Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি। তরুণ চট্টোপাধ্যায় ।

দিন গুলি মোর সোনার খাঁচায় রহিল না।হ্যাঁ পুরানো সে দিনগুলোর কথাই বলতে চাইছি।ফেসবুক ইনটারনেটের যুগে এতো চাওয়া পাওয়ার মধ্যে ও সে দিনগুলি চোখে সুড়সুড়ি দেয় ।কেমন ছিল সে সব দিন তা হয়তো এ প্রজন্ম জানলো না।কিন্তু একটু পুরানো যারা আমাদের …

 




দিন গুলি মোর সোনার খাঁচায় রহিল না।হ্যাঁ পুরানো সে দিনগুলোর কথাই বলতে চাইছি।ফেসবুক ইনটারনেটের যুগে এতো চাওয়া পাওয়ার মধ্যে ও সে দিনগুলি চোখে সুড়সুড়ি দেয় ।কেমন ছিল সে সব দিন তা হয়তো এ প্রজন্ম জানলো না।কিন্তু একটু পুরানো যারা আমাদের মতো তাঁরা তো চোখ বুজলেই ফেলে আসা সেসব দিনে ফিরে যান অনবরত।টাইম মেসিনে চড়ে স্মৃতির মনিকোঠায় রাখা সে সব দিন গিজগিজ করে মস্তিষ্ক নামক কমপিউটারের পর্দায় ।মনে মনে রবিঠাকুর কে আওড়াতে হয় ।বলতে ইচ্ছে করে শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।


কি ছিল আর কি ছিল না সেই কঠিন পাটিগনিতে না ঢুকেই বলতে পারি ছিল ছিল অনেক ছিল ।না থাকা আর থাকার সরলতা মেশানো দিনগুলি ছিল বিস্ময়ে ।অবাক আর হতবাক হওয়া ছাড়া আর কি গতি।তাই কি ছিল আর ছিলনা দিয়েই শুরু করা যাক এই প্রতিবেদন।


গাছতলা কিংবা টালির ঘরের বিদ্যালয় ছিল কিন্তু বেঞ্চ ছিল না।বৃষ্টি ছিল ছাতা কেনার সামর্থ ছিল না।বই থাকলেও ব্যাগ ছিল না।মনের কোনে রঙ থাকলেও রঙ পেন্সিল ছিল না।চৌকো রঙচটা ছবি তোলার যন্ত্র থাকলেও ফিলিম কেনার পয়সা ছিল না।সাদা সরল নিষ্পাপ একটা মন থাকলেও সে মনের দাম ছিল না।পরীক্ষায় ভালো ফল করার ইচ্ছে থাকলেও কলেজে ভর্তি হবার টাকা ছিল না।পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল ছিল।কপাটি ছিল।চু কিত কিত বুড়ি বসন্ত সব ছিল।ছিল কানামাছি।জলকুমির।ডপ ডপা ডপ।বাড়ির পাশে মাটি কুপিয়ে হাই জাম্প লং জাম্প ছিল।কালিপৃজোর আগে ছুঁচো বাজি তৈরির প্রস্তুতি ছিল।হামান দিসতায় কাঁচগুড়িয়ে ঘুঁড়ির সুতোয় মানজা দেওয়া ছিল।ছিল ছিল ।আরও কত কি ছিল।যৌথ পরিবার ছিল।কাকা কাকী ছিল।খুড়তুতো মাসতুতো মামাতো ভায়েরা ছিল।এক থালায় ভাত খাওয়া ছিল।ইতু পূজো ছিল।ঘেঁটু ফুল ছিল।সরস্বতী পূজোর আগে কুল খাওয়া ছিল।পুষ্পাঞজলি দেওয়ার আগে গোবর মুখে দিয়ে দোষ কাটানো ছিল।


পাড়া ছিল।রক ছিল।রকের আড্ডা ছিল।বয়স্ক মানুষজন ছিল।সিগারেট লুকানো ছিল।কানমোলা চড় চাপপোর ছিল।সিনেমা হল ছিল।এ মার্কা ছবি ছিল।কালো পথে সিনেমার টিকিট ছিল।পাড়া প্রতিবেশীর বাগান থেকে ফল চুরি ছিল।চুরি ডাকাতি রাহাজানি ছিল।বাসে ট্রামে পকেট মারেরা ছিল।ইস্কুল ঘন্টা ছিল।বৃষ্টির দিনে হাফ ছুটি ছিল।

ক্লাস রুমের বাইরে নীলডাউন ছিল।মাস্টার দের হাতে বেদম প্রহার ছিল।এই ছিল আর না ছিলোর মধ্যে যা ছিল তা হলো সুখ ছিল।


কয়লার উনুন ছিল।উনুন ধরানোর ঘুঁটে ছিল।কয়লাতো ছিলই।হারিকেনের আলো ছিল।কুপি ছিল।হাট ছিল।শান বাঁধানো পুকুর ছিল।সাঁতার ছিল।ঘন্টার পর ঘন্টা জলে দাপাদাপি ছিল।পুকুর পাড়ে হিজল বয়রা গাছ ছিল।বেল কাঁঠাল গাছ ছিল।বামুন পাড়া শুদ্ধাচার ছিল।চাষীর বাড়িতে থাগোলা ছিল।গাছে গাছে পাখি ছিল।ফুল ছিল।ফল ছিল।নোনা আতা গাছ ছিল।করমচা বনে গোপন লুকোচুরি খেলা ছিল।গোয়ালে গরু ছিল।পুকুরে মাছ ছিল।বাঁশ বাগানে শিয়ালের হুক্কা হুয়া ছিল।ছিল ছিল আরো কতো কি যে ছিল।দোয়েল শামা মাছরাঁঙা কাঠঠোকরা বউ কথা কও তো ছিলই ।একখানা ডিমকে আধখানা করে তবলা ডিম খাওয়া ছিল।অনুষ্ঠান বাড়িতে মিষ্টি তৈরির ভেন ছিল।নিমন্ত্রণ বাড়িতে গাঁয়ের লোকের পরিবেশন ছিল।বাঁশের খাটিয়া কাঁধে গ্রামের নদি ধারে শবদাহ ছিল।বৈষ্ণব বৈষ্ণবী ছিল।আখড়া ছিল।ছিলিম ছিল।ঢেঁকিতে ধান কোটা ছিল।হুঁকোতে তামাক ভরে সুখ টান ছিল।ধান সেদধো ছিল।পাট কাটের কাটি ছিল।তালপাতার বাঁশি ছিল।রথের মেলা তো ছিলই ।


