Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃজনী-বন্যা-সেরা-সাহিত্য-সম্মাননা

#গল্প_উলট_পুরাণ#কলমে_মহুয়া_মিত্র০২/০৮/২১
ডালিয়া সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করছে বছর তিনেক, সে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অঙ্ক করায়। মাইনেটাও ভালোই পায়, বলা যেতে পারে খুব অল্প বয়সেই কঠোর পরিশ্রম আর সারাজীবন শুধু মাত্র লেখাপড়া করে …

 


#গল্প_উলট_পুরাণ

#কলমে_মহুয়া_মিত্র

০২/০৮/২১


ডালিয়া সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করছে বছর তিনেক, সে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অঙ্ক করায়। মাইনেটাও ভালোই পায়, বলা যেতে পারে খুব অল্প বয়সেই কঠোর পরিশ্রম আর সারাজীবন শুধু মাত্র লেখাপড়া করে গেছে বলে খুব কম বয়সেই এত সুন্দর একটা জায়গা নিজেকে দিতে পেরেছে। শুধু তাই না, ও নম্র ভদ্র ধীর স্থির। মৃদু স্বরে কথা বলে, যাকে বলে সাত চড়ে রা কাড়ে না এমন মেয়ে ও। আত্মসম্মান বোধের পাশাপাশি অপরের প্রতি ভদ্র ব্যবহার করতেও ওর জুড়ি মেলা ভার। মা, দুই দিদি, তিন বৌদির আধিপত্যে বাড়ির ছোট মেয়ে হয়েও ও গৃহস্থালির কাজে সুনিপুণা। খুব সুন্দর গান করে আর ছবিও আঁকে দারুণ। মোট কথা যাকে বলে খুব ভালো মেয়ে ডালিয়া।


কিন্তু আজকাল সারা দিনে অনেক বার ওর মাকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শোনা যায়, -- " এমন ধারা কালো মেয়ে পার করতে না জানি কত খসবে!"


ডালিয়ার এক কলিগের দাদার ছেলের অন্নপ্রাশনে গিয়ে ডালিয়াকে দেখে সুতনু। সুতনু বিরাট ধনী বনেদি বাড়ির ছোট ছেলে। পারিবারিক লোহার ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার সুতনু, সুপুরুষ। এহেন ছেলের কি করে ঐ অত কালো ডালিয়াকে পছন্দ হল ভেবে পান না ডালিয়ার মা, মনে মনে ভাবেন নির্ঘাত অনেক দেনাপাওনা দাবি করবে। ঠাকুরের আশীর্বাদে যথেষ্ট আছে ওনাদের। তাছাড়া এই মেয়ে সে চাকরি করুক আর যাই করুক, খুবই কালো এটা ভীষণ সত্যি। এই মেয়ে কেউ এমনি নেবে না ভেবে ডালিয়ার বাবাকে উনি বলেন, -- " শোনো, আমরা আমাদের কোন ছেলে মেয়েদের বিয়েতে পণ দিইও নি , নিইও নি। কিন্তু ডালিয়া এতটাই কালো যে পাত্রপক্ষ যদি সমীচীন মনে করে আমাদের মেয়েকে ওদের বাড়ির বৌ করতে তাহলে যা চাইবে ওরা তাই দিয়ে দেবে, বুঝলে! ছেলের নয় ওকে ভালো লেগেছে, এখন বাড়ির লোক কি বলে দেখো।"


ডালিয়ার বাবা মেয়ের জন্ম ইস্তক শুনে আসছেন ওনার মতো গায়ের রঙ ছোট মেয়ে পেয়েছে, একটু হলেও মনঃকষ্ট পেতেন যেখানে ওনাদের বাকি সন্তানেরা মায়ের মত। তাই কথা না বাড়িয়ে স্ত্রীর সাথে একমত হলেন তিনি।


সেদিন বিকেলে সুতনুর বাড়ির লোক এসে ডালিয়াকে দেখে শুধু নাম ছাড়া আর কিছু জিজ্ঞেস না করে সামনে সাজানো প্রচুর খাবার থেকে নামমাত্র মিষ্টি মুখ করে যখন বিয়ের দিন ঠিক করার নিয়ে কথা বলতে যাবেন তখন ডালিয়ার মায়ের ইশারাতে ওর বাবা বললেন, -- "আজ্ঞে পণ বাবদ কি দেব ?"


সুতনু যদিও অনুপস্থিত, কিন্তু ওর বাবা হঠাৎ আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হোহো করে হেসে উঠলেন, তারপর বললেন, -- " পণ তো নেবই মশাই, পণ ছাড়া কি বিয়ে হয়? আর পণ বাবদ আমাদের চাই আপনাদের শিক্ষা, রুচি, সংস্কৃতি যা দিয়ে পরিপূর্ণ আপনার মেয়ে। এবারে ওর সাথে সেই জিনিস নিয়ে আমরা আমাদের বাড়িতে যাবো যাতে ডালিয়ার সংস্পর্শে আমাদের পরিবার আরো লক্ষ্মী লাভ করে। এর বেশি কিছু দরকার নেই। "


ডালিয়া আপ্লুত এমন মন্তব্যে, মনে মনে ধন্যবাদ দিল ঈশ্বর ও সুতনুকে যাদের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যত ওর অপেক্ষা করে আছে। আবার আফসোসও হল, ইস্ এমন করে সবাই ভাবে না কেন তাহলে হয়তো অকালে পণের দাবীতে ঝরে যেত না অমূল্য সব প্রাণ। আরো সুন্দর হত এই সমাজ, এই পৃথিবী। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ডালিয়ার বুক থেকে।