Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#নিখুঁত #সুদীপ্তা_চক্রবর্ত্তী২১|০৬|২১
একটা বাংলা বইয়ের নাম বলো যেটা অন্য কোনো ভাষায় অনুবাদ করা যায়নি? সঙ্গে অবশ্যই লেখকের নাম বলতে হবে!
আক্সড আ কোশ্চেন বলে গ্রুপে পোস্ট টা ছেড়ে দিয়ে, খবরের কাগজ টা হাতে নিয়ে আরামচেয়ারে বেশ আর…

 


#নিখুঁত 

#সুদীপ্তা_চক্রবর্ত্তী

২১|০৬|২১


একটা বাংলা বইয়ের নাম বলো যেটা অন্য কোনো ভাষায় অনুবাদ করা যায়নি? সঙ্গে অবশ্যই লেখকের নাম বলতে হবে!


আক্সড আ কোশ্চেন বলে গ্রুপে পোস্ট টা ছেড়ে দিয়ে, খবরের কাগজ টা হাতে নিয়ে আরামচেয়ারে বেশ আরাম করে বসলেন গর্গর্ষি! মুখে বেশ একটা মৃদু হাসি, হু হু বাছাধনরা জবাব টা এবার দাও দেখি!


গ্রুপটার জন্ম খুব বেশীদিন হয়নি, কিন্তু এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রুপের মেম্বার সংখ্যাও বেশ ঈর্ষনীয় ভাবে বেড়ে চলেছে দিনদিন। অ্যাডমিনরা টু-লাইনার লেখেন, 


আজ আমরা ছয়ে নয়, নয়ে আছি। এই নয় টা ন'শো, না ন'হাজার সেটা জানার সময় অনেকেরই হয় না। 


এসব নিয়ে গর্গর্ষি একেবারেই ভাবিত নন। তিনি মনে করেন তার মাথায় যথেষ্ট বুদ্ধি আছে, সঙ্গে অঢেল টাকা আছে, তাই তিনি যেটা করেন একদম নিখুঁত হয়। পিতৃপুরুষেরা অনেক পরিশ্রম করে কোলকাতার বুকে চারটে বাড়ী বানিয়ে রেখে গেছেন, সেগুলো থেকে পাওয়া ভাড়াতে তিনি যথেষ্ট বড়লোক। তিনি তথাকথিত চাকরী বা ব্যবসা কোনটাই করেন না, কারণ তিনি মনে করেন সম্পত্তির ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ একটা ফুলটাইম জব, যদিও এ'কথা তিনি কাউকে জানান না। কেউ পেশার ব্যাপারে জানতে চাইলে, ওই টুকটাক তেমন কিছু নয় বলে কাটিয়ে দেন। একমাত্র তার নিজের পাড়ার লোকজন ছাড়া তার এই বিপুল বৈভবের কথা বিশেষ কেউ জানে না। 


বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতায় তিনি যান না, কারণ আগে যারা তার বন্ধু ছিল তাদের মধ্যে বেশীরভাগ এখন বউ বাচ্চা নিয়ে নিজেদের সাংসারিক জীবনে বিপর্যস্ত। আর একদল আছে যারা তেমন কিছু করে উঠতে পারেনি, সে ভাগ্যের দোষে হোক বা নিজের দোষে, কিন্তু অন্যের ভাল দেখলে ঈর্ষার দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আর দুঃখের কাদুনি গেয়ে উপকার নেন, পরিবর্তে তার ক্ষতির চেষ্টার ত্রুটি রাখেন না। এই কোনও দলের লোকের সঙ্গেই তিনি যোগাযোগ রাখতে পছন্দ করেন না। 


