Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন শিরোনাম  ---- অপরাজিতা কলমে ----- বন্দনা রায় তারিখ  ------ 29/11/2021 
অনেক দিন পর সৌমাল্য কে দেখে অনিতার ভিতরে যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল । কিন্তু তাও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসলো।কি জানি দেখেছে কিনা…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন 

শিরোনাম  ---- অপরাজিতা 

কলমে ----- বন্দনা রায় 

তারিখ  ------ 29/11/2021 


অনেক দিন পর সৌমাল্য কে দেখে অনিতার ভিতরে যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল । কিন্তু তাও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসলো।কি জানি দেখেছে কিনা । আর ওর মুখ ও দেখতে চায় না ,কথা বলা তো দূরের কথা ।

          সৌম্যরা ভাড়া থাকতো অনিতা দের বাড়িতে । অনিতার ডাক নাম বুচি।  আদর করে মা ,বাবা ,ঠাকুমা তাকে বুচি বলে ডাকে ।বুচি ছোট থেকেই পড়াশোনায় খুব ভালো । গায়ের রঙ এত সুন্দর যে কখনো সাজগোজের দরকার পরে না ।   

  সেদিন ছিল বাড়িতে সরস্বতী   পূজা , খুব তোড়জোড় চলছে। পূজার আয়োজনে বুচি ও হাত লাগিয়েছে । ঠাকুর মশাই ও পূজায় বসে গেছেন । নিচের কাকিমা অর্থাৎ সৌমাল্যর মা বললেন , সৌম্য অঞ্জলি দেবে বলেছিল একটু ডাকতো  মা , ওকে । বুচি দুবার ডাকলো সৌম্য দা বলে ।কিন্তু কোনো সারা নেই। তাই আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকে দেখতে  গেল  , কোথাও না দেখতে পেয়ে। 

      সৌম্য তখন বাথরুম থেকে সবে বের হয়েছে ,একটা টাওয়াল জরিয়ে । সে বুচিকে না বুঝতে পেরে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে । ' কি শীত করছে গো মা, ঠাণ্ডা  ঠাণ্ডা,  আমার পাঞ্জাবি টা দাও শিগগির '। বুচি চিৎকার দিয়ে ওঠে , ও সৌমদা ছাড়ো ছাড়ো  আমি বুচি । সৌম্য চট করে ছেড়ে দেয়। বলে তুই , তুই এখানে কি করছিস । কাকিমা ডাকছে তোমাকে, অঞ্জলি দেবে চলো।তাই ডাকতে এসেছি। ও ঠাকুর মশাই এসে গেছে  , তুই যা আমি  যাচ্ছি ।

      হলুদ পাঞ্জাবি পরে সৌম্য দাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে ।কখনো এইভাবে আগে দেখে নি বুচি । চোখ ঘোরানো যাচ্ছে না । ভীষণ সুন্দর লাগছে । ঠাকুর মশাই বলে দিলেন, ফুল কেউ ছুড়বেন না । ঘর ভর্তি সবাই অঞ্জলি দিচ্ছে, আর সৌম্য বুচির মাথায় ফুল ছুঁড়লো পিছনে দাড়িয়ে ।খুব রাগ হলো। ঠাকুরের ফুল সৌম্য দা মাথায় দিও না পায়ে  পড়বে । কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বলল আমি তো আমার সরস্বতীর অঞ্জলি দিচ্ছি । তারপর থেকে   সৌম্য কে দেখলে একটা ভয় , একটা ভালো লাগা, একটা ভালোবাসা মিশিয়ে ভিতরে ক্যারেন্ট এর মতো ঝিলিক মারতো।

   সৌম্যরা তিন বছর হল এই বাড়িতে ভাড়া এসেছে। খুব ই শান্ত , ভদ্র, ঠান্ডা ছেলে ।মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে চাকরি করে।দুজনের ভালো ভাবে চলে যায় । বুচি মাঝেমধ্যেই আসে কাকিমার সাথে গল্প করে ।

