গল্প :- কীচক বধকলমে ছন্দশ্রী দাস ******2/8/2021****** আমার পাগলী এতো মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছ ঐ মোটা বই থেকে। কি বই ওটা? ........হারানবাবু তুমি তো সেই কবেই চল্লিশ বছর পার করে এসেছ। চোখে দুটো এক্সট্রা চোখ লাগিয়ে ও দেখতে পাচ্ছ ন…
গল্প :- কীচক বধ
কলমে ছন্দশ্রী দাস
******2/8/2021******
আমার পাগলী এতো মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছ ঐ মোটা বই থেকে। কি বই ওটা?
........হারানবাবু তুমি তো সেই কবেই চল্লিশ বছর পার করে এসেছ। চোখে দুটো এক্সট্রা চোখ লাগিয়ে ও দেখতে পাচ্ছ না। চালশে তো তোমার চোখে নেই।
.......না আমার চোখে না তোমার চোখে।তা কি করে বুঝবো বলো আমার লারেলাপ্পা লজঝর মাথা ওলা বিবি একেবারে ধর্ম পুস্তক মহাভারত পেড়ে বসেছে পড়তে।
......ও হারানবাবু তুমি এবারেও ডাহা ফেল।কি করে যে মক্কেলদের কেস জেতো কে জানে!
......ফেল কেন?
.....ফেল এই কারণে যে এতো মোটা বই খুললেই কি পড়তে হয়!
......তুমি পড়ছ না! তবে এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছ! আমি ঘরে ঢুকলাম তুমি টের পেলে না।
......পেয়েছি তো। শুধু চোখ তুলে তাকালেই কি হয়! ভগবান আমাদের নাক কি জন্য দিয়েছে?
.....নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য।
.....আরে গন্ধ শোঁকার জন্য। তুমি ঘরে ঢুকতেই ঐ বদখত ডিওর গন্ধ নাকে গেছে। তাতেই বুঝতে পারলাম আমার পার্টনারএসেছে।
.......তোমার তো আমার সব কিছু খারাপ লাগে। এই পারফিউম টা মিসেস মজুমদার গিফট করেছে। ফ্রান্স থেকে এনেছে।
.....তাই এমন গন্ধ। আহা বিমলবাবু কি সুন্দর গন্ধ ওলা পারফিউম ব্যবহার করে। মনে হয় একেবারে....
......ছাড়ো এসব। এসো চা খাই। তা কি পড়ছিলে মহাভারতে।
......পড়িনি তো। ছবি দেখছিলাম।
.....ছবি! বুড়ি বয়সে খুকিগিরি!
.....বিমলবাবু বলে আমাকে নাকি এখনো চল্লিশের যুবতী লাগে।
.....হুঁ যত্তোসব। তা কি ছবি দেখছিলে?
......কীচকবধ।
.....হু হুহু হু।
.....আরে আস্তে। সেই জন্য বলি খাবার আগে মিসেস মজুমদার এর নাম নেবে না। নিলেই বিষম খাবে। দেখলে তো ঠিক কিনা আমার কথা!
.....এটা হয়েছে তোমার বোমা বিস্ফোরণ এ।
......আমি আবার কি বোম ফাটালাম!
.....ঐ কীচকবধ। এতকিছু থাকতে কীচকবধ কেন?
......আরে বোঝো না কেন। দেখ পান্ডবরা দ্রৌপদী সমেত বিরাটরাজার প্রাসাদে এক বছর অজ্ঞাতবাসে ছিল।
......হ্যাঁ সে তো সবাই জানে। মানে যারা মহাভারত পড়েছে তারা। তোমার মতো পাড়াকাঁপানীরা নয়।
......ও হারানবাবু। আবার ভুলে যাচ্ছ। বি, আর, চোপড়ার কল্যাণে সবাই মহাভারত জানে।
......হুম। তারপর.....
