Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

(  1)
ভূতের গল্প--কোরাপুটের  জঙ্গলের  পেত্নি।লেখিকা---শিপ্রা মুখার্জি (মুখোপাধ্যায়)।
ছোট মাসীর   বছর তিনেক  হল বিয়ে হয়েছে কোরাপুটে  ।   কোরাপুটের  ডি.এস. পি পুলক  সোম  ছোট  মাসীর  শ্বশুর ।   আমরা  তাঁকে  মাসী দাদু বলেই ডাকি ।   …

 


(  1)


ভূতের গল্প--কোরাপুটের  জঙ্গলের  পেত্নি।

লেখিকা---শিপ্রা মুখার্জি (মুখোপাধ্যায়)।


ছোট মাসীর   বছর তিনেক  হল বিয়ে হয়েছে 

কোরাপুটে  ।   কোরাপুটের  ডি.এস. পি পুলক  সোম  

ছোট  মাসীর  শ্বশুর ।   আমরা  তাঁকে  মাসী দাদু বলেই 

ডাকি ।   গত বছর  আমরা  ওড়িশার  কোরাপুটে   গিয়েছিলাম।   তখন  মাসী   মেশো থাকে  চিরিমিরি তে।  মাসী র  শ্বশুর কে  আমরা  মাসী  দাদু  বলি  ।

দাদুর   কোরাপুটের  বাড়িতে  বিরাট বাগান  ।

তাতে  কি  গাছ  না নেই  !   এবার ও  মাসী দের  কোরাপুটে  আসার  কথা  ছিল   ।  আমরা ও  ছুটিতে 

ওখানে  যাব  ।  কিন্তু  মাসী আসছে  না বলে  আমাদের 

ও  যাওয়া হল  না  ।   মন খারাপ  হয়ে গেল  আমার 

আর  বনির  ।   বনি  আমার   ছোট  বোন  ।  সবে সাতে 

পড়েছে  ।   অত  শত  বোঝে  না ।   তা  ছাড়া  মা ওকে যেতেই   দিত  না  ।   

মন খারাপ লাগার আরও একটা  কারণ   অত সুন্দর

প্রাকৃতিক  দৃশ্য   দেখতে  পাব  না   ।     চোখ  বুজেই 

সে দৃশ্য  দেখতে  পাই  । মাসী দাদুর  বাড়ির পাশ দিয়েই  পাহাড় টা  উঠে  গেছে   ।   কি  নরম  সেই সবুজের  ঢেউ   ।   নিচ  থেকে  উপর  অবধি  তাল গাছ  উঠে  গেছে  ।   পাহাড়ের  ওপরে  তাল  গাছ মাথা  উঁচু   করে  দাঁড়িয়ে আছে  ।   মাঝে মাঝেই  সাদা মেঘ ঘরে ঢুকে 

যাচ্ছে  ।   হাতে  ধরা   যায় সেই মেঘ  ।  আমরা  অমন 

দেখিনি   তাই  ভয়  পেয়ে   গেছিলাম  ঘরের ভেতরের 

মেঘ  দেখে  ।  খুকু    পিসি  বলেছিল  কোরাপুট ,"হাই 

অল্টিচুড"  তাই  অমন  মেঘ  ছুঁয়ে  যায়   ঘরে  ।


শুনে  আশ্চর্য  হয়েছিলাম  ।    বাব্বা!  আমরা   কত 

উঁচুতে  উঠে  গেছি!  স্কুলের  গরমের  ছুটি পড়ে  গেছে। 

আমরা  মন মরা  হয়ে বসে আছি  ।   হঠাৎই   খুকু পিসি 

মাসীর ননদ, এসে  হাজির।   খুকু পিসি  অন্ধ্র ইউনিভার্সিটিতে  পড়ে  ।  হস্টেল এ     থেকেই এম.এ  পড়ছে   ।  পিসি কে  পেয়ে আমরা  দারুণ  খুশি  ।  


খুকু পিসি  বলল-- বাবলু  ,রনি, বনি আমার  সাথে  

কোরাপুটে   চল  ।  লাফিয়ে  উঠলাম  আমরা  ।  রনি

খুশি  হয়ে  ডিগবাজি  খেতে  লাগল  ।     আমিও দুবার 

ডিগবাজি  খেলাম   ।

বাবা -মায়ের বাঁধা ও কোন কাজে লাগল  না  ।  কারণ 

খুকু  পিসি  সিদ্ধান্তে  অটল  ।  গেল বার যখন আমরা 

কোরাপুট   গেছি  তখন বনি বেশ   ছোট  ।  কত যে আম  আর  কাঁঠাল  খেয়েছিলাম  তার  ঠিক নেই  । মাসী দিদা  আমাদের রান্না ঘরের  দাওয়ায়  বসিয়ে  দিতেন  ।  একটা   জামবাটিতে  করে ঘন গোরুর  দুধ ।