তিনি তার প্রতিটা বাড়ীর নিয়মিত দেখভাল করেন, চারটে বাড়ীর কোন ঘরেই পুরনো দিনের কম পয়সার ভাড়াটে নেই, এবং আরো স্পষ্ট করে বললে সবাই লাইসেন্সী, কেউ ভাড়াটে নয়, তাই তারা চাইলেও আইনের দ্বারস্থ হতে পারবে না। তিনি দুজন লোককে মাস মাইনে দেন, তাদের কাজ লাইসেন্স পিরিয়ড শেষ হওয়ার দু'মাস আগে থেকে সেই লাইসেন্সী কে, প্রপার্টি ছেড়ে দেওয়া অথবা লাইসেন্স নবীকরণের কথা মনে করিয়ে দেওয়া। ব্যাঙ্কে প্রতিটা লাইসেন্সড প্রপার্টি পিছু একটা করে অ্যাকাউন্ট আছে, এবং সেখানেই লাইসেন্স ফিস্ জমা পড়ে। এক থেকে পাঁচ তারিখের মধ্যে ফিস্ জমা পড়বে, তিনদিন গ্রেস, আট এবং ন'তারিখ তিনি কম্পিউটারে সব আপ টু ডেট দেখে নেবেন। না হলেই তার লোক যাবে আর দু'মাস ভাড়া অনিয়মিত হলে তৃতীয় মাসেই যে ঘর ছেড়ে দিতে হবে, সে কথা চুক্তিপত্রে স্পষ্ট লেখা আছে। তার প্রপার্টিতে কেউ থাকার ইচ্ছে পোষণ করলেই তিনি প্রথম দর্শনেই চুক্তিপত্রটা তার হাতে ধরিয়ে দু'দিন সময় দেন। সে রাজী হলে তারপর লাইসেন্স ফি এর ব্যাপারে কথাবার্তা বলেন। 


এরকম ভাবেই তিনি বেশ চলছেন, মানে যেহেতু বন্ধুত্বের ঘনত্ব কম রাখেন, তাই শত্রু ঢোকার ফাঁক তৈরী হয় না। তবে তার এই বেশ থাকার আর একটা প্রধান এবং বিশেষ কারণ হলো তিনি ব্যাচেলর, এবং এই তথ্যটিও তিনি লোকসমাজে তথা ফেসবুকীয় সমাজে গোপন রাখেন। অহেতুক কৌতুহল তিনি একদম পছন্দ করেন না। এইকারণেই তিনি ফেসবুকে নিজের স্ট্যাটাস বিবাহিত দিয়ে রেখেছেন। কারণ বিয়ে না করার সুবাদে তিনি জানেন স্বামী বা স্ত্রী নামক একটি চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভঞ্জনকারী কঠিন পদার্থ না থাকলে সেই পদার্থহীন মানুষটিকে সমূহ বিপদের মধ্যে পড়তে হয়, তার কোনরকম উৎসাহ ছাড়াই অনেকে তাকে নিজের সম্পত্তি ভেবে....


তবে তার নিজের বিয়ে না করার তার প্রধান কারণ, দীর্ঘদিন একা থাকতে থাকতে সেটাই তার অভ্যাস এবং পছন্দ হয়ে উঠেছে। তার ঠাকুরদার সাতটা ছেলে, তার মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় সন্তান বিয়ে করেননি, তৃতীয় ও চতুর্থ সন্তান যথাক্রমে, রামকৃষ্ণ মিশন ও পণ্ডিচেরীর মহারাজ, আর শেষের তিন ছেলে বিয়ে করলেও তার জেনারেশনে তিনি একমেবদ্বিতীয়ম। তার বাবা সবার ছোট, এবং ওপরের দুই জেঠুর কোন সন্তান হয়নি। তার বাড়ীর সবাই স্বল্পায়ু, বড়ো দুই জেঠু অনেকদিন আগে চলে গেছেন। দুই জেঠিমা কঠিন ভাবে সেই ধারা অনুসরণ করে কপালে সিঁদুর নিয়ে স্বচ্ছন্দে স্বর্গারোহন করেছেন। মাও জায়েদের দেখানো পথেই অনেকদিন আগে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। তার দুই জেঠু এবং বাবাও পত্নীপ্রেমের চরম নিদর্শন দেখিয়েছেন! বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক আত্মীয়স্বজন তার বিয়ের জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কারণ হিসেবে তারা বলেছিলেন বংশরক্ষার প্রয়োজনেই বিয়েটা করা উচিত, কিন্তু তিনি এর ঘোরতর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, 


ঠাকুরদার সাতটা ছেলে থাকা সত্ত্বেও আমি একটাই শিবরাত্রির সলতে, শতাংশের হিসেবে বংশরক্ষা করতে হলে আমাকে সাতটা বিয়ে করতে হবে, তোমরা রাজী আছ তো? তার ওই অদ্ভুত যুক্তি, একান্ত অনিচ্ছা এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অনীহা দেখে তারা আর বেশীদূর এগোতে সাহস পাননি। 


তবে একটা ব্যাপার তাকে নাড়া দেয় বারবার, যে তার দু'জন জেঠামশাই সন্ন্যাস নিয়েছেন এবং তারা সুস্থ শরীরে বেঁচে আছেন! মাঝে মাঝে তিনি হঠাৎ হঠাৎই হায়দরাবাদ অথবা পণ্ডিচেরীতে গিয়ে কিছুদিন করে কাটিয়ে আসেন, মনটা হালকা হয়ে যায়।


