Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

গোলাপী চশমা খুলুন মোদী,এই চশমায় সেন্ট্রাল ভিস্টা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়বে না : রাহুল গান্ধী

ছেলে বেলায় দেখা সত্যজিত রায়ের সদগতি ছবিটির কথা আজ আবার স্মরনে চলে এলো।পায়ে দড়ি বেঁধে প্রকাশ্য রাস্তায় টানতে টানতে শবদেহ নিয়ে যাচ্ছেন শ্মশানে ।সদগতির সেই শব দেহের কপালে শ্মশান নামক একটি জায়গা অন্তত জুটেছিল।কিন্তু বর্তমান কোভিড পরি…


তরুন চট্টোপাধ্যায় 
ছেলে বেলায় দেখা সত্যজিত রায়ের সদগতি ছবিটির কথা আজ আবার স্মরনে চলে এলো।পায়ে দড়ি বেঁধে প্রকাশ্য রাস্তায় টানতে টানতে শবদেহ নিয়ে যাচ্ছেন শ্মশানে ।সদগতির সেই শব দেহের কপালে শ্মশান নামক একটি জায়গা অন্তত জুটেছিল।কিন্তু বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে শ্মশানে ও ঠাঁই নেই।ঠাঁই নেই,ঠাঁই নেই,ভরিয়াছে তরী।তাই কি মা গঙ্গা ই ভরসা।নদীতে ভাসছে অগনিত শব।হাসপাতালে কয়েক মাইল লম্বা লাইন।ছিনিয়ে নিয়ে গেছে জীবনের সুরক্ষার অধিকার ।অক্সিজেন আকাল।হাসপাতালে বেড নেই।জীবনদায়ী ওষুধ বাজার থেকে অমিল।আর টি পি সি টেস্ট করাতেও নাজেহাল নাগরিক।যার কাছে যেমন ইচ্ছে দর হাঁকা এখন নিত্য ঘটনা।সে ওষুধ হোক কিংবা অ্যাম্বুলেন্স।অক্সিজেন হোক কিংবা হাসপাতালের বেড।সমগ্র ভারত জুড়ে এক ছবি।


অথচ গোলাপী চশমা চোখে এঁটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ।না না একথা প্রতিবেদক বলছেন না।বলছেন দেশের বিরোধী দলের কংগ্রেস নেতা রাহূল গান্ধী ।তিনি আরও বলেন গোলাপী চশমাটা খুলুন।এই চশমা দিয়ে সেন্টাল ভিস্টা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।ফলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কে দেখতে হলে গোলাপী চশমা ছেড়ে খোলা চোখে দেখতে হবে।

গঙ্গায় ভেসে আসছে শবের পর শব।কখনো বিহারের বক্সারে, আবার কখনো উওরপ্রদেশের গাজিপুরে।অর্ধ পোড়া কিংবা পচা গলা মানুষের দেহের ছবি দেখতে দেখতে সেই সদগতির কথাই মনে এলো।যদিও সেখানে ছবিটি এতো নিষ্ঠুর নয়।এতো ভয়ানক নয়।এতো মৃতদেহের স্তূপ ও ছিল না সে ছবিতে।তবুও ভারত জুড়ে মানুষ এ ছবি দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন।কিন্তু আজ।গঙ্গায় লাশের পর লাশ ।তবুও ক্ষোভ নেই।কারন নিজের মৃত্যু ভয় আজ মানুষকেই গ্রাস করেছে।

মৃতদেহ গুলি বিহার না উওরপ্রদেশের তা নিয়ে চলছে দড়ি টানাটানি ।কোথা থেকে এলো এই সব মৃতদেহ সেই ময়নাতদন্ত করতে করতে দুই রাজ্যের প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা নানা কথা বলছেন।আর সেই সব সংবাদে মানুষের মন আরো ভারি হয়ে উঠছে ক্রমাগত ই।

বিহারের এক বিজেপি সাংসদ গুরুতর এক অভিযোগ এনেছেন।তাঁর অভিযোগের তীর দুই রাজ্যের অ্যাম্বুলেন্স চালকদের বিদ্ধ করেছে।এরাই নাকি সেতু থেকে গঙ্গার বুকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ছেন মৃতদেহ গুলি।আর তা ভাসছে গঙ্গার জলে।শুধু গঙ্গা কেন যমুনাতেও দেখা গেছে আধপোড়া দেহ ভেসে যেতে।কিন্তু প্রশ্ন এতোগুলি মৃতদেহ ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হলো গঙ্গা তে ,কারো চোখে পড়লো না সে দৃশ্য ।কোন সি সি টি ভি ক্যামেরায় ধরা পড়লো না।তবে কি ইচ্ছে করেই তা চেপে দেওয়া হয়েছে।লাশের স্তূপ কমানোর এটাই কি সবথেকে ভালো উপায় ।

নদীতে ভেসে আসা এই সব পচাগলা আধপোড়া দেহের বীভৎসতা অতিমারি মোকাবিলায় উওরপ্রদেশের যোগী আদিত্য নাথ সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার ছবি সামনে নিয়ে এসেছে।কেন্দ্রের মোদী সরকারের ভয়ানক রকম নিষ্ক্রিয়তার ছবি টিও জনগনের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ।সেন্টাল ভিস্টা নিয়ে মোদী সরকারের অতি তৎপরতা চোখে পড়লেও কোভিড নিয়ে সেই তৎপরতা আজ কোথায় ।ভ্যাকসিন নিয়ে ও কেন্দ্রের উদাসীনতা লক্ষ্য করেছেন বিরোধী দলগুলি ।

