Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

ছোট গল্প- ধন্য স্বাধীনতাকলমে---প্রদীপ বাগ             ২৯-৭-২০২১অম্লান রায় চৌধুরী সাংবাদিক জগতে একটি বিখ্যাত নাম। নিরপেক্ষতার বিচারে তার লেখনী শ্রেষ্ঠত্বের দাবী রাখে,গতবছর ই তার একটি সংবাদ সারা দেশে গনতন্ত্রের ভিত কে নাড়িয়ে দিয…

 


ছোট গল্প- ধন্য স্বাধীনতা

কলমে---প্রদীপ বাগ

             ২৯-৭-২০২১

অম্লান রায় চৌধুরী সাংবাদিক জগতে একটি বিখ্যাত নাম। নিরপেক্ষতার বিচারে তার লেখনী শ্রেষ্ঠত্বের দাবী রাখে,গতবছর ই তার একটি সংবাদ সারা দেশে গনতন্ত্রের ভিত কে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলন করে দেশের মন্ত্রী কনভয় নিয়ে ফিরছেন রাস্তায় নো এন্ট্রি বোর্ড,পাইলট কার সহ প্রায় খান পনেরো টাটা সুমো স্করপিয় ইত্যাদি গাড়ি পাশ করবে।রাস্তার দু'ধারে লোকজন ভর্তি বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকদের ভিড় আধঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে রাস্তা জ্যাম। দু'দিকেই সারি সারি গাড়ি সাইড করে দাঁড়িয়ে আছে তার মাঝে একটা এ্যামবুলেন্স গাড়ি দাঁড়িয়ে ভিতরে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা প্রসব বেদনায় ছটফট করছে,অম্লান তা দেখে বিষয়টি একজন পুলিশ অফিসার কে বললেন যদি কোনরকমে এ্যামবুলেন্সটা বার করে দেওয়া যায়, অফিসার বললেন আমি এ বিষয়ে কিছু করতে পারবো না আপনি ডি আই জি ট্রাফিক কে বলুন,ওনাকে কোথায় পাব? অম্লানের প্রতি উত্তরে বললেন আগে দেখুন এইখানেই কোথাও আছে। অম্লান পাগলের মত সামনের দিকে ছুটে গেল ডি আই জি ট্রাফিক খুঁজে বিষয়টি বললেন স্যার মানবিক কারণে অন্ততঃ গাড়িটি কে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন প্লীজ আপনি পেশেন্টের অবস্থা নিজে চোখে একবার দেখুন;অফিসার বললেন সরি আমি কিছু করতে পারছিনা,এখান থেকে নড়তেও পারবো না বুঝতেই তো পারছেন আমার চাকরির ব্যাপার।স্যার পেশেন্টের ক্রিটিক্যাল অবস্থা যে কোনো বিপদ হয়ে যাবে, গনতান্ত্রিক দেশে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার! উত্তেজিত হয়ে অফিসার বললেন আইন টা কি আপনার কাছে শিখতে হবে নাকি? না স্যার মাই আর্নেস্ট রিকোয়েস্ট প্লীজ প্লীজ। এমন সময় উদভ্রান্তর মতো একটি লোক অফিসারের পায়ে ধরে কাকুতি মিনতি করতে লাগলো স্যার আমার স্ত্রী মারা যাবে আপনি কিছু একটা করুন স্যার। ঠিক সেই সময় ওয়াকি টকি তে কিছু একটা ম্যাসেজ ভেসে আসলো, অফিসার সস্বব্যস্ত হয়ে আরে সরে দাঁড়ান মশাই ওসব পরে দেখছি এখুনি মন্ত্রীর কনভয় ঢুকছে।


হুটার বাজিয়ে আগে পুলিশের পাইলট ভ্যান পরপর গাড়ি যাচ্ছে মন্ত্রীর নাম ধরে সবাই জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ ধ্বনি দিচ্ছে ওদিকে প্রসূতি বাবা গো ও মা গো প্রাণপণ চিৎকার করছে কিন্তু জয়ধ্বনি তে সে চিৎকার চাপা পড়ে গেছে। হঠাৎ এ্যামবুলেন্সের ভিতর থেকে একটা সদ্যজাত শিশুর কান্না বেরিয়ে এলো,ভদ্রমহিলা গাড়িতেই প্রসব করেছেন,রক্তে ভেসে যাচ্ছে একটা বাজে অবস্থায় মহিলা জ্ঞান হারিয়েছেন। আগে পিছে গাড়ির মাঝখানে এ্যামবুলেন্স টা আটকে ড্রাইভার ক্রমাগত সাইরেন বাজাচ্ছে কারোর ভ্রুক্ষেপ ই নেই অম্লান কোনো রকমে গাড়িটাকে বেরোবার রাস্তা করে দিয়ে নিজের বাইকটা স্টার্ট করে হর্ণ দিতে দিতে আগে ছুটতে লাগলো।


প্রায় হাওয়ার গতিতে গাড়ি ছুটছে দ্বিতীয় হুগলী সেতু ব্রীজ পার করে সোজা ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ্যামবুলেন্সটা দাঁড়ালো,ঘড়িতে তখন দুপুর ১টা।এখন হাসপাতালে যেন মৃত্যুর উৎসব চলছে,সারি সারি এ্যামবুলেন্স গাড়ি দাঁড়িয়ে পেশেন্ট নামাচ্ছে আবার শববাহী গাড়িতে করে ডেড বডি তোলা হচ্ছে চারিদিকে বিভিষিকাময় মানুষ উদভ্রান্ত হয়ে ছোটাছুটি করছে।সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে কিছু স্টাফেদের সাথে চেনা পরিচিত ছিল ও দ্রুত ভর্তির ব্যবস্থা করে দিল। তখন আউটডোরে বিশিষ্ট গাইনোকলোজিস্ট ড: শুক্লা রাস্তোগী ছিলেন তিনি দেখে বললেন সিরিয়াস কন্ডিশন প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে এখুনি রক্ত দিতে হবে,নার্স কে বললেন এখন বেবি কে আলাদা করে ড্রেসিঙ করার ব্যবস্থা করুন আর পেশেন্ট কে স্যালাইন অক্সিজেন দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির লোক কে জিজ্ঞেস করলেন টিটেনাস দেওয়া আছে? স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখানো হয়েছে কি না তার কাগজ পত্র দেখে একটা ইনজেকশন লিখে দিলেন নার্স কে বললেন দ্রুত দেবার ব্যবস্থা করো,পালস্ বিট কমে আসছে। পুরোনো প্রেসক্রিপশন দেখে এবি পজেটিভ তিন বোতল রক্ত আনতে বললেন। অম্লান ভেবেছিল ভর্তি করে দিয়ে ছুটি কিন্তু যতবার যেতে যাচ্ছে ততবার আটকা পড়ছে।প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ কোলকাতার কিছু চেনে না এই রকম একটা মূমূর্ষ অবস্থায় মানুষ কে ফেলে অফিসে যেতে বিবেকে বাধছে তাই অফিসে বিস্তারিত জানিয়ে ফোন করে দিল। মহামারীর এই সময় এমনিতেই অক্সিজেনের হাহাকার আবার এমন একটা গ্রুপের রক্ত যা সহজে পাওয়া যায় না। ওদের বাড়ির লোকেরা কাছে একটা ব্লাড ডোনেশন কার্ড আছে কিন্তু কার্ড থাকলে কি হবে যে গ্রুপের ই কার্ড থাকুক ঠিক সেই টা বাদ অন্য গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাবে, কিছু অসাধু ব্যক্তি এগুলো করে। যাহোক অম্লান ওদের বাড়ির একজন মহিলা কে রোগীর কাছে রেখে একজন কে তার সাথে আসতে বললো। কোনোরকমে কার্ড দেখিয়ে ভেতর থেকে এক বোতল রক্ত তো যোগাড় হলো কিন্তু অক্সিজেন কোথায় পাওয়া যাবে? বাইরে বেরিয়ে একটু এগিয়ে ডানদিকে একটা পাঞ্জাবি রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে অম্লান ঐ ভদ্রলোক কে সাথে নিয়ে চা খেতে খেতে কাউকে খোঁজ করছিলো।

