বিভাগ — গল্পশিরোনাম - “ নিঃশব্দের শব্দ “কলমে — সূর্যকন্যা তপতী( তপতী দাস )তারিখ- ০৮/০৭/২০২১4:13 PM“””””””””””””””””””””””””””””””””””””””ভোরের আকাশে সূর্য ওঠার আগেই উঠে পড়েছি । খোলা জানালা দিয়ে নিঃস্তব্ধ ঘরে হঠাৎই ভেসে এলো নাম না…
বিভাগ — গল্প
শিরোনাম - “ নিঃশব্দের শব্দ “
কলমে — সূর্যকন্যা তপতী( তপতী দাস )
তারিখ- ০৮/০৭/২০২১
4:13 PM
“””””””””””””””””””””””””””””””””””””””
ভোরের আকাশে সূর্য ওঠার আগেই উঠে পড়েছি । খোলা জানালা দিয়ে নিঃস্তব্ধ ঘরে হঠাৎই ভেসে এলো নাম না জানা পাখির ডাক। কি হয়েছে কে জানে ,পাখিটা আপন মনে ডেকেই চলেছে —!!
সেই ডাক নিশি পাওয়া মানুষের মতো আমাকে নিয়ে চলেছে ঘুম না আসার দেশে। নিঃশব্দের শব্দ মিছিলে আমিও চলেছি পা ফেলে ফেলে’। স্মৃতির স্মরণী বেয়ে এগিয়ে চলতে চলতে থামছে আমার কলম।
ভাবছি কোথায় হারিয়ে গেল আমার সেই চেনা শব্দ গুলো ।
‘ কক্কোর কু— কক্কোর কু —ডাকছে বাবার পোষা মোরগ রামপ্রসাদ। অনেকে রাগ করতো মোরগের নাম রামপ্রসাদ শুনে ।
সে কিন্তু সাড়া দিয়ে কক্কোর কু শব্দ করে করে এগিয়ে আসত বাবার কাছে। ওই তো শুনতে পাচ্ছি ডাকছে বাবা - ‘ভোর হলো দোর খোল তপু সোনা ওঠো রে—
মা উঠে পরেছে । মা গাইছেন ‘ জাগো মোহন বংশীবালে— ভোর ভইলো রজনী পোহাইলো , ঘর ঘর খুলতো তিওয়ারে— জাগো মোহন বংশীবালে—‘
নিচে বারান্দাতে পিঁড়ি পাতার শব্দ । কাঁসার থালা বাটি গ্লাস লাগানোর শব্দ জানাচ্ছে জল খাবার রেডি।কুঁয়োতে বালতী নামাচ্ছে তার শব্দ , রাতের খাওয়া এঁটো বাসন ঝনঝন শব্দ করে নামাচ্ছে বাসন মাজার ঝি ধলা বৌ । মিঁয়াও করে শব্দ তুলে এঁটো কাঁটা খাওয়ার লোভে এসে গেছে পুষি বেড়াল।ধলা বৌ শব্দ করে চেঁচিয়ে বলে ‘ এ্যাই যা — যা ‘বলে। বেলা বাড়ে- শব্দেরা পাল্টে যায় । সব তুতো ভাই বোনেরা এক সাথে স্কুলের পথে চলেছি অনর্গল শব্দ করে কথা বলতে বলতে । আমাদের হিহি হাহা হাসির শব্দের সাথে মিলছে ক্রিং —ক্রিং সাইকেলের বেলের শব্দ। ছুটির দিনে শব্দ গুলো একই থাকে । তবে দুপুর বেলা জাঁতাতে গম পেষার শব্দের সাথে মেলে খাতিমা বুবু আর আয়েশা বিবিদের সুখ দুঃখের গল্পের শব্দ। মা কাকিমাদের খাওয়া দাওয়া সাড়া জানান দিচ্ছে রান্না ঘরে শেকল টানার শব্দ।
গ্রীষ্মের দুপুরে দরোজা জানালা বন্ধ করার শব্দ । বাবার মৃদু মৃদু নাক ডাকার শব্দের সাথে মিলে মায়ের তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করার শব্দ।
দূরে কোথাও নারকেল গাছের মাথায় কাঠ ঠোকরার ঠক্ ঠক্ শব্দে ঘর বাঁধার শব্দ ভেসে আসছে।
