সৃষ্টি সাহিত্য যাপনপ্রভাতী প্রাত্যহিকীতে পড়া আমার আজকের গল্প#গোমড়ামুখো_#দেবারতি_চন্দ_রায়
গোমড়ামুখো কথাটা শুনলে, আমার একজনের কথাই মনে পড়ে যায়। তিনি ছিলেন আমাদের ছোটোবেলার গৃহশিক্ষক, আমাদের গোমড়ামুখোদাদু। আমারা পিঠোপ…
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
প্রভাতী প্রাত্যহিকীতে পড়া আমার আজকের গল্প
#গোমড়ামুখো_
#দেবারতি_চন্দ_রায়
গোমড়ামুখো কথাটা শুনলে, আমার একজনের কথাই মনে পড়ে যায়। তিনি ছিলেন আমাদের ছোটোবেলার গৃহশিক্ষক, আমাদের গোমড়ামুখোদাদু। আমারা পিঠোপিঠি তিন বোন, পড়তাম একসাথে উনার কাছে।
ধুতি-পাঞ্জাবি পরা সেই গোমড়ামুখো দাদু একটা কালো রঙের ছাতা হাতে দোলাতে দোলাতে সন্ধ্যার পরপরই আসতেন আমাদের পড়াতে। এসে গম্ভীর হয়ে টেবিলের একপাশে, একটা চেয়ারে বসতেন তিনি। আমরা বসতাম উনার উল্টোদিকের কাঠের লম্বা বেঞ্চিতে।
একদিন দাদু এলে, আমরা দুইবোন পড়তে বসে দেখি মধ্যম বোন বেপাত্তা। ডেকেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে মা সারাবাড়ি খুঁজেও এলেন। কোথাও দেখত নাপেয়ে মা চিন্তায় অস্থির।
হঠাৎ দাদুর মনে হলো, পায়ে যেনো কিসের গুঁতো খেলেন। কিসেতে লাগলো, দেখতে গিয়ে দাদু আবিষ্কার করলেন বোনকে, পড়ার টেবিলের তলাথেকে। খোঁচাটা বুঝি ওই দিয়েছিল।
মাকে উৎকণ্ঠায় আর রাগে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে, যখন ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে বোন, ঠিক তখনই আমাদের গোমড়ামুখো দাদু হঠাৎ করে জোরে হেসে উঠলেন হোহো করে। মাও হেসে ফেললেন দেখে। মোক্ষম সময়ের ওই হাসি, মুহূর্তেই বানিয়ে দিলো উনাকে গোমড়ামুখো থেকে পরিত্রাতাদাদু । কাছে ডেকে, পরমস্নেহে ওর মাথায় হাতবুলিয়ে পাশে বসাতে, ভেসে উঠল গোমড়ামুখের আড়ালে থাকা স্নেহশীল মানুষটার আসল ছবি।
দাদু, ছড়া আর গল্পের মাধ্যমে এমন ভাবে নামতা আর পাঠ্যবই পড়াতেন যে এরপর থেকে, সে বোনই সন্ধ্যা হলে, সবার আগে বই নিয়ে বসে পড়তো গোমড়ামুখো থুরি প্রিয়দাদুর অপেক্ষায়।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন, আমাদের প্রিয় গোমড়ামুখো দাদু।
DCR