Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

ছোট গল্প:- ভালোবাসার সমীকরণ 🖋ইন্দ্রনীল কর তারিখ:-১৮\০৮\২১চুচুঁড়া 
💚💙💚💙ভালোবাসার সমীকরণ💙💚💙💚       ❣🌾❣🌾❣ইন্দ্রনীল❣🌾❣🌾❣  
     লোকটা সিগারেটে একটা সুখটান দিতে দিতেই জিজ্ঞেসা করলেন,-- " রাত দশটায় কি কখনো ইন্টারভিউ হয়…

 


ছোট গল্প:- ভালোবাসার সমীকরণ 

🖋ইন্দ্রনীল কর 

তারিখ:-১৮\০৮\২১

চুচুঁড়া 


💚💙💚💙ভালোবাসার সমীকরণ💙💚💙💚

       ❣🌾❣🌾❣ইন্দ্রনীল❣🌾❣🌾❣  


     লোকটা সিগারেটে একটা সুখটান দিতে দিতেই জিজ্ঞেসা করলেন,

-- " রাত দশটায় কি কখনো ইন্টারভিউ হয় ,,,,মিস? 


-- মাথাটা নিচু করেই বললাম, না ! কিন্তু চাকরিটা আমার ভীষণ প্রয়োজন। তাই আন্টির মুখে চাকরিটার ব্যাপারে জানামাত্রই তাদের বাড়ি থেকে এখানে চলে এলাম। কাল যেহেতু রবিবার তাই আপনি হয়তো বাড়িতে নাও থাকতে পারেন। 


লোকটি সিগারেটে অনবরত টান দিয়েই যাচ্ছে। আমাকে একবার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 

-- " নাম কি আপনার? চাকরিটা কি সেটা সম্পর্কে কি আপনার কিছু আইডিয়া আছে,,,,,?


-- আবারও মাথা নিচু করে বললাম, আমি অন্তি। চাকরিটা কি তা আমি জানি না। আসলে একটা চাকরি ভীষণ প্রয়োজন প্রিয়জনদের জন্য। প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য,একটু মাথা উঁচু করে সমাজে বাঁচার জন্য। 


আমাকে থামিয়ে দিয়ে লোকটা বললো, 

-- "এতো রাতে কোনো পুরুষের কাছে ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন, আপনার বাড়িতে জানতে পারলে আপনাকে কিছু বলবে না,,,?" 


-- "মা আমাকে বিশ্বাস করেন তার নিজের চেয়েও বেশি, শুধু সমাজটাকেই ভীষণ ভয় তার। মধ্যবিত্তদেরও অভিনয় করে চলতে হয় সমাজের ভয়ে! 

কিন্তু আমাদের মতো নিম্ন বিত্তদের অভিনয় করে চলতে হয় না, জীবনের শুরু থেকেই জীবনসংগ্রাম শিখতে হয়। "


লোকটি বললো, 

-- "আমি পল্লব ভট্টাচার্য , আমার একটা সন্তান দরকার। আমি আপনাকে দু বছরের জন্য বিয়ে করতে চাই, সেটা পারিবারিক ভাবেই ! যেহেতু বাচ্চা ছমাস পর্যন্ত তার মায়ের দুধ পান করে তাই বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে রাখা অত্যাবশ্যকীয়। মানে দু বছর আপনি আমার স্ত্রীর মর্যাদায় এ বাড়িতে থাকবেন। তারপর আপনাকে আর আপনার পরিবারকে সারাজীবন যাতে কোনরকম কষ্টে না থাকতে হয় তার ব্যবস্থাও আমি করে দেবো। 


লোকটি মানে পল্লবের কথায় ভীষন হাসি পেলো আমার। পৃথিবীতে এমন কোনো মেয়ে আছে নাকি যে কিনা জেনেশুনে নিজের সন্তানকে ছেড়ে যাবো সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়,,,! পাগলীও তার সন্তানকে আগলে রাখে পরম মমতায়। আর আমি তো সুস্থ একজন মানুষ ! 


