Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি  সাহিত্য যাপন
— রঞ্জন কুমার দে —   “ আমি ”২৯/১০/২১ ( উন্মুক্ত )
আমি ! কে এই আমি ? পরিবর্তনশীল এই মহাবিশ্বে  পোষাকি যে নামে আমি পরিচিত সেইটাই কি আমার সত্যকার পরিচয় ?আমি কি শুধুই সে ! ত্বক , অস্থি ও মজ্জায় পরম যত্নে নির্মিত , …

 


সৃষ্টি  সাহিত্য যাপন


— রঞ্জন কুমার দে

 —   “ আমি ”

২৯/১০/২১ ( উন্মুক্ত )


আমি ! কে এই আমি ?

 পরিবর্তনশীল এই মহাবিশ্বে  পোষাকি যে নামে আমি পরিচিত সেইটাই কি আমার সত্যকার পরিচয় ?

আমি কি শুধুই সে ! ত্বক , অস্থি ও মজ্জায় পরম যত্নে নির্মিত , লালিত ও পালিত এই যে আমার শরীর যা কিনা মাতৃজঠর হতে  নির্গমন হয়েই অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর দিকে ছুটে চলেছে সেই শরীর কার ?

 দম্ভ , বল , বুদ্ধি , অহঙ্কার , লোভ , ইর্ষা , দুঃখ , উদাসীনতা , ক্ষোভ অথবা প্রফুল্লতা যার শরীর ও মনের পরতে পরতে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে তা কি আমারই ?

সকল কিছু যদি আমারই হয় আমার সামান্যতম ইচ্ছায় তাহলে ফুল ফোটে না কেন ? তমসাবৃত রাতের শেষে নতুন প্রভাতী সূর্য ওঠে না কেন ? আমারই অঙ্গুলীলেহনে কালবৈশাখী  শুরু হয় না কেন অথবা আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাত ঘটায় না কেন ? মহাপ্রলয়ের শেষে জ্বরাজীর্ণ এই পৃথিবী গ্লানিমুক্ত হয়ে নতুন সৃষ্টির উদ্ভব হয় না কেন ?! 

কেন ? কেন ! তবে আমি নিজেই কি নিজের কাছে এক চরম প্রহেলিকা ! 

মরুভূমির মরীচিকা ! না কি আমার এই উপস্থিতি আমারই এক মহাভ্রান্তি ? 

মহাভ্রান্তি বশে আমি কি কেবল আমার অস্তিত্বকে স্বীকার করে মহাবিরাটপুরুষের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে বসে আছি ! আমি কি ভুলে গিয়েছি - সৃষ্টি , স্থিতি ও লয় হতে শুরু করে এই বিশ্বচরাচরে ও তার বাইরেও যা কিছু দৃশ্যমান অথবা অদৃশ্যময় - তার উৎস ও অন্ত-ও যে সেই বিরাটপুরুষ ! 

তিনি ব্যতীত এই বিশ্বে অথবা বিশ্বান্তরে কেউ নেই , কিছুই নেই। 

সৃষ্টির আদিতে নিঃসঙ্গ বিরাটপুরুষ আপন নিঃসঙ্গতা দূর করতে আপন লীলাখেলার কারনে অখন্ড হতে নিজেই খন্ডিত হয়েছিলেন। সকল জীবের অন্তরে অধিষ্ঠিত ও লুক্কায়িত থেকে নিজেরই মনোরঞ্জনার্থে এক হতে বহুদা হয়ে সম্ভোগকল্পে রূপ , রস ও গন্ধের লীলাখেলায় মত্ত হলেন। তাইতো নিজের অজান্তে মন বলে ওঠে — 


“ - - - এ বিশ্ব লয়ে -

বিরাট শিশু খেলিছ আনমনে —

নিরজনে প্রভু নিরজনে । ”


রূপ , রস ও গন্ধের মায়াজালের বাইরে এসে আমিত্বের নাশের পর পরম বিস্ময়ে সেই বিশ্বেশ্বর কেশব -কে লক্ষ করে মুক্ত আত্মা বলে ওঠে — হে প্রভু ! সবই তুমি ! এই যে জীব , গাছ , পাথর , পর্ব্বত , নদ-নদী , সকল কিছুই তুমি । বহুদা হয়ে তুমিই সর্বত্র বিরাজ করছ। 

অর্থাৎ এই যে আমি , এও তো তুমি ! তুমিই আমি , আমিই তুমি। আমিই সেই মহাশক্তিময় সদাপ্রশান্ত শুদ্ধাত্মার অংশ !

প্রভু ! অসত্যের অন্ধকার হতে মুক্ত করে আমায় সত্যের পথে নিয়ে চলো , অন্ধকার  হতে আমাকে আলোর পথে নিয়ে চল , মৃত্যুময় সংসার হতে অমৃতময় স্বরূপে নিয়ে গিয়ে , হে স্বপ্রকাশ ! আমার আত্মায় প্রকাশিত হও । 

( “ অসতো মা সদ্গময় / তমসো মা জ্যোতির্গময় / মৃত্যোর্মামৃতং গময় / অবিরামবীর্ম এধি ”।  )


সমাপ্ত।