#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন #শিরোনামঃ গোধূলির আলো#কলমে-জুলি ব্যানার্জী #তারিখ-28/4/2021
অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে সেদিন বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। কালো মেঘে আকাশ ঢেকেছে। মনে হয় বৃষ্টি হবে, পথঘাট বেশ অন্ধকার যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না…
#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন
#শিরোনামঃ গোধূলির আলো
#কলমে-জুলি ব্যানার্জী
#তারিখ-28/4/2021
অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে সেদিন বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। কালো মেঘে আকাশ ঢেকেছে। মনে হয় বৃষ্টি হবে, পথঘাট বেশ অন্ধকার যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
একা দাঁড়িয়ে... যাত্রী নেই বললেই চলে। টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হল।
ছাতা আনতে ভুলে গেছি অসময়ে বৃষ্টি হবে কে জানতো। আজ জানিনা কি হবে বাড়িতে মা চিন্তা করছে, মায়ের হাই প্রেসার, প্লাস সুগার, জানিনা আবার অসুস্থ হয়ে না পড়ে।
কেন জানিনা হঠাৎ আজ অনিমেষের কথা বড্ড মনে পড়ছে।অনিমেষ আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো কলেজের ফ্রেন্ড অনিমেষ।
আমাকে খুব ভালোবাসতো মনে হয়। মুখে কোনদিন বলেনি কিন্তু হাবেভাবে বোঝা যেত । অনিমেষ কে ঘিরে আমিও নানান স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। অনিমেষ এখন কোথায় থাকে সেভাবে খোঁজ করিনি কোনদিন। বাবা যখন অসুস্থ ছিল অনিমেষ কয়েকবার আমাদের বাড়ি এসেছিলো। বাবার কথাবার্তায় বুঝতে পারতাম অনিমেষকে একদমই বাবার পছন্দ ছিল না। সেটা যে কেনো আজও অধরা রয়ে গেছে।
মাকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছি বাবার অনিমেষকে না পছন্দ করার কারণ কি? মা বলতে পারেননি। তোমার বাবাকে তো জানোই । তিনি যা সিদ্ধান্ত নেন সেটাই চূড়ান্ত।
বৃষ্টিটা বেশ জোরেই নেমে এলো ভয় ভয় করছে। পাশাপাশি দু-চারজন দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দেখে খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না চোখের দৃষ্টি কেমন যেন অস্বাভাবিক। ক্রমশ বৃষ্টি বাড়ছে বজ্রপাত আর বিদ্যুতের আলোকছটায় চারদিকটা আলোকিত হয়ে যাচ্ছে' হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার এসে সামনে দাঁড়ালো আমি কিছুটা পিছিয়ে গেলাম.... কলকাতার রাস্তা বিপদের ঝুঁকি আছে। কালো কাঁচের জানালা অর্ধেকটা নামিয়ে বললে উঠে এসো সুচরিতা।
গলাটা বড্ড চেনা মনে হলো। বেশ বৃষ্টি নেমেছে জোরে। বৃষ্টিতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে ভালো দেখা যাচ্ছে না। গাড়ির ভিতরের আলোয় ভেজা অবস্থায় তাকিয়ে ভালো করে দেখলাম অনিমেষ। তারপর উঠে বসলাম গাড়ির ভিতরে। কতদিন পর দেখলাম অনিমেষকে কিছুতেই নিজের মনকে বোঝাতে পাচ্ছিলাম না।
গাড়ির জানালার কাঁচ টা বন্ধ করে দাও.... তুমি আরও ভিজে যাচ্ছো সুচরিতা। ভালো লাগছে.... অনেকদিন পর তোমাকে পাশে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। বৃষ্টির জল আর চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। অনিমেষ জিজ্ঞাসা করলে কাকু- কাকিমা কেমন আছেন? বাবা বছর দুয়েক হলো আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এখন আমরা দুজনেই থাকি। তুমি বিয়ে করোনি সুচরিতা? না আর বিয়ে করা হয়নি। তোমার ভালোবাসাকে ঘিরেই এখনো বেঁচে আছি। মানে কী?তুমি আবার কবে উন্মুক্ত মনে আমাকে ভালোবেসে ফেললে? আমি কি তোমায় কোনো দিন ভালোবাসি বলেছি? না তা বলনি ... তাহলে তুমি কী করে ভেবে নিলে... কলেজে যখন প্রথম আলাপ হলো তোমার সঙ্গে । তখন থেকেই কেন জানিনা তুমি আমার আলাদা সময় দিতে ।
কত বার আবার নোটস জোগাড় করে দিয়েছো। তোমার সঙ্গে সিনেমায় গিয়েছি। কফিহাউসে সময় কাটিয়েছি। এইগুলো কি ছিল তাহলে অনিমেষ? তোমার প্রয়োজন ছাড়াই তুমি কলেজে আসতে....মনে পড়ে?
এ তো স্বাভাবিক ঘটনা সুচরিতা একে তুমি প্রেম ভেবে নিলে কি করে? আমি তো কোনদিন তোমাকে ভালোবাসি জানাই নি। জানাও নি ঠিকই কিন্তু আমিতো মনে মনে তোমাকে....