 আমি দৃঢ় কন্ঠেই বললাম,  


-- "হয়তো আগে জানলে আপনাকে এতো রাতে বিরক্ত করতে আসতাম না।"


কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে দরজা দিয়ে একেবারে বাইরে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু এ কি, হঠাৎ বৃষ্টি ! ব্যাগে ছাতাও নেই, তারপরে ভীষণ বাতাসে বৃষ্টি যেন উড়ে যাচ্ছে এক পশলায়।

চুপচাপ করে ওই বাড়িটার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। পাঁচ মিনিট পর একটা লোক এসে বললেন, 


-- "ম্যাম স্যার আপনাকে ভেতরে ডাকছেন।" 


আমি কোনো কথা না বলে দাঁড়িয়ে আছি। লোকটি আবার বলল,


-- ম্যাম স্যার আপনাকে ডাকছেন, কিছু বলবেন আপনাকে। 


কি ভেবেই যেনো ভেতরে গেলাম! ওনাকে দেখি বিশাল ড্রইং রুমের এক কোনায় রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছেন আর মনের সুখে সিগারেটে টান দিচ্ছেন,,,, 


-- "আপনি আমাকে তিনদিন একঘন্টা করে সময় দিতে পারবেন মিস অন্তি,,,? তার জন্য অবশ্য আপনাকে ভালো পেমেন্ট করবো। তিনদিন এই সময়ে আসতে হবে, রাত দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত আমার সাথে থাকবেন।" 


-- "পেমেন্ট ভালো পাবার আশায় যদি শরীর বিলোতে হয় তবে তা অনেক আগেই করতে পারতাম! শুধু শুধু কষ্ট করে টিউশানি করে প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করতাম না। আপনার অফারের জন্য ধন্যবাদ তবে অফারটি আমি গ্রহন করতে পারলাম না।"


-- "আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন মিস অন্তি ! তিনদিন আপনার কাছে সময় চাওয়ার মানে এই না যে, আপনাকে শয্যাসঙ্গী করতে চাইছি,,,! আপনি সময় নিয়ে ভাবতে পারেন, আপনার ইচ্ছে হলে আসবেন, নয়তো না !" 


-- "বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে। আপনি চাইলে লেপ্টে যাওয়া কাজল আর একপাশে আঠা উঠে যাওয়া টিপ খুলে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বাড়িতে যেতে পারেন !


 কথাগুলো বলেই লোকটি উঠে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলেন। 


আমি রাস্তায় হাঁটছি আর ভাবছি লোকটি মানে পল্লব কেন আমাকে তিনদিন যেতে বললো ? তার কি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে নাকি এমনি ! ভাবতে ভাবতে কখন যে বাড়ি পৌঁছে গেছি খেয়াল করিনি। মা আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলেন, 


-- "আজ এতো দেরি করলি যে ? "


-- "মা, কাল থেকে তিনদিন দেরি হবে। একটা চাকরির ব্যাপারে,,, তুমি আবার টেনশন করো না।"


 মা মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ নিয়ে বলেন, 


-- "এতো রাতে কিসের চাকরি রে,,,,,?


-- "মা তুমি বিশ্বাস করো না আমায় ? " 

  

-- "বিশ্বাস অর্জন খুবই কঠিন রে কিন্তু বিশ্বাস ভাঙা খুবই সহজ ! "


পরদিন মিতুকে পড়াতে পড়াতে রাত সাড়ে নটা বেজে গেছে। তারপর বাসে করেই ছুটলাম সেই অদ্ভুত লোকটার বাড়িতে। ঠিক দশটায় দরজায় কড়া নাড়তেই এক মধ্য বয়স্ক মহিলা দরজা খুলেই আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে বসতে বলে চলে গেলেন। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে হাতে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে দোতলা থেকে পল্লব বলল, 


-- "অন্তি আজ জোৎস্না দেখতে দেখতে গল্প করবো ! ওপরে চলে আসুন তাড়াতাড়ি। "


আমি একটু ভয়ে ভয়ে দোতালায় উঠে দেখি একপাশে প্রশস্ত এক বারান্দা। কাছে গেলেই হাসনুহানা ফুলের সুবাস নাকে এসে লাগে। আমি পল্লবের সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। জোৎস্নার আলোয় অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে বারান্দায় রাখা গাছগুলোকে। আমাকে বসতে বলে পল্লব রেলিং ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে। 


-- "জানেন অন্তি, ছোটবেলায় মা মারা যাওয়াতে বাবাই ছিলো একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু বাবা ব্যবসায় কাজে প্রায়ই দেশের বাইরে থাকতেন আর আমি এই বিশাল বাড়িতে রমা মাসি আর আনন্দ কাকা কে নিয়ে থাকতাম। তারাই আমাকে আর বাড়িটার দেখাশোনা করতো,এখনো তারাই করে। বন্ধু বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে নষ্ট হতে সময় লাগেনি আমার। গ্রাজুয়েশন শেষ করার আগেই মেয়েদের সঙ্গ উপভোগ করেছি রাতের পর রাত ! "


