Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#গল্প_নতুন_বৌমা#পিউ_হালদার_‌আশ১৮৷০৫।২০২১সেই কোন ছোট্ট বেলায় বৌ হয়ে এসেছে মিতালী,,সবাই ওকে মিতু বলে ডাকে আর শ্বশুর ,শাশুড়ী,জেঠিঢ়মা শাশুড়ী এদের সবার নতুন বৌমা,      মাত্র ১৭ বছর বয়সে রায় বাড়ির বড় বৌ হিসাবে পদার্পণ করে মিতা, সবে উ…

 


#গল্প_নতুন_বৌমা

#পিউ_হালদার_‌আশ

১৮৷০৫।২০২১

সেই কোন ছোট্ট বেলায় বৌ হয়ে এসেছে মিতালী,,সবাই ওকে মিতু বলে ডাকে আর শ্বশুর ,শাশুড়ী,জেঠিঢ়মা শাশুড়ী এদের সবার নতুন বৌমা, 

     মাত্র ১৭ বছর বয়সে রায় বাড়ির বড় বৌ হিসাবে পদার্পণ করে মিতা, সবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে,, গরীব বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান,, দেখতে শুনতে ভালোই,, গায়ের রঙ ফরসা,, এক মাথা ঘন কালো চুল, পিঠ ছাড়িয়ে কোমরে নেমে এসেছে, বাবা গরীব হলেও মেয়ে মানুষ করতে কার্পণ্য করেননি,, পড়াশুনা,, গান বাজনা সব ই শিখিয়েছে, মেয়েও খুব লক্ষ্মী, কোনোদিন ও কোনো অন্যায় আব্দার করেনি বাবা মায়ের কাছে, পড়াশুনায় খুব ভালো ছিল,, তাই ওর ইচ্ছা ছিলো অনেক পড়াশুনা করে চাকরী করে বাবা মায়ের  সংসারে সচ্ছলতা আনবে,, কিন্তু গরীবের ঘরে তো সব স্বপ্ন সফল হয় না,, হয়তো ভগবান অলক্ষ্যে হাসে,, তিনি তো সব‌ই দেখতে পান। 

     হঠাৎ করেই মিতালী কে রাস্তায় দেখে একজনের পছন্দ হয়ে যায় আর মিতার বাবার কাছে তাঁর ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আনেন,, প্রথমে ওনারা রাজি না হলেও পরে বিবেচনা করে দ্যাখেন যে তাঁদের যেরকম অভাবের সংসার,,মেয়েকে এরপর পড়াশুনা করানো অসম্ভব ব্যাপার,, তাই ওনারা শেষমেষ রাজী হয়েই গেলেন,, কিন্তু একটা ভুল করলেন মেয়েকে কিছু না জানিয়েই পাত্রী দেখতে আসার দিন স্থির করে ফেললেন। 

     একদিন সকালে মিতার মা ওকে বললেন "মিতু মা আমার,, আজ বিকালে বাড়িতে কিছু লোকজন আসবে, তুই একটা ভালো কাপড় পরে সেজেগুজে তৈরী হয়ে নিবি"

    কে আসবে মা? আমি কি তাদের চিনি?? আর বাড়িতে লোক আসবে তো আমি সাজতে যাবো কেনো? 

      তোকে বলা হয়নি মা, তোকে একদিন রাস্তায় দেখে এক ভদ্রলোকের পছন্দ হয়েছে,, ওনার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চান। 

      বিয়ে!!!!!! কিন্তু মা আমি তো তোমাদের বলেছিলাম যে আমি এখন বিয়ে করতে চাই না,, পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই, তোমরা আমার এটুকু স্বপ্ন ও পূরণ করতে পারলে না মা? আমি কি তোমাদের খুব বোঝা হয়ে গেছি? বলো না মা? আমি তো বলেছিলাম উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আর ও কয়েকটা টিউশন জোগাড় করে আমার খরচ আমি চালানোর চেষ্টা করবো,, তাও তোমরা... (বলে কাঁদতে থাকে)। 

