....."আত্মজা".....♥..... ' ছোট গল্প '.....~~~~~~~~~~ ত্রিদিব কুমার বর্মণ ।
এই এলাকাটিকে বলে ' মেথর পট্টি '।বিভিন্ন জাত -ধর্ম -বর্ণের সমন্বয়ে একটিঅগোছানো ছোট্ট বস্তি। নানান ভাষায়,পেশায় ও নেশায় মত্ত থাকে…
....."আত্মজা".....♥..... ' ছোট গল্প '.....
~~~~~~~~~~ ত্রিদিব কুমার বর্মণ ।
এই এলাকাটিকে বলে ' মেথর পট্টি '।
বিভিন্ন জাত -ধর্ম -বর্ণের সমন্বয়ে একটি
অগোছানো ছোট্ট বস্তি। নানান ভাষায়,
পেশায় ও নেশায় মত্ত থাকে ওরা দিন -রাত।....
ভীমা ডোমের ব্যাটা ভম্ রু ছুটতে ছুটতে
এসে খবর দিল। বাগজোলা খালে কি একটা জিনিষ জোয়ারের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে। বস্তির লাগোয়া ঘর থেকে ডিম্পু লোহার কান খাড়া ক'রে শুনল। সক্কালবেলা বাসি পান্তা - ভাত খাচ্ছিল তখন। হাপুস্ - হুপুস্ ক'রে সবটুকু খেয়ে,
থালাটাকে রেখে বৌ'কে বলে উঠল ;----
" ও বৌ, ইটা ধুয়ে রাখ্...। খালকে মুই
যাইছ্যি...। খবর যেমন হইছ্যে, কাম লাই ঘর ই বসি...। যন্তর পাতি গুলান্ টং
থিক্কা পাড়ি দে...... "।
মাচান থেকে ওর বৌ ফুল্কি তিন তিনটে
ধারালো ছুরি, গোটাকতক কাঠের সুঁচলো
গেড় ( বাটাম লাগানো ) আর পাটের পাকানো দড়ি পেড়ে দিল।
সে'গুলোকে কোমরে জড়িয়ে বাগজোলা -
খালের পাড় ঘেঁসে হন্ হন্ ক'রে পা ' চালাল ডিম্পু লোহার.... ।
সজাগ ওর চোখ দু'টো। চলতে চলতে ভাবল , --- " যদি- ই শালা আটকে যায় , কচুরিপানায় , তবে-এ পাড়ে তুল্যে লট্ কে
গানছের ডালে.......যদি-ই জীবটা ডাগর
হয়-অ....... ছাল--চাম্ ড়া ছাইড়্যে......
উঁ...হুঁ....., তবে-এ খুব মজা-আ হবেক্..।"
এই বাগজোলা খালের পাশে ডিম্পুর একটা ঢোল - মাদলের দোকান রয়েছে।
ওর বাপের ছিল, মরে সগ্গে গেছে। বাপের কাছে শেখা বিদ্যে আজ ও তার পেট চলে।মুখে অন্ন জোগায় পরিবারের..... ।
এই বাগজোলা খাল ওদের অনেক দিয়েছে।মরা গরু, ছাগল,মোষ ভেসে আসে খালে। মরাগুলোর চামড়া ছাড়িয়ে
নিতে পারলে বেশ ভাল লাভ । সেই
চামড়া মাটিতে শুকনো করে, নুন ঘসে ,
চারদিকে কাঠের গেড় গুঁজে, টান টান করে, রোদে শুকিয়ে নিলেই কেল্লাফতে।
সেই চামড়া দিয়ে ঢোল -- মাদল তৈরী করে বাজারে বিক্রী করে টাকা আমদানি
হয়.... ।
এই ' ডোমপাড়ায় ' আর যে দশ - বিশটা
ঘর রয়েছে --- কেউ শুয়োর চড়ায়, কেউ ফ্ল্যাট - বাড়িতে ময়লা সাফ করে। কেউ বা
