সোমনাথ মুখোপাধ্যায় সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। ২০২১র কলকাতার পুর ভোটকে কেন্দ্র করে অশান্তি অব্যাহত রইলো। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, বোমাবাজি সবকিছুর সাক্ষী থাকল কলকাতা। রক্ত ঝরল রাজপথে। প্রার্থীকে হেনস্থা, মারধ…
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। ২০২১র কলকাতার পুর ভোটকে কেন্দ্র করে অশান্তি অব্যাহত রইলো। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, বোমাবাজি সবকিছুর সাক্ষী থাকল কলকাতা। রক্ত ঝরল রাজপথে। প্রার্থীকে হেনস্থা, মারধোর করে পোলিং এজেন্টকে তুলে দেওয়া থেকে প্রার্থীর পিছু পিছু অনুসরণ করার মতো অভিযোগও উঠল। আক্রান্ত প্রার্থীকে ভর্তি হতে হলো হাসপাতালে। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবীতে বাম, কংগ্রেস ও বিজেপির তরফে দফায় দফায় হলো বিক্ষোভ প্রদর্শন, পথ অবরোধ। বিরোধীদের অধিকাংশ অভিযোগের তির শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেই।
নির্বাচনকে ঘিরে সার্বিক প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি, সিপিআইএম ও কংগ্রেস। বিরোধীদের দাবী প্রশাসনের সরাসরি মদতে একতরফা ভোট করিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের দাবী পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। কোনো জায়গায় আবার অতিসক্রিয়তা দেখিয়েছে পুলিশ। বিরোধীদের আরো অভিযোগ যে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ছিল ঠুঁটো জগন্নাথের।গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাব সৃষ্টি করেছে তৃণমূল বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্য বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। তাঁদের আরো অভিযোগ, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অবাধে ভোট লুট করেছে তৃণমূল। প্রত্যশিত ভাবেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল দলীয় নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, বিরোধীরা অধিকাংশ ওয়ার্ডে এজেন্ট দিতে পারেনি। তাদের সংগঠনের অভাব রয়েছে। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বরা জানান, শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হচ্ছে। মানুষ ভালো ভাবে ভোট দিচ্ছেন। ওদিকে কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয় এবারের পুর ভোট মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এবারের কলকাতা পুর নিগমের নির্বাচন হয়েছে কলকাতা পুর এলাকার অন্তর্গত ১৬টি বরোর ১৪৪টি ওয়ার্ডে। কোভিড পরিস্থিতি চললেও ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে স্যানিটাইজেশন করার পাশাপাশি যাবতীয় সরকারি কোভিড নির্দেশিকা মেনেই ভোট করিয়েছে কমিশন। একইসঙ্গে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোর লক্ষ্যে উপযুক্ত পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল কমিশনের পক্ষ থেকে।
তবে শীতের আমেজ গায়ে মেখে ভোট নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। সাধারণত এপ্রিল বা মে মাসে ভোট হতে দেখতেই অভ্যস্ত মানুষ। ফলে গরমে নাজেহাল হতে হয় মানুষকে। পাশাপাশি নাজেহাল হতে হয় ভোটকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী সহ বিভিন্ন দলের কর্মীদের। এবার ঠান্ডার আবহে উৎসবের মেজাজে ভোট হবে বলে ধারণা ছিল সাধারণের। কিন্তু অশান্তি রুখতে ব্যর্থ হলো প্রশাসন। তা এড়ানো গেল না।
যদিও কলকাতা কর্পোরেশনের ক্ষমতা দখল নিয়ে তৃণমূলের পক্ষে কোনো সংশয় নেই। অন্তত এক্সিট পোল সমীক্ষায় তেমনই আভাষ। প্রায় ১৩০র আশেপাশে বিপুলসংখ্যক ওয়ার্ডে জিতে পুনরায় পুর বোর্ড গঠন করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবু ২১তারিখে চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষায় থাকবে শহরবাসী। কিন্তু পুরসভা হোক বা বিধানসভা কিংবা পঞ্চায়েত, বাংলার নির্বাচনকে ঘিরে অশান্তি ও সংঘর্ষের পুরনো চেনা ছবিই উঠে এসে প্রমাণ করে দিল যে কার্যত বাংলায় হিংসার রাজনীতি চলেছে। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।