Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
মুসলমান সেবায়েত হিন্দু মন্দিরে ******************************তুষারতীর্থ অমরনাথের উল্লেখ আছে কলহনের রাজতরঙ্গিনী গ্রন্থে যাকে কাশ্মীরের ইতিহাসের অন্যতম উৎস মানা হয়। অমরনাথ বিখ্যাত তার প্রাকৃতিক বরফের শিবলিঙ্গের জ…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন


মুসলমান সেবায়েত হিন্দু মন্দিরে 

******************************

তুষারতীর্থ অমরনাথের উল্লেখ আছে কলহনের রাজতরঙ্গিনী গ্রন্থে যাকে কাশ্মীরের ইতিহাসের অন্যতম উৎস মানা হয়। অমরনাথ বিখ্যাত তার প্রাকৃতিক বরফের শিবলিঙ্গের জন্য যা গোটা শ্রাবণ মাস থাকে। এই শিবলিঙ্গ প্রথম আবিষ্কার করেন বুটা মালিক বলে এক মুসলমান মেষপালক। কথিত আছে বুটা মালিক ওই জায়গায় এক সাধুর দর্শন পান যিনি তাকে এক থলে ভর্তি কয়লা দেন, বুটা মালিক বাড়ি এসে দেখেন যে সেই কয়লা সবটাই সোনায় রূপান্তরিত হয়েছে। দেখে অভিভূত বুটা সেই সাধুকে ধন্যবাদ দিতে গিয়ে দেখেন সেখানে ওই বরফের শিবলিঙ্গ। বুটা মালিকের বংশধররাই আজও এখানে বাবা অমরনাথের সেবায়েত।আমাদের প্রাচীনশাস্ত্র অনুযায়ী এখানে বসে মহাদেব পার্বতীকে অমরত্ব লাভের গুপ্তকথা শুনিয়েছিলেন। জীবন ও মৃত্যুর চক্র থেকে বের হবার এই  কথা গুপ্তস্থানে বলবেন বলে শিব পাহেলগাঁওতে তাঁর ত্রিশূল, চন্দনবাড়িতে মস্তকের চন্দ্র, শেষনাগে গলার সর্প, পঞ্চতরণীতে পঞ্চভূত যথা ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও  আকাশ তত্ত্ব আর মহাগুনাস পর্বতে পুত্র গণেশকে রেখে অমরনাথের গুহায় গেছিলেন। কিন্ত এই গুপ্তকথা অদ্ভুত ভাবে শুনে ফেলেছিলো দুটি কবুতর। শিব পার্বতীকে বলেছিলেন যে উনি এই কথার মাঝে মাঝে পার্বতীকে জিজ্ঞেস করবেন তিনি বুঝেছেন কিনা, পার্বতী যেন তখন "হুঁ হুঁ "বলে সাড়া দেন। কথা শুনতে শুনতে পার্বতী ঘুমিয়ে পড়েন আর ওই কবুতর জোড়া সেই হুঁ হুঁ করে সাড়া দিয়ে যায়। শিব কথা শেষ করে পার্বতীকে নিদ্রিত দেখে ভাবেন যে কে তাহলে সাড়া দিল এবং দেখেন ওই জোড়া কবুতর। দেখে ত্রিশূল নিয়ে মারতে উদ্ধত হলে তারা গিয়ে আশ্রয় নেয় এক মুনির স্ত্রীর আঁচলের আড়ালে। তখন সেই মুনি শিবকে নিরস্ত করে বলেন যে অমর কথা শ্রবণ করে ওরা তো অমর হয়ে গেছে। সেই জোড়া কবুতর আজও ওখানে বিদ্যমান। 


