Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#নাতনির_বয়ফ্রেণ্ড#সোমা_ত্রিবেদী
পিছন ফিরে তাকালে সুনয়নার দীর্ঘ জীবনের সেই ফেলে আসা দিনগুলো বড্ড ভাবিয়ে তোলে তাকে। মনে হয় সব ভুল শুধু সেই করে গেছেন, নাকি সে নিজেই প্রতি পদে পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছেন আজীবন।কতোই বা বয়েস হবে তখন, বছর…

 


#নাতনির_বয়ফ্রেণ্ড

#সোমা_ত্রিবেদী


পিছন ফিরে তাকালে সুনয়নার দীর্ঘ জীবনের সেই ফেলে আসা দিনগুলো বড্ড ভাবিয়ে তোলে তাকে। মনে হয় সব ভুল শুধু সেই করে গেছেন, নাকি সে নিজেই প্রতি পদে পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছেন আজীবন।

কতোই বা বয়েস হবে তখন, বছর ষোল সাতেরো বড়জোর, গাঁয়ের এক পিসিমা সম্বন্ধ করে রথিন মাস্টারের সঙ্গে বিয়েটা দিলেন। সে আজীবন ইস্কুলে সাহিত‍্য পড়িয়েও বাড়ি ফিরে বউয়ের সখা হয়ে ওঠা তো দুর স্বামী অবধি হয়ে ওঠাতেও যেন অনিহা। বাড়িতেও চলত তাঁর শিক্ষকীয় শাসন আর ভর্তসনা। একমাত্র কন‍্যা রূপাকেই প্রাণের দোসর করে বুকে আগলে বড়ো করতে গিয়ে যে কোথায় ফাঁক থেকে গিয়েছিল তা হয়তো ঈশ্বরই জানেন। 

রূপা মাধ্যমিক পাশ করতে না করতেই বাবার প্রিয় ছাত্র ইন্দ্রর প্রেমে পড়ল। ইন্দ্র তখন কলেজ পড়ুয়া। দেখতে শুনতে ভালো ঠিকই তবে কেন জানি মনে হতো ও রূপার থেকেও রূপার শরীরের প্রেমেই বেশি পড়ছে। মায়ের চোখ এড়ালো না। যথাসম্ভব মেয়েকে সাবধান করেও বিপদ ঠেকানো যায় নি। রূপা বাবা মায়ের দিনে দিনে অবাধ‍্য হয়ে উঠেছিল। সে তখন ইন্দ্রর প্রেমে পাগল। নিজের হিতাহিত ভুলে নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই ইন্দ্রর সঙ্গে পালানোর পরিকল্পনা করল। তখনও ইন্দ্র তেমন কিছু রোজগার করেনা। রূপা নিজেও সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে। রথিন বাবু মেয়ের এই আচরণ মন থেকে মানতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন। তারপরেও রূপা ফিরলনা। অপরদিকে ইন্দ্রর মা বাবাও এই বিয়ে না মানায় তারা ভাড়ার ঘরে জীবন শুরু করে। প্রেমের রঙিন ফানুস বাস্তবের জমিতে ধাক্কা খেতে খেতেই কেমন রঙ চটতে থাকে। রূপার প্রতি মুহুর্তে মনে পড়তে থাকে মায়ের সাবধান বাণী। 'এখন প্রেম ভালোবাসার সময় নয়, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই বিয়ে করো যাতে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ভালো থাকা যায়।' নাহ্ বড্ড ভুল হয়ে গেছে। ভুলটা আরো প্রকট হয় যখন ইন্দ্রর সঙ্গে ঝগড়া হয়। ইন্দ্রর অপারগতা, আর্থিক অনটন, সাংসারিক অভাব, নিজেরও অভিজ্ঞতার অভাব তার মধ্যেই পেটের ভেতর বাড়তে থাকা পূর্ণ অবয়বটার ছোট্ট ছোট্ট লাথি সব মিলিয়ে অশান্তির চরম সীমায় পৌছায়।

