#ঈশ্বর#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য
একটা ফুটফুটে শিশু, ফুল-পাতা-বালি দিয়ে কি সুন্দর একটা ঘর তৈরি করে, তারই সামনে খেলা করছে। মাঝে মাঝেই সে নিজের সৃষ্টিটাকে একবার করে ঘুরে ফিরে দেখছে, আর এখানে ওখানে একটু আধটু মেরামত বা নক্সা পরিবর্তন করে…
#ঈশ্বর
#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য
একটা ফুটফুটে শিশু, ফুল-পাতা-বালি দিয়ে কি সুন্দর একটা ঘর তৈরি করে, তারই সামনে খেলা করছে। মাঝে মাঝেই সে নিজের সৃষ্টিটাকে একবার করে ঘুরে ফিরে দেখছে, আর এখানে ওখানে একটু আধটু মেরামত বা নক্সা পরিবর্তন করে নিয়ে আবার আপন মনে খেলা শুরু করছে। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা যেন এই শিশুটির মধ্য দিয়েই তাঁর সৃষ্টি কর্মে মেতে রয়েছেন।
শিশুটি যতোই খেলা করুক, তার মনের একটা বড় অংশ কিন্তু নিজের সৃষ্টিটাকে আগলে রাখার চেষ্টায় সদা ব্যস্ত.... একটা কুকুর টুকটুক করে হেঁটে হেঁটে সেদিকেই আসছিল.... পাছে তার সৃষ্টিকর্ম বিনষ্ট হয়, এই ভয়ে শিশুটি ঢিল নিয়ে ছুটে যায় কুকুরটির দিকে। সৃষ্টি রক্ষার্থে পালনকর্তা বিষ্ণুই যেন শিশুটির মধ্য দিয়ে এমন কর্মে লিপ্ত।
সন্ধ্যা নেমে এলো, গোধূলির হলুদ রঙ ম্লান হয়ে অন্ধকারের ছোঁয়া লাগলো আকাশে বাতাসে। শোনা গেল উৎকন্ঠিত মায়ের গলার স্বর --
সোনা.... অন্ধকার হয়ে এলো.... অনেক খেলেছো.... এবার বাড়ি চলে এসো।
-- যাই, মা.... শিশুটি শশব্যস্ত হয়ে সাড়া দেয়।
এবার তার বাড়ি ফেরার পালা, কিন্তু তার সৃষ্টির কি হবে? সে শেষবারের মতো একবার ভালো করে দেখে নেয় তার সৃষ্টিকে। তারপর....
হাসিমুখে চলে ধ্বংসলীলা। দু'বাহু তুলে নাচতে নাচতে মহানন্দে নিজের সৃষ্টিকেই পদতলে পেষণ করতে থাকে শিশুটি -- যেন কাল-মহাকাল বেশে বিশ্বধ্বংসের উদ্দেশ্যে তান্ডব নৃত্য করছেন স্বয়ং শিব।
স-ব শেষ.....
নির্বিকার চিত্তে মহানন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে এক ছুটে বাড়ি ফেরে শিশুটি।
পরের দিন আবার নতুন করে শুরু.......
বেদের আলোকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এক ঈশ্বরেরই তিনটি গুণবাচক নাম। এবার তাহলে একটাই প্রশ্ন --
সত্যিই কি ঈশ্বরকে আর অন্য কোথাও খুঁজতে যাওয়ার দরকার আছে? শিশুটির ঐ একই শরীরে এই তিনটি গুণই একই সাথে বর্তমান নয় কি? নাকি আমি-তুমি কখনো শিশু ছিলাম না, কখনো এমন খেলা খেলিনি আমরা?
তবে আজ হঠাৎ এমন কি হলো -- যে ঐ শিশুটাকে যদিও ভাবতে পারি, কিন্তু নিজেকে ঈশ্বর ভাবতে পারি না! ভাবতে ভয় হয়! অথবা ভাবতে কুন্ঠাবোধ করি! অথবা ভাবতে লজ্জা বোধ করি!
কারণ একটাই। বাকি সবকিছু একই আছে, শুধু সময় আর পরিবেশের চাকায় পিষে শিশু মনটাই নষ্ট হয়ে গেছে আমাদের। মনের আনন্দে সৃষ্টি করতেই ভুলে গেছি আমরা। সযত্নে লালন পালন করা বা মনের সুখে তাকে ধ্বংস করাতো অ-নে-ক পরের কথা।
আমার এক সাহিত্যিক বন্ধু বেশ খুশি খুশি বদনে বললো -- আমি তো মনের আনন্দেই সৃষ্টি করি, আবার ওগুলোকে সযত্নে লালন পালনও করি.....
আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বললাম -- তবে আর কি! তুমি যদি নিজেকে ঈশ্বর ভাবতে চাও, তবে তুমি মাত্র এক স্টেপ পিছিয়ে আছো। পরের স্টেপটা অসম্ভব বলবো না, কারণ ঐ শিশুটা করে দেখিয়েছে, তবে আমার মনে হয় ওটাই মহাবিশ্বের কঠিনতম কাজ -- নিজের সৃষ্টিকে অবলিলায় মহানন্দে ধ্বংস করা।
আর তারপর.... সেটাকে ঐ শিশুটার মতো রোজকার অভ্যেস বানিয়ে ফেলতে পারলে -- আর কি!
অবশ্য তখন আর তুমি ঈশ্বর খুঁজবে না কোত্থাও। না নিজের মাঝে, না বাইরে.....