সুপ্রভাত আমার সকল কবি বন্ধুগন,
তারিখ : ১৩/০৭/২০২১কবিতা : প্রেম চিরন্তনকলমে : দুর্গা শংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
অশীতিপর এক বৃদ্ধ, ধীর পায়ে পৌঁছলেন ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতে, ডাক্তারের চেম্বারে। ভিতরে ঢুকে বলেন অভ্যর্থক মহিলাকে,ভাঙা হাত দেখাতে…
সুপ্রভাত আমার সকল কবি বন্ধুগন,
তারিখ : ১৩/০৭/২০২১
কবিতা : প্রেম চিরন্তন
কলমে : দুর্গা শংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
অশীতিপর এক বৃদ্ধ, ধীর পায়ে পৌঁছলেন ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতে, ডাক্তারের চেম্বারে। ভিতরে ঢুকে বলেন অভ্যর্থক মহিলাকে,
ভাঙা হাত দেখাতে এলাম,
লাঠি ঠুকে ঠুকে।
দয়া করে,ডাক্তারবাবু কে বলে
একটু আগে দেখিয়ে দিন,
ব্যান্ডেজটা কি কাটতে হবে,
আজ হলো সতেরো দিন।
কেন? কোথাও যাবেন, তাড়া আছে?
হ্যাঁ । বলে বৃদ্ধ বসেন দূরে
সার দিয়ে পাতা একটা বেতের চেয়ারে।
মৃদু স্বরে রিসেপশনিস্ট বলে,
কত রোগী আছে ভিতরে,
যায় হোক, বুড়ো পাবেনা ছাড়া
ঘণ্টা দুই এর ভিতরে।
কিছু পরে, বৃদ্ধ দেখেন,পর্দা ঠেলে
ডাক্তারবাবু চেম্বারে ঢোকেন,
হেলে দুলে।
বৃদ্ধ চেঁচায়, ডাক্তারবাবু নমস্কার,
মোরে যদি আগে দেখেন,
হয় বড্ড উপকার;
যেতে হবে অন্য স্থানে ভীষণ দরকার।
রিসেপশনিস্ট বলে, তা কখনো হয়,
অনেক পেসেন্ট ওনার আগে,
একটু তর কেন না সয়?
ডাক্তার বাবু বলেন, আচ্ছা,
পাঠাও বৃদ্ধকে
বেশি সময় নেবো না,ওর নিশ্চয়
তাড়া আছে।
অগত্যা রুষ্টা যুবতী বৃদ্ধরে কয় হেঁকে
আপনিই যান চেম্বারে, ডাক্তারবাবু ডাকে।
ডাক্তার দেখে বলেন বৃদ্ধে, ব্যান্ডেজ কাটতে হবে,
ভাঙ্গা হাড় জুড়ে গেছে, সারতে একটু সময় নেবে।
এই অবসরে শুধালেন ডাক্তার, কি এমন দরকার,
এত রোগী বসে আছে, এত তাড়া কিসের আপনার?
বৃদ্ধ বলেন মৃদু স্বরে, হয়েছে অনেক দেরি, যাবো সেবা সদনে,
প্রাতরাশ অপেক্ষায় বসে আছে যেথায়,
তার বৃদ্ধা স্ত্রী উদাস নয়নে।
ডাক্তার বলেন রেগে, এত কিসের বায়না,
একসাথে খেতেই হবে, এ তো হতে পারেনা ?
বৃদ্ধ মৌন মুখে রহি ক্ষণ কাল, বলেন
আলঝাইমার্স রোগিনী, ভর্তি বহুকাল,
বৃথায় থাকবে বসে প্রাতরাশ খাবেনা,
এমনটা যদি চলে বেশিদিন,
তারে বাঁচানো আর যাবে না।
ডাক্তার তাচ্ছিল্য ভরে, কহিলেন হেসে
এক সাথে না খেলে কি হয়, এই বয়সে?
বলবেন, ভাঙ্গা হাত দেখিয়ে এলাম,
তাই এতো দেরি।
ভাঙ্গা হাত ঠিক না হলে আপনার কষ্ট হবে যে ভারি।
হতাশ নয়নে বৃদ্ধ বলেন, শুনবে কে, বলবো কারে?
পাঁচ বছরে পত্নী যে তার, একটি বারেও চিনতে পারে নি তারে।
তাহলে আর কিসের তাড়া,বসুন এখন চুপটি করে,
ধীরে সুস্থে কাজ করি, যাবেন আরও খানিক পরে।
বৃদ্ধ বলে সে নাই চিনুক, আমি তো চিনি তারে, আমার সারা জীবন ধরে।
এখন যদি উপোসী হয়, আমি বাঁচাবো কেমন করে।
এই বলে মুহূর্তকাল বিলম্ব না করে,
বৃদ্ধ চলিলেন তার ধর্মপত্নীর প্রাতরাশের তরে।
দৃশ্য হেরি ডাক্তার বসি উত্তর খুঁজে মনে,
এই কি তবে প্রেম, না এর অন্য কিছু মানে?