একটি ছেলে কে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করল এই পাপ্পুয়া কোথায় রে কেন বস্ কোনো খবর আছে? না রে একটু দরকার আছে ঐ তো ওখানে দেখ তাস খেলছে। ওকে বল আমি ডাকছি। ছেলেটি গিয়ে খবর দিতেই পাপ্পুয়া দু'হাত মাথার ওপরে তুলে নমস্কারের ভঙ্গিতে দূর থেকেই বলছে আরে অম্লান দা কি খবর বস্ শালা রিপোর্টার দেখলেই প্যালপিটিশন বেড়ে যায় বলতে বলতেই কাছে এসে বললো কি ব্যাপার নতুন কিছু ল্যাফরা? না রে এবারে তেমন কিছু নয় একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার যোগাড় করে দিতে হবে। আরে বাপ রে এতো অমাবস্যায় পূর্ণিমার চাঁদ চাইছো! কেন কি ব্যাপার শুনি অম্লান সংক্ষেপে ঘটনা টা বলতে ছেলেটি কি যেন ভেবে বল্লো তুমি যাও আর পেশেন্টের নাম দিয়ে যাও আমি ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

ওদিকে ফিমেল ওয়ার্ড চারিদিকে যেন বাজার বসেছে।বেডের কোনো গল্প নেই, জানালার ধারে এক কোণে ট্রলিতেই আধখালি একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল নার্স সেটাই চালু করে মাস্ক লাগিয়ে দিয়েছে স্ল্যাইন চলছে শরীরে জল কমে গেছে,রক্ত দেওয়া হচ্ছে।দু'হাতে দুটো ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে, মাঝখানে একবার জ্ঞান ও এসেছিল। বাচ্চা টা ঠিক আছে ফুটফুটে ছেলে ওজন টা একটু বেশি।

পেশেন্ট পার্টির বাড়ির লোকজন জোড়হাত করে অম্লান কে বললো আপনি দেবদূতের মতো হাজির হয়ে ছিলেন বলেই আমরা লড়াই করতে পেরেছি হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে যাবো অথচ এমন তো হবার কথা ছিল না। সময়মতো পৌঁছালে এই অবস্থায় হয়তো পড়তাম না। অচেনা অজানা মানুষের জন্য এভাবে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে গল্পে শুনেছি আজ চাক্ষুষ দেখলাম এই জন্যই পৃথিবী টা আজও ধ্বংস হয়ে যাইনি। আমার ছেলের নাম রাখলাম অম্লান।

না না এটা তো মানবিক কর্তব্য এর জন্য এতো কৃতজ্ঞতা জানানোর কিছু নেই।নিজের একটা কার্ড দিয়ে বললো খুব প্রয়োজন হলে ফোন করবেন আমি এখন আসছি।


বহুল প্রচারিত একটি দৈনিক পত্রিকার অফিসে কাজ করে। ধর্মতলা মেট্রো সিনেমা থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে বাঁ দিকে জেমস্ মহম্মদের শো রুম টা ফেলে রেখে অফিস। অম্লান যখন ঢুকলো তখন নিউজ ডেস্কে সন্ধ্যে ৭টার খবর পড়া হচ্ছে।

নিজের টেবিলে কাঁধের ব্যাগ টা নামিয়ে চেয়ার থেকে টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে সোপ লিকুইডেটার দিয়ে হাত পা ভালো করে ধুয়ে মুখে জল ঝাপটা দিল। এবার একটু ফ্রেশ লাগছে সারাদিন যা ধকল গেল শারীরিক থেকে মানসিক চাপ টা একটু বেশি ছিল। অম্লান প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করে ক্যামেরা থেকে আজকের কিছু ছবি ও লিখিত রিপোর্ট এডিটর কে জমা দিল। রিমোটের পয়েন্ট বাড়িয়ে এসি টা একটু জোর করে দিল। যদিও অফিসে বিষয় টা খুব একটা গুরুত্ব পেল না কারণ এরকম ঘটনা আকচার হয়ে থাকে সাধারণ মানুষের চেয়ে নেতা মন্ত্রীদের খবর টা মানুষ খায় বেশি তাছাড়া অহেতুক রাজরোষে পড়ে নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে কে আর চায়........

