাংলার কাব্য জগত থেকে।

তরুন চট্টোপাধ্যায় , কলকাতা এই তো জানু পেতে বসেছি,পশ্চিম আজ বসন্তের শূন্য হাতধ্বংস করে দাও আমাকে যদি চাওআমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।বাবরের প্রার্থনা কবিতায় যে কবি এমন করে নিজেকে উজাড় করে বলতে পারেন সেই কবি শঙ্খ ঘোষ বুধবার সকাল এগারোটা…

 


তরুন চট্টোপাধ্যায় , কলকাতা

এই তো জানু পেতে বসেছি,পশ্চিম 

আজ বসন্তের শূন্য হাত

ধ্বংস করে দাও আমাকে যদি চাও

আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।

বাবরের প্রার্থনা কবিতায় যে কবি এমন করে নিজেকে উজাড় করে বলতে পারেন সেই কবি শঙ্খ ঘোষ বুধবার সকাল এগারোটায় সব শঙ্খ ধ্বনি স্তব্ধ করে চলে গেলেন পরলোকের ওপারে ।বলতে গেলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কবিকে নিয়ে চলে গেল আর এক কবিতার দেশে।যে দেশ থেকে আর কখনোই ফিরবেন না তিনি।আর আঁকিবুকি কাটবেন না কবিতার খাতায়।সব লীলা সাঙ্গ করে এতো আর এক দেশে যাত্রা।অসংখ্য কবিতা প্রেমী মানুষ কে কাঁদিয়ে চলে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ।পিছনে পড়ে রইলো তাঁর কবিতার শত সহস্র লাইন।

1932 সালের 5 ফেব্রুয়ারি অধুনা বাংলাদেশের চাঁদপুরে জন্মেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ।আসল নামটি অবশ্য শঙ্খ ঘোষ নয়।শঙ্খ কবির ডাক নাম।আসল নামটি হলো চিত্তপ্রিয় ঘোষ।বাবা মনীন্দ্র কুমার ঘোষ আর মা অমলা ঘোষ।

1932 সাল থেকে আজ 2021 ।নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে কবির পথ চলা।ধীরে ধীরে কাব্য জগতের স্বীকৃতি আদায় ।

অধ্যাপনার মতো মহান ব্রত কে পেশা করেই কবি লিখে গেছেন নানা কবিতা ও প্রবন্ধের সন্ভার।পুরস্কার ও পেয়েছেন ।গতকাল 89 বছর বয়সে এসে থমকে গেল কবির বিজয় রথ।

শক্তি, সুনীল,শঙ্খ, উৎপল ও বিনয় ছিলেন বাংলা কবিতার পঞ্চ পান্ডব।জীবনানন্দের পরবর্তী এই পাঁচ কবিই বাংলা কবিতার চাকা কে গড়গড়িয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।পঞ্চপাণ্ডবের চারজন আগেই চলে গেছেন।বুধবার সেই পথেই পা রাখলেন কবি শঙ্খ ঘোষ ও।আবার জোট বাঁধবেন পঞ্চপাণ্ডব ।

    কলকাতার নানা কলেজ থেকে শুরু করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বিশ্বভারতী তে ও তিনি অধ্যাপক ছিলেন।1973 সালে বাবরের প্রার্থনা লিখে তিনি সাহিত্য আকাদেমি পান।এছাড়া রবীন্দ্র পুরস্কার, জ্ঞান পীঠ ,সরস্বতী সন্মান সহ নানা পুরস্কার রয়েছে কবির ঝুলিতে।

কবির মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সহ বিশিষ্ট গুনীজন।আর এক অনুজ কবি জয় গোস্বামী কান্না ভেজা গলায় বললেন,আমরা কবিতার অভিভাবক কে হারালাম।এ যেন কবিতার নক্ষত্র পতন।মুখ্যমন্ত্রী জানান রাষ্টীয় সন্মানের সঙ্গে কবির অন্তোষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে দেশ জুড়ে ।

বেশ কিছুদিন ধরেই কবি বয়সজনিত কারনে অসুস্থ ছিলেন।গত সপ্তাহে কবির কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ে ।বাড়িতে ই কবির চিকিত্সা চলছিল।মঙ্গলবার রাতে শারিরীক অবনতি দেখা দিলে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয় কবিকে।বুধবার সব শেষ করে পরোলোক যাত্রা ।

দু বছর আগে সংশোধিত নাগরিক আইনের প্রতিবাদে মাটি নামক একটি কবিতা লিখে ঝড় তোলেন কবি।

দেখ খুলে তোর তিন নয়ন

রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে

দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন ।

এই কবিতা টিও কবির লেখা।যা নিয়ে শাসক দলের অনুব্রত মন্ডল কবির সমালোচনা করতেও ছাড়েন নি।

কবিতা লিখে প্রতিবাদের সুর তোলেন তিনি সব সময় ।কখনো কোন দলের কাছে মাথা নত করেন নি।সে কি শাসক কি বিরোধী।যেটি সঠিক তা সব সময় লিখতে কবির কলম থেমে থাকেনি।

আবার বাসের সাধারণ কনডাকটর কেও ভোলেন নি তিনি।তাই লিখলেন,

মাঝে মাঝে শুধু খসে পড়ে মাথা

কিছু বা পুরানো কিছু বা তরুন 

হাঁক দিয়ে বলে কনডাকটর 

পিছনের দিকে এগিয়ে চলুন।

আবারও কখনো,

হাতের ওপর হাত রাখা খুব সহজ নয়

সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়।

1932 এর 5 ফেব্রুয়ারি থেকে 2021 এর 21 এপ্রিল ।89 বছরের পথ চলা এখানে ই শেষ।

কবি শায়িত মৃত্যু শয্যায়।বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি ।

কবি শঙ্খ ঘোষের প্রয়ানে দেশ জুড়ে শোকের ছায়া ।করোনা দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিয়ে গেল বাংলার প্রানের মানুষ টিকে।