       আমার কথা টা শোন মা, কথায় আছে না যাচা অন্ন ছাড়তে নেই,, ওনারা ভালো বংশ,, ছেলে সরকারী চাকরী করে,, একটাই ছেলে, ছেলের বাবা ই তোকে রাস্তায় দেখে পছন্দ করেন,, তারপর তোর বাবার দোকানে এসে বিয়ের প্রস্তাব দেন, বাড়িতে ছেলে, ছেলের বাবা, মা, আর জেঠু জেঠিমা আছে, জেঠুর কোনো সন্তান নেই,, আর আছে একটা বিধবা পিসি, ওনাদের পারিবারিক ব্যবসা,, জেঠু আর বাবা দেখেন,, মা আর জেঠিমা গৃহবধূ, এতো ভালো পরিবারের সম্বন্ধ কি ছেড়ে দেওয়া যায় মা?? আমি রান্না করতে যাই,, ওনারা আসবেন,, ঘর গুলো গুছোতে হবে,, আর একটু ঘুগনি আর ফুলকপির সিঙাড়া বানাবো ভাবছি,, আর মিষ্টি তোর বাবাকে বলেছি কিনে আনতে,, তুই হাত চালিয়ে নে মা, ঘর গুলো একটু গুছিয়ে স্নান টা সেরে আয়,, এত বড় চুল শুকোতে সময় লাগবে, আর বিকালে কিন্তু চুল টা ছেড়ে রাখবি, আলমারীতে আমার ওই রানী কালারের জামদানী টা আছে ওইটা পরবি,, যদি ও অনেক পুরোনো শাড়ি,,কিন্তু আর ভালো শাড়ী তো সেভাবে আমার নেই। 

       ঠিক আছে মা, আমি সব কাজ সেরে নিচ্ছি আর আমি তোমার ওই জামদানী শাড়ি টাই পরবো, কিন্তু মা আমার একটাই অনুরোধ,, আমাকে যেনো ওনারা পড়াশুনা করতে দেন। 

          ঠিক আছে মা গো,, তোর এই ইচ্ছে টা আমি ওনাদের কাছ বলবো। 

       বসন্তের কোকিল ডাকা বিকেলে মিতা কে দেখতে এলো ছেলের বাড়ির লোকজন,, ছেলে, ছেলের বাবা, মা, জেঠু আর জেঠিমা, পিসি বিধবা মানুষ তাই শুভ কাজে আসেননি। 

        মেয়ে দ্যাখা পর্ব চলছে, সবাই এক এক করে কি নাম, কি পড়ো, রান্না করতে জানে কি, সব জানতে চায়, তবে ওনারা সবচেয়ে বেশী মোহিত হন মিতার একরাশ কালো চুল দেখে,, ওনারা মিতাকে গান ও গাইতে বলেন, 

             "তুমি মোর পাওনাই পাও নাই পরিচয় 

                 তুমি যারে জানো সে যে কেহ নয় কেহ নয়

                    পাও নাই পাও নাই পরিচয় "

সবাই ওর গানে বিভোর,, হঠাৎ চমক ভেঙে হাত তালি দিয়ে ওঠে সবাই, আর ওর হবু শাশুড়ী মা ওকে জড়িয়ে ধরে,, তারপর ওনারা একটু খাবার মুখে দিয়ে মিতু কে মিষ্টি মুখ করিয়ে বলেন- "আমার খুব পছন্দ হয়েছে মিতালীকে,, আমি সামনের বৈশাখ মাসেই মিতু আর অমলের চার হাত এক করতে চাই, বলে নিজের গলা থেকে সোনার চেন টা খুলে মিতুর গলায় পরিয়ে দিয়ে ওকে আশীর্বাদ করেন। 

       ওনারা মিতুর বাবা, মা কে বলেন ওনাদের বাড়ি যেতে মিতুকে সঙ্গে নিয়ে,, কারণ যে বাড়িতে মিতুকে সারাজীবন থাকতে হবে,, যে সংসারের দায়িত্ব ওকে সারাজীবনের জন্য কাঁধে নিতে হবে সেই বাড়িটা তো ওকে আগে দেখে নিতে হবে, তারপর ওনারা বিদায় নেন। 

        মিতা খুব খুশি ওনাদের ব্যবহারে,,কিন্তু ওর মনে একটা খটকা লাগলো যে সব কথাই ছেলের মা বললো,, বাকিরাও বললো, কিন্তু ছেলে নিজে একটা কথাও বললো না, তারপর ভাবলো হয়তো প্রথম দেখতে এসেছে পরিবারের বড়দের সঙ্গে তিই হয়তো কথা বলেনি। 