আরেক সতীপীঠ মরুতীর্থ হিংলাজ যে হিংলাজ মাতার মন্দিরে (এটি পাকিস্তানে) পৌঁছতে হলে হাঁটতে হয় প্রায় 200 কিলোমিটার পথ।মরুভূমির মধ্যে দিয়ে সে পথ  দুর্গম আর রাস্তা হারালে নির্ঘাত মৃত্যু কেননা সেই বিস্তীর্ণ মরুভূমির মধ্যে ছিল মাত্র ৩-৪ টি জলের কুয়ো। দিনেরবেলায় প্রচন্ড গরমে হাঁটা সম্ভব নয় তাই তীর্থযাত্রীরা হাঁটতেন রাতে। পথ দেখানোর জন্য প্রত্যেকটি দলের সঙ্গে থাকতেন একজন "ছড়িদার"।আসলে এই ছড়িদাররা কিন্তু বেশির ভাগই হিন্দু নন - তারা মুসলিম। আর কি আশ্চর্য ! সেই "আল্লাহ কি বান্দে", ছড়িদাররাও মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন নিকষ কালো রাতে, তারার আলোয়, ধু ধু মরুভূমিতে তাদের পথ দেখান স্বয়ং শিব - তারা নিমিত্ত মাত্র ! কে জানে, হয়তো ব্যাপারটা উল্টো ! হয়তো সেই দুর্গম যাত্রায়  "ইন্সাআল্লায়" ভরসা রাখেন স্বয়ং অমরনাথ !   


মরুতীর্থ হিংলাজ একটি মহাশক্তিপীঠ কেননা এখানে নাকি পড়েছিল সতীর খণ্ডিত মস্তক - আর হিংলাজ মাতারও এমনই মাহাত্ম্য যে তাকে মানেন পাকিস্তানের সে অঞ্চলের মুসলিমরাও - আজও ! তারা হিংলাজ যাত্রাকে বলেন "নানী মাতা কি হজ" ! 


হিংলাজ মাতার আরেকটি মাহাত্ম্য আছে আর সেটি পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের সঙ্গে সম্পর্কিত। আসলে পুরীর মন্দিরও একটি মহাশক্তিপীঠ - এখানে পড়েছিল সতীর পা এবং এখানে দেবী পূজিত হন "বিমলা" নামে ।পুরীর রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথদেবের স্বপ্নাদেশ পান যে তাকে রোজ ৫৬টি পদে  রেঁধে  "মহাপ্রসাদ" ভোগ দিতে হবে তখন তিনি ভীত, সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েন। পরের দিন তার স্বপ্নে আবির্ভূত হন দেবী হিঙ্গলা (হিংলাজ মাতা) এবং বলেন কোনো ভয় নেই, তিনি সেই রান্নাঘরের আগুন হবেন - রাজা শুধু মাটির হাঁড়িতে একটার উপর আরেকটা রান্না চাপিয়ে দরজা বন্ধ করে দেবেন, রান্না করার দায়িত্ব তার !

.

পুরীর মন্দিরের সেই রান্নাঘরে এখনো কাঠের আগুনে একটা মাটির হাঁড়ির উপরে আরেকটা হাঁড়ি চাপিয়ে রান্না হয়। রান্নার দায়িত্বে থাকা পুরোহিতরা বলেন হিংলাজ মাতার এমনই সে রান্না যে সবার আগে রান্না হয় সবচেয়ে উপরের হাঁড়িতে আর সবার শেষে সবচেয়ে নিচের হাঁড়িতে। সে রান্না মন্দিরে এনে জগন্নাথদেব ও মাতা বিমলাকে উৎসর্গ না করা পর্যন্ত নাকি তার থেকে কোনো গন্ধ বের হয় না ! এমনই সম্প্রীতির ছবি কিন্তু আজও ছড়িয়ে আছে বহু তীর্থক্ষেত্রে বা জনপদে কিন্তু অন্তরের আঁধার ঘোচাতে সেটুকু বুঝতে হবে যে!!!


পথের ক্লান্তি ভুলে হিংলাজ মাতার স্নেহ ভরা কোলে বসে "শীতল হবার" সৌভাগ্য হয়তো সবার হয়না, কিন্তু তার হাতে রাঁধা জগন্নাদেবের মহাপ্রসাদের অনন্য স্বাদ কিন্তু আমরা অনেকেই পেয়েছি - তাই বা কম কি ? 


বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর !


জয় জগন্নাথ !      


            

তথ্য ঋণ : কালিকানন্দ অবধূতের মরুতীর্থ হিংলাজ ও লেখক শ্রীষষ্ঠীপদ  চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ, আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন, ইন্টারনেটের ছবি 


✍️পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায়