সৃষ্টি সাহিত্য যাপনঅন্তরের ডাকে অন্তরায় কর্মজীবনডাঃ দীপঙ্কর ব্যানার্জ্জী.............................অন্তরের ডাক মন্থরা হয় কি মাঝে মাঝে? যেমন হয়েছিল আমার যৌবনে৷সে প্রায় তিরিশ বছর আগে শুনেছিলাম অন্তরের ডাক৷৷ গিয়েছিলাম অন্তরায়, মান…
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
অন্তরের ডাকে অন্তরায় কর্মজীবন
ডাঃ দীপঙ্কর ব্যানার্জ্জী
.............................
অন্তরের ডাক মন্থরা হয় কি মাঝে মাঝে? যেমন হয়েছিল আমার যৌবনে৷
সে প্রায় তিরিশ বছর আগে শুনেছিলাম অন্তরের ডাক৷৷ গিয়েছিলাম অন্তরায়, মানসিক হাসপাতাল বারুইপুরে,
ডাক্তার হয়ে রোগী দেখার কাজ পেতে৷ পেয়েও ছিলাম ওখানে অতি সামান্য মাস মাইনেতে৷ (যার অন্য নাম ছিল অনারারিয়ম)৷ হয়তো ওখানে যাবার ঠ্যালা দিয়েছিল মাস্টার মশাইদের কেউ কেউ৷ হয়তো বা তখন ছিল না অন্তরায়৷
বিরাট এক হাসপাতাল — বহির্বিভাগ অন্তর্বিভাগ মিলিয়ে সুন্দর Setup ,দেখানোর মত৷
জানলাম এ একটা প্রাইভেট মানসিক হাসপাতাল যার শিকড় নাকি ছড়িয়ে আছে সুদুর কেরালায়৷ হাসপাতালের সব জ্ঞাতব্য রাজ্যসরকারের হস্তক্ষেপের বাইরে রাখা হয়েছে৷
কারনটা এখনও অজানা৷ তবে একাধিক একর জুড়ে দক্ষিন চব্বিশ পরগনার বারুইপুরে এই বিশাল হাসপাতাল চালাতে খরচও খুব কম নয়৷ মালিকদের কথায় এই খরচ চলে নাকি " ভিক্ষে করে "৷ কোথায় ভিক্ষা করেন তখন তা জানা ছিল না৷ পরে ভাসা ভাসা জেনেছিলাম ফান্ডের বৃহদংশ আসে বিদেশের খৃষ্টানধর্মী বিভিন্ন ফান্ড থেকে দান হিসাবে৷ কেউ কিছু খুলে বলেনি আমায়৷
এই হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটা Satelite বহির্বিভাগ আছে৷ তারই একটাতে (কলকাতার পার্কসারকাসে আহিরীপুকুর রোডে অবস্থিত Mar Thoma Church এর একটা ঘরে) আমার ঠাঁই হল৷
সেই শুরু হল মানসিক ডাক্তারির কর্মজীবন ৷ তারপর গঙ্গা দিয়ে কত জল বয়ে গেছে৷ কত রোগী ,কত ভাক্তার এল গেল, কত পাখী অন্তরের ডাকে ডালে বসলো , খাঁচায় ঢুকে গেল আর অতি কম মাইনেতে জীবন যৌবন উৎসর্গ করে গেল ,তার হিসাব রাখি নি আজও৷ শুধু এটুকু জানি চোখে ঠুলি বেঁধে ঘুরে চলেছে সবাই সর্ষের থেকে তেল বার করতে কিন্তু সর্ষের ভূত কেউ জানে না৷ কেননা জানতে চেষ্টা করলে চোখে সর্ষের ফুল দেখতে হবে৷
এ ব্যপারে সরকারের ঔদাসিন্য ও বাঁধা পড়া পাখীদের চোখের জল দেখতে দেখতে কেটে গেল বছরগুলো৷
ঘর বার ও ডাক্তারি সামলাতে সামলাতে অবসরের দ্বারপ্রান্তে একদিন পৌছে গেলাম প্রায় তিরিশ বছর পর৷
এখন দাতব্য থেকে প্রায় নার্সিং হোম পরিনত হওয়া হাসপাতালে এই অতি কম মাইনের ডাক্তারের দায়িত্ব শেষ৷
অবসরে পুরোনো স্মৃতিচারনে তথাকথিত জনদরদী মালিকদের কথা বার বার মনে ঘুরে আসে৷ সম্পদের লোলুপ বাসনা কৌশলে কিভাবে ন্যায় ও নীতিকে পরাস্ত করে এবং প্রকারান্তে কিছু মানুষের মনের ভিতর ফোটা ফুলগুলো বিনষ্ট করে তা তিরিশ বছরের ডাক্তারী জীবনে এই মানসিক হাসপাতালে কাজ না করলে অধরা থাকতো৷৷