অভুক্ত ক্লান্ত শরীরেই একদিন প্রচন্ড প্রসব বেদনা অনুভব করল রূপা। ইন্দ্র বাড়িতেই ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই স্ত্রীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। তবে রূপার ওই বেদনা সয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার ধকল সামলে বেঁচে থাকা আর হয়ে ওঠেনি। সে সব মায়া ছিন্ন করে। ইন্দ্র নিজের ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েকে কোলে নিয়ে চিন্তায় পড়ে এবার তার কি করা উচিত। রূপার শেষ কাজ করার পর মেয়ে নিয়ে সোজা মাষ্টার মশাইয়ের বাড়ি যাওয়াই স্থির করে সে। সেখানে গিয়ে নিজের সমস্ত পরিস্থিতি সুনয়নাদেবীকে বলে ইন্দ্র। মেয়ে চলে যাওয়ায় যে রাগ ক্ষোভ মনে তৈরী হয়েছিল, ওর দুখঃ কষ্ট অভাব ও তারপর মৃত্যুর সংবাদ শুনে প্রচন্ড ভাবে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সুনয়না। ইন্দ্রর কোল থেকে দিন তিনেকে ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে কোথাও যেন আপন আত্মজার সান্নিধ্য ফিরে পেলেন। মনে মনে সংকল্প করলেন এই মেয়েকে তিনিই মানুষ করবেন। মধ্য বিয়াল্লিশে তিনি পুণরায় মা হয়ে উঠলেন। ইন্দ্রও নিজের বাড়িতে ফিরে যায়। পরবর্তীতে ভিনরাজ‍্যে চাকরি নিয়ে চলেও যায়। ইন্দ্র সুনয়নার ও মেয়ে পরমার সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষীণ করতে করতে ছিন্নই করে দেয়। সুনয়নাও আর জোর করে যোগাযোগ রাখেনি জামাইয়ের সঙ্গে। তবে মাঝেমাঝে মনে হয় পরমারও তো ওর বাবার ভালোবাসা পাওয়ার একটা অধিকার আছে, যা পরিস্থিতির চাপে পড়ে শেষ হয়ে গেল।

সুনয়না ভালোবাসার কোনো খামতি রাখেননি পরমার জীবনে। বরং বলা চলে কিঞ্চিত বেশীই স্নেহ দিয়ে আদর দিয়ে ভরিয়ে রাখতেন তাঁর নাতনিটিকে। অবশ‍্য পরমা তাঁকে মা বলেই ডাকত ও সকলের কাছে মা বলে পরিচয় দিতেই সাচ্ছন্দ বোধ করত। পরমা লেখাপড়ায় যথেষ্ট ভালো এবং ও যতো বড়ো হতে থাকে পড়াশোনার জগতেই আরও বেশি করে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ে। সুনয়না তাতেই খুব খুশী হন যে পরমা অন্তত তার মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেনা। পরমাকে নিয়ে সুনয়না ভীষণ গর্বিত। সে বরাবরের লেখাপড়ায় ভালো, শান্ত ধীর স্বভাবের। সরকারি কলেজের ইন্জিনিয়ারিং শেষে ভালো চাকরি নিয়ে ব‍্যাঙ্গালোর চলে গেল সেই প্রথম সুনয়না পরমার জন্য কেঁদে ফেললেন। এতোটুকু শিশু নিজের বয়সের পরিস্থিতির তোয়াক্কা না করে বুকে আগলে বড়ো করেছেন, সেই মেয়ে, এই প্রথম তাকে ছেড়ে থাকা। 


