#ইভেন্ট-সৃজনী বন্যা#বিভাগ-গল্প#শিরোনাম-অজেয়#কলমে-ডাঃ পদ্মকলি কর#তারিখ-১৬/০৬/২০২১
ঠৌঁটে আর একবার লিপস্টিকটা বুলিয়ে নিয়ে অরুনিকা আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়।নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। সত্যিই আজ তাকে দারুণ লাগছে দেখতে।- তোমার এখনও হয়নি …
#ইভেন্ট-সৃজনী বন্যা
#বিভাগ-গল্প
#শিরোনাম-অজেয়
#কলমে-ডাঃ পদ্মকলি কর
#তারিখ-১৬/০৬/২০২১
ঠৌঁটে আর একবার লিপস্টিকটা বুলিয়ে নিয়ে অরুনিকা আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়।নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। সত্যিই আজ তাকে দারুণ লাগছে দেখতে।
- তোমার এখনও হয়নি ?
রোহিত ঘরে ঢুকে বলে।
- আর কতো সাজবে ? ইউ আর অলরেডি লুকিং সো স্টানিং।
- আই অ্যাম রেডি ডার্লিং।
ওরা দু'জনে গিয়ে গাড়িতে বসতেই শোফার স্টার্ট দেয়।
ওদের গন্তব্য মেরিল্যান্ড ক্লাব। জাস্ট কিছুদিন আগে দু'হপ্তার ছুটিতে ওরা দুবাই থেকে কলকাতা এসেছে। গত মাসে দুবাইয়ের শপিং মলে অরুনিকার ইউনিভার্সিটির বান্ধবী সুকন্যার সঙ্গে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে যায়।
- আরে অরু কেমন আছিস ? কত বছর পর দেখা ! নেক্সট মান্থে ইন্ডিয়া আসছিস তো ?
- কেন রে ! সেরকম তো কোনো প্ল্যান নেই।
- আমাদের রিইউনিয়ন আছে তো পঁচিশ তারিখে। তুই তো কোনোবারই আসিস না।এবার কিন্তু সবাই আসছে। আমাদের পঁচিশ বছরের পুনর্মিলন উৎসব বলে কথা !
একথা শোনার পরে অরুনিকার উদ্যোগেই ওদের এবার কলকাতায় আসা।
অরুনিকার এতো উৎসাহের পিছনে আরেকটা কারণ আছে।সে তার এক্স বয়ফ্রেন্ড উত্তীয়কে দেখাতে চায় যে সে কতো সুখে আছে।
প্রথম বর্ষেই তারা একে অপরের প্রেমে পড়েছিলো।
অরুনিকার যেমন সুন্দরী বলে অনুরাগীর সংখ্যা নেহাত কম ছিলো না, তেমনি উত্তীয়ও ছিলো ওদের ইয়ারের হার্টথ্রব।যেমন হ্যান্ডসাম, তেমনই ব্রিলিয়ান্ট। তাছাড়া প্র্যাকটিকাল জোক করে অন্যদের বোকা বানাতে তার জুড়ি ছিলো না।তাকে সবাই তাই 'প্র্যাঙ্কস্টার' নাম দিয়েছিলো।অরুনিকাকেই কতোবার বোকা বানিয়ে ছেড়েছে !অরুনিকা যখন ধরতে পেরে রাগে গনগন করতো তখন উত্তীয় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতো। তাই সে যখন ব্যাঙ্গালোরে পিএচডি করতে গিয়ে অরুনিকাকে ফোন করে জানালো যে সে ব্রেক-আপ করতে চায় তখন প্রথমে অরুনিকা তার কথা বিশ্বাস করতে চায়নি।
ভেবেছিলো যে উত্তীয় তাকে আবারও বোকা বানাচ্ছে। কিন্তু দু'সপ্তাহ যখন উত্তীয়ের কোনো ফোন এলো না তখন আর অরুনিকা ফোন না করে থাকতে পারেনি। উত্তীয় তাকে জানায় যে সে তার সোলমেট নেহাকে খুঁজে পেয়েছে। অরুনিকার সঙ্গে সে আর কোনো রকম যোগাযোগ রাখতে চায় না। উত্তীয়র অনমনীয় মনোভাব দেখে অবশেষে অরুনিকা ভাঙা মন নিয়ে বাড়ির থেকে সম্বন্ধ করা বিয়েতে মত দেয়। বাড়ির পছন্দের পাত্র রোহিতকে বিয়ে করে দুবাইয়ে পাড়ি দেয় বিয়ের কয়েকমাস পরেই।সেই থেকে এতো বছর দুবাইতেই আছে। রোহিত খুবই শান্ত স্বভাবের আর ভীষণ কেয়ারিং। তাদের বেশ সুখের সংসার। তাও কারণে অকারণে মাঝে সাঝে যখন উত্তীয়র কথা মনে পড়ে তখন তার চোখের কোণটা জ্বালা করে ওঠে, বুকটা কেমন খালি খালি লাগে।
- কি এতো ভাবছো ?
রোহিতের গলার আওয়াজে অরুনিকা চমকে ওঠে।
- না না, তেমন কিছু নয়।কত বছর বাদে সব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে তাই খুব এক্সাইটেড লাগছে।
মনে মনে ভাবে
- এতোদিন বাদে উত্তীয়কে একটা উপযুক্ত জবাব দেওয়ার সুযোগ পাওয়া গিয়েছে। আজ ওদের দু'জনকে দেখিয়ে দেবো আমি কতো সুখে আছি।
পুরনো বন্ধুরা একে একে সকলে পৌঁছতেই পার্টি জমে ওঠে।।কিন্তু উত্তীয়ের দেখা নেই।অরুনিকা ছটপট করে। রাত বাড়ছে। এবার ফিরতে হবে। অরুনিকা আর সুকন্যাকে না বলে পারে না।
- তুই যে বললি এ'বছর সবাই আসবে !
- হ্যাঁ সব্বাই তো এসেছে।এমনকি যারা বিদেশে সেটলড্ তারাও ছুটি ম্যানেজ করে অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছে।
- উত্তীয়কে দেখছি না !
সুকন্যার মুখটা কালো হয়ে যায়।
- ওর তো ব্যাঙ্গালোরে পিএচডি করার সময় লিউকিমিয়া ধরা পড়েছিলো। সাউথ ইন্ডিয়ারই কোনো বড়ো হাসপাতালে ওর চিকিৎসা চলছিলো। দু'টো বছর অনেক লড়াই করে রোগের কাছে হার মানলো। আমরা অবশ্য অনেক পরে খবরটা পেয়েছি। আর তুই তো বিয়ের পরেপরেই দুবাই চলে যাস। তাই কিছু জানতে পারিসনি।
ওই যে হলের কোণের টেবিলটায় আমাদের যে সব ক্লাসমেটরা আজ নেই, তাদের ছবিগুলো রাখা আছে। তুই হয়তো খেয়াল করিসনি।
অরুনিকা পায়ে পায়ে টেবিলটার দিকে এগিয়ে যায়। চার পাঁচটা ছবির মধ্যে ওই তো উত্তীয়ের ছবি। ঠোঁটের কোণে সেই দুষ্টুমির হাসিটা ঝিলিক দিচ্ছে।
- আবারও আমাকে বোকা বানালি উত্তীয় !যাদের দেখাবার জন্য আজ এতো সেজেছি তাদের একজন কবেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে আর অন্যজনের কোনো অস্তিত্বই নেই।আজকেও প্রতিবারের মতো শেষ হাসিটা তুইই হাসলি।
সমাপ্ত।।