একটু থেমে,,,


-- "বাবা বাড়িতে থাকলেও নানান কাজে ব্যস্ত থাকতেন, আমাকে পাশে নিয়ে একটু কথা বলার বা একবেলা একসাথে খাবার খাওয়ারও সময় হতো না তার। যতই বড় হতে থাকি আমার মেয়েদের প্রতি আকর্ষনও বেড়ে যেতে শুরু করে। নিত্য নতুন মেয়েকে উপভোগ করেছি হোটেলের বিলাসবহুল রুমে, নয়তো কোনো পল্লীর অন্ধকার ছোট ঘরে। এক সময় নিজে নিজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি এসবে। যেখানে বন্ধু বান্ধব বিয়ে করে সুখে আছে আর সেখানে আমি নোংরামিতে ব্যস্ত থাকি ! ওদের দেখে খুব হিংসে হতো, কবে আমারও একটা ফ্যামিলি হবে! "


একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সিগারেটে অনবরত টান দিয়েই যাচ্ছেন তিনি। আমি চুপ করে বসে আছি পরবর্তী কথা শোনার অপেক্ষায়! 


লিকার চায়ে আদার সাথে একটু লেবুর রস, ভীষণ পছন্দ আমার, বলেই দু কাপ চা ঢেলে এক কাপ চা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন ! আমি চা নিয়ে বসে আছি আর তিনি সিগারেট রেখে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। চা শেষ করেই ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন বার বার। আর আমি পরবর্তী কথা শোনার অপেক্ষায় আছি। পিনপতন নিরবতা প্রায় বেশ কিছুক্ষন ! তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, একঘন্টা হয়ে গেছে, আপনি এখন যেতে পারেন ! আমিও কথা না বাড়িয়ে হাত থেকে চায়ের কাপ টেবিলে রেখে নিচে চলে আসি। বাড়ির বাইরে বেরোতেই তার ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আর বলতে থাকে, স্যার আপনাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে বলেছেন।


-- "আমার বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি যায় না। আমি একাই যেতে পারবো। "

  

-- "স্যার বলেছেন আপনাকে ঠিক মতো বাড়িতে পৌঁছে দিতে। আপনি যদি না যান তবে আমার চাকরি থাকবে না। প্লিজ ম্যাম, তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠুন।" 


-- "বললাম না আমি একাই যেতে পারবো, আমি একা চলায় অভ্যস্ত আছি।" 

  

পেছন থেকে পল্লব এসে বললো, আপনার তিনদিনের দায়িত্ব আমার তাই চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসুন। আশিস আপনাকে বাড়িতে দিয়ে আসবে এই তিনদিন। 


পল্লবের কথায় কোনো জবাব দিতে পারিনি। চুপ করে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলাম। তারপর আশিস আমাকে আমার গন্তব্যে নিয়ে গেলেন। যেহেতু বাড়ি খুব সরু গলিতে তাই গাড়ি ঢুকলো না , আমার মনে একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। ভাবলাম যাক কেউ হয়তো দেখবে না, বাঁচা গেলো। নয়তো মানুষ এতো রাতে আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখলে কত কি যে বলতো ! 


বাড়িতে গিয়ে হাতমুখ ধুয়েই শুয়ে পড়লাম। মা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি ? কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বর আছে কিনা ? 


-- "কিছু হয়নি মা। এমনিতেই সারাদিন গরমে অস্থির লাগছে তাই ভালো লাগছে না। এখন আর খাবো না, খুব ঘুম আসছে মা।" 

  

পরদিনও মিতুকে তাড়াতাড়ি পড়িয়ে পল্লবের বাড়িতে গেলাম। আজও সেই প্রশস্ত বারান্দায় চেয়ারে বসে আছি আর পল্লব সেই চিরচেনা রুপে হাতে সিগারেট নিয়ে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ! 