পরমারও মাকে ছেড়ে ভীষণ রকম কষ্ট হলেও নতুন পাওয়া স্বাধীনতার হাতছানি তাকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। সেও সারাদিন যখনই সময় পায় ফোনে খোঁজ খবর নিতে থাকে মায়ের, নিত্য প্রয়োজনের দুর থেকেই পুরণ করতে চেষ্টা করে যথা সম্ভব। তাছাড়াও সময় সুযোগ মতো দু এক দিনের জন্য হলেও মায়ের সঙ্গে দেখা করে আসে। এর মধ্যেই তার জীবনে আসে স্বাগত। দুজনে একটি ফ্ল‍্যাট ভাড়ায় নিয়ে লিভটুগেদার শুরু করে। পরমা সবটুকু জানায় তার মাকে। সে মাকে যে না জানিয়ে কিছুই পারেনা। ফের আশংকায় বুক কেঁপে ওঠে সুনয়নার। রূপার মতো পরমাও একই ভুল করে বসল না তো? পরমা বোঝায়, 'মা এটা বিয়ে নয় যে চিরকাল একসঙ্গে থাকতেই হবে! আর যদি স্বাগত ভালো ছেলে হয় তোমারও ওকে ভালো লাগে তো আমরা পরে বিয়েও করে নিতে পারি। বিয়ে ছাড়াও জীবনে অনেক কিছু করার আছে মা। আর আমি জীবনে সেই অনেক কিছুটাই করতে চাই। তোমার ওই বোকা মেয়ে রূপার মতো জীবন আমি কাটাব না।' সুনয়নার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তবে কি বৈবাহিক প্রতিষ্টানেের ওপর পরমা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।

ফোনে স্বাগতর সঙ্গেও মায়ের আলাপ করিয়ে দেয় পরমা। এরপর থেকে স্বাগতও প্রায়ই সুনয়নাকে ফোন করতে থাকে খোঁজ নিতে থাকে কখনও এটা ওটা উপহারসামগ্রীও পাঠাতে থাকে। একবার অফিসের কাজে স্বাগত কলকাতায় এলে সোজা সুনয়নার বাড়িতেই চলে আসে দেখা করতে। এটা সুনয়নার খুব ভালো লাগে। একটা গোটা দিন স্বাগত কে কাছে পেয়ে তার সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলে মনে হয় এই ছেলেটি আর যাই হোক ইন্দ্রর মতো কখনওই নয়। ছেলেটি পরমার জন্য একদম সঠিক। স্বাগত সঙ্গে পরমার পছন্দের খাবার এটা ওটা পাঠিয়ে দিলেন সুনয়নাদেবী। পরে পরমাকে ফোন করে সুনয়না বলে যে এই ছেলেটা খুব ভালো তুই নিশ্চিতে বিয়ে করতে পারিস। তুই খুব সুখী হবি এর সঙ্গে। পরমা প্রতিবাদ করে ওঠে, না মা আমি এখনই বিয়ে করবনা। বিয়ে সংসার বাচ্চা এসবেই আমি আটকে থাকতে চাইনা। আমি সারা পৃথিবী ঘুরবো আমার মাকে নিয়ে। তোমাকে অনেক ভালো রাখব। কিই বা পেয়েছো তুমি? সারা জীবন তো শুধু কষ্ট করে গেছ। এখন অন্তত আমি তোমাকে ভালো রাখতে চাই মা। আমাকে এসবে জড়িওনা। সুনয়না আর বেশি কিছু না বলে ফোন রেখে দেন। এর কিছুদিন পর পরমা নিজের পুরোণো চাকরি ছেড়ে একটি বিদেশি কম্পানিতে যোগ দেয়। কম্পানি থেকে তাকে নতুন প্রজেক্টের কাজে কিছুদিনের মধ্যে লণ্ডনে পাঠানোর কথা হলো। মাঝে অল্প কিছুদিন ছুটি নিয়ে পরমা চলে এলো মায়ের কাছে। মাকে অনেক কিছু তার দেওয়ার আছে। এতোদিন সে শুধু নিয়েই এসেছে। সে চুপিচুপি মায়ের জন্য একটা সুন্দর ফার্নিস ফ্ল‍্যাট কিনে রেখেছে। পরমা এসেই মাকে নিয়ে মায়ের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে সেই ফ্ল‍্যাটে গিয়ে উঠলো। সুনয়না আশ্চর্য হয়ে যান। এইটুকু মেয়ে তাকে আজ নতুন ফ্ল‍্যাট কিনে দিল, এ অকল্পনীয় তাঁর কাছে। আনন্দে চোখে জল এসে যায় তার। পরমা মাকে নতুন স্মার্টফোন কিনে দিয়ে ছুটির কয়েক দিনে বেসিক ব‍্যাবহার করা শিখিয়ে দিয়ে আবার কাজের জায়গায় ফিরে যায়।