সৌম্য মাসি ফোন করেছেন, বলছে সৌম্য জন্য একটা ভালো মেয়ে দেখেছে । এসে যেন দেখে যায় । কথাটা শোনার পর থেকে বুচির খুব কষ্ট হচ্ছে । সৌম্য দার বিয়ে হয়ে যাবে ,কিন্তু আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেনো।রাগ-ই বা হচ্ছে কেনো । ওর বিয়ে হবে তো আমার কি? নিজেকে নিজেই অনেক সান্তনা দেয়। রাতে যখন সৌম্য ঘরে ফেরে অফিস থেকে বুচি হাসতে হাসতে বলে সৌম্য দা তোমার জন্য মেয়ে দেখেছে ।কাকিমা দেখতে যাবে বলল।

আমার জন্য মেয়ে দেখেছে ? 

তো কে দেখল শুনি?

তোমার মাসি , 

ও ,তবে মাসিরই আর একবার বিয়ে দিয়ে দেবো দেখিস।

এখন বিয়ে টিয়ে করবো না।আগে নিজের পায়ে আর একটু দাঁড়াই তবে না বিয়ে ।

বৌ কে খাওয়াবো কি?

যেন প্রানে জল এল বুচির।

          সৌম্য মা দুই দিনের জন্য বোনের বাড়িতে যাবে ,অনেক দিন যাওয়া হয়না ।আর সৌম্য জন্য মেয়েটা ও  দেখে আসবে।যদি পছন্দ হয় । তাই বুচির মাকে বলে গেল সৌম্য একা থাকবে একটু খেয়াল রাখতে। বুচির মা বলে দিল রান্না করতে হবে না সৌম্য কে , আমি দিয়ে দেবো যা রান্না করবো। এতে ভীষণ খুশি হল সৌম্যর মা ,যাক তাহলে তো ভালোই হলো।

       বুচি অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে । B,com, (Hons) রাতে খাওয়ার পর ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ একটা ধপ করে আওয়াজ কানে এল মনে হলো  । কেউ পড়ে গেছে ।বুচি তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে আসে । দেখে জ্বরে  গা পুড়ে যাচ্ছে সৌম্যর। কি করে পরলে সৌম্য দা।শরীর তো খুব খারাপ দেখছি। দাঁড়াও  দেখি জ্বর এর ওষুধ আছে কি না। সৌম্য বারন করে ,কাকু কাকিমা সবে শুয়েছে ওদের বিরক্ত করতে হবে না। আমার কাছে আছে খেয়ে নেবো। তুই যা এখন।

বুচি বলল কোথায় যাবো , আমি বই নিয়ে আসছি এখানে পড়বো , আর তুমি ঘুমাবে । আর দেখছি ঘরে জ্বরের ওষুধ আছে কি না। 

বুচি ওষুধ খুঁজে না পেয়ে শুধু বই নিয়ে ই নিচে চলে আসে । আর এত জ্বর দেখে একটা রুমাল ভিজিয়ে জল পট্টি দিতে থাকে । সৌম্য জ্বরের ঘোরে ভুলভাল বকছে । আমাকে একটু ভালোবাসবে  , তোমাকে যে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি ।আমাকে ছেড়ে যেও না please.  আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসবো , কখনো ছেড়ে কোথাও যাবো না দেখো ।আর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে । বুচি নিমেষেই  দুর্বল হয়ে গেল। কারন বুচি যে তার সৌম্য কে ভীষণ ভালোবাসে। বুচির হাতটা ধরে বুকের কাছে টেনে নিল।গায়ে তখন ও একশো উপর জ্বর, গা যে পুড়ে যাচ্ছে । বুচি কোনো রকমে সান্তনা দিয়ে তাকে আটকালো । একটু ঘুমিয়ে নাও, আমি আছি তোমার কাছে, কোনো চিন্তা নেই ।  আমাকে ছেড়ে যাবে না তো? 

