Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

তমলুকে রামসীতা বারোয়ারী উৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: পিতৃ আদেশ মাথায় নিয়ে রাজ্যপাট ত্যাগ করে ১২বছর বনবাসে গিয়েছিলেন স্বয়ং পুরুষোত্তম রামচন্দ্র। পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে অতীতের সেই ত্যাগের ইতিহাসের কথা স্মরণ করে করণা আবহের মধ্যেই নতুন উদ্যোগে রামসীতা বারো…

 


নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: পিতৃ আদেশ মাথায় নিয়ে রাজ্যপাট ত্যাগ করে ১২বছর বনবাসে গিয়েছিলেন স্বয়ং পুরুষোত্তম রামচন্দ্র। পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে অতীতের সেই ত্যাগের ইতিহাসের কথা স্মরণ করে করণা আবহের মধ্যেই নতুন উদ্যোগে রামসীতা বারোয়ারির আরাধনায় মেতে উঠতে চলেছেন তমলুকবাসীরা। যা নিয়ে এখন তৎপরতার তুঙ্গে পুজো উদ্যোক্তাদের।


ঐতিহাসিক প্রাচীন শহর তাম্রলিপ্ত নগর। বর্তমানে যা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সদর শহর তমলুক হিসেবে পরিচিত। এই শহরেই পা রেখেছিলেন ফা হিয়েন, হিউয়েন সাঙ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের নানা পর্যটকেরা। মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যদেবও দু-দুবার এসেছিলেন এই শহরেই। অন্যদিকে আবার ৫১ পীঠের একপিঠ মা দেবী বর্গভীমা মন্দির রয়েছে এই শহরের মধ্যভাগে। স্বাভাবিকভাবেই সভ্যতার বিকাশ হলেও প্রায় শতবর্ষ পুরনো এই রাম সীতা বারোয়ারি পুজো উৎসব ঘিরে এখন সাজসাজ রব সারা তমলুক জুড়ে। পুরান প্রথা অনুযায়ী তাই আজও প্রত্যেক ১২ বছর অন্তর তমলুকের ১৫নম্বর ওয়ার্ডে টাউন শংকর আরা এলাকায় ঘটা করে বাজার কমিটির উদ্যোগে এই রাম সীতার আরাধনা হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছর করোনা আবহের দরুন এই অনুষ্ঠানটি আপাতত স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় উৎসব কমিটি। এরপর চলতি বছরের নতুন করে করণা সংক্রমণ মাথাচাড়া দিলেও স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখেই এই বহু প্রতীক্ষিত ১২ বৎসর অন্তর এই রাম সীতা বারোয়ারির আরাধনায় ফিরতে চলেছেন তমলুকের বাসিন্দারা। 


প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী এই রাম সীতা বারোয়ারির আরাধনা উপলক্ষে ২০১৯ সালেই রাম নবমী তিথিতে গঙ্গা থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে মাটি উত্তোলন করে নিয়ে আসা হয়েছিল তমলুক শহরের এই পুজো মণ্ডপ প্রাঙ্গণে। এরপর সেই মাটি দিয়ে এই বছর ধরে চলে রাম সীতা বারোয়ারি উৎসব উপলক্ষে প্রতিমা গড়ার কাজ। এরপর সেই চিন্ময়ী মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে শুরু হতে চলেছে ঘটা করে রাম সীতা বারোয়ারি পর্ব অনুষ্ঠান। সেই উপলক্ষে চলতি মাসের আগামী কুড়ি তারিখ থেকে এই অনুষ্ঠানের সূচনা পর্ব শুরু হচ্ছে। এবং চলবে আগামী প্রায় সপ্তাহ ব্যাপী। স্বাভাবিকভাবেই শহর জুড়ে এই উৎসব উপলক্ষে এখন সাজ সাজ রব।

 উৎসবের মাধ্যমে বিভিন্ন লোক সংস্কৃতি তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা। থাকবে রামায়ণ গান এবং রামায়ণ ভক্তি গীতি আলোচনা পর্ব। সঙ্গে থাকবে কবি সম্মেলন, রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করা হয়েছে। দীর্ঘ লকডাউন পেরিয়ে কচিকাঁচাদের মানসিক বিকাশে উৎসাহ দিতে চিত্রাংকন এবং আবৃতি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে। 

বিশাল আকার এই মন্ডপসজ্জায় রয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত গৌরাঙ্গ কুইলা। চন্দননগরের আলোকমালায় সজ্জিত হচ্ছে গোটা শহর। শহরের বিভিন্ন স্থানে বারোয়ারি প্রতিমা হিসেবে রাম লক্ষণ, ভরত শত্রুঘ্ন, রাবণ সহ রামায়ণ পর্বে উল্লেখিত প্রায় সমস্ত চরিত্রের মূর্তি গড়ে তোলা হচ্ছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। প্রতিমা শয্যায় রয়েছেন তমলুকের বিশিষ্ট মৃৎশিল্পী অনুপ ঘোড়াই। শহরের বড়বাজারের মোড়ে প্রায় কুড়ি ফুট উচ্চতা ও একশত মাথা বিশিষ্ট রাবণ গড়ে তোলা হয়েছে। 

সেইসঙ্গে শহরের বাদামতলা এলাকায় বিশাল আকার একটি হনুমানের মূর্তিও গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পাষাণ অহল্যার উদ্ধারের কাহিনীও। অশ্বমেধের ঘোড়া, লক্ষণের শক্তিশেল, রয়েছে বিশালাকার তারকা রাক্ষসী বধ এর কাহিনীও। 


রামসীতা বারোয়ারি কমিটির পক্ষ থেকে তরুণ ঐতিহাসিক জয়দীপ পন্ডা বলেন, প্রাচীন রামায়ণের কাহিনীর কথা এখন প্রায় ভুলতে বসেছে তরুণ প্রজন্ম। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক তাম্রলিপ্ত শহরে এই রাম সীতা বারোয়ারি প্রাচীন উৎসবটি আমাদের কাছে অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। 

উদ্যোক্তারাই জানালেন, শুধু যে এই রামসতা বারোয়ারী উৎসব পালন হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়, সেই সঙ্গে রাম সীতা বারোয়ারি উৎসব এর পাশাপাশি প্রতি বছর বারোয়ারি উৎসব প্রাঙ্গনেই শরৎকালের শারদীয় উৎসব হিসেবে দুর্গাপূজা উৎসব পালন হয়ে থাকে। প্রথা অনুযায়ী প্রতি বছরই কামারপুকুর থেকে রামকৃষ্ণদেবের সহধর্মিনী সারদা মা এর বংশধর হিসেবে পুরোহিত এসে এই আরাধনায় অংশ নেন। শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে কুমারী পুজো হয়।

উৎসব কমিটির সম্পাদক ভবানী মাইতি বলেন, তিথি অনুযায়ী গত বছরই ১২বছর পর এই রাম সীতা বারোয়ারি উৎসব পালনের কথা ছিল। কিন্তু করণা আবহের দরুন আমাদের বহু প্রতীক্ষিত এই অনুষ্ঠানটি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী জনসচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করে এবছর এই পুজোর আয়োজন করা হয়েছে।