Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন  #শিরোনামঃ মুক্তির খোঁজে #কলমে- জুলি ব্যানার্জী #তারিখ-4/5/2021
আমি কমলিনী... মাঝে মাঝে যখন দুপুর বেলা  কিছুটা সময় পাই ডাইরি লিখতে বসি। এই অভ্যাস আমার অনেক ছোটবেলা থেকেই। মাঝে মাঝে যখন ছোটবেলায়  মায়ের কাছে …

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন  

#শিরোনামঃ মুক্তির খোঁজে 

#কলমে- জুলি ব্যানার্জী

 #তারিখ-4/5/2021


আমি কমলিনী... মাঝে মাঝে যখন দুপুর বেলা  কিছুটা সময় পাই ডাইরি লিখতে বসি। এই অভ্যাস আমার অনেক ছোটবেলা থেকেই। মাঝে মাঝে যখন ছোটবেলায়  মায়ের কাছে যেতাম....  তখন মায়ের বলা কথাগুলো ডাইরি বন্দি করে নিয়ে আসতাম।

 সত্যি মানুষ কত স্বার্থপর হয়  নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কত রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। বেশ মনে পড়ে মা বলেছিল আমার বাবা কিছু মিথ্যে প্রতিশ্রুতির জালে আবদ্ধ করে রাখতেন.....মাও কেমন বাবাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতেন। বাবা সেই সুযোগটাই নিতেন।


 মায়ের নাম ছিল করুণা ছোটবেলাতেই বিয়ে হয়ে যায়। ঠাকুমার একটাই সন্তান ছিল  রমেন.... মানে আমার বাবা।  ঠাকুমা বেশ অল্প বয়সেই বিধবা হয়ে যান। পৈত্রিক সম্পত্তি বাবা আর  ঠাকুমা মিলে দেখাশোনা করতেন।   গ্রামের স্কুলটি দাদু  তৈরি করেছিলেন ।

   বিয়ে হয়ে আসা থেকেই ঠাকুমা বেশ কড়া শাসনে রেখেছিলেন মাকে। বিয়ের বছর চারেকের মধ্যেই  দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। তৃতীয় সন্তান গর্ভে যখন  ঠাকুমার নির্দেশে বাবা  মাকে  রেখে দিয়ে আসে  বাপের বাড়ি।

 বাবাকে প্রশ্ন করেছিলেন মা.... কবে আবার নিতে আসবে আমায়? তুমি সুস্থ হয়ে উঠো, তারপর ঠিক নিয়ে যাব।

 বাপের বাড়িতে মা আবার দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন। বাবা মাঝে মাঝে আসতেন  টাকা পয়সা দিয়ে যেতেন। মা বুঝতে পেরেছিলেন কোনদিনই আর শ্বশুর বাড়ি ফেরা হবেনা। তিনটি কন্যা সন্তান নিয়ে  ভাইদের সংসারে রয়ে গেল মা। খুবই কষ্ট করে থাকতেন ভায়েদের  সংসারে।

 আমি মায়ের  ছোট কন্যা ছিলাম (চতুর্থ সন্তান) । মা আদর করে কুমু বলে ডাকত। কেন জানি না বাবা আমাকে  নিজের  কাছে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন।

  তিনদিদি পড়াশোনা করতে পারেনি। খুবই অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন মামারা। মামারা চাকরি করে... কেউ ব্যবসা করে। তাদের মতে মেয়েরা ঘরের কাজ শিখুক.... পড়াশোনা করে কি হবে।

 মায়ের বড় ইচ্ছে ছিল..... মেয়েরা পড়াশোনা শিখবে। আর গ্রামের মাটির স্কুলটা পাকা করবে। বাবা কে ইচ্ছের কথা জানাতে....

 বাবা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমি অবশ্যই তোমার ইচ্ছে রাখবো। এমনকি বাবার হাতে বেশ কিছু গয়না মা তুলে দিয়েছিলেন।

 পরে ঠাকুমা যখন মারা যায়... তখন তার টিনের বাক্সের ভেতর থেকে কাপড়ে বাঁধা মায়ের গয়না গুলো পাওয়া গিয়েছিল।  বুঝেছিলাম ঠাকুমার নির্দেশে এই প্রতিশ্রুতিও বাবা রাখতে পারেনি ।


 ঠাকুমা আমার লেখা পড়া বন্ধ করে দিয়ে... বিয়ে দেবার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমবার দেখেছিলাম বাবাকে.....  ঠাকুমার বিপক্ষে কথা বলতে। কখনোই কুমু পড়াশুনা  ছাড়বে না, যতদূর ইচ্ছে লেখা পড়া  করবে।

 মাঝে মাঝে বাবার প্রতি প্রচণ্ড রাগ হতো, মায়ের প্রতি অবহেলা কিছুতেই মেনে নিতে পারতাম না।

 মা কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। পড়াশোনা শিখে চাকরি করবোই। গ্রামের স্কুল আর  মাটির  থাকবে না। গ্রামের প্রতিটা মেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করবে।

 

বেশ কিছু বছর পর.....

 মাকে দেয়া কথা রাখতে পারলাম। মাটির স্কুল পাকা হল। গ্রামের প্রতিটি মেয়ে স্কুলে যেত। অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে আর বসতে হতো না।  পড়াশোনা শিখে নিজেদের চিন্তা ভাবনার উন্নতি হল।


 বাবা- ঠাকুমা  কেউ সেই সময় বেঁচে ছিল না। বাবার অবহেলা আর ঠাকুমার ঘৃণা,  মা কে খুবই যন্ত্রনা দিয়েছে। 

 পরবর্তীকালে  মা কে আমার কাছে নিয়ে চলে আসি।   কারণ.....  যে বাড়িতে কোনদিন সম্মান পায় নি.... সেই বাড়িতে মা আর ফিরে যেতে চাইলো না। পৈত্রিক বাড়ী সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে.... সমস্ত অর্থ স্কুল উন্নয়নের কাজে দিয়ে দেওয়া হল। 

    মা বিয়ের কথা অনেকবার বলেছিল, কিন্তু আমি রাজি হইনি। তোমাকে দেখেছি কষ্ট পেতে.... নতুন করে মিথ্যে ভালোবাসার  প্রতিশ্রুতির জালে আবদ্ধ হতে চাই না ।  আমার স্কুলের চাকরি, আর তুমি.... আমি  এইতো বেশ ভালো আছি।