বিভাগ-গল্পশিরোনাম-ভ্যাবলাকলমে-সুতপা ব্যানার্জী(রায়)তারিখ-১৭/৫/২১
ভ্যাবলাদের টিনের চালের বাড়িতে প্রতি বছর খড় ছাইতে হয়, না হলে গরমে টেকা যায় না। ভ্যাবলার খুব শখ বেশী গরম পড়ার আগে খড়ের ছাউনিটা দিয়ে নেয়। কিন্তু ডাইনে আনতে বাঁয়ের ট…
বিভাগ-গল্প
শিরোনাম-ভ্যাবলা
কলমে-সুতপা ব্যানার্জী(রায়)
তারিখ-১৭/৫/২১
ভ্যাবলাদের টিনের চালের বাড়িতে প্রতি বছর খড় ছাইতে হয়, না হলে গরমে টেকা যায় না। ভ্যাবলার খুব শখ বেশী গরম পড়ার আগে খড়ের ছাউনিটা দিয়ে নেয়। কিন্তু ডাইনে আনতে বাঁয়ের টানাটানির সংসারে এটুকুর জন্যও টাকা জমে না। ভ্যাবলার মা কমলি বলে-"তু তো ঘুরিস কাজে কামে, মু-ও লুকের বাড়ি খাটি, ঠান্ডার দরকারটা কীসে?" ভ্যাবলা অনুনয় করে-"মা তু তো দাদ্দুর কুথাটা বললি নাই, কষ্টটা তো উয়ার হয় নাকী?" মায়ের উত্তরটা ভ্যাবলার দাদুর কাশির আওয়াজ দিয়ে ঢেকে যায়। কিছু বাড়তি রোজগারের আশায় ভ্যাবলা একে ওকে বলে। ক-দিন
হাটে গিয়ে সব্জি বিক্রী করে কাটল। কিন্তু রোজ যারা ওখানে বসে তারা হঠাৎ করে উটকো একজনকে বসতে দেবে কেন, যেখানের অন্নের সংস্থান সেখানে উদারতার বদলে প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। হন্যে হয়ে ঘোরে ভ্যাবলা একটু আয়ের আশায়।
মা বাড়ি এসে দেখে জল দেওয়া পান্তা ভাত যেমনকার তেমনই পড়ে আছে। বিকেলেও আসে নি
ভ্যাবলা,খালি পেটেই ঘুরছে। আক্ষেপ করে-"ই লুকটার বেটা ট-ই তো মুদের দেখলেক নাই, ভরা পুয়াতি বেলায় ছেইড়ে দে গেলেক আর তার বাবার উপর লাতির টান দেখ,গা জ্বলি যায়।" সন্ধ্যেবেলায় এসে ভ্যাবলা দাদুর কাছে বসে-"দাদ্দু চিন্তা করিস না, এ গরমে আর তুর গরমি লাগবে না,"-বলে দাদুর চুলে বিলি কেটে দেয়। ও দিনই কালবৈশাখী ঝড়ে অবস্থা আরো খারাপ হল, ঘরের মাথার টিনগুলোই যেন উড়িয়ে নিয়ে যেতে চায়। ঝড়ের উপক্রম দেখেই মা-বেটা ঘরে এসে যাওয়ায় চালে ইট দিয়ে কোনরকমে টিনগুলোকে সামলায়। মা কমলি হাত
জোর করে বলল-"ঠাউর যা করে মঙ্গলের জুন্যই করেন, খড় থাকলি লোকসান বাড়ত।" ভ্যাবলাও মনে মনে মা চন্ডীকে ওর মনের বাসনা জানায়। পরদিন হাটে বস্তা ঠেলার কিছু খুচরো কাজ পেল ভ্যাবলা। উল্টোদিকেই এসি মেসিনের দোকান। কাজের ফাঁকে ওদিকেই সতৃষ্ণ দৃষ্টি ভ্যাবলার। হঠাৎ দেখল এক মা লক্ষ্মীর মতো দেখতে মাঠাকরুণ দোকানের বাইরে এসে ব্যাগ থেকে কী বের করতে গিয়ে এক গোছা টাকা দিলে ফেলে। পাছে কেউ নিয়ে নেয়, ভ্যাবলা ছুটে গিয়ে-
"মা..ঠাকরুণ..ও মা ঠাকরুণ আপনার টাকা পড়ল যে।" টাকা কটা কুড়িয়ে ব্যাগে রাখতে গিয়ে মহিলা থমকে কটা নোট ভ্যাবলার দিকে বাড়িয়ে দিল।
"রাখো, তুমি আমার খুব উপকার করলে..নাও এটুকু নাও।" ভ্যাবলা কিছুতেই হাতটা বাড়াতে পারল না।
মুখে বলল-" ই কাজ ইমানের, এর জন্য টাকা লিতে পারব না।" খড়ের চাল, দাদুর মুখ মনে এলেও ভ্যাবলা ওর মনকে শক্ত করল।