Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

ছোট গল্প:- স্বপ্নের বিয়ে 🖋ইন্দ্রনীল কর তারিখ:- ০৩\০৬\২১চুচুঁড়া 
❤🧡💙💛💜☆স্বপ্নের বিয়ে☆💜💛💙🧡❤       ♨️🍀♨️🍀♨️ইন্দ্রনীল♨️🍀♨️🍀♨️ 
        আমার বিয়েটা হয়েছিলো খুব অদ্ভুতভাবে। কোন অনুষ্ঠান না,কোন খাওয়া-দাওয়া না। জাস্ট বিয়…

 


ছোট গল্প:- স্বপ্নের বিয়ে 

🖋ইন্দ্রনীল কর 

তারিখ:- ০৩\০৬\২১

চুচুঁড়া 


❤🧡💙💛💜☆স্বপ্নের বিয়ে☆💜💛💙🧡❤

       ♨️🍀♨️🍀♨️ইন্দ্রনীল♨️🍀♨️🍀♨️ 


        আমার বিয়েটা হয়েছিলো খুব অদ্ভুতভাবে। কোন অনুষ্ঠান না,কোন খাওয়া-দাওয়া না। জাস্ট বিয়ে। ম্যারেজ রেজিস্টার এসে আমার আর ছেলের সই নিলেন,আর তিন জন সাক্ষীর সই নিলেন, ব্যস! বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর আমার বর ইয়াবড়ো একটা স্যুটকেস নিয়ে আমার ঘরের দরজায় নক করলো। আমি দরজা খুলে দিলাম। সে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

-- "বাহ! খুব সুন্দর ডেকোরেশন। আমি কোথায় থাকবো?"


আমি বিছানার ডানপাশ দেখিয়ে বললাম, 

-- "আপনি এখানে থাকতে পারেন।" 

সে বললো,

-- "থ্যাংকস।" 

বলেই স্যুটকেস খুলে জামাকাপড় বের করে বাথরুমে চলে গেল। আমি বিয়েতে শাড়ি পর্যন্ত পরিনি। একটা কামিজ পরেছিলাম। সেটা চেঞ্জ করে বাড়িতে পরা একটা টপস পরে নিলাম।


এত আয়োজনহীন বিয়ের পেছনে তেমন কোনো কারন নেই। বিয়েবাড়ির হুল্লোড়, মাতামাতি এসব আমার আর আমার বরের কারোর‌ই পছন্দ না।‌ তাছাড়া সে থাকবে ঘরজামাই,কাজেই লোক জানাজানি করে বিয়ে করে কি লাভ!


আমার বর আমার ঘরে উঠে এসেছে এই পর্যন্ত, আমার জীবনযাত্রায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। আগেও যেমন ছিলাম এখনো তেমন আছি। তফাৎ এইটুকু যে আগে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে একা ঘুমোতাম এখন একটু এডজাস্ট করতে হয়। আগে একা একা ভাত খেতাম এখন দুজন একসাথে খাই। আগে বাইরে বের হলে ব্যাগ ধরার লোক ছিল না এখন ব্যাগ ধরবার একটা লোক আছে। কম্বলের ভেতর শুয়ে যখন মনে হয় ফ্যানটা একটু কমানো দরকার তখন কমিয়ে দেবার একজন লোক আছে। এই তো! আমি খুব যে খারাপ আছি তা না,ভালোই আছি। আমার বরটাও খুব একটা খারাপ না। সেও আমার মতো ব‌ই পড়ে,সেও আমার মতো সিনেমা দেখে। আমাদের ভালোই মনের মিল।


তা সত্ত্বেও একদিন আমাদের মধ্যে কঠিন ঝগড়া হয়ে গেল। কথায় কথায় সে একদিন আমার প্রিয় নায়ক সম্পর্কে মন্তব্য করলো, 

-- "ছেলেটা দেখতেই ভালো, অভিনয় পারে না!"


