Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

প্রথম-খেয়া-সেরা-সাহিত্য-সম্মাননা

সুমিতা ভট্টাচার্য্য
জীবনের গল্প
১৯/৩/২২
গল্প লেখা আমার কম্ম নয়, কবিতায় কিছুটা হলেও সাবলীল , তবু কুঁজোরতো চিত হয়ে শুতে ইচ্ছে করে, তাই এই প্রয়াস। গল্প তার চরিত্র সব কিছু ই আমাদের আশেপাশে মজুত থাকে তবু খুঁজে নিয়ে সঠিক রুপ দেওয়া এ…



সুমিতা ভট্টাচার্য্য


জীবনের গল্প


১৯/৩/২২


গল্প লেখা আমার কম্ম নয়, কবিতায় কিছুটা হলেও সাবলীল , তবু কুঁজোরতো চিত হয়ে শুতে ইচ্ছে করে, তাই এই প্রয়াস। গল্প তার চরিত্র সব কিছু ই আমাদের আশেপাশে মজুত থাকে তবু খুঁজে নিয়ে সঠিক রুপ দেওয়া এটাই কঠিন কাজ বলে আমার মনে হয়।


যাদের নিয়ে এই গল্পের সুত্রপাত একটি সহজ সরল মেয়ে ,আর একটি বাড়ি ও সেখানে থাকা এক অতি সুদর্শন যুবক । বাড়ি টির নাম "'প্রতীক্ষা"", যুবকটির নাম সুমিত দাশগুপ্ত,ডাকনাম টিয়া।


বাংলাদেশের অজস্র সাধারণ মেয়ের মতো ই সুন্দর, সাবলীল ,ছটফটে একটি মিষ্টি মেয়ে, সুন্দরী বলা না গেলেও খুব একটা খারাপ নয় নাম টুয়া। খুব ভালো গান গায় সে , মিষ্টি গলা য় সুর আছে। নিজের মতো করে থাকতে সে ভালবাসে। কিন্তু তার আর নিজের মতো করে থাকা হলোনা, টিয়ার সুন্দর সুদর্শন চেহারা সুন্দর কথা , মন ভোলানো চাহনি আর মিষ্টি হাসি তাকে হাতছানি দিল , কিন্তু সে এমন এক পরিবেশে বড় হয়েছে যে সহজে সে এই হাতছানি তে সাড়া দিতে পারলনা। তার মন সায় দিচ্ছে না কিছুতেই এই ডাকে । কিন্তু ভালোবাসা র হাতছানি কে বেশি দিন সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে নি টুয়া । মেয়েরা যাকে একবার মন দেয়, ভালো বাসে ,সম্পুর্ন ভাবে ই ভালোবাসে , তার মধ্যে কোনো ফাঁক থাকেনা ।দুর থেকে ই তাকে ভালবেসে ফেলল টুয়া ।


টিয়া সুদর্শন সুপুরুষ তাকে ভালবাসলেও বাড়ির থেকে বেরিয়ে এসে তার সঙ্গে মেলামেশা করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি,টুয়া মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে চুরি করে সকলের চোখ এড়িয়ে দেখা করেছে কিন্তু টিয়া তাকে আরও বেশি করে পেতে চায়, সেটা সেই মুহূর্তে টুয়ার পক্ষে সম্ভব নয়।সে শুধু মাত্র ভালবাসায় বিশ্বাসী ,প্রান দিয়ে ভালোবাসবে সে কিন্তু তার পক্ষে এই মুহূর্তে অতটা ঘোরাঘুরি ও সঙ্গ দেওয়া সম্ভব নয়।তার মতে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার সময় এখন তুমি আমি তো রইলাম ই , আমাদের ভালোবাসা খাঁটি হলে অপেক্ষা করলে একদিন আমাদের ভালোবাসা স্বার্থক হবেই, আমরা দুজন দুজনকে অবশ্যই পাব। কথা দিয়েছিল টিয়া ,তাকেই ভালবাসবে , দেখা না হলেও ভালবাসার বন্ধনে তারা বাঁধা রবে যতদিন সময় না আসে সে টুয়ার জন্য অপেক্ষা করবে। একদিন তাদের ভালোবাসা অবশ্যই সফল হবে। তারপর তারা বিয়ে করে সংসার পাতবে।


কথা দিয়ে কথা রাখে নি টিয়া । অল্পকিছু দিন পরে ই সে টুয়ার চোখের আড়ালে নতুন একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। জীবন গুছিয়ে নেওয়ার বদলে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করে, বড়লোকের সুদর্শন সুপুরুষ ছেলে আজ একজন কাল অন্যমেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক পাতিয়ে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। আবার তাকে ছেড়ে অন্য কেউ,।সব খবর কানে গেলেও টুয়ার কিছু ই করার নেই কারন টুয়ার সঙ্গে সে যোগাযোগ রাখতে চায় না, আসলে টুয়াকেও সে কোনদিন ই ভালবাসেনি,এরা ভালবাসতে জানে না, ভালোবাসা কি বোঝেনা, বুঝতে চায় না। সময় সময়ের মতো বয়ে যায় টুয়া আজ একজন শিক্ষিতা নারী,সে একটা ভালো স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।