কিছুক্ষণ অফিসে কাটিয়ে রাত্রি ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরলো।সল্টলেক করুণাময়ী মোড় থেকে ডান দিকে চওড়া রাস্তার ওপর একতলা বাড়ি বছর তিনেকের ছোট্ট মেয়ে মৌ, স্ত্রী কুসুম আর বৃদ্ধ মা অনেক কাল আগেই বাবা গত হয়েছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই কুসুম কলি চ্যাটার্জীর সহিত অম্লানের আলাপ পরে প্রেম শেষে পরিণয়ে আবদ্ধ। বাথরুমে গিজার টা সুইচ অন করে ঢুকে পড়লো রাতে স্নান না করলে ওর খুব অস্বস্তি হয়। বাইরে থেকে মা বলছে ওরে বেশি জল ঢালিসনি তোর আবার সর্দির ধাত আছে।কাচা জামা কাপড় পড়ে মেয়ে কে কোলে নিতেই ছোট ছোট দু'হাতে গলা জড়িয়ে ধরলো মেয়ের দু'গালে চুমু খেয়ে আদর করতে করতে সোজা খাবার টেবিলে। মা কে বললো তুমি আগে খেয়ে নিতে পারো না? বয়স হয়েছে এত রাত করে খেলে হজমের সমস্যা হয় তো।তুই থামতো আমার কিছু হবে না,গলা টা নিচু করে বললো আগে তোর বাবার জন্য বসে থাকতাম এখন তোর জন্য থাকি; আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।মায়ের চাপা বেদনা টা অজানা নয় সেটা বুঝতে পেরে প্রসঙ্গ টা চেঞ্জ করে আজকের সারাদিনের ঘটনা খেতে খেতে মা ও কুসুমের সাথে শেয়ার করলো।

মা বললো বেশ করেছিস মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে কোনো কাজ করবি না তাতে হাজার ক্ষতি হয় হোক।ব্যাঙ্কে যেমন টাকা সঞ্চয় থাকলে অসময়ে কাজ দেয় তেমনি বিবেকের ঘরে ভালো কাজ জমা থাকলে অসময়ে কাজে আসে।যে কোনো বিপদ আশ্চর্য জনক ভাবে উদ্ধার হয়ে যাবি। কুসুম সব শুনছিল শেষে বললো আমাদের দেশের নেতা গুলো ই যত অরাজকতার মূল হোতা।আমলা পুলিশ হচ্ছে যেন সেই ছুঁচোর গোলাম চামচিকে তার ও মাইনে পাঁচ সিকে!!


মেয়েটা কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে কুসুম হাত ধুয়ে ওকে শোয়াতে গেল। অম্লান মাকে রাতের দুটো ওষুধ দিয়ে জলের বোতল টা দিল।মা পা টিপে দেবো রাত হলে যন্ত্রণা করে তো? না না তুই ঘরে যা-