......আমি ভাবছি দ্রৌপদী একবছর কি করে কীচককে ভোগা দিয়ে ঐ রাজপ্রাসাদ থাকলো। কীচক হলো রাজার শালা। তার কদর কত। সে যা চাইবে তাই পাবে।
......সে আর বলতে। শালারা যা চায় তাই পায়। মাঝখান থেকে জামাইবাবুদের হাঁড়ির হাল। সে নিজেকে দিয়ে খুব ভালো বুঝছি। যা গুতুনি দাও আমায়।
.......কি আমার ভাই তোমার জীবনে জ্বালাতন! আর তুমি আবার ভুল কথা বলছ। গুতুনি আমি তোমাকে দিই! সেটা কখনো সম্ভব! বুঝে শুনে কথা বলো।
...... আরে রাগছ কেন ক্ষেপী। ঠিক আছে গুতুনি কথা উইথড্র করে ঠুসুনি বললাম। বলো তোমার কীচক কাহিনী।
...... কাহিনী দ্রৌপদীকে নিয়ে। কত ভাগ্য করলে তবেই একসাথে পঞ্চস্বামীর ভালোবাসা পাওয়া যায়। দ্রৌপদী ও বেশ সুখে ঘর সংসার করছিল বনে ঘুরে ঘুরে। যখন যাকে পছন্দ তার গলা ধরে ঝুলে পড়ছে। আর সোহাগে আদরে ভেসে যাচ্ছে। কী কপাল! এ যুগে দেখ মেয়েরা যদি একটা প্রেম করলো তো সবাই রে রে করে উঠবে তার চরিত্র নিয়ে।
........কোথায় আমি কি তোমার চরিত্র নিয়ে কিছু বলেছি! বলিনি না। দেখো কত ভালো স্বামী তোমার।
........এখানে আমার কথা আসছে না। হচ্ছে দ্রৌপদীর কথা। তা শোনো দ্রৌপদী তো সৈরিন্ধী নামে বিরাটরাজার বৌএর সহচরী হলো। সেই সুবাদে তার নিয়মিত কীচকের সাথে দেখা হত। কেননা দিদি ভাই অন্ত প্রাণ। কীচক তো সৈরিন্ধীকে নানারূপে নানাবেশে দেখেছে। আর কীচক ও বেশ বলশালী। সুন্দর দেহসৌষ্ঠব। দ্রৌপদীর আবার একটু বলশালীদের প্রতি প্রেম বেশী ছিল।
........মহাভারতে লেখা আছে?
.......না। আমি বলছি। না হলে কিছু সমস্যা হলেই দ্রৌপদী কেন ভীম আর অর্জুনের কাছে ছুটে যেত। আর আবদার করতো। আর মেদামারা দুটো তার প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে সব যুদ্ধ করতো। মানে সব রাজাদের সাথে পাঙ্গা নিত। তুমি কখনো দেখেছ যুধিষ্ঠির বা নকুল, সহদেব দ্রৌপদীকে রক্ষা করতে এসেছে?
..... না। তা আসে নি। এসেছে ভীমসেন। যে তোমার ঐ বিমলবাবুর মতো।
.......সেইজন্যই তো আমি অতো ভালোবাসি বিমলবাবুকে। আর তুমি হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরো।
........আমার শরীরে হিংসার নাম গন্ধ নেই। আমি যুধিষ্ঠির।
........ও হারানবাবু এই জন্যই তোমাকে এতো ভালোবাসি। আজ বিমলবাবুর সাথে নন্দনে একটা ছবি দেখতে যাবো।
........আমি কি করবো!
........একটা ললিপপ দিয়ে যাবো বসে বসে চুষো। তারপর শোনো দ্রৌপদী উপাখ্যান। দ্রৌপদী তো প্রেম ছাড়া থাকতে পারে না। আবার রাজ অন্তঃপুরে পুরুষদের আনাগোনা নেই। ঐ কীচক ছাড়া। তাই দ্রৌপদী ঐ কীচকের প্রেমে পড়ল। কীচক ও বেশ দিদিকে দেখার নাম করে দ্রৌপদীর সাথে প্রেম করে যেতে লাগলো।
......হুম অতি উৎকৃষ্ট মস্তিষ্ক। একেবারে সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখার মতো। তারপর চালিয়ে যাও বখাটে রানী।
......বখাটেই বলো আর যাই বলো মানতে তুমি বাধ্য।
......হুম। বেশ। তারপর কি হলো!
