Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#গল্প "আত্মবিশ্বাস" অপর্না রায়০৪/০৬/২০২১
                             "আত্মবিশ্বাস"
   "বৌমা আমার চা টা দিলে না""আনছি বাবা"।
"বৌমা আমার পুজো
র ফুল তোলা হয়েছে?""হ্যাঁ মা, ঠাকুরঘ…

 

#গল্প

 "আত্মবিশ্বাস"

 অপর্না রায়

০৪/০৬/২০২১


                             "আত্মবিশ্বাস"


   "বৌমা আমার চা টা দিলে না"

"আনছি বাবা"।


"বৌমা আমার পুজো


র ফুল তোলা হয়েছে?"

"হ্যাঁ মা, ঠাকুরঘরে রেখে এসেছি"।


"বৌদি আমার ব্রেকফাস্ট"

"টেবিলে রেখে এসেছি, একটু নিয়ে নাও প্লীজ!"


"অনন্যা একবার ঘরে এসো দরকার আছে"

"একটু দাঁড়াও, হাতটা ধুয়ে আসছি"


             এভাবেই দিন কাটে অনন্যার। সকলের মুখে একটাই নাম, সকলের নয়নের মণি যেন। সকাল থেকে রাত্রি কখন যে হয় অনন্যা টেরও পায় না। 

       নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অনন্যা। যেমনি সুন্দরী তেমনি ভালো গান জানতো সে। বিয়ের পর কোথায় যে হারিয়ে গেলো তার গান! তবুও অনন্যা খুশি ছিল সকলের ভালোবাসা পেয়ে। তাই ভালোবেসেই সব করতো। 


  শ্বশুর বাড়ি থেকে একটু দূরে অনন্যার মাসির বাড়ি। বিয়ের আগে মাসির বাড়ি বেড়াতে এসেই পাড়ার ফাংশনে গান গেয়েছিল অনন্যা। সেই ফাংশনেই রাজীব অনন্যার রূপ ও গুনে মুগ্ধ হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে অনন্যার ব্যপারে সব বলে। এও বলে যে সে অনন্যাকে বিয়ে করতে চায়।

       রাজীবরা বড়োলোক, ব্যবসায়ী পরিবার। কাজেই অনন্যার বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে রাজীবদের সেরকম কোন অসুবিধা হয়নি। রাজীবদের অবস্থা প্রতিপত্তি দেখে অনন্যার বাবা-মা সহজেই বিয়েতে মত দেন। নির্দিষ্ট দিনে ধুমধাম করেই অনন্যা আর রাজীবের বিয়ে হয়ে গেল।


    বেশ ভালোই চলছিল জীবন। তিন বছর কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারেনি অনন্যা। 

বেশ কিছুদিন ধরে শরীর দুর্বল লাগছিল হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল অনন্যা, শাশুড়ির চোখে পড়ায় ধরে ফেলেন তাকে। ডাক্তার ডাকা হলো, ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে হেসে বললেন," মিষ্টিমুখ করান, সুখবর আছে"। ডাক্তারের কথা শুনে বাড়িতে খুশির জোয়ার উঠলো।

এই ঘটনার কিছুদিন পর রাজীবের জন্মদিন এলো। রাজীব অনন্যাকে বললো, "আজ বাড়িতে ফিরে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো, কতোদিন আমরা কোথাও যাইনি বলো"। অনন্যা খুশি হয়ে শাশুড়ির অনুমতি নিয়ে সন্ধ্যার অপেক্ষা করতে লাগলো।

           সন্ধ্যায় রাজীব ফিরলে দু'জনে খুশি খুশি বেড়িয়ে পড়ল। দু'জনে অনেকটা সময় একসাথে কাটিয়ে, অনেক কেনাকাটা করে, খাওয়া দাওয়া সেড়ে বাড়ি ফিরছিল, ফেরার পথে ওদের গাড়ির সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কা লেগে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে তারা অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। স্থানীয় লোকেরা এসে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে। ওদের ফোন থেকেই ওদের বাড়িতে খবর দেয় স্থানীয় লোকেরাই। 

          খবর পেয়েই সকলে ছুটে আসে। হাসপাতালে এসে সকলে জানতে পারে রাজীবের অবস্থা অতোটা খারাপ না হলেও অনন্যার অবস্থা একেবারে ভালো নয়। ওকে ও.টি. তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘন্টা দুয়েক পর ডাক্তার এসে জানালো , অনন্যা প্রাণে বেঁচে গেলেও ওর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। অনন্যার বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে। অনন্যা আর কোনদিন মা হতে পারবে না। তাছাড়া ওর একটা পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে। এইকথা শুনে অনন্যার বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পড়ে। ওর শশুর-শাশুড়ি কষ্ট পায় ঠিকই কিন্তু কোন আগ্রহ দেখান নি অনন্যাকে নিয়ে। আস্তে আস্তে রাজীব সুস্থ হয়ে উঠলে রাজীবকে নিয়ে তারা বাড়ি ফিরে যান। তারপর থেকে একদিনও অনন্যার খোঁজ নিতে আসেন নি ওরা।