যাক সে সব কথা। সুচরিতার চোখ দিয়ে অঝোরে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। তুমি মিথ্যে কথা বলছো অনিমেষ তুমি আগেও ভালবাসতে এখনো ভালবাসো। কিছু তো কারণ আছে অনিমেষ যার জন্য তুমি এত বড় কথাটা বলতে পারলে। কারণ কিছুই নেই সুচরিতা পরিস্থিতি বদলে গেছে। সময় মানুষকে বদলে দেয় , আগামী পথ চলা তবেই মসৃন হয়ে ওঠে। তোমার কোন কথাই বুঝতে পারলামনা অনিমেষ সব যেন ধোঁয়াশা লাগলো।এখন এসব কথা বলে কোন লাভ নেই।
এখনো সে সব কথা মনে পড়ে.....
সুচরিতা বললে আমার সেকেন্ড ইয়ার ছিলো তুমি সেই বছর পাশ করে বেরিয়ে গেলে কলেজ থেকে। জানো সুচরিতা বেকারত্বের জ্বালা নিয়ে বসে থাকতে হয়নি বেশি দিন কাকার দৌলতে একটা ভালো চাকরি পেয়ে যাই কলকাতাতে তার কিছুদিন বাদেই নাগপুরে বদলি হয়ে যাই । তারপর ফ্যামিলি ওখানেই নিয়ে চলে যাই।
তুমি কলকাতায় আর কতদিন আছো অনিমেষ?? কালকেই বাড়ি ফিরে যাব ভাবছি। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা তারপর ছোট্ট ছেলে বড্ড দুরন্ত...লীনা একা পেরে ওঠে না। তোমার স্ত্রী লীনা? হ্যাঁ ও তোমাকে বলা হয়নি না... লীনা সম্বন্ধে।
লীনার সঙ্গে প্রথম নাগপুরের অফিসে আলাপ। একই সঙ্গে কাজ করতাম তারপর দু মাসের আলাপ। তারপরেই বিয়ে, লীনা খুব ভালো মেয়ে স্যাক্রিফাইস করতে জানে। সে বিয়ের পর চাকরিটা ছেড়ে দেয়। আমার বাবা-মাকে খুবই ভালোবাসে সে। আমি লিনাকে পেয়ে খুবই হ্যাপি। অনিমেষ তুমি কত সহজভাবে কথাগুলো বলতে পারলে । ভালো থাকাটা নিজের ব্যাপার জানো তো সুচরিতা। কিছুটা সমঝোতাও বলতে পারো। সবার চিন্তা ভাবনা সমান নয় অনিমেষ... তাহলে তোমায় হয়তো আমি ভুলেই যেতাম।
সুচরিতা বললে আমাকে এইখানেই নাবিয়ে দাও অনিমেষ। মিনিট খানেক হাঁটা পথ আমি চলে যেতে পারবো। তাছাড়া বৃষ্টি থেমে গেছে। আর হ্যাঁ ধন্যবাদ তোমায়... অনিমেষ... কিসের ধন্যবাদ? এইযে বিপদে তুমি আমায় গাড়ী করে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে গেলে।
এতে ধন্যবাদ কিসের বন্ধু হয়ে বন্ধুর কর্তব্যটুকু করলাম। সুচরিতা বললে ভালো থেকো অনিমেষ। জানলা দিয়ে ফোন নাম্বার লেখা কার্ড আর একটি ছোট্ট চিরকুট এগিয়ে দিয়ে বললে সুচরিতা কখনো কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে অবশ্যই ফোন করতে দ্বিধা বোধ করো না। আমি তোমার পাশে সবসময় থাকবো।
সুচরিতা কিছুটা যাবার পর তাকিয়ে দেখলো অনিমেষের গাড়ি তখনও দাঁড়িয়ে আছে। সুচরিতা গলির শেষ বাঁকটা নেওয়া পর্যন্ত অনিমেষ হাত নেড়ে গেল।
অনিমেষের দেওয়া কার্ড আর ছোট্ট চিরকুট বাড়িতে গিয়ে দেখল সুচরিতা। কার্ডে লেখা আছে অনিমেষ এর ফোন নাম্বার ..... ছোট্ট গোলাপি কাগজের চিরকুটে লেখা আছে
সুচরিতা এখনো তোমায় আমি ভালোবাসি।কিছুতেই ভুলতে পারি না যে । তোমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারলাম না সুচরিতা। আজ ধরাই পড়ে গেলাম তোমার কাছে।
সুচরিতা চোখ মুছতে মুছতে বারান্দায় গিয়ে দেখে গলির মোড়ে তখনও অনিমেষের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সুচরিতার ফোনটা বেজে ওঠে । অনিমেষের ফোন.... আবার হয়তো দেখা হবে হঠাৎ কোন পথের বাঁকে। এবার তাহলে আসি সুচরিতা। এই বলে অনিমেষ গাড়ি নিয়ে চলে গেল। শূন্য হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে রইল পথের দিকে সুচরিতা অনেকক্ষণ।
সমাপ্ত....