আকাশের দিকে তাকিয়ে পল্লব বলতে শুরু করলেন,

-- "বাবা যখনই জানতে পারলেন আমি বিয়ে করতে চাই তিনি খুব খুশি হলেন। নিজেই আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করলেন। শহরের নামকরা ব্যবসায়ীদের সুন্দরী মেয়েদের প্রস্তাব আসা শুরু করলো আমার জন্য। মেয়েগুলো খুব সুন্দরী ছিলো একজন আরেকজনের চেয়ে কম না! 

কিন্তু আমার মন যেন অন্য কিছু চাইছিলো। 


একদিন বন্ধুর মেয়ের জন্মদিনের নেমন্তন্নে গেলাম।সেখানে নামীদামী মানুষের ভীড়ে এক কোনায় সাদাসিধে সুতির শাড়ি পরিহিতা একটা মেয়েকে দেখলাম। মেয়েটা হয়তো খুব অস্বস্তি বোধ করছিলো তাই এক কোনায় মাথা নিচু করে বসে ছিলো কিন্তু আমার চোখ এতো সুন্দরী সুন্দরী নারীদের রেখে তার সাধারণ সাজেই আকৃষ্ট হয়েছিলো। 

আমি শুধু তাকেই দেখছিলাম। কিছুক্ষন পর বন্ধু তার মেয়ে অনন্যার গানের টিচারকে গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। সেই মেয়েটিই অনন্যার গানের শিক্ষিকা লাবন্য। একটা সাধারণ মেয়ের মধ্যে এতো অসাধারণ একটা প্রতিভা লুকিয়ে আছে, হয়তো লাবন্যর গান না শুনলে জানতামই না। সেই সাধারণ মেয়েটিই আমার মনে জায়গা করে নিলো।


পরদিন বন্ধুর বাড়িতে গেলাম লাবন্য যখন অনন্যাকে গান শেখাতে আসে। যে ঘরে গান শেখানো হয় সেখানে বন্ধু আর বৌদিকে নিয়ে বসে বসে লাবন্যর গান শুনলাম মুগ্ধ হয়ে, আর ওকে বারবার আড়চোখে দেখছিলাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় লাবন্য একবারের জন্যও আমার দিকে তাকায়নি ! কিন্তু লাবন্যর প্রতি একটা টান অনুভব করছিলাম। হঠাৎ বলেই ফেললাম, 


"লাবন্য আপনাকে বিয়ে করে আমার জীবনসঙ্গী করতে চাই !" 


ঘটনায় আকস্মিকতায় বন্ধু আর বৌদি বিস্মিত। আর লাবন্য তো মাথা নিচু করেই আছে। ও ওখান থেকে উঠে চলে যাবার সময় হাত ধরে ফেললাম। হাতটা এক ঝটকায় আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। বৌদি বলে উঠলো, "ভাই আপনার মাথা ঠিক আছে তো? আপনার ফ্যামিলির সাথে কোনদিনও মানাবে না, লাবন্য নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে!" আমি বৌদিকে বললাম, "আমি মানিয়ে নিলে তো কারো কোনো অসুবিধা হবার কথা না।"

বন্ধুর কাছ থেকে লাবন্যর বাড়ির ঠিকানা নিয়ে বাড়িতে গিয়ে বাবাকে লাবন্যর কথা বললাম। বাবা বলেলেন, তোমার কোনো কাজেই তো কখনো বাঁধা দিইনি তবে আজও দেবো না। 


বাবা তারপরের দিনই লাবন্যর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলেন। ওর পরিবার সত্যিই আনন্দিত হয়েছিলো যে লাবন্যর এমন ঘরে বিয়ে হবে ভেবে। কিন্তু লাবন্য একবার আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো। বাবা আমার ফোন নাম্বার লাবন্যকে দিয়ে আসে। 


রাস্তার পাশে একটা দোকানে বসে চা খাচ্ছি আমি আর লাবন্য। মেয়েটা এখনো মাথা নিচু করেই আছে। মাথা নিচু করেই বলতে থাকে, "সে কখনোই এই ফ্যামিলির যোগ্য হতে পারবে না। আর কেনো এতো মেয়ে থাকতে তার মতো একটা সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছি,,,?"