টেবিলে সিগারেট আর লাইটার নিতে গিয়ে দেখলো ওর মোবাইলে অজানা নম্বর থেকে দুটো মিসকল এসেছে। সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দিয়ে রিং করতেই অপর প্রান্ত থেকে কান্না ধরা গলায় বললো দাদা আমি হাসপাতাল থেকে বলছি শেষ পর্যন্ত আমার বৌ কে বাঁচাতে পারলাম না।কথাটা শুনেই অম্লান চমকে উঠলো সেকি কি বলছেন ? হ্যা দাদা খবর টা দিতেই আপনাকে ফোন করে ছিলাম। আমি খাবার টেবিলে ছিলাম ফোন টা আমার কাছে ছিল না অম্লান উত্তর দিলো। কুসুম ইশারায় ব্যাপারটা জানতে চাইলো ও ভ্রুক্ষেপ করলো না। কেন কিভাবে হলো কি অসুবিধা হয়েছিল এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো জিজ্ঞেস করল?না না আপনি তো সব ব্যবস্থাই করে দিয়ে ছিলেন,ঠিক ঠাক ই চলছিল হঠাৎ খিঁচুনি শুরু হয় নার্স ছুটে এসে ডাক্তার ডাকার আগেই সব শেষ হয়ে গেল অম্লান দা,ভদ্রলোক এবারে ভেঙ্গে পড়লেন। কতৃপক্ষ বলছে কালকের আগে বডি দেওয়া যাবে না,আমার মাথা কাজ করছে না দাদা। আপনি চিন্তা করবেন না আমি আসছি। ভদ্রলোক বললেন না দাদা এতো রাত্তিরে আসতে হবে না আপনি বরং সম্ভব হলে সকালেই আসুন। না না আমি এখুনি যাচ্ছি আপনার বাইড নিতে হবে। অম্লান প্যান্ট টা পড়তে পড়তে কুসুম কে সংক্ষেপে সব বললো,জামাটা কোনরকমে গলিয়ে অফিসে একটা ফোন করে কথাবার্তা বলে আর একটা সিগারেট ধরিয়ে কুসুম কে বল্লো চিন্তা করনো আমি শীঘ্রই ফিরবো তাছাড়া এখানে তো আর দাঙ্গা হাঙ্গামা হচ্ছে না যে ভয় পেতে হবে? কুসুম কাছে এসে বললো সারাদিন পর বাড়ি ফিরলে ছাড়তে ইচ্ছে করে তুমিই বলো? কিন্তু না সব সময় তোমার কর্তব্যে তুমি অবিচল থেকো সমাজের প্রতি তোমার অনেক দায়িত্ব। সাবধানে গাড়ি চালাবে ফেরার আগে আমাকে একটা ফোন করো,আমি জেগে থাকবো।


অম্লান গাড়ি স্টার্ট দিল।রাতের কোলকাতায় গাড়ি চালিয়ে হেব্বি মজা,মাঝে মাঝে পুলিশ একটু ঝামেলা করে কিন্তু অম্লান কে সাংবাদিক হিসাবে মোটামুটি সবাই চেনে। অফিসে বাইকটা রেখে ও বি ভ্যান নিয়ে সোজা মেডিকেল হাসপাতালে। ভদ্রলোক কে সান্ত্বনা জানিয়ে বাচ্চা টার খবর নিল আর বললেন দেখুন এই বিষয় টা আমরা আগামী কাল সংবাদে দেখাবো আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না এরকম ঘটনা আর কারোর সাথে হোক। সকাল থেকে যা যা ঘটেছে বিস্তারিত বলবেন। ভদ্রলোক গেটের কাছে বাইড দিলেন সাথে বারে বারে অম্লান বাবুর কথা বলতে ভুললেন না। অম্লান ওয়ার্ড মাস্টারের সাথে ফোনে বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন দাদা এটাতো নর্মাল ডেথ আমি পার্সোনালি রিকোয়েস্ট করছি আপনি নিজে একটু ডাক্তারের সাথে কথা বলে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়। ভদ্রলোককে বললেন চিন্তা করবেন না সকালে সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন,বাচ্চা টা কে সাবধানে রাখবেন। ভদ্রলোক জোড়হাত করে বললো দাদা আর হয়তো কোনো দিন আপনার সাথে দেখা হবে না আমার ছেলে কে আপনার নাম দিয়েছি যাতে সারাজীবন আপনাকে মনে রাখতে পারি,দু'চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

পরেরদিন খবর টা চাউর হতেই মানুষজন পানা পুকুরে ঢিল পড়ার মতো নড়ে উঠলো।মন্ত্রী টিভিতে দুঃখ প্রকাশ করলেন অম্লানের ফুটেজ দেখে ডি আই জি ট্রাফিক কে কম্পালসারি ওয়েটিং এ পাঠিয়ে দিলেন। দৈনিক সংবাদ পত্রের তিন নং পাতায় অম্লানের খবর টা ব্লক করে ছাপা হলো হেডি্্ ছিল "ধন্য স্বাধীনতা"

                         'সমাপ্ত"

বি:দ্র: স্থান কাল ঘটনা এবং নাম সব ই কাল্পনিক 

-------------------------------------------------------------------