Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

গভীর সংকটের মুখে যাত্রা শিল্প

নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: করোনার কাটায় বিদ্ধ বিনোদন জগত। তাই দীর্ঘ প্রায় বছর দুয়েক পরেও রথযাত্রার শুভক্ষণেও মিলল না বুকিংয়ের বরাত। ফলে মুখে হাসি ফোটা তো দূরের কথা, গভীর সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে জীবন-জীবিকা রক্ষায় রাজ্যের মুখ্যমন…

 


নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: করোনার কাটায় বিদ্ধ বিনোদন জগত। তাই দীর্ঘ প্রায় বছর দুয়েক পরেও রথযাত্রার শুভক্ষণেও মিলল না বুকিংয়ের বরাত। ফলে মুখে হাসি ফোটা তো দূরের কথা, গভীর সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে জীবন-জীবিকা রক্ষায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে করুন প্রার্থনা জানিয়ে আবেদন রাখলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমার এর শতাধিক যাত্রা শিল্পীরা।

পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার হাইরোডে ৪১নং জাতীয় সড়কের পাশে সার দেওয়া প্রায় ২৫টি যাত্রা বুকিং কাউন্টার। যেখানে ছোটবড় মিলিয়ে যাত্রাদলের সংখ্যা প্রায় ৬০-১০০টি। আর এই যাত্রাশিল্পের সাথে যুক্ত শিল্পী কলাকুশলী মিলিয়ে রয়েছেন কয়েকহাজার মানুষ।

বর্তমানে যা কলকাতার মিনি চিৎপুর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর এই বুকিং কাউন্টার গুলিকে ঘিরে দুই মেদিনীপুরের বহু সাধারণ যাত্রাশিল্পীর জীবন জীবিকা নির্ভর করে থাকে। কিন্তু বিগত প্রায় বছর দশেক ধরে গ্রাম বাংলার লোকশিল্প হিসেবে যাত্রাশিল্প একটু একটু করে হারিয়ে যেতে বসেছে। আধুনিক সভ্যতায় ফেসবুক, হওয়াটস আপ, ডিজিটাল আর ইন্টারনেটের যুগে যাত্রা থেকে এমনিতেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন মানুষজন। সংকটে পড়েন জেলার যাত্রাশিল্পীরা। এমন অবস্থায় লোকশিল্পের প্রাসারের পাশাপাশি অসহায় শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাজের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। 

শুরু হয় লোকশিল্পীদের মাসিক ভাতা প্রদান। ফলে ফের অতীতের সেই গৌরবময় দিনে ফেরার আশায় বুকবাঁধেন গ্রামবাংলার লোকশিল্পীরা। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্রয়াসেও যেন উঠে দাঁড়ালো সামান্যতম শক্তি টুকু কেড়ে নিয়েছে করোনা। যাত্রাশিল্পীদের অভিযোগ, করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের জেরে গত দু'বছর যাবৎ যাত্রাপালা শো না হওয়ায় রুজি রোজগারের ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে যাত্রাশিল্পীদের। কারণ, প্রতিবছরই রথযাত্রার শুভ লগনে বছরভর যাত্রা বুকিং এর সাথে সাথেই যাত্রাশিল্পীদের ভাগ্যের চাকা গরত। এই দিনে ই অন্তত পক্ষে নন্দকুমারের এই যাত্রাপালা থেকে যাত্রা বুকিং হত গড়ে প্রায় আড়াই শতাধিক। জেলা ছাড়িয়ে দূরদূরান্ত্ত থেকে ছুটে আসতেন বিভিন্ন অনুষ্ঠাান পুজো প্যান্ডেলের উদ্যোক্তারা। মুখে চওড়া হাসি ফুটত গ্রাম বাংলার এই সকল লোক শিল্পীদের। কিন্তু সেই ছবি আজ যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। 

এদিন নন্দকুমারের এই যাত্রায় গিয়ে দেখাা গেল, হাতেগোনা কয়েকজন মালিক প্রযোজক-পরিচালক ছাড়া আর তেমন কারো দেখা নেই। গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে অস্থায়ী এই যাত্রাপাড়া সাজানো হলেও কোনরকম বুকিং না হওয়ায় একেবারেই হতাশ হয়ে পড়েছেন যাত্রা জগতের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী প্রেমিক মানুষজনেরা। গিরিশ অপেরা প্রযোজক নারায়ণসুকুুল বলেন, যাত্রাশিল্পের অবস্থা একেবারেই শেষ। বুকিং একেবারেই নেই। তাই শিল্পীরা এখন কে ভেন চালাচ্ছে তো কেউ আবার ঝালমুড়ি, মুদিখানা দোকান, সবজি ব্যবসা করছেন। এইভাবে কোনরকম দিন কাটছে। তাই এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার না খেতে পেয়ে মরা মানুষের কথা ভেবে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর এ বিষয়ে সদর্থক কিছু চিন্তাভাবনার করার আবেদন জানাচ্ছি। 

এদিকে পূর্ব পশ্চিম মেদিনীপুরের যাত্রা পরিচালক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক অলক প্রামানিক বলেন, দীর্ঘ দুই বছর ধরে লকডাউন এর জেরে যাত্রাশিল্পীদের পাশাপাশি সংগীতশিল্পীরা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছেন। রাজমিস্ত্রির হেল্পার কিংবা চা দোকান করে দুবেলা পেট চালাতে হচ্ছে কোন রকমে। প্রযোজক রাও বহু টাকা ইনভেস্ট করে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাই এই অন্ধকার কাটিয়ে কবে আমরা আবার নতুন করে আলোর দিশা পাব তা কিছুই বুঝতে পারছিনা। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের করোজোরে নিবেদন যাত্রা শিল্পকে বাঁচাতে ভাতার ব্যবস্থা করা হোক। আর তা না হলে এভাবে চলতে থাকলে মালিকদের বিষ খেয়ে আত্মহত্যা ছাড়া কোন গতি নেই।