ঠিকে কাজ করে। কেউ শ্মশানে মরা পোড়ায়। মরার খাট, বিছানা, বালিশ কব্জা করে। কেউ বা আবার চুল্লু বিক্রী করে। বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে ওরা।
অনুন্নত ওদের চালচলন। ধরন ধারনটাই
ওদের ভিন্ন। ওদের জীবন যাত্রার খবর
অনেকের কানে পৌঁছয় না......।
ডিম্পু লোহার এক্কেবার জগত্পুরের শেষ-- প্রান্তে এসে হাজির। সেই কেষ্টপুর থেকে বাগজোলা খালের পাড় দিয়ে হেঁটে হেঁটে কচুরিপানা আর নানান স্তুপাকৃত বর্জ্য --
পদার্থে আটকে থাকা ভাসমান উপুর হওয়া একটা মরা লাশ, ডিম্পুর চোখ এড়াল না...... ।
খালের মধ্যে ও নেমে পড়ল। লাশের ওপর দু'টো কাক। জলের উচ্ছ্বাসে দুলছে।
কাক দু'টো ঠোকরাচ্ছে। লাশটা ফুলেফেপে ঢোল। ডিম্পু লাশের কাছে
আসতেই কাক দু'টো উড়ে গেল.... ।
চম্ কে উঠল ও !! ; ---" ই..টা...ত '...ইক্ টা
মনুষ্য'র লাশ..!!!সোমত্ত মে-ইয়ের লাশ!!"
ছেঁড়া শাড়ী-সায়া,কাটা ছেঁড়া রক্ত.... ।
ডিম্পু লোহার কী করবে, বুঝে উঠতে পারছে না। চারদিক একবার নজর বোলাল.... ।
নাহ্ ; কেউ কোথ্থাও নেই। গায়ে তার কাঁটা দিল। ডিম্পু ধীরে ধীরে লাশটাকে
উল্টে দিল। বমি উঠে আসা গন্ধ। ডিম্পু
ভীষণ কাঁপতে লাগল.... ।
আর্তনাদ ক'রে উঠল ও ; -----
".....আরে--এ '... ই '.....' যে... হামার.....
....বেটি-- য়াঁ , আ..আদুরি'র লাশ.....!!!! "
ডিম্পু লোহার তার একমাত্র মেয়ের বে '..
দিয়েছিল গত সনে..... ।
হাজার দশেক নগদ টাকা, আলমারি, ঘড়ি, সাইকেল, বিছানা পত্তর ইত্যাদি...।
জামাই বাবাজী ঘরামীর কাজ করে।
জর্দাবাগানে ঝুপড়ি তে ওরা থাকে। আদুরির শ্বশুর গেল হপ্তায় পণের পাঁচ হাজার টাকা বাকী থাকার জন্য মারধর
করেছিল আদুরিকে। ' মেথরপট্টি 'তে এসে ডিম্পুকে শাসিয়েছিল, ' পণের বাকী
ট্যাকা ' সত্বর মিটিয়ে না দিলে ' আদুরির
সব্বোনাশ হবেক্ '.....।
ডিম্পুর জানটা যেন এখুনি বেরিয়ে যাবে,
ভীষণ যন্ত্রণা শুরু হ'ল বুকের
বাঁ ' দিকটাতে । ডিম্পুর ' আদুরি ' ডাক
জগত্পুরের নির্জন বাগজোলা জলের খালে ধাক্কা খেয়ে চল্ তে লাগল দূরে ,
আরো দূরে , অজানা স্রোতে..... ।
আল্ গা হ 'য়ে গেল ওর দু ' হাতের বাঁধন। আদুরির লাশটা ভেসে যাচ্ছে......।
কিন্তু, লাশটাকে আটকাবার ক্ষমতা যেন
হারিয়ে ফেলল ডিম্পু লোহার.......... ।।
~~~~~~~~~~♠~~~~~~~~~~~~
( ১১.০৬.২০১৬. ) ♣ ( সময় = ২২.৩০. )
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~