Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

নামঃ- জটাধারীকলমেঃ- তপন কুমার রায় তারিখঃ-৩০/০৪/২১
আমার ছোটবেলা কেটেছে বর্ধমান জেলার এক গন্ডগ্রামে। সেসময় গ্রামে আধুনিক সুযোগ সুবিধা কিছু ছিলোও না। বিদ্যুৎ পর্যন্ত পৌঁছায় নি।            শীতকালেই পুকুর গুলোর জল কমে যেত। বসন্ত পেরিয়…

 


নামঃ- জটাধারী

কলমেঃ- তপন কুমার রায় 

তারিখঃ-৩০/০৪/২১


আমার ছোটবেলা কেটেছে বর্ধমান জেলার এক গন্ডগ্রামে। সেসময় গ্রামে আধুনিক সুযোগ সুবিধা কিছু ছিলোও না। বিদ্যুৎ পর্যন্ত পৌঁছায় নি।

            শীতকালেই পুকুর গুলোর জল কমে যেত। বসন্ত পেরিয়ে অধিকাংশ পুকুরেই জল প্রায় থাকতো না বললেই চলে। গ্রামের একটু বাইরের দিকে কলুপুকুর বলে একটা বিশাল পুকুর ছিলো,প্রায় দীঘি ই বলা চলে। সে পুকুরটাই গ্রীষ্মের ভরসা ছিলো সারা গ্রামের।

                   গ্রামে তখনও দু চারটে বাড়ীছাড়া বাড়ীতে পায়খানা- কলঘরের ব্যবস্থাও ছিলো না। কাজেই নারী পুরুষ নির্বিশেষে গ্রামের সকল লোকের চান থেকে জলশৌচ সবই ওই কলুপুকুরে।

           আমাদের গ্রামে তখন স্কুল গুলোতে গ্রীষ্মের ছুটি পড়তো। আর তার আগে গ্রীষ্মের প্রচন্ড কষ্ট থেকে বাঁচতে মাসখানেক যাবত মর্নিং স্কুল হতো।তখন তো গ্রামের দিকে স্কুলে কোন ইউনিফরম ছিলো না। গরীব লোক জামা, ইজের প্যান্ট জোটাতেই পারতো না,অনেকেই স্যান্ডো গেঞ্জি পরেই স্কুল আসতো। পায়ে কারো হাওয়াই চপ্পল ও জুটতো না। মাটি এতো তেতে উঠতো যে রাস্তার গরমে পায়ে ফোস্কা পড়ে যাওয়ার জোগাড় হতো।

           মর্নিং স্কুল থেকে ফিরেই একটা গামছা নিয়ে কলু পুকুরে ছুট দিতো সব ছেলে মেয়ে। 

         কলু পুকুর নাকি প্রতিষ্ঠা করা পুকুর। প্রতিষ্ঠা ব্যাপারটা ঠিক বুঝতাম না। গল্প চালু আছে যে জমিদার অনেক গভীর করে পুকুর কাটানোর পর ও নাকি পুকুরে জল ওঠে না। তখন শুকনো পুকুরের মাঝখানে নাকি একটা গভীর পাতকুয়ো কাটানো হয়। তারপর সারাদিন ওই পুকুরে যাগযজ্ঞ- পুজোপাঠ করার পর রাতে ওই কুয়োর মধ্যে এক নরবলি দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে নাকি বিশাল কলুপুকুর কানায় কানায় জলে ভরে যায়। প্রচলিত আছে যে সেই থেকে কলুপুকুরের জলের গভীরে এক জটাধারী বাস করে। বছর বছর নাকি সেই জটাধারী একজন করে মানুষকে টেনে নেয়।

              গ্রীষ্মকালে আমরা অন্তত দুঘন্টার আগে জল থেকে উঠতাম না। ওখানেই সাঁতার কাটতাম। একটু বড়োরা সাঁতার কেটে এপার ওপার করতো। তবে সকলেই বলতো, মাঝ পুকুরে গিয়ে কারো জটাধারীর ভয় করতো না এমন নয়। কেউ কেউ অত্যন্ত সাহসী, মাঝ পুকুরে গিয়ে একডুবে গিয়ে নীচে থেকে মাটি তুলে এনে দেখাতো। 