"সাধারণের মাঝেই যে অসাধারণকে খুঁজে পেয়েছি আমি লাবন্য, তাকেই আমার লাগবে জীবনটাকে গুছিয়ে নেবার জন্য । জীবনে অসংখ্য নারীর শরীর ছুঁয়েছি তবে সেটা ভালোবেসে না। লাবন্য তুমি কি পারবে না আমাকে নিজের মতো গুছিয়ে নিতে? ভালোবেসে নিজের করে নিতে? "


লাবন্য চুপচাপ ! কিছুক্ষন পর জবাব দিলো "আপনি যদি আমাকে আপন করে নিতে পারেন তাহলে আমিও পারবো।" কথাটা শুনে আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেছিলাম। লাবন্যর হাতদুটো নিজের হাতে রেখে কতক্ষণ যে বসে ছিলাম মনে নেই! 


সাতদিন পরেই লাবন্য আমার ঘরের বউ হয়ে এলো। প্রতিদিন নতুন করে লাবন্যর প্রেমে পরতাম। আমার অগোছালো, নিয়ন্ত্রণহীন জীবন তখন নিয়মের মধ্যে বাঁধা পড়েছে। একটা পরিবার যে মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা লাবন্য আমার জীবনে না এলে বুঝতেই পারতাম না। মেয়েটা বিয়ের আগেও যেমন সাধারণ ছিলো বিয়ের পরেও তেমনি ছিলো, কোনো সাজগোজের বাহুল্য ছিলো না। শুধু আমাকে নিয়ে তার যতো আয়োজন ছিলো ! আমাকে আগলে রাখতো ছোট বাচ্চাদের মতো যেনো হারিয়ে না যাই! 


প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে সে আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ দিলো যে আমি বাবা হতে চলেছি ! আমি খুশিতে লাবণ্যকে কোলে নিয়ে সারাবাড়ি মাতিয়ে ফেলি। বাবাও খুব খুশি হয়েছিলো যে সে দাদু হতে চলেছে। বাড়ির সবার মধ্যমনি হয়ে ছিলো লাবন্য। প্রতিদিন বারান্দায় একসাথে বসে জোৎস্নাবিলাস, মাঝে মাঝে রাতে নিয়ন আলোতে দুজন হাত ধরে হাঁটা, রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে বসে মাঝে মাঝে চা খাওয়া হতো আমাদের।


সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। সাতমাসের সময় একদিন ছাদে উঠতে গিয়ে পা পিছলে নিচে পড়ে যায় লাবন্য । আমাদের সন্তানকে আর বাঁচানো যায়নি আর লাবন্যও কোমায় চলে গেলো। আমি দিন রাত শুধু লাবন্যর পাশেই বসে থাকতাম এই যদি এখনই জ্ঞান আসে তাই ভেবে। ঠাকুর বাড়িতে পুজো দিয়ে ঠাকুরের কাছে লাবন্যকে ভিক্ষা চাইতাম কিন্তু দশদিন কোমায় থেকে না ফেরার দেশে চলে যায় লাবন্য। "


পল্লব চুপ করে আছে, হাতের সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে। আমার চোখ থেকে জল পরছে, কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। একঘন্টা হয়ে গেছে মিস অন্তি , আপনি এখন যান। আশিস আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে। আমি চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠি। 


মা যাতে আমার চোখে জল না দেখে তাই বাড়িতে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। মা কি হয়েছে জানতে চাইলে বললাম, চোখের ভেতর পোকা পড়েছে তাই চোখে ব্যথা করছে। না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম মা আমার পাশে বসে ছিলেন অনেকক্ষণ। 


পরদিন আবার মিতুকে পড়িয়ে পল্লবের বাড়িতে গেলাম। পল্লব ড্রইং রুমেই ছিলো। আমাকে দেখে বললেন,  


-- একটু বসুন আমি আসছি। 


পাঁচ মিনিট পর পল্লব এসেই বললো,


-- উঠুন আমরা আজ রাস্তায় হাঁটবো ! 


রাস্তায় নিয়ন আলোতে পল্লব কে বেশ সুন্দর লাগছে। এই প্রথম কোনো পুরুষের দিকে ভালো করে তাকালাম। অদ্ভুত একটা মায়া মিশে আছে পল্লবের চেহারায় ! শুধু হাতে ওই সিগারেটটা না থাকলেই হতো। 


-- বাবার ইচ্ছে আমি আবার বিয়ে করি, সংসার করি, লাবন্যকে ভুলে যাই! 

