Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

15/08/21/ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য বিভাগ: গল্পবিষয়: স্বাধীনতা দিবস গল্পের নাম: ফুলেশ্বরী স্মৃতি স্টেডিয়ামকবিরুল15/08/21             "শোন ডাবু, বাবাদের কথায় রাগ করতে নেই।"              "রাগ করব না তো কি গালে চুমু খাব?&quo…

 


15/08/21/ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য 

বিভাগ: গল্প

বিষয়: স্বাধীনতা দিবস 

গল্পের নাম: ফুলেশ্বরী স্মৃতি স্টেডিয়াম

কবিরুল

15/08/21

             "শোন ডাবু, বাবাদের কথায় রাগ করতে নেই।"

              "রাগ করব না তো কি গালে চুমু খাব?"

              "আহ! রেগে যাচ্ছিস কেন ? বাবারা ঐ রকমই। সন্তানের ভালর জন্যে অনেক কিছুই বলে থাকেন।"

             "তাবলে এইভাবে? জানিস ফুলু,  সবার সামনে আমাকে অপমান করল আজ। আমার কোন আত্মসন্মান নেই?"

             "আত্মসন্মানে যখন এতটাই লেগেছে, তাহলে বাবাকে প্রমাণ করে দেখিয়ে দে যে, তুইও এই অপমানের যোগ্য জবাব দিতে জানিস।"

            "মানে?"

             "মানেটা ভীষণ পরিষ্কার। তুই বাবাকে দেখিয়ে দে যে, তুইও আজ থেকে স্বাধীন। মানে উনাদের মুখাপেক্ষী হয়ে বাঁচতে তুই শিখিস নি। নিজের রোজগারে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাস। বাবার উপর নির্ভরশীলতা তোকে কাটাতে হবে।"

         "কথাটা মন্দ বলিস নি। তা কিভাবে হবে শুনি?""

         "তোকে আজ থেকে রোজগার করা শিখতে হবে।"

          "রোজগার? আজ থেকে?"

          "হ্যাঁ, আজ থেকে।"

          "কাজটা বেশ কঠিন রে।"

          "ন্যাকা ফুসু! চুপ কর। অনেক হয়েছে। আমাকে ভালবাসিস যখন, তখন বিয়ে করে তো আমাকে খাওয়াবি না কি?"

          "হ্যাঁ, তা তো খাওয়াতে হবে। সেটা কিভাবে হবে?"

           "ও রে গাধা! তোকে বোঝানো যাবে না। এক কাজ কর, বিকেলে পুকুরপাড়ে আয়। সব বুঝিয়ে দেব।"

           ফুলুর কথা শুনে ডাবু বেশ লজ্জা পেয়েছে বলে মনে হল। 

             ফুলু ডাবু দুজনেই এবার বারো ক্লাস পাশ করেছে। ফুলু ছোট থেকেই স্বাধীন। স্বনির্ভর। লোকের বাড়ি কাজ করে।মায়ের সাথে হাত লাগায়। বাবা মারা যাবার পর থেকে নিজেও আয় করে ভাইদের টানছে।

          ডাবুর বাবা হকারি করে। তেমন আয় করে না। কোন রকমে চলে। সংসারে অভাব আছে।

             উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতেই ডাবুর বাবা বলেই দেয়, ডাবুর এবার থেকে পড়ার সব খরচ ওর নিজের। তাছাড়া ওকে রোজগার করতে হবে। বাবার উপর ভরসা না করে যেন চলে। এক কথায় স্বাধীনভাবে রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে ওকে।

          তাতেই ডাবুর মটকা গেছে গরম হয়ে। পুকুরপাড় থেকে ফিরে এসে কিছুটা মনের জোর পেয়েছে। ফুলু কিছু বুদ্ধি বাতলেছে।

           আজ স্বাধীনতা দিবস। কলেজ মাঠে ফুটবল খেলা হচ্ছে। ডাবু সেখানে রুটি ঘুগনী ডিমটোস্টের স্টল দিয়েছে। ব্যবসার কিছু টাকা ফুলু দিয়েছে ধার হিসেবে।

            আজ ডাবলু তিনশ টাকা আয় করেছে। জীবনের প্রথম রোজগার। মনটা একটু ফুরফুরে। নিজেকে পর নির্ভরশীল আর ভাবছে না। সবটাই ফুলঝুরির ক্রেডিট। 

            বাইরে মাইকে নজরুলের কবিতা পাঠ হচ্ছে.....

             "বল বীর 

               চির উন্নত মম শির....

                 ...........    হিমাদ্রির......"

            শির উঁচু করে ডাবলু ফুলঝুরির ঘরে ঢুকল। হাতে চিকেন চাওয়ের প্যাকেট। আর এক হাতে তেরাঙ্গা। 

          ফুলঝুরির জ্বর। ঘুমুচ্ছে। ডাবলুর চোখ ছলছল করে উঠল। চাওয়ের প্যাকেট রেখে ওর মাথাতে হাত বোলাল।

               ছাব্বিশ বছর কেটেছে.....

              আজ আবার স্বাধীনতা দিবস।

               দেবানুজ রায় আজ মস্ত বড় বিজনেস ম্যান। ওর আণ্ডারে প্রচুর লোক কাজ করছে। সবাই সৎ স্বাধীনভাবে উপার্জন করছে। 

              কলেজ মাঠে আজ একটা স্টেডিয়াম উদ্বোধন করতে এসেছে। স্টেডিয়ামের নাম "ফুলেশ্বরী স্মৃতি স্টেডিয়াম"।

              ফুলু মানে ফুলেশ্বরী ক্যানসারে বহু দিন আগে মারা গেছে। তবু ভালবাসা বেঁচে আছে। স্বাধীনভাবে।

             এই মাঠ থেকেই স্বাধীনভাবে পথ চলা শুরু করেছিল। সেই মাঠকেই নিজের ভালবাসার আদরে ভরিয়ে দিল।

             দেবানুজের চোখে শরতের শিশির। স্বাধীনভাবে নামছে গাল বেয়ে।