Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#গল্প #দমকা_হাওয়া#গোপা_ব্যানার্জ্জী 
আজ সকাল থেকে মুনিয়ার জ্বর। তবুও ছুটি নেই ওর। রোজকার মতো আজও বেরোতেই হবে ভিক্ষা করতে। না হলে পিঠে মার পড়বে, আর উপোস থাকতে হবে। রানী মাসি একবার এসে ডেকে গেছে! ওর মতো যারা আছে এখানে, তাদের কারও কো…

 


#গল্প 

#দমকা_হাওয়া

#গোপা_ব্যানার্জ্জী 


আজ সকাল থেকে মুনিয়ার জ্বর। তবুও ছুটি নেই ওর। রোজকার মতো আজও বেরোতেই হবে ভিক্ষা করতে। না হলে পিঠে মার পড়বে, আর উপোস থাকতে হবে। রানী মাসি একবার এসে ডেকে গেছে! ওর মতো যারা আছে এখানে, তাদের কারও কোনোদিন ছুটি নেই। হ্যাঁ একেবারে ছুটি হলে কথা নেই, যেমন গত সপ্তাহে শাবানা বলে মেয়েটার হল!


মুনিয়ারা বাংলা আর বিহারের সীমান্তে একটা ছোট্ট গ্রামে থাকত! ছোট্ট মুনিয়া বাবার সাইকেলে চেপে রোজকার মত সেদিনও স্কুলে গিয়েছিল। কিন্তু খুব ঝড় বৃষ্টি হওয়াতে বাবা নিতে আসতে পারেনি, আর কয়েকজনের সাথে ও দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল।

বৃষ্টি কমতেই সবাই যে যার বাবা মায়ের সাথে চলে গেল, কিন্তু বাবা তখনো এলোনা। মুনিয়ার একা দাঁড়িয়ে থাকতে ভয় করতে লাগল। এদিকে সন্ধ্যা নামছে, গাঁয়ের পথে লোকজন কমে এসেছে, তাই ও আস্তে আস্তে এগোতে লাগল বাড়ির দিকে।

পথে হারান কাকা ওকে একা দেখে বলল,

--- কিরে মুনিয়া, বাবা আসেনি নিতে?

মুনিয়ার একটুও ভালো লাগত না হারান কাকাকে! কেমন যেন চাহনিটা! তবুও সেদিন হারান কাকাকে দেখে বেশ স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু তখনো ও জানত না, দমকা বাতাসের মত ওর জীবনটা ওলোটপালোট করে দেবে সেই বিকেল!

ভাবতে ভাবতে মুনিয়ার চোখে জল এসে গেল! সেদিন একলা পেয়ে ওকে একটা লজেন্স খেতে দিয়ে, ওর সাথেই হাঁটছিল হারান কাকা! তারপর যে কি হল, ওর কিছু মনে নেই! জ্ঞান ফিরতে দেখেছিল, একটা চলন্ত গাড়িতে ও আর বেশ কয়েকটা ছেলে মেয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে! ওদের মধ্যে কেউ কেউ হাত পা ছুঁড়ছিল, কেউ কাঁদছিল!

এরা একটা বিরাট চক্র! প্রতি একমাস দুমাস অন্তর শহর বদলায়! অনেক শহর ঘুরে ফেলেছে মুনিয়া এই ছমাসে!

মায়ের মুখটা মনে পড়লে বুক ফেটে কান্না পায়! কত আদর করে খাইয়ে দিত মা, চুল বেঁধে দিত, গান গেয়ে ওর ছোট্ট ভাই আর ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিত!

--- এই মুনিয়া! ইখানে আসতে বলছি কানে কথা ঘুসছে না?

রানী মাসির বাঁজখাই গলায় সম্বিৎ ফিরতেই ছুটে গিয়ে মাসির সামনে দাঁড়াল!

--- কাল থেকে ইরকম ম্যাদা মেরে আছিস যে? আজকে কিন্তু বেশি আনতে হবে, নাহলে এই লাঠি পিঠে ভেঙ্গে দিব!

পাশে দাঁড়ানো চিন্টু বলল,

--- মাসি ওর জ্বর আছে, ওর হয়ে আমি টাকা তুলে দেব, হবে?

মাসি তেড়ে এল লাঠি নিয়ে ওর দিকে।

--- খুব দরদ হাঁ? চল ফোট ইঁহাসে!

চিন্টু গোঁ ধরে দাঁড়িয়ে আছে দেখে মাসি ওকে এক ঘা লাঠির বারি দিল!

মুনিয়া তাড়াতাড়ি এসে বলল,

--- আমি যাচ্ছি, ওকে মেরোনা!


রাস্তায় সিগন্যালের কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওরা ভিক্ষা চাইছে! মুনিয়ার গলায় জোর কমে আসছে, চোখ জ্বালা করছে! ক্রমশঃ চোখে অন্ধকার নেমে আসছে,

তারপর...


