Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি সাহিত্য যাপন#শিরোনাম__উপকারিতা#কলমে __ মানসী কর্মকার#তারিখ__ ৬/১২/২০২১#বিষয়__ অনুগল্প••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••বেশ কিছুদিন আগের লেখা🙏
চাকরি সূত্রে রতন বাবু কোলকাতাতেই থাকেন। একমাত্র ছেলে কলম ও তার স্ত্র…

 


#সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

#শিরোনাম__উপকারিতা

#কলমে __ মানসী কর্মকার

#তারিখ__ ৬/১২/২০২১

#বিষয়__ অনুগল্প

••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••

বেশ কিছুদিন আগের লেখা🙏


চাকরি সূত্রে রতন বাবু কোলকাতাতেই থাকেন। একমাত্র ছেলে কলম ও তার স্ত্রী বিমলা দেবীর সাথে ।

রতন বাবুর আদি বাড়ি পুরুলিয়া জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে।


 এখন ওখানে অবশ্য কেউ থাকেনা।

আজ দীর্ঘ দশ বছর পর রতন বাবুর ছেলে কমল তার বাবাকে বলল বাবা আমি সেই ছোট্ট বেলায় তোমার সাথে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম আর তো যাওয়াই হয়নি। আমার বেশ কয়েকদিন অফিস ছুটি ভাবছি বিল্টু আর পল্টু কে নিয়ে একটু ঘুরেই আসি ভালোই হবে বল??


রতন বাবুর এখন বেশ বয়স হয়েছে উনি এখন চাকরি থেকে অবসর প্রাপ্ত।

কমলকে বললেন যা ঘুরে আয় ভালই হবে বেশ অনেকদিন ওদিকে যাওয়া হয়না তুই গেলে ভালই হবে।

পরদিন সকালবেলা কমল বিল্টু আর পল্টু কে সাথে নিয়ে গাড়ি করে রওনা হল।

দুপুরবেলা তারা গিয়ে পৌঁছালো ওখানে। কি সুন্দর ছোট্ট একটা গ্রাম এত সুন্দর পরিবেশ দেখে তাদের খুব ভালো লাগলো।


রতন বাবুর বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য বিরু নামে একজন ছিল প্রথম থেকেই ।

কমল গাড়ি থেকে নামতেই বিরু আসুন বাবু আসুন কিনে এদিক পানে।

চা জলখাবার দিয়ে বিরু বলল বাবু দুপুরের খাবার যখন বলবেন আমি দিয়ে দেব। আপনারা বিশ্রাম করুন বলে চলে গেল।

দুপুর তখন ২ টো বাজে বিরু ডাকছে জবা মা এদিক পানে আয় একবার।

এই খাবার গুলো বাবুদের দিয়ে দে মা।

উত্তরে জবা বলল আসছি কিনে দারা।

খেতে বসতে কমল বিরু কে জিজ্ঞাসা করল এটা কে হয় তোমার??

বিরু বলল বাবু মোর মেয়া টো হয়।


জবা সবাইকে সুন্দর করে গুছিয়ে খেতে দিল।

কি সুন্দর রান্না হয়েছে কমল বলল।

 বিরু কাকা কে রান্না করেছে ??

 খুব সুন্দর হয়েছে তো।

উত্তরে বিরু বলল জবা ই সব রান্না করেছে বাবু।

মেয়ে আমার খুব ভালো রান্না করে । 

ওতো পড়াশোনাও করতে খুব ভালো বাসতো বলে বিরু হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করল....!


একি কি হয়েছে বিরু কাকা খুলে বলো আমায় সব ??


বিরু বললো টাকার অভাবে মাইয়াটা কে ঠিকমতো লেখাপড়া টুকু কড়াইতে পারি নাই বাবু। মেয়ে আমার পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল ৮ পর্যন্ত পড়ার পর আর পড়াইতে পারি নাই বাবু।

জবা সব কথা চুপ করে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে শুনছে।

কি মিষ্টি একটা ছোট্ট মেয়ে।

পরদিন সকাল বেলা জবা এসে বলল বাবু তোরা মুর সাথে যাবি কিনে গ্রাম টো ঘুরে দিখতে ??