          একটু বয়স বাড়তে সাঁতারে একটু পোক্ত হলাম। সাহস ও বাড়লো, এখন গ্রীষ্মের দুপুরে আমিও কলুপুকুর সাঁতরে এপার ওপার করি। একদিন হরি আর আমি পাশাপাশি সাঁতার কেটে ওপার যাচ্ছি, মাঝপুকুরে আমরা ঠিক করলাম পুকুরের নীচে থেকে মাটি তুলে দেখাবো। দু জনেই একসাথে ডুব মারলাম। জলের নীচে অল্প হলেও দেখা যায়। হঠাৎ মনে হলো আমি আশপাশের কিছু দেখতে পাচ্ছি না। নামছি তো নামছি।এতো নীচু কেন?এতো গভীর কি হতে পারে? তবে কি আমি পুকুরের নীচের সেই পাতকুঁয়োটার মধ্যে ঢুকে গেছি? কারা সব গায়ে হাত বুলাচ্ছে, বুঝতে পারি ওগুলো লম্বা লম্বা ঝাঁজি। হঠাৎ হাতে মাটি ঠেকলো একমুঠো খামচে নিলাম। তারপর ওঠার পালা।আর দম শেষ, বুক ফেটে যাচ্ছে যেন। একটু শ্বাস নিতেই হবে। হাত পা ভারী হয়ে আসছে। না, হাঁকপাক করে কোনক্রমে জলের ওপর উঠে পড়েছি। মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি। কাদাটা হাত তুলে চেঁচিয়ে দেখালাম সকলকে। পেরেছি আমি।পেরেছি। কিন্তু হরি কই? হরি তো ওঠে নি। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম। না হরি তো নেই।ওঠেনি। এতক্ষণ তো জলের নীচে থাকা সম্ভব নয়। সকলকে চেঁচিয়ে বলতেই এক্সপার্ট সাঁতারু রা মাঝপুকুরে চলে এলো। ঝপ ঝপ করে ডুব মারলো হরিকে খুঁজতে। আমিও ডুব মারলাম। ছায়া ছায়া সকলকে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কোথায় হরি?কোন জলঝাঁজি তে আটকেও পড়েনি। আমি হাঁফিয়ে গিয়ে, পাড়ে চলে এলাম। বড়োরা ডুবের পর ডুব দিয়েও কোন হদিশ করতে পারলো না হরির। আমার সাহস নেই হরিদের বাড়ী গিয়ে একথাটা বলার। কি বলবো?সবাই ঠিক করলো কাল বোটো জেলেকে ডেকে টানা জাল দেবে পুকুরে।তাহলে বডি তোলা যাবেই। গ্রামটা পুরোই কেমন থমথমে হয়ে গেলো। এ ছাড়া অন্য বিষয়ে কারো কোন কথা নেই।এবছর বোধহয় জটাধারী হরিকেই খেলো। গ্রামের সবার মন খারাপ। 

             হরি বাগ্দীদের ছেলে।গ্রামে ভদ্দর লোকের পাড়ার থেকে একটু দূরেই ওদের পাড়া। বিকেলে হরিদের বাড়ী গেলাম ভয়ে ভয়ে। হরির মা বললো- হরি ঘরে আছে, যা। আমি জোর বিষম খেলাম। কোনক্রমে একগ্লাশ জল খেয়ে ঘরে ঢুকে দেখি হরি হাসছে। বললো --"তোর সাথে ডুব দিয়েই খুব জটাধারীর ভয় খেয়ে গেলাম। তাই ডুব সাঁতারে পাশের দিকের ঝোপের পাশে উঠে বাড়ী চলে এসেছি মাঠে মাঠে।" আনন্দের সথে সাথে আমার খুব রাগও হয়ে গেলো।