** সৃষ্টি সাহিত্য যাপন **
## ওরা বলেছিল ##
চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
দুর্গাপুর।
ছেলেবেলায় সাতসকালে মুনিস দের সঙ্গে গরুর গাড়ি চড়ে মাঠে যেতাম ধান আনতে বেশ আনন্দ মজা করে।ওরা বেগুন পাতি দিয়ে চুটি বানিয়ে বিড়ির মতো টান দিত যখনবলতো , …
** সৃষ্টি সাহিত্য যাপন **
## ওরা বলেছিল ##
চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
দুর্গাপুর।
ছেলেবেলায় সাতসকালে মুনিস দের সঙ্গে গরুর গাড়ি চড়ে
মাঠে যেতাম ধান আনতে বেশ আনন্দ মজা করে।
ওরা বেগুন পাতি দিয়ে চুটি বানিয়ে বিড়ির মতো টান দিত যখন
বলতো , খাবে নাকি একটান, বড় হয়ে শহরে সিগারেট হবে ক্ষন ।
বাড়ির উঠানে ভোরবেলা ঠাকুমা দাদুর সাথে চাদর গায়ে বসে
বড় উনুনে বড় কড়ায়ে ধান সিদ্ধ করতাম চোখ ঘষে ঘষে ।
ওই ধানের ভেতর সিদ্ধ হতে আলু বেগুন গাজর আরো কত কি
দাদু বলতো , নে রে শালা খা , শহরে গিয়ে তো যা তা খাবি ।
গণেশ পিয়ন আমাদের বাড়িতেই থাকতো একসাথে
ওস্তাদ ছিল ডাক হরকরার মজার যত গল্প শোনাতে ।
শীতকালে ভোরবেলা উঠে সে নিয়ে আসতো খেজুর রস
কাঁচের গ্লাসে দিয়ে বলতো, খাও, শহরে গিয়ে তো লাল পানি বস ।
ছুটির দিনগুলোতে পুকুরে ছেলেমেয়েরা সাঁতার কাটতাম
হাত চোখ মুখ লাল হয়ে যেত, ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরতাম ।
মিনুদি বলতো , শহরে গিয়ে অন্য বান্ধবী জুটিয়ে নিবি না তো
শহরে নাকি এবেলা ওবেলা বান্ধবী জুটে যায় শত
শত ।
বিকেলবেলা গ্রামের প্রান্তে খেলতাম বন্ধুদের সাথে
খেলা নৈমিত্তিক কাজ সেরে পুকুরে যেতাম শৌচ করতে।
ওরা বলেছিল, শুনছি পাশ করলেই নাকি তুই শহরে চলে যাবি
কিন্তু আমাদের মত এত হাসি মজা ওখানে কি পাবি ?
রাত্রিবেলা ঠাকুমা পাশে নিয়ে হাত বুলাতে বুলাতে গল্প শোনাতো
কখন ঘুমিয়ে স্বপ্ন পরীর দেশ ঘুরে ভোরবেলা দেখি, আমি একা তো !
ঠাকুরমা বলতো , এরকম আর পাবি না সোনা, শহরে যাবি খুব সাবধান ।
গ্রামের ভালো মানুষগুলো শহরে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে শয়তান।
আমি প্রশ্ন করেছিলাম -- শয়তান কেমন করে হয় তারা ?
ঠাকুমা বলেছিল --নকল সম্পর্ক ভেজাল খাবার মিথ্যে ভাষণ ছাড়া
আত্মীয় স্বজন তো কেউ নেই যে শাসন করে ঠিক করবে
তাই ভুল পথে ভুল জীবনযাত্রায় রাম তো রাবন হবেই।