সৃষ্টি সাহিত্য যাপনশিরোনাম:-#ভাগ্যের_পরিহাসকলমে:-#চিত্রা_কুণ্ডু_বারিকতারিখ:-০৪/০৫/২০২১
বিয়ের পর পর স্বামী স্ত্রীর মনের মিল অফুরন্ত। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যেন মন্ত্রের মতো বানী।
স্ত্রী.... এই শোনো একটা আবদার আছে। স্বামী...…
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
শিরোনাম:-#ভাগ্যের_পরিহাস
কলমে:-#চিত্রা_কুণ্ডু_বারিক
তারিখ:-০৪/০৫/২০২১
বিয়ের পর পর স্বামী স্ত্রীর মনের মিল অফুরন্ত। যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যেন মন্ত্রের মতো বানী।
স্ত্রী.... এই শোনো একটা আবদার আছে।
স্বামী.... আরে বলেই ফেলো না , এতে লজ্জা কিসের!
স্ত্রী.... চলো না , আজ একটু কোথাও ঘুরে আসি।
স্বামী... বেশ , অফিস থেকে ফিরে এসে যাবো চলো।
স্ত্রী.... বেশ তবে কিন্তু আজ বাইরে থেকে খেয়ে ফিরবো বলে রাখলাম।
স্বামী.... আচ্ছা বেশ তাই হবে।
প্রথম ধাপে এভাবেই চলতে থাকে নতুন সংসার।
বেশ কিছু বছর পর যখন একজন স্বামী স্ত্রী বাবা মায়ের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর থেকে শুরু তাদের এক মতভেদ। ইচ্ছে করে নয় , এ যেন কেমন করে এক বিভেদ সৃষ্টি করে কিছুতেই থামতে চায় না। বাচ্চাকে মনের মতো মানুষ করতে তখন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে নিজেদের সখ আহ্লাদ কোথায় যেন হারিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু এ নয় যে তাদের মধ্যে ভালবাসাটা হারিয়ে যায়। চোখের আড়াল হলে ভীষন কষ্ট হয় , অথচ প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে। আবার সামনে থাকলে দোষ ধরার কমতি নেই।
স্ত্রী.... শুনছো আজ তো রবিবার । তা মাসকাবারিটা আজ তুলে আনো।
স্বামী.... তা তুমি সারাদিন করো কী? সারা সপ্তাহ খেটে মরি , বলি একটা দিন বিশ্রাম নেবার জো নেই।
স্ত্রী.... হ্যাঁ, আমি তো সারা সপ্তাহ পাড়ায় পাড়ায় আড্ডা দিতে যাই । তাই এসময় টুকু আমার সময় হয়ে ওঠে না। তো কি আর করবে বলো তুমিই যাও। আসলে আজ তোমায় দেখে মনে হলো একটু হেঁসেলে যাই। সারা সপ্তাহ উপোস করে কাটাও । খুব কষ্ট হয় গো তোমার কথা ভাবলে।
স্বামী.... উহু...... কথায় যেন মুক্ত ঝরে পড়ে। ভাষা কি। যেন রোজ বিরিয়ানি, পোলাও, মাছের কালিয়া রেঁধে রেঁধে বয়স বাড়িয়ে ফেললো। ওই তো ছাইপাশ পিন্ডি গেলায় রোজ।
স্ত্রী.... সেই বলবেই তো। জামাকাপড় কাঁচা, ঘর মোছা, রান্না করা সব তো করার জন্য দশটা চাকর বাকর রেখে দিয়েছো। আমি রানীর মতো পায়ের ওপর পা দুলিয়ে বসে দেখি। বলি মুখে বাঁধে না তাই তোমার। হতচ্ছাড়া এক কিপটে মানুষের সঙ্গে বাবা বিয়ে দিলো।
স্বামী.... এই এই কি বললে আমি কিপটে.... ওই যে সেদিন দামী বালুচরী নিলে.... কানের একখান ঝুমকো বানাতে দিলে ওটা কি তোমার বাপ এসে দিয়েছে?
