Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বীর বিপ্লবী বাঘা যতীনের স্মৃতিতে অবহেলিত নন্দকুমারের কুমোরআড়া গ্রাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুকঃ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে আজও বীর বিপ্লবী বাঘা যতীনের স্মৃতিতে অবহেলিত নন্দকুমারের কুমোরআড়া গ্রাম। তবুও বীর বিপ্লবীর এই স্মৃতি বিজড়িত নন্দকুমারএ বাঘা যতীনের সংগ্রহশালা নির্মাণের দাবিতে বিভোর গ্রামবাসীরা। এক…

 


নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুকঃ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে আজও বীর বিপ্লবী বাঘা যতীনের স্মৃতিতে অবহেলিত নন্দকুমারের কুমোরআড়া গ্রাম। তবুও বীর বিপ্লবীর এই স্মৃতি বিজড়িত নন্দকুমারএ বাঘা যতীনের সংগ্রহশালা নির্মাণের দাবিতে বিভোর গ্রামবাসীরা। 

একটা সময় অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছিল অবিভক্ত মেদিনীপুর। আর সেই সূত্রেই তাম্রলিপ্ত নগরীতে আনাগোনা ছিল বাংলার শীর্ষ স্বাধীনচেতা বহু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের। আর তাদেরই অন্যতম হিসেবে বীর বিপ্লবীদের ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন বাঘাযতীন ওরফে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৮৭৯ সালের ৮ই ডিসেম্বর নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া মহাকুমার শান্তকয়া গ্রামের মামাবাড়িতে যতীন্দ্রনাথের জন্ম। বর্তমানে এই গ্রামটি অবশ্য বাংলাদেশের অন্তর্গত। বাবা উমেশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। মা শরৎশশী দেবী। তাদেরই কৃতি সন্তান হিসেবে পড়াশোনা শেষ করে ব্রিটিশ সরকারের চাকরিতে যোগ দিয়েছিল যতীন্দ্রনাথ। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত ডানপিটে সাহসী হওয়ার দরুন জাতীয়তা বাদী স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিল তরুণ এই যুবক। ছোটবেলায় একটা সময়ে গ্রামে থাকাকালীন বাঘের সঙ্গে সম্মুখ লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার দরুন তার নাম হয়েছিল বাঘাযতীন। আর তারই হাত ধরে ইতিহাসের পাতায় আজ ও স্বর্ণাক্ষরে লেখা উড়িষ্যার বুড়িবালাম নদীর তীরে স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তক্ষয়ই ইতিহাসের কথা। তৎকালীন দোর্দণ্ডপ্রতাপ ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র বিপ্লবে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন তরুণ এই স্বাধীনতা সংগ্রামী। সেই সূত্রেই একটা সময় আনুমানিক প্রায় ১৯১৫ সালের আগষ্ট মাসের দিকে কলিকাতা থেকে তাম্রলিপ্তর নন্দকুমার ব্লক এর কুমারআরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। তাও আবার ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশে। বাক কাঁধে নিয়ে ঘি বিক্রি করার অছিলায় তরুণ এই বিপ্লবী নন্দকুমারের এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। আর তারপর সেখান থেকে ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে চার সঙ্গীকে নিয়ে কাঁথি হয়ে উড়িষ্যার বালেশ্বরের কপােতপােতা গ্রামে পৌছলেন। সন্ন্যাসীর বেশে আশ্রম গড়লেন । তারপর বাকিটা আজ ইতিহাস। ফলে পথমাঝে দীর্ঘদিন নন্দকুমারের প্রত্যন্ত এই গ্রামে তরুণ এই বীর বিপ্লবী অবস্থান করলেও আজ অত্যন্ত ব্যর্থ জনের দলে যতীন্দ্রনাথ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণ এই বিপ্লবীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে বহু দাবি দাওয়ার পর অবশ্য একটি মূর্তি স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মূর্তিটি কোন স্থানে বসানো হবে তা নিয়ে টালবাহানায় অবশেষে এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর আবক্ষ মূর্তি তুলে আনা হয় নন্দকুমার এ বিডিও অফিসের সামনে। এরপর ২০১৫ সালে বাঘা যতীনের শতবর্ষ আত্ম বলিদান দিবস পালনকে কেন্দ্র করে কিছুটা হলেও প্রাণ পায়। কিন্তু, এখানেই এর সমাপ্তি ঘটে বলে অভিযোগ। কারণ, বাঘাযতীন এর আত্ম বলিদান শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে এই বিপ্লবীর স্মৃতিতে স্থানীয় এই গ্রাম পঞ্চায়েতটিকে বাঘাযতীন নামে নামাঙ্কিত করার প্রস্তাব পেশ হয়েছিল তৎকালীন নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘ প্রশাসনিক উদাসীনতায় আজও সেই পরিকল্পনা অথৈ জলে। এদিকে বর্তমান সরকারের হাত ধরে এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কিছুটা হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলে তরুণ এই বীর বিপ্লবীকে আজও সেভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবুও স্মৃতি বিজড়িত এই বিপ্লবীর জয়গাঁথা তরুণ জন্মের কাছে সমাদৃত করে রাখতে এলাকায় একটি সংগ্রহশালা দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরা। এলাকার বাসিন্দা তথা তরুণ কবি সন্দীপ চক্রবর্তী, শিক্ষক স্বপন সাহু, নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সুকুমার বেরা জানান, নন্দকুমারের কুমোরআড়া গ্রাম পঞ্চায়েতটি আজও সেভাবেে স্বীকৃতি পায়নি। কিন্তু তা সত্বেও বীর বিপ্লবী ১৪২তম জন্ম দিবসের প্রাক্কালে আমরা কোনভাবেই হাল ছাড়তে নারাজ। অবিলম্বে এই এলাকাটি যতীন্দ্রনাথের নামে নামাঙ্কিত করার পাশাপাশি এলাকায় একটি সংগ্রহশালা দাবিতে দফায় দফায় জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি আমরা।