#-ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পরিবার#-দৈনিক প্রতিযোগীতা#-গল্প#-শিরোনাম-"অজানা সুগন্ধ"#-কলমে-কথামালা সেনগুপ্ত#-তারিখ--3/5/2021
অজানা সুগন্ধ
যশোধরা বসেছিল পাহাড়ের খাঁজে এক টুকরো উন্মুক্ত পাথর কেটে তৈরি টিলা বারান্দ…
#-ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পরিবার
#-দৈনিক প্রতিযোগীতা
#-গল্প
#-শিরোনাম-"অজানা সুগন্ধ"
#-কলমে-কথামালা সেনগুপ্ত
#-তারিখ--3/5/2021
অজানা সুগন্ধ
যশোধরা বসেছিল পাহাড়ের খাঁজে এক টুকরো উন্মুক্ত পাথর কেটে তৈরি টিলা বারান্দায়।খাঁটি দার্জিলিং চায়ে চুমুক আর দৃষ্টি প্রসারিত কাঞ্চনজঙ্ঘার সোনালী পর্বত শ্রেণীতে। দার্জিলিং ও লোলেগাঁও এর কাছাকাছি "চারখোল" এখানে ওই নামে একটি রিসোর্ট আছে,অবাক সৌন্দর্যের এক স্বর্গরাজ্য। চারিদিকে ঘন জঙ্গল, গাঢ় সবুজের বন্যা চোখ তুললে কাঁচনজঙ্ঘার পর্বতশ্রেণী।
যশোধরা প্রায়ই আসে তার মস্তিষ্ক প্রাক্ষালন করার জন্যে।পেশায় আইনজীবী প্যাঁচ পায়জোর করে বাদী পক্ষকে পরাস্ত করতে দক্ষ। তাই এই নির্জনতায় নিজেকে একটু খুঁজে পেতে চায়। জীবনের মাঝামাঝি সময়ে এসে একটু একাকিত্ব জড়িয়ে ধরে সকল শ্রেণীর মানুষকে।
একটু দূরে আরেকটি টেবিলে এক ভদ্রলোক হাতে মোবাইল চায়ের বদলে ধোঁয়া খাচ্ছেন।কেন কি জানি যশোধরা বিরক্ত হল এত সুন্দর দৃশ্য বেরসিক মোবাইলে ব্যাস্ত। কিছু সময় কেটে গেল, স্বর্ন আভায় বিভোর হয়ে গেছে যশোধরা,একটু পরে এই সৌন্দর্য আর থাকবে না।
যতদূর চোখ যায় সবুজ ঘাসের গালিচা মনের মলিনতা মুছে দেয়। কিছু মুগ্ধ সময় কেটে যাবার পর পাশে তাকিয়ে দেখে ভদ্রলোক উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করছেন ধীর গতিতে তার দিকে এগিয়ে এলেন ও ইশারায় ধোঁয়ায় কি বিরক্ত করছি? জানতে চাইলেন। যশোধরা হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ল, তিনি সিগারেট নিভিয়ে আলাপ শুরু করলেন।
জানা গেল তিনি ব্যবসায় যুক্ত আছেন ও সেই একই কারণে নির্জনতায় আসা "মস্তিস্ক প্রক্ষালন" প্রকৃতি খুব ভালবাসেন, যশোধরা যা ভেবেছিল তা নয়। বিকেলের মধ্যেই আলাপ ও পরিচয় পূর্ন হল। অনেক গল্প জমা দুই পক্ষের জীবিকা ও জীবনের অভিজ্ঞতার। গল্পের ফাঁকেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা কখন যে আলাপ বন্ধুত্বের বন্ধনে বেঁধে গেল কেউ বুঝতে পারলাম না।
বন্ধুর নাম অতীন্দ্র লাহিড়ি, বিপত্নীক। যশোধরা ও একা বিয়ে করার সময় পাইনি,কখন যৌবনের মাদকতা হারিয়ে গেছে বুঝতে পারেনি।পড়ন্ত বিকেলের আলোয় ফিরে গেল হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোয় শুধু এলোমেলো কিছু কথা। ভালবাসা,হা এসেছিল একটি সুন্দর সুস্থ ঘর বাঁধার ইচ্ছেও হয়েছিল কিন্তু, আপনজনের মুখগুলো ভেসে উঠেছিল,তারপর আয়নায় ভাল করে মুখও দেখত না যশোধরা।
হটাত কখন সন্ধ্যা নামল ঝুপ করে যশোধরা গাঢ় অন্ধকারে আকাশে তারামন্ডলদের আবিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। খুব ভালো লাগছে যশোধরার,আগে তো কোনদিন এত সৌন্দর্য্য দেখতে পায়নি, কেন? এক "অজানা সুগন্ধ" হিমেল বাতাসের সাথে এসে চুম দিয়ে গেল। যশোধরা অবাক হয়ে নিজের মনকে প্রশ্ন করে উত্তর যা পেল তাতে লজ্জায় নিজের চোখ বন্ধ করল। অন্ধকারে গুনগুনিয়ে উঠল
"আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা আর কতকাল আমি রব দিশাহারা, জবাব কিছুই তার দিতে পারি নাই শুধু পথ খুঁজে কেটে গেল এ জীবন সারা------------------–-----
"কারা যেন ভালবেসে আলো জ্বেলেছিল" পিছন থেকে ভাঙা সুর শুনতে পেল, সূর্যের আলো তাই নিভে গিয়েছিল---- যশোধরা চমকে দেখে অতীন্দ্র লাহিড়ী লাল পাঞ্জাবী,সাদা পাজামা ও পশমি শাল গায়ে গলা মেলালেন ও চেয়ার টেনে বসলেন। না সিগারেট নেই হাতে আছে দুই কাপ সুগন্ধিত ধোঁয়া ওঠা চা, গান গাওয়া চলছে সুর ও বেসুরে একসাথে। তারপর দুজনে নক্ষত্র ও তারাদের নাম গোত্র খুঁজতে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়ল। ঝকঝকে আকাশে তারা নক্ষত্র গুলিকে মনে হচ্ছে কে যেন হীরে বেটে ছড়িয়ে দিয়েছে।
গল্পের ঝুড়িতে হাসির এত কথা আছে যশোধরা শুনছে আর বাচ্চা মেয়ের মত খিল খিল হাসি ছড়িয়ে পড়ছে। নিঃশব্দতা ভেঙে দূরে পাহাড়ের গায়ে জড়িয়ে থাকা অন্ধকারে। যশোধরার শরীর জুড়ে সেই অজানা সুগন্ধ নেশা ধরাচ্ছে যশোধরা ধরা দিল সুগন্ধের মায়াজালে,মনে মনে জড়িয়ে ধরল অতীন্দ্রের সুঠাম সুন্দর অবয়ব। এই অবেলায় এক সুন্দর মায়াবী অনুভূতি প্রেম ছাড়া আর কি? "কিন্তু" এলো বারবার দৃষ্টি ছড়িয়ে দিল দূরে আলিঙ্গন বদ্ধ পর্বতশ্রেণীর রূপমাধুরীতে।
প্রতিদিন ভোরবেলা--দুটি পূর্ণাঙ্গ মানুষের ক্লান্ত জীবনে সূর্যোদয়ের সোনালী বর্ণছটা সিক্ত করে, হৃদয়ের গহীন গোপন শুভ্র সজ্জায়। উপভোগ করে তারা এই অনুভূতি।
কথায় নাইবা হল প্রকাশ কিন্তু প্রেমের সুগন্ধ ঠিক পেয়ে যায় মানব মানবী।
দুইজনে একদিন বেড়াতে বেরুল আশেপাশে দ্রষ্টব্য জায়গা দেখতে একজন ব্যবসায়ী মানুষের রুচিবোধ দেখে যশোধরা মুগ্ধ। এর আগে তারা কেউই এই রিসর্ট ছাড়া কোথাও যায়নি ,কালো মসৃন আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ,দুধারে গাছের সারি আর সবুজের বন্যা মন বলছে--- "এই পথ যদি না শেষ হয়" উষ্ণ চা, কফির ধোঁয়ায় কথা দেয়া নেয়া।
আবার এখানেই আসবে তারা যখন ছুটি পাবে অথবা হাঁপিয়ে উঠবে মন কাজের চাপে দেখা হবে বারংবার। অতীন্দ্র লাহিড়ী হা হা হেসে বললেন আমি গান শিখে তোমার সাথে গলা মেলাব,যাশধরাও হেসে ফেলল কখন যে আপনি "তুমি"হয়ে গেছে যশোধরাও নীরবে গ্রহণ করেছে এই সম্বোধন।
এইভাবেই শেষ হল ছুটি কাটানোর দিনগুলি, ফিরতে হবে কোলাহল মুখর শহরে। দুই জনেরই স্বাধীন কাজ তাই রিটায়ার্ড হওয়া ঐচ্ছিক ব্যাপার। আকাশ পাখির সফরে আগামী জীবনের কথা। বিগত জীবনের দিনলিপি থাক কালচক্রের হাতে, বললেন-– অতীন্দ্র লাহিড়ী। তবুও মন খারাপের দুস্টু পাখি উড়ে এসে বসল দুইজনের কাঁধে।
যশোধরা বার বার উদাস হয়ে পড়ছে, পাশের মানুষ বুঝতে পেরে হাসির কথা বলে মন ভাল করার চেষ্টায় রত।
কোলকাতার মাটি ছুল বিমান। যশোধরার ছিপছিপে সুন্দর চেহারা সেভাবে বয়েসের ছাপ পড়েনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অতীন্দ্র লাহিড়ী। বিমান বন্দরের বাইরে এসে প্রথমবার অতীন্দ্র লাহিড়ী যশোধরার হাত ধরে বললেন---" আমি রইলাম আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে মন অন্ধকার কোরো না যশো" কথা হবে মুঠোফোনে যোগাযোগ মনের মন্দিরে। আমরা দুজন ভালো থাকব দুজনের জন্য। তারপর দুইজনেরই দুটি ভিন্ন পথ। এগিয়ে গেল একটি সাদা ও একটি লাল রঙের গাড়ি রাজপথ মাড়িয়ে নিজ গন্তব্যের দিকে।
প্রেমের অন্তরালে রইল পরিণত বয়েসের অসংযত দুটি মন আর সংযত দুটি শুদ্ধ শরীর।