আমি তাকে ঘর থেকে বের করে দিলাম। বাকি রাতটা মশার কামড় খেয়ে বারান্দায় কাটাবার পর পরদিন সে এসে জানালো, 

-- "ঐ নায়কের একটা সিনেমা কাল রাতে দেখেছে,আসলে তার অভিনয় ভালোই, অন্যরকম একটা আর্ট আছে।"

ব্যস আমাদের মধ্যে মিল হয়ে গেল।


আমি সাধারণত ঘর থেকে বের হ‌ইনা। মানুষের সাথে মিশিও কম। বেশীরভাগ সময় ছাদে বসে আকাশ দেখি।‌ এই সময় মাঝেমধ্যে সে চা এনে দেয়। দুজন একসাথে বসে চা খাই। ভালোই লাগে।


কখনো কখনো আমার রাতে ঘুম হয় না। তখন তাকে ডেকে তুলে গল্প করি। অদ্ভুত সব গল্প।‌ সদ্য দেখা সিনেমার গল্প,সদ্য পড়া ব‌ইয়ের গল্প। কলেজে পড়বার সময় কোন কোন ছেলে আমার জন্য পাগল ছিল। আমার বর হাই তোলে আর শোনে। জেলাসি বলতে তার মধ্যে কিছু নেই। সে কখনোই আমাকে জিজ্ঞেস করেনি আমার কারোর সাথে রিলেশন ছিল কি না, আমি কাউকে ভালোবাসি কিনা। বরং আমি নিজে থেকেই একদিন বললাম, 

-- "আমার একজন ক্রাশ আছে। ছোটবেলা থেকেই আমি তাকে খুব‌ই পছন্দ করি। কয়েকবার প্রপোজ করেছি,রাজি হয়নি। কিন্তু কখনো যদি সে রাজি হয়ে যায় আমি তোমাকে ছেড়ে, সবকিছু ছেড়ে দৌড় লাগাবো।"


আমার বর তার ছবি দেখতে চাইলো। আমি ফোন গ্যালারিতে ক্রাশের একশ বারোটা ছবির ফোল্ডার বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিলাম। সে হাই তুলতে তুলতে ছবি দেখতে লাগলো। একসময়ে বলল, 

-- "হুম ভালোই আছে! সুন্দর ছেলে! রাজি হলো না কেন?"


আমি হতাশ গলায় বললাম,

-- "হয়তো আমাকে পছন্দ না,না হয় গার্লফ্রেন্ড আছে।"


সে বললো,

-- "কি যে বলো! তোমাকে পছন্দ না হবার তো কিছুই নেই। আমি চেষ্টা করবো?"


আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 

-- "কি চেষ্টা করবে?"


-- আমি তোমার ক্রাশের সাথে কথা বলি। তাকে বলি যে তুমি তাকে কতটা ভালবাসো।‌ হয়তো তুমি তাকে বোঝাতে পারোনি,আমি পারবো।


আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। ইতিহাসের কোনো স্বামী তার স্ত্রীর ক্রাশকে পটানোর দায়িত্ব নিয়েছে বলে আমার মনে পড়ছে না। ইতিহাস কেন! গল্প উপন্যাসেও এরকম স্বামী নেই।


আমি বিরক্ত গলায় বললাম, 

-- থাক করতে হবে না। তুমি এক কাজ করো তো। বুকসেলফ থেকে তিন নাম্বার ব‌ইটা এনে দাও। পড়ি।


সে ব‌ই এনে দিলো। তারপর নিজেই বললো, 

-- কফি খাবে? খেলে বানাই দুজন মিলে খাই।


-- ওকে।


সে কফি বানাতে গেল। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে ফিরছে না। এক সময়ে সে ফিরে এলো এবং মেয়েলী গলায় চিৎকার করতে লাগলো,

-- "লাবণ্য ওঠ! কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে! লাবণ্য! লাবণ্য! ঐ লাবণ্য!!"


ঘুম ভেঙ্গে দেখি দিদি ডাকছে‌। তার হাতে কোনো কফির কাপ নেই। ঘুম ভেঙ্গে অবাক হয়ে তার দিকে তাকাতেই দিদি গম্ভীর গলায় বললো,

-- "কখন থেকে এলার্ম বাজছে! তোর না কলেজ আছে! উঠে কলেজে যা।"


আমি ভালো‌ করে চোখ রগড়ে সদ্য স্বপ্নে দেখা আদর্শ স্বামীটিকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু মাথাটা একটু পরিস্কার হ‌ওয়া মাত্র‌ই বুঝতে পারলাম, এরকম আদর্শ স্বামী আর এরকম ঝামেলাবিহীন বিয়ে শুধুমাত্র স্বপ্নেই দেখা সম্ভব।


                                         🍁ইন্দ্রনীল🍁 


💙🧡❤💚💜💛💙🧡❤💚💜💛💙🧡❤

       ❣🌿❣🌿❣ইন্দ্রনীল❣🌿❣🌿❣