কংগ্রেস নেতা রাহূল গান্ধী সহ বিভিন্ন বিরোধী দল নিত্য টুইটে বিদ্ধ করছেন গোলাপী চশমা পরা নরেন্দ্র মোদীকেই।নরেন্দ্র মোদী কে উপদেশ দিয়ে রাহূল গান্ধী বলেছেন গোলাপী চশমাটি খুলুন।ওটি পড়ে থাকলে সেন্টাল ভিস্টা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়বে না।খোলা চোখে দেখতে হবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ।

বক্সারের চওসা গ্রামের কাছে গঙ্গার পাড়ে যে শতাধিক শবদেহ দেখা গিসলো তা নিয়ে বিহার ও উওরপ্রদেশের সরকারের মধ্যে রয়েছে চাপান উতোর।অনেকেই মনে করছেন, উওর ভারতের গ্রাম গুলিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে ভাবে আছড়ে পড়েছে তা সুনামিকেও হার মানায় ।গ্রামের মানুষ এই সব মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে কোভিড সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে চাইছেন।এছাড়া গ্রামের শ্মশানে কোভিড বিধি মেনে সৎকার করার রীতি অনেকেই জানেন না।অধিকাংশ মানুষই এই ব্যাপারে অজ্ঞ ।এছাড়া অতিমারির এই ভয়াবহতা গ্রামের মানুষের আর্থিকসমস্যা ও তৈরি করেছে।সামান্য কাঠ কেনার পয়সাও নেই তাঁদের পকেটে।ফলে লাশ ভাসিয়ে দিতেও পারেন তাঁরা ।যদিও সবটাই অনুমান ।কোন উল্লেখ যোগ্য প্রমান হাতে নেই।তবুও উওরপ্রদেশের সরকার বিহারে প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলছেন।

কিন্তু বক্সারের জেলা শাসক আমান সামির উল্টো কথাই বলছেন।গ্রামের মানুষের সৎকারের পয়সা নেই,কাঠ কিনতে পারছেন না এটি কোন যুক্তি নয়।এটি সম্পূর্ণ ভুল।দেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার রীতি ও নেই বিহারে।আর এমন ঘটনা ঘটলে তাঁর প্রত্যক্ষ দর্শী তো থাকতোই।এসব কিছু ঘটে নি।কিন্তু এতে করেও দুই রাজ্যের চাপান উতোরে আজও ভাঁটা পড়েনি।

আর এরি মধ্যে বিহারের এক বিজেপি সাংসদের অভিযোগ কে ঘিরে চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে দুই রাজ্যের মধ্যেই ।বিহারের সারন ও উওরপ্রদেশের বালিয়ার মধ্যে জয়প্রভা সেতু রয়েছে গঙ্গার ওপরেই।অ্যাম্বুলেন্স বোঝাই করে মৃতদেহ নিয়ে এসে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে গঙ্গায় ।আর এই কাজ দুই রাজ্যের অ্যাম্বুলেন্স চালকেরাই করেছেন বলে অভিযোগ উঠছে।

রাতভোর অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু দেহ তুলে তা ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তবে ঘন্টার পর ঘন্টা জলে পড়ে থেকে তা পচে গলে নষ্ট যে হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।তবে ভবিষ্যতে পরিচয় জানতে ডিএন এ টেস্ট করা হবে বলে জানা গেছে।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এই ঘটনায় ব্যথিত।রাজ্য বাসীকে তিনি অনুরোধ করেছেন মা গঙ্গার মর্যাদা বজায় রাখতে।

বিজেপি সরকারের কাজকর্মে চূড়ান্ত হতাশ রাহূল গান্ধী মানুষকে মুখ খুলতে আহ্বান জানিয়েছেন ।স্পিক আপ ইন্ডিয়া নামে এক মিনিট তেরো সেকেন্ডের এক ভিডিয়ো তিনি টুইট করেন।আর সেই ভিডিয়ো তে তিনি বার বার বিদ্ধ করেন দেশের মোদী সরকার কেই।

ভ্যাকসিন নিয়ে ও নানা অভিযোগ তোলেন তিনি।দেশের অর্ধেক এর বেশি মানুষের কাছে নেটের সুবিধা নেই ।অথচ এই সরকার এখনো অ্যাপ নির্ভর।

আরোগ্য সেতু ও কো উইন অ্যাপের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ও তাঁর কটাক্ষ ।অযোগ্য সেতু ও নো উইন অ্যাপ বলে কটাক্ষ করতে তিনি ছাড়েন নি।

আর গোলাপী চশমা ছাড়ার কথা তো বার বার বলেছেন।যা দিয়ে সেন্টাল ভিস্টা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।

গঙ্গা দিয়ে ভেসে যাচ্ছে শবের পর শব।আর আমরা চোখ বুজে থাকি কি করে। 

কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্য গুলি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজে না নামলে এ দৃশ্য আমাদের দেখতেই হবে।পরিত্রাণের পথ খুঁজতে ভ্যাকসিন এখন যে বড়ই জরুরি ।