       যাইহোক মিতুর বাবা মা ও মিতুকে নিয়ে একদিন গেলো অমলদের বাড়িতে,, ওনারা সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন ওদের,বাড়ি ঘর দেখে মিতুর বাবা  মায়ের খুব পছন্দ হয়, পুরো বাড়ি টা ওদের তিনজনকে ঘুরিয়ে দেখায় অমল, তারপর অমলের মা ওদের দুজনকে বলেন অমলের ঘরে যেতে,, অমল আর মিতু অমলের ঘরে গিয়ে গল্প করতে থাকে, দুজন দুজনের কথা জানতে থাকে,, তারপর দুজনে নীচে নেমে আসে। 

       ওদের জন্য নীচে সবাই অপেক্ষা করছিল,, ওরা দুজনে নীচে আসার পর ওদের খেতে দেয় অমলের মা জেঠিমা, ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন,ফিশ চপ আর মিষ্টি, সব ই অমলের মা জেঠিমা মিলে রান্না করেছে,, ওদের আপ্যায়ন মিতুর বাবা মায়ের খুব ভালো লাগে,,বিয়ের দিন স্থির হয় ২৫শে বৈশাখ,,  ওদের থেকে বিদায় নিয়ে মিতুরা বাড়ি ফিরে আসে। 

      এবার দিন গোনার পালা,, ছেলের বাড়ি থেকে কোনো দাবি দাওয়া নেই, শুধুমাত্র মেয়েকে যেটুকু দিতে পারবে, কিন্তু তাবলে একেবারে খালি হাতে তো মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায় না,, তাই ওর মায়ের যেটুক গয়না ছিল হাতের চুড়ি, কানের দুল আর একটা হার সেগুলো কে পালিশ করিয়েনেয়,, আর ছেলের জন্য একটা চেন আর একটা ঘড়ি কেনে, দেখতে দেখতে বিয়ের দিন এগিয়ে আসে, সব গোছগাছ সম্পূর্ণ,, এর মধ্যে অমল আর মিতু দুদিন বাইরে দেখা ও করে। 

         বিয়ের দিন সকালে গায়ে হলুদ আসে ছেলের বাড়ি থেকে, এত জিনিস পাঠিয়েছে ওরা যে মিতুর আত্মীয় স্বজন দের দেখে চক্ষু চড়ক গাছ,, ওরা ভাবতেই পারেনি যে চিরদিনের আত্মীয় স্বজনদের কাছে অবহেলিত মিতুর বাবা তার মেয়ের জন্য এত ভালো একটা সম্বন্ধ জোগাড় করে ফেলবেন,, গায়ে হলুদ পর্ব সম্পন্ন হয়েছে,, তারপর যা যা আচার অনুষ্ঠান আছে সবকিছু ভালো ভাবে সম্পন্ন হবার পর মিতুকে ওর বন্ধুরা সাজাতে বসে,, লাল টুকটুকে বেনারসী,, কপালে চন্দন, মাথায় লাল ওড়না, যেনো একটা লক্ষ্মী প্রতিমা,, 

           যথাসময়ে বর আসে,, আশীর্বাদ করে ছেলের বাড়ির লোকজন ওকে একজোড়া বালা, একটা নেকলেশ আর একটা সোনার মুকুট দিয়ে,, আর ছেলেকে মিতুর বাবা ঘড়ি আর চেন দিয়ে আশীর্বাদ করেন,, খুব ভালো ভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হয়, আনন্দে মিতুর বাবা মায়ের চোখে জল চলে আসে। তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব মিটতে মিটতে রাত হয়ে যায়, আর মিতুর মা ভাবে "মিতুর বিদায়ীর সময় হয়ে এলো,কাল থেকে মেয়েটা আর আমাদের কাছে থাকবে না,, সে এখন অন্য বাড়ির বৌমা"।

       সকালে আশীর্বাদ পর্ব মিটে গেলে মিতু শ্বশুরবাড়ির পথে র‌‌ওনা দেয় অমলের সাথে,, কান্নাকাটি করে ক্লান্ত মিতু ভাবে "মেয়েদের জীবন টাই এরকম,, ছোট থেকে যাদের কাছে বড় হলাম এখন তাদের কে পর করে অন্য একটা বাড়িতে গিয়ে সেই বাড়ির লোক জনদের আপন করে নিতে হবে "।

