Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

তমলুকে হুল দিবস পালন

দেশমানুষ ডেস্ক, তমলুক: সমাজের মূল স্রোতে থেকেও ভুলতে পারেননি শেকড়ের টান। করণা আবহের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাই নাচ, গান, আবৃত্তি ও মহানায়কের স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে হুল দিবস পালনে মাতলেন তমলুকের বাসিন্দারা। তমলুকের মুখ্য ডাক…

 


দেশমানুষ ডেস্ক, তমলুক: সমাজের মূল স্রোতে থেকেও ভুলতে পারেননি শেকড়ের টান। করণা আবহের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাই নাচ, গান, আবৃত্তি ও মহানায়কের স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে হুল দিবস পালনে মাতলেন তমলুকের বাসিন্দারা। 

তমলুকের মুখ্য ডাকঘর এর অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি পোস্টমাস্টার দেবেন্দ্রনাথ হেমরম। পাশের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সবং এর বাসিন্দা তিনি। বহুকাল আগেই কর্মসূত্রে পরিবার নিয়ে তমলুকে বসবাস। অপরদিকে আয়ুস এর চিফ মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক সুরেন্দ্রনাথ মান্ডি। তিনিও বহু বছর আগে পুরুলিয়ার প্রান্তিক গ্রামের এঁদোগলি ছেড়ে আজ শহরের রাজপথে। সপরিবারে জেলা সদর শহর তমলুকেই বসবাস। পুলিশকর্মী বাবুলাল হেমরম, বাসুদেব হাসদার বাড়ি বাসের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনি, কেশিয়াড়ি এলাকায়। শহরের নামি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক কান্ত সুরেন বাবুর বাড়ি আবার গড়বেতায়। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এই সকল মানুষজন দীর্ঘদিন শহরে থাকার সুবাদে বর্তমানে একে অপরের প্রতিবেশী হয়ে উঠেছেন। যারা বিভিন্ন পেশার সঙ্গে কর্মময় জীবনে ব্যস্ত থাকলেও ভুলে যাননি নিজেদের শিক্ষা-সংস্কৃতি কৃষ্টিকে। 

জেলা সদর শহর তমলুকে কর্মরত থেকেই গড়ে তুলেছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক সংগঠন হিসেবে "রাস্কা মহল" অর্থাৎ বাংলায় যা মানে করলে দাঁড়ায় "আনন্দ আশ্রম"। ব্যক্তিগত উন্নতি সাধনের পাশাপাশি সম্প্রদায় ও সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় একাধিকবার এগিয়ে এসেছেন তারা। চলতি করনা আবহে তারই জাজল্য প্রমাণ হিসেবে পুরুলিয়া থেকে শুরু করে পূর্ব বর্ধমান ও তমলুকে বিভিন্ন সময়ে করণা থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক বিপর্যইয়ে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন তারা। সেইসঙ্গে নিজেদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষায় আদিবাসী পোশাকে ৯আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস, ২২ডিসেম্বরে সাঁওতালি ভাষা দিবস থেকে শুরু করে হুল দিবসে প্রতিবছরই নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হন তারা।

 কিন্তু চলতি বছর দীর্ঘসময়ের করোনা আবহে দরুন রাজ্য সরকারের কড়া নির্দেশিকার জেরে সেই অনুষ্ঠান বেশ কিছুটা ধাক্কা খায়। তবে বুধবার সকালে স্বল্প পরিসরে হলেও ১৬৭তম হুল দিবস উদযাপন ঘিরে বেশ কিছুটা উন্মাদনা তৈরি হয় আদিবাসী সমাজে। তমলুকের তাম্রলিপ্ত পৌরসভার সৈয়দপুর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হেমাল ডেরার আম্র কাননে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হুল দিবস পালন করা হয়। মূলত জেলা সদর শহর তমলুকে কর্মরত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। 

আদিবাসী সামাজিক সংগঠন রাস্কা মহল তমলুক শাখার উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কান্ত সরেন, বাবুলাল হেমরম ও বাসুদেব হাঁসদা সহ অন্যান্যরা। সাঁওতাল বিদ্রোহের বীর নায়ক সিধু -কানুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান এর মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রাস্কা মহলের সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ হেমরম। শুরুতেই বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন ও সাঁওতালি ভাষায় দেশাত্মবোধক গান " দেবন তিঙ্গুন আদিবাসী বীর দ ...." সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয়। সকলের উপস্থিতিতে এদিন আরো একবার নতুন করে সাঁওতাল বিদ্রোহের তাৎপর্য ও পর্যালোচনার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা হয়। প্রতিমা মুর্মু হেমরম ও পুতুল নায়েক সাঁওতালি ভাষায় আবৃত্তি পাঠ করেন। সংগঠনের নেতৃত্বদের দাবি,

পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের ক্ষেত্রে ছোট বড় দেশ নায়কদের কাহিনী ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকলেও বীর সিধু কানুর ইতিহাস ও সাঁওতাল বিদ্রোহের কথা আজও বড় অনাদরে রয়ে গিয়েছে। অথচ শোষণ বঞ্চনা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সিধু- কানু সহ আদিবাসীদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ শুধু ভারতের ইতিহাসে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। 

সংগঠনের সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ হেমরম বলেন, তৎকালীন সময়ে সাঁওতাল বিদ্রোহ ইংরেজদের বিরুদ্ধে হলেও এটা ছিল মূলত জমিদার, জোতদার, অসৎ ব্যবসায়ী, মিশনারি ও মহাজনদের বিরুদ্ধে। তাই এই আন্দোলনের প্রসঙ্গ আমাদের সকলের কাছে আজ ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে করোনা সংক্রান্ত সমস্ত নির্দেশিকা মেনে এদিনের এই হুল দিবস পালন করা হয়েছে।