Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সাংবাদিক রামমোহন রায়: ২৫০তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ

✍️সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যম। সংবাদ মাধ্যম জনমত গড়ে তোলে। ১৮২১ সালে, তৎকালীন পরাধীন ভারতে, তাঁর সম্পাদিত সংবাদ কৌমুদীর পাতায় সমাজ সংস্কারের বিষয়ে যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য রাখা, দেশবাসীকে তাদের অধিকার সম্প…

 




✍️সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 


গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যম। সংবাদ মাধ্যম জনমত গড়ে তোলে। ১৮২১ সালে, তৎকালীন পরাধীন ভারতে, তাঁর সম্পাদিত সংবাদ কৌমুদীর পাতায় সমাজ সংস্কারের বিষয়ে যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য রাখা, দেশবাসীকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা ও রাজনৈতিক বিকাশ ঘটানোর কাজটি যথাযথ ভাবে করার চেষ্টা করেছেন তিনি। 


বিশিষ্ট প্রবীণ সাংবাদিক ও গবেষক কৃষ্ণ ধরের মতে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য প্রথম কন্ঠস্বর তিনিই। সংবাদ কৌমুদী প্রথম বাঙালি সম্পাদিত ও পরিচালিত সংবাদপত্র। শুধু তাই নয়। বিভিন্ন সময়ে পাঁচটি সংবাদপত্রে দাপটের সঙ্গে সাংবাদিকতা করেছেন তিনি। ক্ষুরধার কলমে তথ্য সমৃদ্ধ ও যুক্তিনিষ্ঠ বক্তব্য পেশ করেছেন বারবার। তিনি রাজা রামমোহন রায়। ভারতের প্রথম আধুনিক পুরুষ। ঐতিহাসিকদের মতে, আধুনিক ভারতের জনক তিনি। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, অশিক্ষার অন্ধকার দূর করে মুক্ত চিন্তা ও যুক্তিবাদের আলোয় এক উজ্জ্বলতম পথ প্রদর্শক। 


শুধু বাংলা সংবাদপত্র নয়, রামমোহন ফার্সি ভাষাতে লিখিত মিরাত উল আকবর প্রকাশ করতেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল, সার্বিকভাবে ভারতবাসীর মনন চিন্তনের উন্নতি। ফরাসি বিপ্লবের কথা দেশবাসীকে জানিয়েছেন রামমোহন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, বিপ্লব যে মানুষের মুক্তি আনতে পারে তা দেশবাসীকে জানানোর প্রয়োজনীয়তার উপলব্ধি করেছেন তিনি।

বাল্য বিবাহ, সতীদাহের মতো কুপ্রথার বিরুদ্ধে যেমন লড়াই করেছেন, তেমনি ছেড়ে কথা বলেননি শাসক ইংরেজকে। দ্বিভাষিক সাময়িকপত্র ব্রাহ্মনিক্যালে শাসনের সুযোগে ইংরেজ দ্বারা ধর্মান্তরকরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন রামমোহন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের রিডার সুপর্ণা গুপ্তের মতে, রামমোহনের যুক্তিবাদ ও সার্বজনীনতার সাথে মিলেছিল সহনশীলতা ও সমন্বয়ের বিরল ক্ষমতা। তাঁর প্রজ্ঞা তাঁকে শিখিয়েছিল যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করে তবেই গ্রহণ করা।


রামমোহন ছিলেন বহুভাষাবিদ। বাংলা, হিন্দি, সংস্কৃত, উর্দু, ফার্সি, ইংরেজি থেকে হিব্রুর মতো কঠিন ভাষা সুপন্ডিত। সাহেবদের বাংলা শেখানোর জন্য বাংলা ও ইংরেজিতে ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন। ১৮১৫ থেকে ১৮১৯এর মধ্যে লিখে ফেলেন বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কঠোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, মান্ডুক্যপনিষদ প্রভৃতি।

সুদক্ষ সাংবাদিকের চোখ দিয়ে দেখেছেন ভারতের সামগ্রিক পরিস্থিতি। বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগ আলাদা করতে চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জোরালো সওয়াল করেন তিনি।


ঐতিহাসিকদের মতে, মুক্ত চিন্তা ও চেতনার অগ্রদূত হয়ে আলোকবর্তিকা জ্বেলে দিয়েছেন রামমোহন। সেই আলোকেই ভারতের নবজাগরণের পথটি ত্বরান্বিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতির জীবনে সার্বিক বিকাশে তথা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও গুরুত্ব যে অনস্বীকার্য, সেটিই আদতে মান্যতা পায়।।