গর্গর্ষি নিজের বাড়িতে বাবার আমলের রান্নার লোক, আর কাজের লোক আছে, তারা সকাল ন'টায় আসে, সন্ধ্যে ছড়ার মধ্যে তাদের কাজ সেরে চলে যায়। তারপর ইচ্ছাঅনুযায়ী তিনি পড়াশুনা অথবা ফেসবুক করতে বসেন নাহলে কারণসুধা সেবন করেন। তার একটাই ব্র্যান্ড সীভাস রিগ্যাল, সাধারণত দু' থেকে চার পেগ খান প্রায় চার ঘন্টা ধরে, সঙ্গে কাজুবাদাম, আপেলকুচি, আদা আর বিটনুন। আর শারীরিক খিদে অনুভব করলে দুজন পরিচিত এসকর্ট আছে, তাদের মধ্যে কাউকে ডেকে নেন। এদের সার্ভিস খুব কস্টলি, রাতে প্রয়োজন হলে দুপুরের মধ্যে জানিয়ে দিতে হয়, কারণ এদের বক্তব্য অনুযায়ী এরা মাত্র তিনজন কাস্টমার কে সার্ভিস দেয়। 


মানসিক ব্যাপার ওনার আদৌ আছে কিনা উনি নিজেও জানেননা, সেই কৈশোরে এক পাড়াতুতো দিদি ছাড়া আর কারও প্রতি তেমন মানসিক টান অনুভব করেননি কখনো, তবে ভবিষ্যতের কথা কে বলতে পারে! 


যতক্ষণ বাড়িতে থাকেন কাজে আর পড়া বাদে ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করেন। হোয়াটসঅ্যাপ আছে তবে সেখানে যাতায়াত কম, একটাই কারণ ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে যাওয়া। নিজে কবিতা বা গল্প কিছুই লেখেন না। উনি ভাল পাঠক, পড়েন আর সুচিন্তিত মতামত দেন, যে কারণে তার বন্ধুসূচী বেশ লম্বা। এই ভয়ঙ্কর লেখক-কবি সর্বস্বতার যুগে একজন ভাল পাঠক পেলে সবাই তাকে টানাটানি করবে এ আর বেশী কথা কি! তিনি সেটা বিলক্ষণ জানেন এবং উপভোগ করেন। কাজেই কবি না হয়েও তার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁযা। তার মেসেঞ্জার নেই কাজেই যার যা বলার ফেসবুকের প্ল্যাটফর্মেই বলতে হয়, এখানেও সেই একই কারণ অধরা থাকতে চাওয়া! তিনি গুগল খুঁজে খুঁজে মজার মজার ছবি, ধাঁধা, জোকস এইসব পোস্ট করেন। তার কমেন্ট বক্স ও ভরে ওঠে।


এই বাতাসে ভেসে চলা নিখুঁত গর্গর্ষি একদিন হোঁচট খেলেন। ফেসবুকের ওই বিশেষ গ্রুপেই এক মহিলা তাকে আক্রমণ করে পোস্ট করল, যে গর্গর্ষি তাকে গতকাল ফোন করে অত্যন্ত আজেবাজে নোংরা কুরুচিকর কথা বলেছেন। গর্গর্ষি নাকি পরপর কদিন ফোন করে ওই মহিলার সঙ্গে গল্প করেছিলেন, তারপর একদিন নিজের বাড়ীতে ওই মহিলাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। মহিলা ভেবেছিলেন তার স্ত্রী আছেন, বাড়ীতে গল্প করা যেতেই পারেন, নিঃসংশয়ে চলে গেছিলেন। কিন্তু বাড়ীতে তখন কেউ ছিল না, সেই সুযোগে ওই নোংরা লোকটা তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিল, কোনওরকমে তিনি পালিয়ে বেঁচেছেন। প্রথমে মহিলা ওই অঞ্চলের থানায় যান, কিন্তু তারা তেমন কোন ব্যাবস্থা নেয় না। রাতে গর্গর্ষি অন্য নম্বর থেকে ফোন করে মহিলাকে আজেবাজে নোংরা কথা বলেন। তাই আজ তিনি সবার জ্ঞাতার্থে ঘটনাটা গ্রুপে জানাতে বাধ্য হলেন। আরও বললেন একটা স্বচ্ছ সাহিত্য চর্চার গ্রুপে এরকম নোংরা লোককে কোনভাবেই রাখা উচিত নয়, সেইসঙ্গে অ্যাডমিনদের অনুরোধ করলেন এই লোকটাকে যেন এই মুহুর্তে গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া হয়। 


