Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন #গল্প_বর্তিকার_জন্মদিন #কলমে_মহুয়া_মিত্র 
আজ বর্তিকার জন্ম দিন তাও আবার কুড়ি বছরের । তথাকথিত ' টিন এজ ' থেকে প্রাপ্ত বয়স্কের দিকে আরও এক ধাপ এগোনো । রাত বারোটা থেকেই ফেসবুক, হোয়াটস্ অ্যাপ , মেসেনজারে শ…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন 

#গল্প_বর্তিকার_জন্মদিন 

#কলমে_মহুয়া_মিত্র 


আজ বর্তিকার জন্ম দিন তাও আবার কুড়ি বছরের । তথাকথিত ' টিন এজ ' থেকে প্রাপ্ত বয়স্কের দিকে আরও এক ধাপ এগোনো । রাত বারোটা থেকেই ফেসবুক, হোয়াটস্ অ্যাপ , মেসেনজারে শুভেচ্ছা বার্তার বন্যা । সবাইকে ধন্যবাদ দিতে দিতে হাত , চোখ সব ব্যথা । ওদের ছোট্ট দোতলা বাড়িতে প্রাণী বলতে ও , ওর অন্ধ বৃদ্ধা মা আর মায়ের সাথে সবসময় থাকে সেই সবিতা মাসি । নীচের ঘরে ওরা ঘুমে অচেতন । দোতলায় নিজের ঘরে ফোন রেখে বর্তিকা যখন শুল তখন রাত সাড়ে তিনটে । স্বভাবতই সকালে ঘুম ভাঙল বেলা এগারোটা ।


স্নান সেরে নতুন সালওয়ার পরে নীচে নেমে মাকে প্রণাম করল । মা ওর মাথায় প্রসাদী ফুল ছুঁয়ে আশীর্বাদ করলেন । খুব সুন্দর হাসি খুশি পরিবার ছিল ওদের । ওর বাবা ছিলেন নামকরা শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ । কিন্তু বছর খানেক আগে এক গাড়ি দুর্ঘটনা ওনার প্রাণ কেড়ে নিল আর বর্তিকার মায়ের দৃষ্টি । 


মা ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, -- " সব আত্মীয়স্বজনরা তোকে ফোন করে ছিল রে , কে কে করে ছিল সব সবিতা লিখে রেখেছে, যা একটু কথা বলে নে । "


সেই কথা শেষ হতে আরো ঘন্টাখানেক লাগলো । ফোন রেখে সবিতা মাসির ডাকে খাওয়ার টেবিলে গিয়ে দেখল একটা বাটিতে দুধ মুড়ি আর কলা । সবিতা বলছে, -- " অনেক বেলা হল, এটুকু খাও , একটু পরে গরম ভাত মাছ খেও । "


-- " রোজই তো এসব খাই , আজও খাব ? বাপি থাকতে কত ধুমধাম করে আমার জন্ম দিন হতো , বাপি নেই, সব শেষ । মাও তো চোখ খুইয়ে বসে আছে । আর কি! এই হবে । খাব না । " বর্তিকার স্বরে রাগ । 


কিন্তু এখানেই থামল না, হঠাৎই ব্যাগ নিয়ে বেরোতে গেল । সবিতা হা হা করে উঠল, -- " আরে আজকের দিনে কেউ এত মাথা গরম করে? সামনের খাবার ফেলে না, চলো খাবে । আমি ও বেলা কিছু করে দেব । "


-- " ওকে আটকাস্ না, যেতে দে । " মায়ের শান্ত স্বর শুনে জোরে পা চালিয়ে বেরিয়ে গেল বর্তিকা ।


সারা দিন এধার ওধার ঘুরে রাত করে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিল । হঠাৎই কপালে মায়ের হাত টের পেয়ে চমকে উঠে বসে দেখল , মায়ের হাতে ওর পছন্দের মায়ের তৈরি চকলেট কেক আর পাশে সবিতার হাতে থালা ভরে বাসন্তী পোলাও, কাশ্মীরী আলুর দম , চিংড়ি ভাপা , খাসির মাংস আর অবশ্যই এক বাটি পায়েস । সবিতা বলল , -- " এগুলো সব সেই ভোর রাতে উঠে তোমার জন্য নিজের হাতে রান্না করেছে তোমার মা , তুমি টের পাও নি । ভেবেছিলো খাবার সময়ে তোমাকে চমকে দেবে । কিন্তু তুমি তার সুযোগ দিলে না । "


-- " আহ্ , থাক না এসব কথা । ছেলে মানুষ ভুল করে ফেলেছে । আসলে উনি যাবার পর এমন আর্থিক টানাটানি যে ওকে তো রোজ ভালো মন্দ খাওয়ার জন্য দিতে পারি না, ওর তো কোন দোষ নেই । ও ভেবেছিলো আজকেও তাই হবে । কিন্তু বোকা মেয়ে এটা বুঝল না যে এখন ওর মা বাপি সব আমি , আজ ওকে কি করে ঐসব দেব ? দেখ মা, সব পছন্দের খাবার । খাবি না? "


মাকে জড়িয়ে ধরে বর্তিকা বলল , -- " তুমি আমাকে আটকালে না কেন? "


-- " পাগলি মেয়ে, কোনদিন কোন কাজে আটকেছি যে আজ আটকাবো ! "


সবিতা বলল , -- " তোমার মা সারাদিন জল ছাড়া কিছু খায় নি । আর কথা না বলে খাও দেখি তোমরা । "


-- " আমিও সারাদিন কিছু খাই নি মা , আমাকে খাইয়ে দেবে? "


বর্তিকার চোখের জল মুছিয়ে মা ওর মুখে এক চামচ পায়েস তুলে দিল ।


-- " এত বছরের অভ্যাস যা আজকের দিনে আমি করে এসেছি সেটা হচ্ছে না দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল মা , তাই অমন করে ফেলেছি, সরি মা , আর হবে না । " বলে মায়ের মুখে পায়েস দিল বর্তিকা ।


মা মেয়ের আনন্দে আজকের শুভ জন্মদিনের শুভ তিথি যেন দ্বিগুণ আনন্দ উচ্ছল হয়ে উঠল ।