টিয়া উশৃঙ্খল জীবনের স্রোতে ভেসে নিজের সমস্ত যোগ্যতা হারিয়ে সাধারণ থেকে অতিসাধারণ নাগরিক ।একটা বেসরকারি অফিসে কোনো রকম একটা চাকরী করে সে , বিয়ে করেছে হয়তোবা শেষ প্রেমিকা কে ই , আমার ঠিক জানা নেই।


কিছু দিন আগে একটা বিয়ে বাড়ীতে টুয়ার নিমন্ত্রণ ছিল ঠিক তার পাশের বাড়িটি ই ""প্রতীক্ষা"'। আমার পরিচিত এক জনের বিয়ে বলে আমি ও নিমন্ত্রিত ছিলাম ।বর এসে গেছে ,সাহানা তে সানাই বাজছে উলুধ্বনি , শাঁখের আওয়াজ বেশ একটা আনন্দ ঘন ভালো লাগা পরিবেশ ,টুয়া খুব সুন্দর করে সেজেছে আজ খুব সুন্দর খুব মিষ্টি দেখতে লাগছে ওকে , অনেক পুরুষের মুগ্ধ দৃষ্টি ওর ওপর। কিন্তু ওর শান্ত সমাহিত স্নিগ্ধ শোভন রুপ ওর ব্যাক্তিত্ব ওর চারিপাশে একটা গন্ডি কেটে দিয়েছে, সেটা ভেদ করে ওর পাশে পৌছনো খুব দুস্কর। হঠাৎ একটা তীব্র চিৎকারে কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম আমরা সবাই ভেসে আসছে প্রতীক্ষা র দিক থেকে,কান খাড়া করে শুনতে পেলাম কেউ আকুল হয়ে কাঁদছে প্রিয়জনকে হারিয়ে। হঠাৎ দেখি টুয়া দৌড়ে বেড়িয়ে গেল বিয়ে বাড়ীর থেকে প্রতীক্ষা র দিকে ওর দৃষ্টি তে ও যেন অন্য কিছু ছিল , হয়তোবা ও অন্যকিছু একটা বুঝেই ছুটে গিয়েছিল উদভ্রান্তের মতো আমি ও দৌড়ে গেলাম ওর পিছনে পিছনে,


তারপর সেএক মর্মান্তিক ঘটনা র সম্মুখীন হতে হলো আমায় , টিয়ার মৃতদেহ কে ঘিরে তার মা ও স্ত্রী ও পরিজন দের আর্ত চিৎকার বুকফাটা কান্নার শব্দ বিয়ে বাড়ীর সব আনন্দ কে ম্লান করে দিল।

টুয়া কিছু টা দুর থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টিয়ার মৃতদেহের দিকে , বুঝতে পারছি ওর বুকের পাঁজর গুলো ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ও চীৎকার করে কাঁদতে পারছেনা কারণ ও তো টিয়ার কেউ নয় ।ওর কোন অধিকার নেই শোক প্রকাশ করার । নীরব কান্নায় ভেংগে যাচ্ছে ওর বুক ,ও একটা ফাঁকা জায়গা খুঁজে চলেছে প্রানভরে কাঁদার জন্য।।


ওর পাশে দাঁড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম ও থরথর করে কেঁপে উঠলো এক অজানা যন্ত্রনায় । লুকিয়ে থাকা ভালবাসা টা এই ভাবে পালিয়ে গেল, ওকে ছেড়ে , ওকে দুর থেকে একটু দেখতে পেত সেটাও সহ্য হলনা ভগবানের।কাছ থেকে কেড়ে নিয়েও শান্তি হয়নি তার দুর থেকে একটু দেখতে পাওয়ার সুখ টুকুও কেড়ে নিল সে,টলতে টলতে বিয়ে বাড়ীর পাশ দিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেল টুয়া ওর এখন একটা নির্জন জায়গা চাই যেখানে গলা ছেড়ে কাঁদতে পারবে সে তার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা টিয়ার জন্য।


আজো প্রতিবার যখন ই প্রতীক্ষা র পাশ দিয়ে টুয়া কোথাও যায় ওই প্রতীক্ষা লেখা বাড়ীটার দিকে তাকিয়ে থাকে টুয়া ,আজ আর ওই বাড়িতে কেউ থাকে না বাড়িটা বিক্রি করে দিয়ে বাকিরা কোথায় গেছে টুয়া জানেনা , তবু টুয়া এখনো প্রতীক্ষা র সামনে দাঁড়িয়ে থাকে কি জানি কার অপেক্ষায়।।


প্রতীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে ছোট বেলার , সেই সব দিন গুলো মনে পড়ে যায় টুয়ার দু চোখ জলে ভরে যায়।।