না যাবো না ,তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে নাও।

 জল পট্টি দেওয়া তে জ্বর টা একটু কমেছে , সৌম্য চোখ খুলে দেখে বুচি পা ঝুলিয়ে বিছানার এক কোনে ঘুমে ঢলছে। সৌম্য তাকে বিছানায় এক পাশে নিয়ে শুইয়ে দিল ।

  সকালে যখন ঘুম ভাঙল তখন সাতটা বেজে গেছে । মায়ের চিৎকার কানে এলো। উঠেই ছুটে উপরে যায় । কি হয়েছে মা , এত চেঁচামেচি কেনো?  কি হয়েছে মানে , তুই কোথায় ছিলিস রাতে । মা সৌম্য দার খুব জ্বর এসেছিল রাতে,  তোমরা ঘুমিয়ে পরেছো   তাই আর ডাকি নি।তাই বলে , একটা অবিবাহিত মেয়ে একই  বিছানায়, ছি ছি ছি ।  

মা সব দেখে উপরে চলে এসেছে তার মানে। বুচি আর কোনো উত্তর না দিয়ে ঘরে চলে যায় ।

   পরের দিন বুচির বাবা হুকুম দেয় বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে , এক সপ্তাহ টাইম দিলাম। 

তাই ওরা বাড়ি ছেড়ে চলে যায় কাছাকাছি এক বাড়িতে । কিন্তু ফোনে ফোনে সবরকম  যোগাযোগ রাখে। অনেক ভালোবাসার কথা , অনেক রাত পর্যন্ত গল্প, অনেক রাগারাগি ।অনেক কান্ড চলতে থাকে ।

         সৌম্য সেদিন পাকাদেখা , আর মেয়ে কে আশীর্বাদ করতে গেছে কাকিমা ।এটা জেনে ও সৌম্য কল করে আজকে একবার আসবে আমাদের বাড়িতে । মা থাকবে না,  দুজনে একটু গল্প করবো। বুচি চলে যায় সৌম্য কথায় ।কারন ও যে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে ওর ভালোবাসা কে। সৌম্য দেখেই বুকে টেনে নেয়, এক মধুর আবেশে জড়িয়ে ধরে ।  আর হৃদপিন্ডের পারদ চর চর করে বাড়তে থাকে । এক মধুর সুখের অনুভূতি হৃদয় ছুঁয়ে যায় । জীবনের প্রথম ভালোবাসার স্বাদ ------ 

            কিছুদিন বাদে জানতে পারে সৌম্য বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,  আশীর্বাদ ও হয়ে গেছে । কিন্তু সৌম্য একবার ও ওকে এইসব বলে নি । যখন যা জিজ্ঞেস করে কথা ঘুরিয়ে দেয়,  অন্য কথা বলে ।কিন্তু কেনো ? রাগে দুঃখে ফোনের সুইচ অফ করে দেয়। নিজের মনকে শক্ত করে ,আর কোনো কথা নয় ওর সাথে । একবার বলার প্রয়োজন মনে করলো না ও আমাকে , এইভাবে ঠকাল আমাকে। অনেক কেঁদেছি আর নয়। যতটা ভালোবাসতে জানি ততটা ঘৃণা ও করতে জানি। আর কোনো কথা নেই ওর সাথে ।  ধুমধাম করে পাড়ার মধ্যে ই বিয়ে হয়ে গেল, চোখের সামনে । সেদিন খুব কেঁদেছিল বুচি, যন্ত্রণায় ছটফট করেছিল ,কি করে পারলো এইরকম করতে।  

মনটা ভেঙে গেছিল ভালোবাসার প্রতি ঘৃণা জন্মেছে ---- 

     আজ বুচি একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তে চাকরি করে । নিজেকে সে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু আজ ও ভুলতে পারে নি তার প্রথম ভালোবাসা কে । একটা দগ্ধ ঘা এর মতো সে নিজের সঙ্গে বহন করে চলেছে।  

*********🙏🙏🙏*******