            এইসব ভাবতে ভাবতেই ওরা চলে আসে,, গাড়ী থেকে নামতে যাবে এমন সময় ওর শাশুড়ী হাঁ হাঁ করে চিৎকার করে ওঠে,, করছো কি? ওভাবে কেউ গাড়ী থেকে নামে? তুমি না নতুন বৌমা,, ওর চোখে জল এসে যায়, তারপর বরণের পর্ব মিটে গেলে অমলের ঘরে মিতু কে নিয়ে যায় ওর শাশুড়ী আর  বলে এটা আমার অমুর ঘর, এখন থেকে তোমার ও ঘর,, নাও স্নান করে একটা নতুন কাপড় পরে নীচে এসো, মিতু ফ্রেশ হয়ে নীচে এসে দ্যাখে অনেক আত্মীয় স্বজন বসে আছে,, ও কাছে আসতেই এক এক করে সবাই দেখতে থাকে ওর বাবা মা কি কি গয়না গাটি দিয়েছে ওকে,, কেউ কেউ বলে গরীব বাবা যা দিয়েছে সেটাই অনেক,, আমাদের অমুর তো কম নেই,, ও না হয় পরে গরিয়ে দেবে,, আবার কেউ কেউ নিন্দা করে,, তারপর ওর শাশুড়ী ওকে রান্না করে ঘরে নিয়ে এসে একটা দ কিলো ওজনের কাতলা মাছ আর এক ঝুড়ি সব্জি দিয়ে বলে "নাও, এগুলো কেটেকুটে  তোমার পছন্দ মতো রান্না করো,, আজ আমাদের বাড়ির নতুন বৌমা কে রান্না করে সবাইকে খাওয়াতে হয়,, "।।

       কিন্তু মা,, আমি তো কখনো...... 

      রান্না করোনি তাই তো?? কিন্তু আজ তো করতেই হবে মা,, তুমি না নতুন বৌমা???? 

  এই শুরু হোলো মিতুর "নতুন বৌমা"আখ্যান।

    মিতুর চোখে জল আসে,, ও ভেবে পায় না কি করে এত কিছু করবে ও একা,, তারপর ভাবে না করতেই তো হবে,, আমি যে নতুন বৌমা,, এসব ভাবনা চিন্তার মাঝে ওর মাথায় একটা স্নেহের হাতের পরশ পায়,, ঘুরে তাকাতেই দ্যাখে ওর পিসিশাশুড়ী,, উনি মিতুর হাতে হাতে সব গুছিয়ে দেন,, মাছ কিভাবে কাটতে হবে দেখিয়ে দেন, কিন্তু উনি বিধবা বলে নিজে কাটেন না,, এইভাবে ঘন্টা তিনেক মিতু সবজি ডাল মাছেদের সাথে যুদ্ধ করার পর অবশেষে মিতু সাকসেস হয়,, মিতু রান্না করে মাছের মাথা দিয়ে মুগডাল, বেগুন ভাজা, এঁচোরের তরকারি, পনীরের তরকারি, মাছের কালিয়া, চাটনী আর পায়েস,,সারা রান্না ঘর গন্ধে ম ম করছে,, মিতুর শাশুড়ী তো অবাক,, আনন্দে মিতুকে জড়িয়ে ধরেন, আর বলেন 

   "আমাকে ভুল বুঝিস না মা,, এবাড়ির নিয়ম ই তাই রে,, নতুন বৌমা এসে ভরা সংসার দেখবে আর বাড়ির লোকেদের নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে,, আমাকেও এক‌ই জিনিস করতে হয়েছিলো রে,, আমি তো কিছুই পারতাম না,, রান্না ঘরে ঢুকেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করে দিলাম, আর বেগতিক দেখে আমার বড় জা সকলের চোখ এড়িয়ে আমার হাতে হাতে সব জোগাড় করে দেয় আর কিভাবে কি রান্না করতে হবে সেটাও দেখিয়ে দেয়,, সেদিনের মতো উতরে গেছিলাম জানিস,, তারপর তো দিদিভাই মানে তোর জেঠিমা আমাকে হাতে ধরে রান্না থেকে শুরু করে সব কাজ শিখিয়ে দেয়,, তোকে আমরাই সব শিখিয়ে দেবো,, কোনো চিন্তা নেই তোর।

     কিন্তু মামনী আমি তো এসব কিছু একা করিনি,, আমি সত্যি কথা বলছি মামনী,, তুমি আমাকে যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেবো। 

          আমি জানি, ঠাকুরঝি তোকে এসে সাহায্য করেছে হাতে হাতে,, ঠাকুরঝি কে আমি ই সকলের চোখ এড়িয়ে তোর কাছে পাঠিয়েছিলাম,, আমি আগেই বুঝেছিলাম যে একা হাতে তুই পারবি না এতকিছু,, আর শুধু তুই কেনো কারোর পক্ষেই সম্ভব নয় নতুন বৌ হয়ে এসে এসব করা, তাই আমি ই......... 