একটা মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগছে! মুনিয়া ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখল, একটা বড় ঘরে খাটের ওপর শুয়ে আছে ও!

আশেপাশে আরও অনেক ছোট ছোট খাট! হঠাৎ মনে হল বাইরে থেকে কেউ ওর নাম ধরে ডাকছে, কিন্তু অনেক অনেক দূর থেকে ভেসে আসছে, তাই ও গলাটা কিছুতেই চিনতে পারছে না! মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করতে চাইল আর ঠিক তখনি ঘরে ঢুকল একটা মহিলা! কি সুন্দর... একদম পরীর মত! তাহলে কি...

--- আরে...ঘুম ভাঙলো লক্ষী মেয়ের?

--- আমি কোথায়?

--- তুমি নও, তোমরা! সবাই এখন এই হোমে!

--- হোম মানে তো বাড়ি!

--- গুড! ঠিক বলেছ! এটা এখন তোমাদের বাড়ি মুনিয়া!

--- আপনি আমার নাম জানেন? রানী মাসি? সে কোথায়?

--- ভয় নেই মুনিয়া! আমরা ওকে পুলিশে দিয়ে দিয়েছি, আর তোমাদের এখানে এনেছি! তুমি সুস্থ হয়ে বাবা মার কাছে যেতে পারবে।

--- আমি, মানে আমরা এখানে এলাম কিকরে?

--- সব বলছি! আগে তুমি একটু খেয়ে নাও তারপর!

মুনিয়া অবাক হয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে ও যেন স্বপ্ন দেখছে । সেদিন ওর জীবন যেভাবে বদলে গিয়েছিল, যে অন্ধকার জগতে ও ঢুকে পড়েছিল, তারথেকে ও বেরিয়ে এল কিভাবে! তবে কি আরেকটা দমকা হাওয়ায় ম্যাজিকের মত সব ঠিক হয়ে গেল!

--- মুনিয়া, খেয়ে নাও, আমি বলছি কিভাবে তোমরা এলে এখানে...

এটা কোলকাতা শহর। অনেকদিন ধরে আমরা এই রানী মাসিদের দলটাকে খুঁজছিলাম আর পুলিশ আমাদের সাহায্য করছিল! খবর পেয়েছিলাম এবারে কোলকাতায় আসছে। আগের থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম! সেদিন তোমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের বিরাট লাভ হল, হাতেনাতে ধরে ফেললাম!

তুমি অজ্ঞান হয়ে যেতেই তোমার অন্য সাথীরা ভয় পেয়ে যায়, কেউ কেউ কাঁদতে লাগে এই ভেবে যে, তুমি বোধহয় আর...

যাক গে শোনো তারপর কি হল! তোমার বন্ধু চিন্টু হঠাৎ করে দৌড়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছে যেতে চাইলে রানী মাসির গুন্ডারা ওকে তাড়া করে! ও দৌড়োতে থাকে, একসময় ধরা পড়ে যায় ওদের হাতে! খুব মারতে থাকে ওরা, সেই দেখে লোকজন জমে যায় সেটা ওরা খেয়াল করার আগেই! ব্যাস! কোলকাতার মানুষ এত সহজে ছাড়ে? ওদের ঘিরে ধরে জিজ্ঞেস করতে থাকে কি হয়েছে! ওরা বলে চিন্টু চুরি করে পালাচ্ছিলো, সেই কথা শুনে চিন্টু চিৎকার করে কেঁদে ওঠে, আর সব বলতে থাকে! তখন ওখান থেকেই কয়েকজন মিলে চিন্টুকে নিয়ে পৌঁছে যায় তোমাদের ওখানে, আর সেখানে গিয়ে বোঝে চিন্টু সব সত্যি বলেছে। সাথে সাথে পুলিশ এসে তোমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে আর ওদের উদ্ধার করে!

মুনিয়ার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল আনন্দে! সেই সময় চিন্টু আর বাকিরা ঢুকল ঘরে! ছুটে এসে চিন্টু বলল,

--- মুনিয়া, আমরা বাড়ি ফিরতে পারব এবার! এই মাসি আমাদের বাড়ি পৌঁছে দেবে!

--- তুমি কে মাসি? পরী?

সকলে হেসে উঠল মুনিয়ার কথায়!

--- না মুনিয়া, তোমরা হলে পরী আর চিন্টুরা হল রাজকুমার! তোমরা শাপমুক্ত এখন! চটপট আজ রাতেই যে যার বাড়ির কথা লিখে ফেলবে! যে যত ভালো করে লিখবে, সে ততোই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারবে! আমরা তোমাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেব আবার!

-- আর হ্যাঁ, আমি রিয়া আন্টি! পরী আন্টি নই!

সবাই একসাথে ছুটে এসে ঘিরে ধরল মুনিয়া আর রিয়া আন্টিকে!

একটা দমকা বাতাসে ঘরের জানলার সব পর্দাগুলো দুলে উঠল! যেন ওদের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে গেল!

©® গোপা

__________________(সমাপ্ত)________________