কমল বলল কেন যাব না নিশ্চয়ই যাবো চলো আমরা রেডি হয়ে যাচ্ছি তুমি বাইরে অপেক্ষা করো।

গান করতে করতে জবা ওদের নিয়ে গ্রাম ঘোরাতে গেলো। 

সত্যি কি সুন্দর গ্রাম চারিদিকে সবুজ আরো কত গাছপালা সবুজে সবুজ। কোলকাতাতে এসব দেখাই যায় না।


গ্রাম ঘুরে বাড়ি এসে খেয়েদেয়ে এক ঘুম দিয়ে উঠে চা নিয়ে বসে কমল পল্টু আর বিল্টুর সাথে গল্প করছে । এমন সময় জবা আসলো বাবু তোরা কি করছিস ??

কমল বলল-এসো জবা


বিল্টু আর পল্টু একটু বাইরে গেল।

কমল জবা কে বলল জবা তোমার পড়তে ভালো লাগে??

জবা বলল হ্যা বাবু খুব ভালো লাগে। পড়া আর হলো কোথায় বাড়ি তে অসুস্থ মায়ের সেবা করে সারা দিন কেটে যায় আর মাঝেমধ্যে বাবার সাথে একটু হাতে হাতে কাজ করি।

গ্রামের ওই শিয়াল কুকুর গুলোর নজর তো সবসময় আমার দিকে। এই গতর খানা পেলে ওরা ছিঁড়ে খাবে !

সব সময় নজরে নজরে রাখে আমায়!


ঘর ছেড়ে মু কোথাও যেতে পারিক না গো বাবু !


বাপ টাও সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে কিনে ;

এই পোড়া কপালে কি আছে কে জানে !!


জবার মুখে সব কথা শুনে কমল আজ নির্বাক মনে মনে ভাবছে হে ঈশ্বর এ কি পরিণতি আমাদের সমাজের !!

ছি ছি আজকাল নিজেকেই এই সমাজের মানুষ ভাবতে লজ্জা লাগে।

কমল নিজে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। পরদিন সকাল বেলা বিরু কে ডেকে কমল জোর করে হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিল।

বিরু কাকা তোমার মেয়েকে পড়াশোনা করিও ও খুব ভালো মেয়ে মিষ্টি মেয়ে আমার বোনের মতো।

ও পড়াশোনা করে যখন নিজের পায়ে দাঁড়াবে তখন একটা খবর দিও আমি আসবো মিষ্টি খেতে।


এই বলে কমল বিরু কে জোর করে টাকাটা দিল।

বিরুর দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে । বাবু ভগবান আপনার মঙ্গল করবেন।


পরদিন সকালবেলা কমল যাবার সময় জবা কে ডেকে ওর হাতে ও কিছু টাকা দিয়ে বলল বোন তোমার যা ইচ্ছে তুমি কিনে খেও আর মন দিয়ে পড়াশোনা করো দাদা হয়ে এই আশীর্বাদ করলাম ।


এই বলে কমল কলকাতা ফিরে গেল।

বাড়ি গিয়ে কমলের মুখ ভার বাবা-মা বললেন কি হয়েছে রে তোর??

কমল বলল কিছু না গ্রাম টা খুব সুন্দর কিন্তু বিরু কাকাদের পরিবারের কথা শুনে আমার খুব কষ্ট হয়েছে বাবা । 

জানো বাবা ওরা কত কষ্ট করে।

এটা ভেবেই আমার খারাপ লাগছে আর কিছু না।

আমি আসার সময় জোর করে ওনার হাতে কিছু টাকা দিয়ে এসেছি।

রতন বাবু বললেন খুব ভালো করেছো আমার ছেলের মত কাজ করেছ আজ তুমি বাবা। সবার ওপরে মনুষত্ব তাহার উপরে আর কিছু নাই ।।