সৃষ্টি সাহিত্য যাপন বিষয়- অনুগল্প শিরোনাম- ছোটো বেলার রথযাত্রাকলমে- বিভা মিত্র ভদ্রতা- ১২/৭/২১ছোট বেলার রথযাত্রা
ছোট বেলায় রথ মানে ছিল বাড়ির ছোটোরা আর পাড়ার ছোটোরা মিলে ঘড়ঘড়িয়ে রথ টেনে নিয়ে যাওয়া। আর এরজন্য দুতিন ধরেই চলতো কতো ব্…
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
বিষয়- অনুগল্প শিরোনাম- ছোটো বেলার রথযাত্রা
কলমে- বিভা মিত্র ভদ্র
তা- ১২/৭/২১
ছোট বেলার রথযাত্রা
ছোট বেলায় রথ মানে ছিল বাড়ির ছোটোরা আর পাড়ার ছোটোরা মিলে ঘড়ঘড়িয়ে রথ টেনে নিয়ে যাওয়া। আর এরজন্য দুতিন ধরেই চলতো কতো ব্যস্ততা।
পিচবোর্ড কেটে, থার্মোকল কেটে ড্রিজাইন করে রঙ করে রথ বানানো হোতো। কাগজ কেটে ফুল বানিয়ে রথের গায়ে আঠা দিয়ে লাগানো হোতো। পতাকা বানিয়ে রথের উপরে টাঙানো হোতো। আর টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় হাওয়ায় পতপত্ করে উড়তো। আর তা দেখে আমরা ছোটরা খুশিতে ফেটে পড়তাম। এসব নিয়েই যে কি ব্যস্ততা ছিল। পড়াশোনা একেবারে লাটে উঠতো। মা একটু রাগ করলেও বাবার কাছে ছিল সবটাই ছাড়। বরং বাবা আমাদের একাজে সাহায্য করতো। ছোট দাদা কৌটার ঢাকনা কিংবা কাচা তাল কেটে ফুটো করে লাঠির সঙ্গে লাগিয়ে চাকা বানাতো। তাই দেখে বাবা যত্ন করে বাঁশ গোল করে কেটে কিংবা কাঠের তৈরী চাকা বানিয়ে দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য বাবা কাঠের তৈরী ছোট রথও বানিয়ে দিয়েছিলেন। নারকেল কাতার দড়িতে আমাদের কচি হাতে ঘষা লাগবে বলে মোটা করে পাটের দড়ি লাগিয়ে দিতেন। রথ শেষ হলে ওটা কাপড়ে মুড়ে তুলে রাখা থাকতো। প্রতি বছর আবার রথের সময় নামিয়ে সাজানো হোতো।
বাতাসা, নকুলদানা, মিছরিদানা,খই এইসব ছিল মহাপ্রভুর প্রসাদ। ভোর বেলায় সবাই ফুল তুলে এনে রথকে সাজাতাম। তারপর বলরাম,সুভদ্রা ও জগন্নাথ দেবের ছোট ছোট মুর্তি বসিয়ে মা পুজো করে দিতেন। তারপর আমরা রথ নিয়ে বেড়িয়ে পড়তাম পাড়ায় ঘুরতে। ও পাড়ায় লালুদের বাড়িতে রথ রেখে আসা হোতো। ওটাই ছিল প্রভুর মাসির বাড়ি। তারপর একিরকম ভাবে উল্টো রথের দিন ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় করে সবাই টেনে আনতাম। কারো হাতে থাকতো করতাল, কারো হাতে ঘন্টা, কাঁসর ও শাঁখ বাজাতে বাজাতে ঘুরতাম । কি মজাটাইনা ছিল। কত পয়সা জমা পড়তো। পাড়ার সবাই প্রণাম করে সেই সময় অনুযায়ী কেউ দশ পয়সা, কেউ কুড়ি পয়সা, কেউ পঁচিশ পয়সা, আটয়ানা বা এক টাকার কয়েন দিতো। সেই যুগে সেটাই ছিল অনেক পয়সা। আমরা ছোটোরা সেই পয়সা জমিয়ে বিকেলে মেলায় গিয়ে জিলাপি, পাঁপড়,গজা,ফুলুরি কিনে ভাগ করে আনন্দেতে সবাই মিলে ভাগ করে খেতাম। কি যে আনন্দ ও মজা ছিল তা আর বলার নয়। আজো সেই স্মৃতি মনে ভেসে ওঠে। আজ কে কোথায় তার ও ঠিক ঠিকানা নেই। এইরকম'ই ছিল আমাদের ছোটোবেলার রথযাত্রা।