Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মোহনপুর হাইস্কুলের প্লাটিনাম জয়ন্তী স্মারক তোরণ উদ্বোধন ও বরেণ্য মনীষীগণের আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মোহনপুর,পশ্চিম মেদিনীপুর.......সম্প্রতি মোহনপুরের প্রাচীনতম উচ্চ বিদ্যালয় মোহনপুর হাইস্কুলের ৮৩তম বর্ষে প্লাটিনাম জয়ন্তী স্মারক তোরণ উদ্বোধন ও বরেণ্য মনীষীগণের আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন সম্পন্ন হল। বিদ্যালয়ে…



নিজস্ব সংবাদদাতা, মোহনপুর,পশ্চিম মেদিনীপুর.......সম্প্রতি মোহনপুরের প্রাচীনতম উচ্চ বিদ্যালয় মোহনপুর হাইস্কুলের ৮৩তম বর্ষে প্লাটিনাম জয়ন্তী স্মারক তোরণ উদ্বোধন ও বরেণ্য মনীষীগণের আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন সম্পন্ন হল। বিদ্যালয়ের নিজস্ব সভাগৃহে এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন দাঁতন বিধানসভা কেন্দ্রের মাননীয় বিধায়ক বিক্রমচন্দ্র প্রধান। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তথা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার ও শিক্ষারত্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত জাতীয় শিক্ষক, রবীন্দ্র গবেষক ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (ইউ.কে.) কর্তৃক সম্মাননাপত্র প্রাপক প্রধান শিক্ষক ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এমন কিছু মানুষজনের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান মঞ্চ প্রকৃত অর্থেই ছিল আলোকময়। উপস্থিত ছিলেন মোহনপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তপন কুমার প্রধান; গড়হরিপুর হাইস্কুলের যশস্বী শিক্ষক প্রদীপকুমার পাত্র; বেগুনিয়া ক্ষেত্রমোহন বিদ্যাপীঠের যশস্বী শিক্ষক মানিক মাইতি; মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক স্বরাজ রায় চৌধুরী; মোহনপুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ গৌরকৃষ্ণ দে; মোহনপুর চক্রের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক সুব্রত জানা; মোহনপুর হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সন্তোষকুমার মাইতি; বীরভদ্রপুর হাইস্কুলের কৃতবিদ্য প্রধান শিক্ষক শিবশংকর সেনাপতি; মোহনপুর হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ দাস; মোহনপুর হাইস্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি নীলকমল নায়ক ও যাঁর ঐকান্তিক উদ্যোগে এই মহনীয় অনুষ্ঠান, এই বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মাখনলাল গিরি।

উদ্বোধনী বক্তব্যে মাননীয় বিধায়ক মোহনপুর জনপদে বিদ্যালয়ের বহুমুখী কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন ও বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাগৃহটিকে অত্যাধুনিক ভাবে বিনির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বিধায়ক তহবিল থেকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বিংশ শতকের তিরিশের দশকে যখন বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই সময়ের মোহনপুর জনপদের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে যে সকল মানুষ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের কর্মকুশলতা, দেশপ্রেম বিষয়ে আলোচনা সহ বিদ্যালয়ের কিংবদন্তি প্রধান শিক্ষক সুশীল কুমার দে-এর জীবন ও কর্মের মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন সমকালের জমিদার চৌধুরী বনবিহারী কর মহাপাত্র ও তাঁর জমিদারি এস্টেটের ম্যানেজার মোহনপুরের দ্বিতীয় গ্রাজুয়েট স্বাধীনতার পর প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচিত বিধায়ক বসন্তকুমার পানিগ্রাহী। সমকালে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন ও আইন-অমান্য আন্দোলনে এই এলাকার বিপুল মানুষের অংশগ্রহণ আবার এই দুটি আন্দোলনের প্রভাবে ব্রিটিশ শাসকদের অবর্ণনীয় অত্যাচার ও নিপীড়ন, ফলত বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা, এমন এক ক্রান্তিলগ্নে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে এক ঐতিহাসিক ঘটনা বলে প্রধান অতিথি মত প্রকাশ করেন এবং প্রতিষ্ঠাতাদের অপ্রতিরোধ্য সাহস ও দুর্দমনীয় সমাজকল্যাণকামিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিদ্যালয়ের কিংবদন্তি প্রধান শিক্ষক সুশীল কুমার দে ১৯৫০ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন ও ১৯৮২ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিদ্যালয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

অকৃতদার ঋষিতুল্য এই মানুষটি মোহনপুর জনপদে শিক্ষার বিস্তারে যে অসামান্য ভূমিকার স্বাক্ষর রেখেছেন তাতে এই এলাকার মানুষ তাঁকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও রাজনারায়ণ বসুর সঙ্গে সমানভাবে স্মরণযোগ্য বলে মনে করেন। ১৯৮২ সালের ৩১ আগস্ট সুশীল কুমার দে অবসর গ্রহণ করার পরে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সামগ্রিক কাজকর্ম থেমে থাকেনি। সুশীলকুমার দে-র প্রদর্শিত পথ-কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে ১৯৮২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যে সকল কৃতবিদ্য শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তাঁরা তাঁদের কর্মকুশলতায় বিদ্যালয়টিকে একটি আদর্শ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সাড়ম্বরে উদ্‌যাপিত হয়েছে সুবর্ণজয়ন্তী ও প্লাটিনাম জয়ন্তী। আজকের প্লাটিনাম জয়ন্তী স্মারক তোরণ উদ্বোধন তারই নিদর্শন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বনবিহারী কর মহাপাত্রের আবক্ষ মূর্তি ও উনবিংশ শতকের নবজাগরণের দুই পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ মূর্তির প্রতিষ্ঠা ও আবরণ উন্মোচনের উদ্যোগ পূর্বসূরীর প্রতি উত্তরসূরীর শ্রদ্ধা নিবেদনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। করোনা অতিমারির ভয়াবহতার দুর্লঙ্ঘ্য বাধা অতিক্রম করে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মাখনলাল গিরি বিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করলেন। এইজন্য তিনিও ধন্যবাদার্হ। প্রধান অতিথির বক্তব্যের পরে সম্মানিত অতিথিবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যে এই বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডের নানান দিক তুলে ধরেন। সবশেষে পরিচালন সমিতির সভাপতি নীলকমল নায়ক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ও অনুষ্ঠানের সমাপ্তি সূচিত হয়।