সুনয়নার খুব ভালো লাগত ঠাণ্ডা ঘর খুব ইচ্ছা করত ঘরে অন্তত একটা কুলার কেনে। সেখানে তার নাতনি তার শোবার ঘরে বসার ঘরে দুটো এসি লাগিয়ে দিয়েছে। তার জন্য সারাদিনের কাজের লোক রেখে দিয়েছে। সুখের মোড়কে বৃদ্ধ জীবনটা মুড়ে দিয়েছে মেয়েটা। সত্যিই তার পরিশ্রম সার্থক। একা হাতে পেনশনের সামান্য আয়ে মেয়েটাকে বড়ো করাটাও একটা চ‍্যালেন্জ ছিল তার কাছে। শুধু দুহাত জুড়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে গেছেন আরও কিছু বছর যাতে সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকতে পারেন মেয়েটাকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারেন। আজ তার সেই প্রার্থনা পূর্ণ হয়েছে। আজ তার কাছে এই ফ্ল‍্যাট শুধু একটা থ্রি বি এইচ কে নয় এটা তার সব পেয়েছির দেশ। এইসব ভাবতে ভাবতেই নতুন পাওয়া ফোনটা সুরে সুরে বেজে উঠলো। স্ক্রিন জুড়ে পরমার মুখ দেখা যাচ্ছে। ছোট্ট টাচে ফোনটা ধরলেন সুনয়না। ওপার থেকে পরমা বলে উঠল, মা কি করছ?

- তোর কথাই ভাবছিলাম মা, আমার নাতনিটা আমাকে কতো সুখে রেখেছে ভাবছিলাম।

- ইইইস আবার নাতনি! আমি তোমার মেয়ে বলেছিনা।

- হুম, একদম, তুইই আমার মেয়ে। তবে এবার বলি কি একটা বিয়ে কর মা। দুদিন পর জামাইষষ্টি, সবাই কতো আনন্দ করবে, শাড়ি পাওনা হবে, আর আমার বাড়ি জামাই আসবেনা আর শাড়িও...

মুখের কথা কেড়ে পরমা বলে ওওও এই কথা তোমার শাড়ি তো পাওনা হওয়াই উচিত কাল জামাইষষ্টি যখন। ওকে আমি তোমার হোয়াটস এপে একটা লিঙ্ক পাঠাচ্ছি তোমার যেটা ইচ্ছে যটা ইচ্ছে শাড়ি পছন্দ করে আমাকে বলো। বুঝেছো। 

- ধুর পাগলি শাড়িই কি সব কিছু হলো।

- তা জানিনা, আমি লিঙ্ক পাঠিয়েছি, এখন ফোন রাখলাম। একঘণ্টা পরে ফোন করব তার মধ্যে তুমি শাড়ি পছন্দ করে রাখো কিন্তু মা। রাখছি।

- শোন শোন.. ফোনটা কেটে গেল। পাগলি মেয়ে একটা। বলে পরমার পাঠানো লিঙ্ক ঢুকে শাড়ি পছন্দ করতে লাগল সুনয়না।