রাস্তা দিয়ে ফেরিওয়ালা হাঁক পাড়ে ‘ কাঁচের চুড়ি লিবে—-রঙীন ফিতা—‘ কিংবা আ—ইস্ কিরিম— আইস কিরিম—।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে আঁধার কলস উল্টে দিয়ে ।
তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বেলে দিয়ে শঙ্খ বাজচ্ছে পুঁ -পুঁ -পুঁ — শব্দ করে মা কিংবা কাকিমা-।
বাল্য বিধবা পিসিমা রাধা গোবিন্দের আরতী করছেন - গাইছেন ‘শঙ্খ বাজে ঘন্টা বাজে , বাজে মৃদঙ্গ মুরারী - আনন্দে আরতী করে নদীয়া বিহারী’
কাঁসর ঘন্টা করতালের শব্দে মুখরিত হতো সাড়া বাড়ি।
তারপর সান্ধ্য ভোগ মালপোয়া খেয়ে যে যার ঘরে গিয়ে লন্ঠনের আলোতে পড়তে বসা-শুরু হতো দুলে দুলে শব্দ করে পড়া মুখস্থ করা — ‘ বাংলার নবাব সিরাজদৌল্লা— বাংলার নবাব —-‘
শব্দেরা পাল্টে যেত ঋতুতে ঋতুতে । গ্রীষ্মে কাল বৈশাখীর তান্ডবের শব্দ । বজ্র বিদ্যুতের শব্দ,বাগানে ধপ করে আম , নারকেল কিংবা তাল পরার শব্দ। শুকনো পাতার ওপর দিয়ে খস্ খস্ শব্দ করে বিষধরের যাতায়াতের শব্দ, প্রহরে প্রহরে শেয়ালের হুক্কা হুয়া- হুক্কা হুয়া ডাকের শব্দ, রাস্তার নেড়ে কুকুরের ভৌক ভৌক ডাক , কালি গাই , ধলি গাইয়ের হাম্বা - হাম্বা শব্দ করে ডাক, কা কা শব্দে কাকেদের চিৎকার, আমবাগানে দোয়েল, কোয়েল ,বুলবুলির গান , কোকিলের কহু কহু ডাক, বৌ কথা কও- বৌ কথা কও ,ফটিক জল ফটিক জল, চোখ গেল পাখির ডাক , ঘুঘু পাখির ডাক , পায়রার বকম বকম ডাক, শালিক চড়ুইয়ের কিচিড় মিচিড় ডাক, মৌমাছির গুনগুন, সন্ধ্যা বেলায় ঝিঁ ঝিঁ পোকার এক নাগারে ঝিঁ - ঝিঁ শব্দ করে ডাক—কোথায় যে সব হারিয়ে গেল।
ঝম্ ঝম্ করে গোয়াল ঘরের টিনের চালে বৃষ্টি পরার শব্দ, ষষ্টীতলায় খোল করতাল বাজিয়ে
কীর্তনের শব্দ, ছলাক ছলাক দাঁড় ফেলে নৌকা বাইতে বাইতে মাঝিদের কন্ঠে ভাটিয়ালী গান, ধান চাল মাপছে আব্দুল কিংবা হাসান চাচা । গুনতিতে ভুল না হয় তাই দাঁড়ি পাল্লায় ওজন করেছে আর মুখে শব্দ করে বলছে ‘ রাম এক , রাম দুই , রাম তিন-
ডুগ্ ডুগির শব্দ জানিয়ে দিত ভালুক কিংবা বাঁদর খেলা দেখাতে এসেছে ।
হিং লে লো — মেওয়া লে লো হাঁক পাড়তো কাবুলিওয়ালা।
ঢাকের শব্দে মুখরিত হতো শরতের আকাশ বাতাস।
হালদার পাড়া থেকে ভেসে আসছে ব্যান্ড পার্টির শব্দ
‘ লে যায়ে গে — লে যায়ে গে — দিলবালে দুলহনিয়া লে যায়ে গে-‘
দিলবালে তো দুলহনিয়া নিয়ে এসেছে — দুলহনিয়া তার চেনা শব্দের জগত থেকে অচেনা শব্দের জগতকে একটু একটু করে চিনছে —!!
ওই তো সেল ফোনটা বাজছে শব্দ করে ‘ সারে জাঁহাসে আচ্ছা— হিন্দুস্তাঁ হামারা হামারা—‘
“”””””””””””””””””””””””””””””””””
সূর্যকন্যা তপতী