স্ত্রী.... আরে আরে আমার বাবাকে এখানে টানছো কেন? খুব খারাপ হচ্ছে বলে দিলাম। সংসারে বিনি পয়সায় চাকরানী ভেবেছো আমায় যে শুধু শুধু খেটে যাবো! বেশ করেছি আবার নেবো।
এইভাবেই চলতে থাকে ভালবাসার সংসার। ঝগড়া ভালবাসা দিয়ে এগিয়ে চলে। এমনও কথা শোনা যায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে , সেটা ছাড়াছাড়ির পর্যায়। মরণ কামনাও করতে থাকে। হয়তো পাশের বাড়িতেই শুনতে পাওয়া যায় দুজন দুজনকে বলে চলেছে "কাল থেকে যেন তোমার মুখ যেন দেখতে না হয়।" তখন মনের ভিতর কেঁপে ওঠে।
এমন একদিনের কথা বলি। এক পরিবারে এক ছাদের নিচেই আলাদা দুজনের বাস। তারা দুজনেই রোজগেরে। সুতরাং রান্না খাওয়া এক রান্নাঘরে হলেও নিজেরাই নিজেদের রান্না করে নেয়। খবর রাখে না কেউ কারো। মুখ একটু আধটু দেখতে পেলেও ঘুরিয়ে নিতেও সঙ্কোচ বোধ হয় না। কয়েকদিন যাবৎ স্বামী দেখতে পাচ্ছেন তার স্ত্রীর দরজাটি বন্ধ। অথচ বাইরে তালাও নেই। কোনো সাড়া শব্দ নেই। তার রান্না ঘরে আসা যাওয়া নেই। অথচ সম্মানের কাছে মাথা নত করতে ইচ্ছা নেই। সাতদিন পেরিয়ে গেছে তবু তার দেখা নেই। মন নরম করতে বাধ্য হলেন। দরজার কাছে গিয়ে টোকা দিতেই খুলে গেল দরজা। দেখলেন তার ভালোবাসার মানুষটি নীরবে ঘুমিয়ে আছে ঘরময় পঁচা গন্ধ। দৌড়ে বেরিয়ে এলো পুলিশে খবর দিলেন। পুলিশ আসতেই সাথে ডাক্তার নিয়ে দেখতেই বলেন বর্তমান মারন রোগেই হয়েছে তার মৃত্যু। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেন এতদিন জানতে পারেননি এভাবে পড়ে থাকা মানুষটার খোঁজ রাখেননি কেমন পুরুষ আপনি। ঝগড়া বিবাদ থাকতেই পারে সবার। তাই বলে সাতদিন মানুষটি ঘরে বন্দী, কেন কি হয়েছে এই প্রশ্ন জাগে নি একবার আপনার মনে। কিসের অহঙ্কার এতো? যে ভালবাসাকে ঘৃণা করে আত্ম অহঙ্কারে মজে উঠলেন। বেশ আমরা বডি নিয়ে যাচ্ছি। আপনার সই দিয়ে শেষ কাজ রক্ষা করুন। ভালো করে ঘর পরিষ্কার করুন আর শান্তি পান আজীবন।
হারিয়ে গেল একমুহুর্তে হারিয়ে গেছে সারাজীবনের সঙ্গী। শান্তি এবার অফুরন্ত শান্তি তার জীবনে। আজ তার চোখ স্থির, চোখের জল শুকিয়ে গেছে। কার জন্য আজ কাঁদবে যাকে বলেছিলেন যেন "তার মুখ দেখতে না পায়।" হ্যাঁ সে সত্যিই তার মুখ লুকিয়ে, অভিমানী মন নিয়ে বিদায় জানিয়েছেন। একেই বলে ভাগ্যের পরিহাস।।