Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন_#দুই_প্রজন্ম# #দেবারতিচন্দরায়_           মিলির বরাবরের অভ্যাস ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় রাখা টবের গাছগুলোতে জল দেওয়া। তারপর এককাপ চা খেতে খেতে বারান্দায় বসে সকালটাকে উপভোগ করা। যদিও ইট কাঠ পাথরের জঙ…

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন_

#দুই_প্রজন্ম# 

#দেবারতিচন্দরায়_ 

        

          মিলির বরাবরের অভ্যাস ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় রাখা টবের গাছগুলোতে জল দেওয়া। তারপর এককাপ চা খেতে খেতে বারান্দায় বসে সকালটাকে উপভোগ করা। যদিও ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলে পাখির ডাক কম গাড়ির হর্ণ শোনা যায় বেশি, তবুও বসে থাকে। সকালের বাতাস বুঝি শৈশবের ছোঁয়া দিয়ে যায় ওকে। 

            আজ বহুদিন পর মিলি এসেছে বাপের বাড়ি বেড়াতে। সেখানে বাড়ির একপাশে একটা ফুলের বাগান। এখনো একই ভাবে রয়েছে ঠাকুমার হাতে লাগানো বিভিন্ন ফুল ফলের গাছে সাজানো বাগানটা। সকালের বাতাসে ভেসে আসা ফুলেদের গন্ধ, মিলির মনে বয়ে আনে ঠাকুমার শরীরের গন্ধ। ঘুম ভেংগে যায় মিলির। বিছানা থেকে উঠে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় পূব দিকের জানালাটার কাছে। পর্দা সরিয়ে বাইরে বাগানের দিকে তাকাতেই ঠাকুমার কথাগুলো সব মনে পড়তে থাকে ওর এক এক করে। কিভাবে চিনিয়েছিলেন সংসারে মেয়েদের অবস্থান, চিনিয়ে ছিলেন তার নিজেকে নিজের কাছে। 

            দাদু মারা যাওয়ার পর থেকে এই বাগানটাই হয়ে উঠেছিল ঠাকুমার আশ্রয়, ধ্যান জ্ঞান সবকিছু। সুখ দুঃখ হাসি আনন্দর অংশীদার হিসেবে গাছগুলো হয়ে উঠেছিল তার পরম বন্ধু। সেদিনও এমনি গন্ধরাজ ফুলের গন্ধে মম করছিল চারিধার। প্রতিদিনের মতো ঠাকুরমার সাথে ফুল তুলতে গিয়েছিল ছোট্ট মিলি বাগানে ঠাকুমার হাত ধরে। একমনে নিষ্ঠার সঙ্গে মন্ত্র পাঠ করতে করতে ফুলগুলোকে পেড়ে রাখছিলেন তিনি সাজিতে।  

         অধিকাংশ ফুলগুলো মিলির নাগালের বাইরে ছিল। তাই সে খেলা করছিল গাছের তলায় পড়ে থাকা ফুল আর নুড়িপাথর দিয়ে। খেলা শেষে ফুলগুলো ডাস্টবিনে ছিঁড়ে ফেলতে যাচ্ছে দেখে ঠাকুমা বাঁধা দেন তাকে প্রথমে। তারপর সাজিটা মিলির হাতে ধরিয়ে দিয়ে পরমযত্নে সবগুলো ফুল কুড়িয়ে আঁচলে ভরে নিয়ে মন্দিরের দিকে রওনা দেন তিনি। মিলির চোখে বিষ্ময়। পূজোয় যদি নাইবা লাগবে, তবে এগুলোকে এতো যত্ন করে আঁচলে বেঁধে নিয়ে মন্দিরে যাওয়ার কারণ কি হতে পারে ? 