......তারপর! তাদের প্রেমে বাদ সাধল স্বয়ং বিরাটরাজা।
.......কেন?
........রানী মারফত তিনি খবর পেলেন অন্তঃপুরের সবচেয়ে সুন্দরী পরিচারিকা তার শালা কীচকের ভোগ্যা। যে কিনা আবার তার আশ্রিতা। ব্যস হয়ে গেল।
খবর চলে গেল ভীমের কাছে। একমাত্র ভীমই ছিল কীচকের সমকক্ষ যোদ্ধা। ছলেবলে বিরাটরাজ ভীম আর কীচক দুজনকেই লাগিয়ে দিলেন ডাবলু ডাবলু খেলায়। অবশ্য এতে রানীর ও হাত ছিল। আর তারপরে কি হলো সে তো সবাই জানে।
..........হ্যাঁ তা জানে। তবে কীচককে মেরে রাজারানীর কি লাভ!
......ও আমার গোবরগণেশ টাকলুমাথার হারাণবাবু। রাজা দেখলো অন্তঃপুরে গিয়ে সুন্দরী সৈরিন্ধীকে ভোগ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ রানীর খাস চাকরানী সে। রানী কখনোই রাজাকে সৈরিন্ধীর কাছে যেতে এ্যলাও করবে না। তাই সে কীচককে বধ করালো দ্রৌপদী কে সাবধান করার জন্য।
.......আর রানীর কি উদ্দেশ্য!
.......বুঝলে না। ঝিকে মেরে বৌকে শিক্ষা দেওয়া। রানীতো আর সৈরিন্ধী বেশী দ্রৌপদী কে মারতে পারে না। তাই নিজের ভাইকেই মারালো। কেননা ইদানীং কীচক রাজ্যের সব ব্যাপারে নাক গাচ্ছিল যা রাজারানীর কারো ভালো লাগে নি। আর রানী বুঝিয়ে দিল ,রাজা যদি সৈরিন্ধীকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করে তার হাল কি হবে।
......বেশ বুঝলাম। আর ভীম কেন কীচকের বধ করতে রাজী হলো!
.....স্রেফ হিংসা। তার সহ্য হলোনা দ্রৌপদী সে ছাড়া আর কোনো বলবান ব্যক্তির প্রতি আসক্ত হয় তাই।
......সত্যিই পাগলী তুমি অনেক দূর ভাবতে পারো। যাই মিসেস গুহর সাথে নাচতে। আজ ক্লাবে একটা পার্টি আছে। ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে যাবো। মিস্টার গুহ অনেক করে তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছিল। তা তুমি তো নন্দনে যাচ্ছ বিমলবাবুর সাথে।
.........না গো। বিমলবাবু মেসেজ করেছে তার খুব হাঁচি হচ্ছে। তাই যাবে না। আমার অঢেল সময় আর গুহর রিকোয়েস্ট ফেলা ঠিক হবে না। সে তোমার প্রতিপক্ষ।
.........পথে এসো পাগলী। আমাকে ছেড়ে যাবে তুমি কোথায়।
..... কিইইইইই আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি না? হ্যলো কে বিমলবাবু! কি ঠিক হয়ে গেছেন! যাবেন! আচ্ছা এখনি তৈরী হচ্ছি।
...... আরে আরে ক্ষেপী আমার কি হবে! আমার কি হবে!
.......হি হিহিহিহিহিহিহি মিসেস গুহর সাথে নাচতে হবে।.
.......ওঃ মাই গড। নাচ আর মিসেস গুহ। তার থেকে বাড়ি বসে ললিপপ চোষা ভালো ।কৈ দাও তোমার ললিপপ। /****************1/2/2019*******************