তিনি দেখতে থাকেন, পোস্টে একের পর এক জ্বালাময়ী কমেন্ট আসছে! তাকে উদ্দেশ্য করে কি সব জঘন্য মন্তব্য আসছে! তাকে বের করে দেওয়ার জন্য সবাই একবাক্যে সায় দিল। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে অন্যান্য গ্রপেও ব্যাপারটা জানানো উচিত বলে মন্তব্য করল! 


গর্গর্ষি অবাক হয়ে দেখতে থাকলেন, আর ভাবলেন এ কি অদ্ভুত বিপদে তিনি পড়লেন! মহিলা তাকে কয়েকবার ফোন করেছিলেন ঘরভাড়ার জন্য এবং কাল মহিলা ঘর দেখতে চাইলে তিনি নিজের বৈঠকখানায় বসিয়ে চূক্তিপত্রটা তার হাতে দেন, মানে যেটা উনি করে থাকেন, তারপর মহিলা চলে যান আর এখন মহিলা!!!!!! 


কিছুক্ষনের মধ্যেই তিন চারটে গ্রুপ থেকে তাকে ব্লক করে দেওয়া হলো। বিনা অপরাধে এক দুঃসহ অপরাধের বোঝা তার মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হলো। তিনি বিভিন্ন গ্রুপের প্রোগ্রামে গেছেন, অনেকে তাকে চেনে জানে, তারা সবাই তাকে লম্পট ভাবছেন! নিজেকে সঠিক প্রমাণ  করার কোনও রাস্তা তিনি খুঁজে পেলেন না। গ্রুপগুলো তাকে ব্লক করে দিয়েছে, কোথায় নিজের কথা তিনি বলবেন! আর টাইমলাইনে লিখলেও কেউ বিশ্বাস করবে না, উল্টে কাদা ছোড়াছুড়ি হবে। কি করে যে এর থেকে মুক্তি পাবেন, গর্গর্ষি ভেবে পেলেন না! আর কেন যে মহিলা এই সব কান্ড ঘটালেন তাও বুঝতে পারলেন না। আর একজন মহিলার এই জাতীয় কথা সবাই বিশ্বাস করে নেবে সেটাই স্বাভাবিক। তার চোখের সামনে একটা ভিত্তিহীন ঘটনা একটা মিথ্যের ইমারত বানিয়ে ফেলল! স্বভাবগত কারণেই তিনি নিজের ভুলটা খুঁজতে লাগলেন এবং পেয়েও গেলেন।


ঠিক করলেন প্রথমেই  কিছুদিনের জন্য ফেসবুক থেকে একদম অফ হয়ে যাবেন। তিনি জানেন এবং মানেন সময় সবচেয়ে বড় ওষুধ। দেখা যাক জীবন আবার কোন বাঁকে তাকে দাঁড় করায়! তিনি কোনও অপরাধ করেননি, কিন্তু তার সময়টা এখন নিশ্চয়ই খারাপ, তাই তাকে অনেক কিছু সহ্য করতে হবে, আরও সাবধান হতে হবে। সেইসঙ্গে ঠিক করলেন নিজের সারাবাড়ী সিসি টিভি দিয়ে মুড়ে দেবেন। মহিলা তাকে একটা শিক্ষা দিয়ে গেল, যা তাকে আরও একটু পরিণত করল। তার আত্মসন্তুষ্টিই এবং নিজের সম্বন্ধে উঁচু ধারণাই বোধহয় তাকে এই বিপদে ফেলল। তিনি অনুভব করলেন চলার পথে ধাক্কা খেতে খেতেই মানুষ একটু একটু পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। ভালোই হয়েছে এবার তিনি কিছুদিন বইপত্রের জগতে বিচরণ করবেন, অনেকদিন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে আছেন। হঠাৎ করেই এক চিলতে হাসি দেখা গেল তার মুখে, সকালের প্রশ্নটার জবাব কেউ জানে কিনা জানা হলো না। সেলার থেকে সীভাস রিগ্যালের বোতল আর কাটগ্লাস টা বের করতে করতে নিজের মনেই বলে উঠলেন...

সুকুমার রায়ের 'আবোলতাবোল'।।