    রাজীবের মা-বাবা রাজীবকে বলে, অনন্যাকে আর এখানে আনার দরকার নেই। ও ওর বাবা-মায়ের কাছেই থাক। এখানে আসলে আরও ঝামেলা বাড়বে, একেই তো কোনদিন মা হতে পারবে না,তার উপর একটা পা নেই, কে ওর দেখাশুনা করবে এখানে?

           

           ওদিকে অনন্যা রোজ অপেক্ষা করে বসে থাকে রাজীবের, শশুর-শাশুড়ির! কিন্তু কেউ আর আসে না, একটা সময় অনন্যা বুঝতে পারে ওরা আর আসবে না, ওর এই দুর্দিনে ওর পাশে কেউ নেই নিজের বাবা-মা ছাড়া। অনন্যা মনে মনে ভাবে মানুষ এতটা স্বার্থপর হতে পারে! যারা তিন তিনটা বছর ভালোবাসার অভিনয় করে আমার সবটুকু নিংগ্রে নিলো, এই দুর্দিনে যখন আমার পাশে থাকার সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল ঠিক তখনই তারা এভাবে আমাকে ফেলে চলে গেল!

             না আমি আর কারো কথা ভাববো না। যে করেই হোক আমাকে শক্ত হতেই হবে, এই পরিস্থিতির থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে, বাবা-মায়ের অবলম্বন হতে হবে। একদিন আমার প্রিয় যে গানকে সংসারের জন্য অবলীলায় হাসি মুখে ছেড়েছিলাম ভালোবাসার লোভে, সেই গানকেই আমার হারিয়ে যাওয়া পা করে উঠে দাঁড়াবো আমি!

        হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে অনন্যা ওর বাবা-মাকে বলে,"বাকি জীবনটা আমি গান নিয়েই বাঁচতে চাই। তোমরা শুধু আমাকে সাহায্য করো"।

অনন্যার বাবা বলে,"তুই শুধু সাধনা করে যা, আমি দেখছি কি ভাবে গানের জগতে তোকে প্রতিষ্ঠা করানো যায়। আমি কথা দিচ্ছি তোকে প্রতিষ্ঠিত না করে আমি মরব না"।

          এরপর থেকে অনন্যা নাওয়া খাওয়া ভুলে দিনরাত রেওয়াজ করে চলে। ওদিকে ওর বাবা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেন মেয়ের গানের ব্যপারে। অবশেষে একটা সুযোগ এসে গেল, একটা বড়ো ফাংশনে বিভিন্ন নামি দামী শিল্পীরা আসছেন সেখানে অনন্যা গান গাইবে। সেই ফাংশনের পরিচালকরা প্রথমে রাজী না হলেও অনন্যার সব কথা শুনে তাকে একটা সুযোগ দিতে রাজী হয়ে গেলেন।

        অবশেষে সেই মাহেন্দ্র ক্ষণে অনন্যা গান গেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিল, সবাই মুগ্ধ হয়ে তার গান শুনতে লাগলো। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন নামকরা মিউজিক ডিরেক্টর অনন্যাকে দিয়ে প্লেব্যক করানোর সিদ্ধান্ত নিলো।


         এরপর অনন্যাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তার নাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো। লোকের মুখে মুখে ফেরে তার নাম। রাজীবের কানেও পৌঁছালো অনন্যার সাফল্যের কাহিনী।

              রাজীব এসেছিল অনন্যাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কিন্তু অনন্যা রাজী হয়নি ফিরে যেতে।

অনন্যা রাজীবকে বলে,"তুমি না আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলে? যখন আমার তোমাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, তখন তুমি অবলীলায় আমাকে অসহায় অবস্থায় ফেলে কি করে চলে যেতে পেরেছিলে? এখন কেন এসেছো? আমি আর কোন ছলনায় ভুলবো না। অনেক কষ্ট সহ্য করেছি, আমার বাবা-মাও অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। আমি ওনাদের নিয়েই থাকতে চাই। তুমি ফিরে যাও, কখনো কোন প্রয়োজন হলে বলো।"

           রাজীবের কিছু বলার মুখ নেই, বাবা-মায়ের কথায় যে রত্ন হারিয়েছে, তাকে দূর থেকে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার।।


                        ‌                                      .....অপু