স্মৃতির সরনীতে আজও ভেসে ওঠে হলুদ ট্রাক্সীর ছবি।ওলা আর উবেরের গোঁতায় কলকাতার রাস্তা থেকে ক্রমশই বিলীন হতে চলেছে হলুদ ট্যাক্সি ।পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই হলুদ ট্যাক্সি এখন বৃত্তের বাইরে।এ প্রজন্ম চায় সুন্দর ঝকঝকে জিপিএস লাগানো গাড়…
তরুণ চট্টোপাধ্যায় । |
ওলা আর উবেরের গোঁতায় কলকাতার রাস্তা থেকে ক্রমশই বিলীন হতে চলেছে হলুদ ট্যাক্সি ।পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই হলুদ ট্যাক্সি এখন বৃত্তের বাইরে।এ প্রজন্ম চায় সুন্দর ঝকঝকে জিপিএস লাগানো গাড়ি ।যা মোবাইলে বুক করলেই দোরগোড়ায় ।কেন আর দৌড়ে ধরতে যাবে হলুদ ট্যাক্সির পিছে পিছে।দুয়ারে রে তো চলে আসছে ওলা উবের।
কিন্তু এদিন তো ছিল না এককালে।মধ্য রাতে কলকাতা কে শাসন করতো তিন যুবা।আর এদের সঙ্গে ছিল আরও একজন।সেতো এই হলুদ ট্যাক্সি ই।বলা যেতে পারে হূগলির হিন্দমোটরের তৈরি অ্যামবাসডর হলুদ ট্যাক্সির তখন রমরমা যুগ।সে রাম ও নেই নেই অযোধ্যা ।হলুদ ট্যাক্সি এখন যাদুঘরের পথে।
সুন্দর বনের হলুদ ডোরাকাটা বাঘ আর কলকাতার হলুদ নীল দাগ দেওয়া ট্যাক্সির কে থাকবে কে বিলীন হবে সে তর্ক চলতেই পারে।বাঘসুমারিতে বাঘ গোনা হয়।বাঘ বাড়ানোর চেষ্টা ও চলে।কিন্তু হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে ভাবনা নেই।কিছুদিন আগে এই ট্যাক্সি ছিল তিরিশ হাজারের ওপরেই।আর এখন কুড়ির নীচে।বসে যাওয়া হলুদ ট্যাক্সি এখন আর রাস্তায় ফিরে আসে না।নতূন ট্যাক্সি ও নামে না।উল্টো দিকে প্রতিদিনই ওলা উবের আসছে।আর ক্রমাগত প্রতিযোগিতায় পিছতে পিছতে হলুদ ফিকে হওয়ার দৃশ্যটি রোজই চোখে পড়ে।তাই স্মৃতির সরনী বেয়ে সেই হলুদ ট্যাক্সি বার বার ভারাক্রান্ত করে মন।
কেউ কেউ পরিযায়ী পাখিদের সঙ্গে তুলনা টানে এখন।পাখি আসা কমছে দিনদিন।সঙ্গে সঙ্গে কমছে এই হলুদরঙা ট্যাক্সির দিন।সরেজমিনে তদন্তে নেমে ও কোন সুখবর মেলেনি হলুদ ট্যাক্সির ফিরে আসার।বরং আরো কমবে এই কথাটাই জানা গেল।
অথচ এই অ্যামবাসডর ট্যাক্সির সঙ্গে কলকাতা বাসীর ছিল নাড়ির টান।গোয়েন্দা ফেলুদা এই হলুদ ট্যাক্সি চেপেই কঠিন কঠিন রহস্যের সমাধান করতো।আর জটায়ু ও ঠিক তাই।সেই গাড়ির হর্ন ছিল জাপানি ।ফেলুদার কথায় হাড় কাঁপানি কান জ্বালানি।
কাহানীর বিদ্যাবালন যখন এয়ারপোর্টে নেমে এই শহরে পা দিয়েছিলেন তখন বিমান বন্দর থেকে শরৎ বোস রোডের গেস্ট হাউস হলুদ ট্যাক্সিতেই।
ওলা উবেরের গাড়ির মডেল হয় মারুতির সুইফট ডিজায়ার থেকে শেভ্রেলে।কোন কিছুই বাদ নেই।আর হলুদ ট্যাক্সি একেবারে অ্যামবাসডর ।কলকাতার রাস্তায় পুরসভা খোঁড়াখুঁড়ি করছে।অবিরাম বৃষ্টি ।সব গাড়ির ইঞ্জিন থেমে গেলেও হলুদ ট্যাক্সি চলছে তো চলছেই।এই হলো হলুদের গুন।
অবশ্য এর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে অগুন্তি ।কাস্টমার যেতে চাইলেও এদের মর্জি ।এখানে যাব না ওখানে যাব না।মিটার থেকে বেশি দিতে হবে।নানা বায়নাক্কা ।গলির মধ্যে যাব না।ফেরার পথে প্যাসেঞ্জার মিলবে তো।
না এসব ওলা উবেরের নেই।স্কীনে ভাসা অঙ্ক ই আপনার ভাড়া।কিন্তু সে ভাড়া তো ওঠানামা করে।কাস্টমারদের চাহিদা গাড়ির যোগান অজস্র ফ্যাক্টর এখানে।তবুও আজকের দিনে গন্তব্য পথে পৌঁছাতে হলুদ ট্যাক্সির থেকে বিশ হাত এগিয়ে এরা।
এছাড়া আজকের দিনে সকলেই চায় স্বস্তির জার্নি ।শীততাপনিয়ন্ত্রিত গাড়ি তে বসে আরাম দায়ক পথ চলা।ঠিকানার ঝক্কি ঝামেলা নেই।জিপিএস চলছে।ডাইনে বাঁয়ে কোথায় যাবেন।সব তো ধরা গুগুল মানচিত্রে ।
প্রতিযোগিতার হাত ধরে ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছে হলুদ ট্যাক্সি ।তবে আজও মনে আসে পাঞ্জাবী ট্যাক্সি ড্রাইভার দের কথা।কলকাতার মানুষ সর্দারজি নামেই ডাকতো।বড় অমায়িক ব্যবহার ছিল এদের।গাড়ি তে বসেই হাত দিয়ে পিছনের দরজা খুলে দেওয়া ।এক মুখ দাড়ি মুখে স্মিত হাসি ।নব্বই দশকের দিকেও এছবি চোখে পড়তো।আজ আর পড়ে না।
হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে নানা নস্টালজিয়া আজও ।তবুও এদের দিন আজ আর নেই।ক্রমশই কমতে কমতে হলুদ ফিকে হতে চলেছে।
আজ দাঁড়িয়ে ছিলাম সেন্টাল অ্যাভিনিউ বিডন স্ট্রিট ক্রসিংয়ে ।উঠেই পড়লাম হলুদ ট্যাক্সিতেই।সেই চালকের স্বীকারোক্তি এ গাড়ি ছেড়ে মাঝে মাঝেই প্রাইভেট গাড়ি চালাই।কাজ না থাকলে ট্যাক্সি নিয়ে রাস্তায় আরোহী খোঁজা।হলুদ ট্যাক্সির হারিয়ে যাওয়ার আর ছবি বোধহয় খুঁজতে হবে না আর।এটিই যথেষ্ট ।হলুদ ট্যাক্সির পিঠ এখন দেওয়ালে।ওলা উবের যে এগিয়ে চলেছে।
তরুণ চট্টোপাধ্যায় ।