       মিলির মুখের দিকে তাকিয়ে মনের ভাব বুঝতে পেরেছিলেন হয়তো ঠাকুমা। হাসতে হাসতে মিলির হাত ধরে মন্দিরের দিকে যেতে যেতে বলেছিলেন" সব বলছি তোমায় মিলিসোনা, চল আগে।" বলে, ঠাকুরগরের বারান্দায় নিয়ে গিয়ে বসেছিলেন তিনি। সাজিটাকে রাখতে বলে আঁচলের ফুলগুলো দুজনের মাঝখানে রেখে বলেছিলেন , দেখ দিদিভাই এই ফুলগুলোও কত সুন্দর! অথচ লক্ষ্য করলে দেখবে গাছ থেকে পেড়ে আনা ফুলগুলোকেই সবসময় পূজোয় ব্যবহার করি আমরা। পূজোর পর আশীর্বাদী হিসেবে সবাই মাথায়ও ঠেকায় সেগুলো। কিন্তু তলায় পড়ে থাকা ফুলগুলোকে কখনো পূজোয় দেওয়া হয় না। কেনো দেওয়া হয়না বলতো? ওদের কি দোষ? ওরাও তো গাছেরই ফুল। মিলি: ওগুলো তো তলায় পড়ে নোংরা হয়ে অশুদ্ধ হয়ে যায় ঠাম্মা। 

       ঠাম্মা: নোংরা হয়তো হয় তবে অশুদ্ধ হওয়ার তো কারণ নেই। ও তো মাটিতেই পড়েছিল যেখান থেকে গাছটা গজিয়েছে। তাহলে অশুদ্ধ কি করে হলো? এবার নোংরা যদি হয়ে থাকে তা একটু পরিষ্কার করে নিলেই হয়। আর একটু চেষ্টা করলে ওই মাটিতে পড়ে থাকা ফুলগুলোও ঠাকুরের চরণে ঠাঁই পেতে পারে। মিলির চোখ ভরা কৌতুহল! 

        মুচকি হেসে ঠাকুমা বললেন, অথচ পায়না কেন জানো? আমাদের চিন্তা ভাবনার সংকীর্ণতা আর অজ্ঞানতার কারণে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফুল হলেও ওইগুলোকে আমাদের কারণেই অবহেলিত আর পদদলিত হয়ে থাকতে হয়।

    মিলি:  কি করে ঠাম্মা?  

   ঠাম্মা: দেখো আমার চাইলেই সেগুলো দিয়ে আলপনা দিতে পারি, সুগন্ধি দ্রব্য কিংবা আবির বানাতে পারি। আর এভাবেই ওদের পাংক্তেয় করে তুলে দিতে পারি ঠাকুরের চরণে স্থান। 

               সবই গাছের ফুল, শুধু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর পরিস্থিতির পার্থক্যেই তাদের মর্যাদা কিম্বা অস্তিত্ব স্বতন্ত্র। সংসারে মেয়েদের অবস্থানও ঠিক তেমনি, পুরুষদের মতো সমাজের অপরিহার্য অঙ্গ হলেও কখনোই সমান মর্যাদা পায় না। মা, মেয়ে, বৌ- শাশুড়ি, বোন- দিদি, মাসি পিসির ভূমিকায় কেটে যায় তাদের জীবন। পরিস্থিতি পরিবেশ সময়, সুযোগ, শিক্ষা, চিন্তা-ভাবনার কারণেই তাদের জীবন যাপন হয়ে থাকে ভিন্ন। পৃথিবীতে কাওকেই হারিয়ে যেতে দিতে নেই দিদিভাই। তবে তার জন্য দরকার সংস্কার মুক্ত মন আর বিবেকের শিক্ষা। 

               

সার্বিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা মেয়েদের যে আরো বেশি প্রয়োজন দিদিভাই। ছেলেবেলায় পড়াশোনায় অমনযোগী ডানপিটে পরীক্ষায় খারাপ নাম্বার পাওয়া মিলি যখন বাবা মায়ের বকুনি খেয়ে ঠাকুমার পাশে শুয়ে শুয়ে কাঁদছিল তখন তার মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে, কথাগুলো বলছিলো ঠাকুমা সেরাতে। হাতে তুলে দিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের বিদুষী মহিলাদের জীবনের গল্পগাঁথা। তথাকথিত শিক্ষিত না হয়েও প্রকৃতির তুলনামূলক উদাহরণ টেনে একজন নারী হিসেবে দিয়েছিলেন নারীজাতিকে সমৃদ্ধ করার শিক্ষা। ঠাকুরমার জীবন দর্শনের দীক্ষায় দীক্ষিত, ড: মিলি আজ সু-গৃহিণীর পাশাপাশি একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা। সমাজ সংসারে নারীজাতিকে শিক্ষিত ও স্বনির্ভর করে তোলা তার নেশা আর স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নারী জাতীকে সুস্থ রাখা তার পেশা।

DCR