       মাআআআআআ বলে জড়িয়ে ধরে মিতু ওর শাশুড়ী কে,, আমি তোমাকে  ভুল বুঝেছিলাম মা,, আমাকে ক্ষমা করে দাও,, 

        ওর শাশুড়ী ওকে আদর করে বলে তুই তো আমার মেয়ে, মেয়ে কখনো মায়ের কাছে ক্ষমা চায়, আর তাছাড়া তুই তো কোনো অন্যায় করিসনি, ভুল তো আমি করেছি, তোকে ওভাবে বলাটা উচিত হয়নি,, কিন্তু কি করবো বল,, বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন,, ওদের নানা জনের নানা কথা শুনতে হোতো তোকে,, তাই আমি..... 

         ছাড়ো মা,, এখন চলো সবাইকে খেতে দিতে হবে তো,, ওরা শাশুড়ী বৌ মিলে সবাইকে খেতে দিতে থাকে,, আর সকলেই নতুন বৌমার রান্নার প্রশংসা করতে থাকে,, 

         পরের দিন বৌভাতের দিন দুপুরে ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠান হয়,, তারপর সন্ধ্যাসন্ধ্যায় রিসেপশন,, মিতুর বাড়ির লোকজন এসে অবাক হয়ে যায়,, যেমন সুন্দর মিতুকে সাজিয়েছে,, তেমন সুন্দর পুরো বাড়িটা,, বাগানটা,, সবাই নতুন বৌমা দেখে প্রশংসা করে,, তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব মিটিয়ে সবাই চলে যায়,, 

         তারপর নতুন বর বধূকে ফুলশয্যার ঘরে ঢুকিয়ে কিছু আনুষ্ঠানিক পর্ব মিটিয়ে সবাই বেড়িয়ে আসে,, মিতুর তো ভয়ে টেনশনে হাত পা কাঁপছে,, ও খাটের এক কোণি চুপ করে বসে আছে দেখে অমল এগিয়ে গিয়ে ওকে দুটো হাত ধরে দাঁড় করায়,,মিতুর আনত মুখটা আসতে আসতে তুলে ধরে ওর কপালে একটা চুমু খায়, তারপর ওর বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে,, মিতুর সারা শরীরে তখন শিহরন জাগে,, ও ও অমলকে জড়িয়ে ধরে,, তারপর দুজনে শুয়ে শুয়ে গল্প করেই সারা রাত কাটিয়ে দেয়।। 

        এইভাবেই চলছিল মিতু অমলের জীবন,, একবছর পর মিতুর একটা ছেলে হয়,, ছেলের নাম দেয় আয়ুষ,, খুব সুন্দর মিষ্টি ফুটফুটে,, বাড়ির সকলের আদরের আয়ুষ বাবা, মা, বড় দাদু ,বড় ঠাম্মি ,ঠাম্মি, দাদু, পিসি ঠাম্মা সকলের আদরে বড় হয়ে উঠতে থাকে,, এত আদরে ঐশ্বর্যে মানুষ হ‌ওয়া আয়ুষ সত্যিই মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠছে,, এত জনের আদরে বাঁদর হয়ে যায়নি,, একটা করে ক্লাশ উত্তীর্ণ হতে থাকে, এদিকে বড়রাও এক এক করে ওদের ছেড়ে চলে যায়,, এখন শুধু বাড়িতে ওর ঠাম্মি, পিসি ঠাম্মি, মা আর বাবা,, এবার আয়ুষ উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করে,, এরপর সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়,, দেখতে দেখতে আর ও কটা বছর পেরিয়ে গেছে,, আয়ুষ এখন একজন সফল ডাক্তার।। 

        অমল আর মিতু একটা সুন্দর মেয়ে দেখে আয়ুষের বিয়ে ঠিক করে,, একদিন শুভ দিনে শুভ ক্ষনে আয়ুষের বিয়ে হয়ে যায়,, আবার একটা নতুন বৌমা বাড়িতে  আসে।। 

          মিতু ওর বৌমা কে নিজের মেয়ে বলে বুকে টেনে নেয়।।