সৃষ্টি সাহিত্য যাপনগদ্য রূপচালতা পুরাণমঞ্জুশ্রী মণ্ডল১১/১২/২০২১
সেদিন আমি স্কুলে গিয়ে ছিলাম।আমার স্বামী বাড়িতে ছিল, যেহেতু স্কুলের কাজ ওর আগের দিন মিটে গিয়েছিল। আমি কিছু চাল ভিজিয়ে ছিলাম , পরের দিন ক্ষীর পিঠে ছিল বলে। আমি ওকে …
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
গদ্য রূপ
চালতা পুরাণ
মঞ্জুশ্রী মণ্ডল
১১/১২/২০২১
সেদিন আমি স্কুলে গিয়ে ছিলাম।
আমার স্বামী বাড়িতে ছিল, যেহেতু স্কুলের কাজ ওর আগের দিন মিটে গিয়েছিল। আমি কিছু চাল ভিজিয়ে ছিলাম , পরের দিন ক্ষীর পিঠে ছিল বলে। আমি ওকে বলে গিয়েছিলাম চালগুলো মিক্সারে গুড়িয়ে রাখতে।
এসে দেখি চাল গুড়ায়নি।
আমি বললাম চাল গুড়াওনি কেন? কি করলে সারাদিন?
ও বলল কি করব আর। আমি কথা বাড়ালাম না।
চুপ হয়ে গেলাম।
সন্ধায় আনাজ কাটতে গিয়ে দেখি সবজির ঝুড়িতে একটি চালতা। জিজ্ঞেস করলাম একটা চালতা কোথা থেকে এলো?
তখন শুরু হল এক কাহিনী। বলল তিনজন আমাদের বাড়ি এসেছিল । নাম বলল তাদের।তাদের আমি চিনি।
তাদের মধ্যে একজনের কথা বলল যাকে কারোর বাড়ি থেকে ওই চালতা টা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে গেলে নিজেকেই কাটতে, ছাড়াতে বাধ্য হতে হবে বলে ওই চালতাটা আমাদের বাড়ি দিয়ে চলে গেছেন।
শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
ওই ভদ্রলোকের স্ত্রীও চাকরি করেন।
তখন বিষয়টা আমার খুব পরিষ্কার হয়ে গেল।চাকরিজীবী ওই মহিলা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কারণে ওনার স্বামীকে সবজি কাটতে দিলে উনি বিরক্ত হন।কাটতে নিশ্চিত বাধ্য হন বলেই চালতাটা নির্দ্বিধায় আমাদের বাড়িতে দিয়ে চলে গেছেন।
আর একটা জিনিস বুঝলাম, আমার স্বামী যেহেতু সংসারের এই দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকেন তাই নিশ্চিন্তে চালতা নিয়ে নিলেন ,কারণ তিনি জানেন যে তাকে কাটতে হবে না।
এটুকু বুঝলাম যে পুরুষ মানুষ একটা ছোট কাজকেও কত এড়িয়ে যাওয়ার ধান্দা করে। অথচ মেয়েদের বলে রান্নাটা শুধুতো করে এটা আবার কি কাজ।
একজন পুরুষ চালতা কাটার ভয়ে দিয়ে গেলেন আর একজন পুরুষ যেহেতু জানেন যে নিজেকে কিছুই করতে হয় না তাকে ,নির্দ্বিধায় নিয়ে নিলেন চালতাটা।
বিষয় টা শুনে আমার মনে হাসি যেমন পেল ,বিরক্তও হলাম। সাথে পুরুষদের কাজ সম্পর্কে কতটা অনীহা সেটাও বুঝতে পারলাম। অথচ মেয়েদের পুরো সংসার সামলাতে হয়,তার মূল্যায়ন ওরা করে না।