পালা গান ছিল।রাম যাত্রায় মালা কেনার টেন্ডার ছিল।পুরুষ অভিনেতার নারী চরিত্রে অভিনয় ছিল।ছিল আরো অনেক কিছুই।কাল বৈশাখী চৈত্রের ঝড় ছিল।সোনা ঝরা রোদ ছিল।গা জ্বালিয়ে গরম ছিল।হাত পাখা ছিল।ভিজে কাপড়ে শরীর ভেজানো ছিল।শীতে আগুন পোহানো ছিল।দুপুরে ছাদে বসে রোদ পিঠে করে চুল শুকানো ছিল।কাঠের উনুনে মুরি ভাজা ছিল।ভেলি গুড় ছিল।মুরকি ছিল।বাদাম চাকতি ছিল।


খাল ছিল ।বিল ছিল।মাঠের আল ছিল।জমিতে কাকতাড়ুয়ার দল ছিল।ফাঁকা মাঠ ছিল।সবুজ ধান ছিল।পালকি ছিল।বেহারার গান ছিল।ঘোড়ার গাড়ির সহিস ছিল।গরুর গাড়ি ছিল।ধান বোঝাই গরুর গাড়ির চাকার দাগ ছিল।গরুর পিঠে গাড়োয়ানদের চাবুক ছিল।


অসুখ ছিল।বিসুখ ছিল।কোয়াক ডাক্তার দের তৈরি মিকচার ওষুধ ছিল।ইস্কুলে ইস্কুলে টীকা দেওয়ার চল ছিল।বিনি পয়সায় টিউশন ছিল।দাতব্য চিকিৎসালয় ছিল।ধাইমার হাতে বাচ্চা জন্মনো ছিল।এক ছুঁচে অসংখ্য মানুষকে ইনজেকশন দেওয়ার চল ছিল।পরীক্ষাতে কৃতকার্য হওয়ার পর হাফদামে বই কেনা ছিল।টিফিনের কৌটোয় লুকিয়ে মার্বেল গুলি নিয়ে খেলা ছিল।ডাংকেটে ডাংগুলি খেলাতো ছিলই।গাছের ডালকেটে গুলতি ছোঁড়ার চল ছিল।গাব গাছের গাব যেমন খাওয়া ছিল আবার তাতে আটাও ছিল।ঘুঁড়ি জোড়ার কল ছিল।ভোকাটা ছিল।কাগজে লিখে চোর পুলিশ তো সেদিনও ছিল।দারোগা বাবুর গোঁফ ছিল।পন্ডিত মশাই এর টিকি ছিল।চাষীর গামছা ছিল।ওপেন টি বায়োসকোপ ছিল।খাম ছিল।পোস্ট কার্ড ছিল।নীল রঙের ইনল্যান্ড লেটার ছিল।চিলে কোটার ঘর ছিল।ময়ূরাক্ষী রঙ ছিল।সোনালী চিল ছিল।ধোঁয়া হীন নীলাকাশ ছিল।বাবুই পাখির বাসায় জোনাকির আলো ছিল।


ছিল আর আজ যা নেই তা নিয়ে লিখতে বসার উদ্দেশ্য নেই প্রতিবেদকের।লেখার সারকথা হলো এরা ছিল বলেই আজ সময়ের সরনী বেয়ে নানা রঙ উঁকি দেয়।দাদু ঠাকুরমার গল্পের ঝুলি যে এখন সিন্ধু থেকে বিন্দু তে।ঘুম পাড়ানী গান এখন ইংরেজি রাইমেতেই শুনতে হয় শিশুদের।বিদ্যার ব্যাগ বোঝাই শিশুরা নিজেরাই বলে ওঠে কি ভার কি ভার।অবকাশ নেই।আকাশ নেই।আছে ইঁদুর দৌড় ।আছে অশুভ প্রতিযোগিতার লম্বা কিউ।ভবিষ্যতের নানা চিন্তা ভাবনার রসদ।


জল পড়ে পাতা নড়ে।কোথায় বৃষ্টি ।কোথায় শব্দ ।আছে আছে অনেক আছে।তবে তা কতটা মনোরঞ্জন আর কতটা নয়।সেই হিসাব করার সময় হয়তো এসেছে।তাই ভাবী কালের মন মস্তিষ্কে যা যা ছিল তার একটা সংকেত দেওয়ার চেষ্টা মাত্র ।লাভ লোকসান মুনাফার বিশেষজ্ঞ তো আমরা কেউ নয়।তাই চেষ্টা বৃথা ।বরং যা ছিল তার কিয়দংশ অবশিষ্ট খোঁজাটাই লক্ষ্য ।সেই জন্য আবার বলা শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি _যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।