কিন্তু লাবন্য তো আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে মিশে আছে। কিন্তু বাবার শেষ ইচ্ছে একটাই, আমার সংসারী জীবন দেখে যাওয়া। তাই মেয়েদেরকে দু বছরের বিয়ের কথা বলি যেনো কেউ বিয়েতে রাজি না হয়! কিন্তু কি অদ্ভুত , মেয়েরা রাজি হয়ে যায়, আমার হ্যাঁ এর সাথে হ্যাঁ মেলায়। খুব সুন্দর করে সেজেগুজে আসে আমাকে আকৃষ্ট করতে। 


আমি তো লাবণ্যর মতোই কাউকে খুঁজি যে কিনা আবার আমার জীবনটাকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে!  


-- চলুন চা খাই, মিস অন্তি । এখানকার চায়ের স্বাদ খুব ভালো। তারপর আপনাকে আপনার বাড়িতে দিয়ে আসি। 


আমি কিছুই বলছি না, শুধু তার কথা শুনছি। চা খেয়ে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছি। দুজন দূরত্ব রেখে হাঁটছি ! 

পল্লব সেই কখন থেকেই চুপ করে আছে আর আমিও কিছু বলছি না। 


 বাড়ির কাছাকাছি চলে আসতেই তাকে বললাম,


 -- চলে এসেছি। এই তিনদিন আমার জীবনে একটা শ্রেষ্ঠ সময় হয়ে থাকবে। আপনি ভালো থাকবেন। আপনার জন্য প্রার্থনা করি যেন লাবন্য দিদির মতো কেউ আপনার জীবনে আবার আসে ! 


-- সব সময় প্রার্থনাতে কাজ হয় না। আপনিও ভালো থাকবেন মিস অন্তি । আমার কোনো ভুল হলে মাপ করে দেবেন। 


পকেট থেকে দুটো খাম বের করে হাতে দিয়ে বললেন 


-- বাড়িতে গিয়ে খুলে দেখবেন। 


তারপর চলে গেলেন, একবারও পেছনে ফিরে তাকাননি ! 


বিদায় নেওয়ার সময় মনটা কেনো জানি ছটফট করছিলো। যতক্ষন তাকে দেখা যাচ্ছিল আমি এক দৃষ্টিতে চেয়েই ছিলাম। বাড়িতে এসে বাথরুমে ঢুকে খাম দুটো খুললাম। একটাতে কুড়ি হাজার টাকা আর অন্যটায় একটা চিঠি। 


চিঠিতে লেখা ছিলো,

    "অন্তি আমি আপনার মধ্যেই লাবন্যকে খুঁজে পেয়েছি । প্রথমদিনে আপনার চোখের ওই লেপ্টে থাকা কাজল আর একপাশের আঠা উঠে যাওয়া টিপ আর আপনার শুকনো মুখ, এগুলো আমার চোখে বারবার ভেসে উঠছে।

আমি আপনার কাছে তিনদিন তিনঘন্টা সময় চেয়েছিলাম কারন আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো আর আমার জীবনটা আপনার কাছে তুলে ধরেছি। লাবন্যকে নিয়ে যে পথে হাঁটছিলাম সেটা হঠাৎ করেই থেমে গেছে। ওই পথটায় শুধু আপনাকে নিয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হাঁটতে চাই , যদি আপনার ইচ্ছে থাকে! আমার শেষ আশ্রয়স্থল আপনি, আপনাকেই ভালোবাসি 

আশায় বেঁচে আছি একদিন আপনাকে নিয়েই 

হেঁটে যাবো বহুদূর,,,, 


ঠিক সাতদিন পর কোনো জাঁকজমক ছাড়াই পল্লবের ঘরে এলাম বউ সেজে। একটা নীল শাড়ি, হাতে সোনার চুড়ি আর কপালে নীল টিপ পরে বাসর ঘরে বসে আছি। পল্লব কাছে এসেই হাত ধরে বললো,


-- চলো আজ আবার জোৎস্না বিলাস করবো তবে নিয়ন লাইটের আলোতে হেঁটে হেঁটে.... যাবে অন্তি? 


সবকিছুই আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে, পল্লবের হাতে হাত রেখে মাথাটা তার বুকে লাগিয়ে বললাম,


-- যাবো বলেই তো এসেছি। নিয়ে চলুন আপনার স্বপ্নের রাজ্যে কিন্তু দু বছরের জন্য নয়, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আপনাকে আগলে রাখতে চাই.... 


                                                🍁ইন্দ্রনীল🍁


💛💜💛💜💛💜💛💜💛💜💛💜💛💜💛

       💕🦋💕🦋💕ইন্দ্রনীল💕🦋💕🦋💕