একটা হালকা আকাশি রঙা ঘিচা শাড়ি পছন্দ হয়েছে সুনয়নার। তবু মেয়ের মন ভরেনি। সে ওই আকাশি রাঙাটার সঙ্গে আরও দুটো পিওর সিল্ক পছন্দ করে একসঙ্গে তিনটেই পাঠানোর বন্দ‍্যবস্ত করেছে ঠিক জামাইষষ্টীর দিনেই। ষষ্ঠীর সকালে হালকা করে এসি চালিয়ে একটা গল্পের বই হাতে বশে আছে সুনয়না, আজ ফলার খাওয়া, রান্নার ঝামেলা নেই, তাই সারাদিন থাকার মেয়েটা নিজের মেয়ের বাড়ি গিয়েছে তার সাধ‍্য মতো জামাইকে কিছু উপহারসামগ্রী দিয়ে ষষ্ঠী পালন করতে। সকালেই পরমার অর্ডার করা শাড়ি গুলো আসার কথা। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠতে দরজা খুলে দেখে স্বাগত দাঁড়িয়ে। হাতে মিষ্টির বাক্স। সুনয়না এসো এসো করে ভেতরে এনে বসায় স্বাগত কে। মনে মনে খুব আশ্চর্য হয়। এমন সময় স্বাগত সুনয়নার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলে আপনার মেয়ে আমাকে বিয়ে করুক আর নাই করুক আমি তাকে নিজের স্ত্রীর মর্যাদাই দিয়েছি সব সময়। আজ খুব ইচ্ছা হলো আপনার সঙ্গে দেখা করি তাই চলে এলাম। সুনয়না সস্নেহে স্বাগতর মাথায় হাত রেখে বলে বেশ করেছ, আজকের দিনে আমারও খুব মনে হচ্ছিল তোমার কথা। কি বলি পরমা ভীষণ রকম ক‍্যরিয়ার সচেতন ও বিয়ে করতেই চায় না। হয়তো ওর মা - বাবার বিবাহিত জীবনের কথা শুনেই এমন মনোভাব। জানিনা।

এমন সময় পরমা ফোন করে মাকে। ফোন ধরেই উচ্ছাসের সঙ্গে বলে ওঠে সুনয়না স্বাগতর আসার কথা। শুনেই পরমা ফোনটা স্বাগতকে দিতে বলে। ইতিমধ্যে আবার দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ। ডেলিভারী ম‍্যান। ফোনে পরমা স্বাগতকে বলে কি রে আমাকে ছেড়েই জামাইষষ্টী খেতে চলে গেলি তোর একটু লজ্জাও করলনা। আর তোর জন্য খরচা করে কিনা আমি শাড়ি কিনে পাঠাচ্ছি। শোন শাড়ির দামটা আমার একাউন্টে দিয়ে দিবি। আর আজ যখন মায়ের কাছে গিয়েছিস তো সামনের বছরের শেষে একটা ভালো দেখে বিয়ের জন্য ডেট দেখে রাখ বুঝলি। 

স্বাগত খুব কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠল, সে শাড়ির দাম তোকে দিয়ে না হয় দেবো, কিন্তু বিয়ের ডেট কার জন্য দেখব? তুই তো বিয়ে করবিনা।

- না বিয়ে করে আমার উপায় আছে, মা মন খারাপ করছে, তার জামাইষষ্টী করা হচ্ছে না বলে তুই মন খারাপ করে হাজির হয়ে যাচ্ছিস মায়ের ফ্ল‍্যাটে। আর আমারও ভালো লাগছেনা রে তোদের ছেড়ে। কতোদিন মাকে দেখিনি। এবার কলকাতায় একটা চাকরি খুঁজে নেবো, মায়ের কাছেই থাকব। বিয়ে করবি আমায়?

আরও কিছু কথার পর ফোন রেখে দেয়। 

সুনয়না তিনবার শাঁখে ফুঁ দিয়ে আশীর্বাদ করে স্বাগত কে। ফোন করে স্বাগতর মনোমতো খাবার অর্ডার দিয়ে নেয় আর তারপরই পাঁজি নিয়ে বসে পড়েন একটা ভালো তারিখ ঠিক করতে। মেয়ে তার বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। আজই স্বাগতকে সঙ্গে নিয়ে ওর মা বাবার সঙ্গে কথা বলতে যেতে হবে। আজকে যে বড্ড ব‍্যাস্ত সুনয়না তিনিই যে পরমার মা। সত্যিই তিনি আজ সর্ব সুখী ঈশ্বর তাকে জীবনে সব সুখ দিয়েছেন।

                 _____________________