আর  মাসী দিদা একটা  গামলায়  জল  নিয়ে  তাতে 

কতোগুলো  আম  নিতেন  ।  তার পর  একটা একটা 

আম  ছুলে  আমাদের  বাটিতে দিয়ে  দিতেন  ।  মায়ের 

মতো  বটি দিয়ে  ছুলতেন না ।একেবারে  হাত দিয়েই 

আমের  চোকলা টেনে  ছিঁড়ে  ফেলে  দিতেন  ।  মাসী দিদা  বলতেন--" আন্না  করে  খা" ।

আন্না  কি গো  মা ? -- মা  কে জিজ্ঞেস  করলে মা 

বলেছেন। --কি  আবার? মন  ভরে খা  ।  যতো ইচ্ছা 

খা  ।

---মাসী দিদা তো  বলেন--আন্না ।

মা বলেন-- আমরা  বলি না, আর দিও না । সেই আর না ।   হলো আন্না  ।


সত্যিই  সত্যিই  সকাল  সাতটায়  আমরা   কোরাপুটের 

ট্রেন  ।  বের হবার সময় খুকু  পিসি  বলল,  বৌদি ,  তোমরা  ওদের  জন্য  চিন্তা  করো  না   ।    

মা আমাদের বললেন----দাদু -দিদা কে  জ্বালাতন করো না  ।

সত্যিই  চিন্তার কিছুই নেই  ।   মেশোর  ছোট বোন  খুকু

পিসি।  আমাদের  খুব  ভালবাসে  ওরা  ।  ভাগ্যিস   এ

সময় খুকু পিসি  কোরাপুটে   যাচ্ছে  ।  তাই  আমাদের 

যাওয়া  হচ্ছে  ।  ট্রেন  ছেড়ে  দিল   । একে  একে  স্টেশন  পার  হচ্ছে  ।  এবার   জঙ্গলে  মধ্য দিয়েই ট্রেন 

ছুটছে  ।  আমরাও   জঙ্গলের  ভেতরে  যাব   ।  গেল বার  আমরা ভালুক  দেখেছিলাম   ।   ছোট ছোট  ভালুক  টাল  বেটাল  হয়ে  পড়ে যাচ্ছিল   ।   ঠিক ছোট 

বাচ্চাদের  মতোই  ।  এবার  একটা কে  ঠিক ধরবো  ।


খুকু পিসি কে  আমরাও  ভালোবাসি  ।   মা  অনেক বার  খুকু পিসিকে  আমাদের  বাড়িতে  থাকতে বলেছিলেন  ।  কারণ  খুকু পিসি  অন্ধ্র ইউনিভার্সিটিতে 

পড়ে  ।  কিন্তু  খুকু পিসি হস্টেল এ  থাকাটাই  শুবিধে  

মনে  করেছে  ।   হোস্টেল এ থাকলে  যাতায়াত এর 

ধকল  হয় না  ।পড়ার ও  অনেক  শুবিধে  ।


জানালা দিয়ে  দূরের পাহাড়ের দৃশ্য  দেখছি  ।  হঠাৎই 

মনে হল  খুকু পিসি কিছু  বলছে  । পিসির  দিকে ফিরে 

চাইলাম  ।   পিসি  বলল--বাবলু,  কি  ভাবছিস   ?

বললাম---তুমি  না  এলে  আমাদের  আসা  হতো  না  ।

পিসি বলল---যাক, আসা  হলো  তো  ?  আনন্দ  কর  ।


একে একে  স্টেশন  চলে  যাচ্ছে  ।  প্রতিটা  বোর্ড এর 

লেখা  নাম  বানান করে পড়ছে  রনি  ।   বানান  তো করতেই  হবে ।     শুধুই ইংরেজি  আর   হিন্দী তেই লেখা  এখানে   ।  বাংলার  কোন  নাম  গন্ধ   নেই  এখানে  ।   আঁকি   বুকি  কাটা  লেখা  তেলেগু  তে  ।


হঠাৎই  রনি বলল---দাদা, কি  বড়  নাম টা  দ্যাখ  ।

শ্রুঙ্গ ভরপু কোটা  লেখা   ।  এ বাবা, এত বড়  নাম 

সবাই  বলে?

পিসি  বলল--- না রে  ,  এটার  একটা  সর্ট কাট  নাম 

আছে  ।   সবাই বলে  এস. কোটা ।

বনি  ব্যস্ত হয়ে  গেল।   বিরক্ত  করতে  লাগল  পিসিকে। 

---ও  পিসি , আমরা  কখন  মাসী দিদার  কাছে  যাব?


পিসি বলল--এই তো  একটু  পরেই  পৌঁছাব  ।  এখন ই

গাড়ি  ঢুকবে   সুড়ঙ্গের  ভেতর  দিয়ে  ।   তারপর ই দিদার  বাড়ি  ।


আমি বললাম----পিসি,  স্টেশন এর নাম টা তাই কি 

শ্রুঙ্গ ভরপুকোটা  ? 

পিসি---হ্যাঁ  ।  এখানে   অনেক দূর অবধি  টানেল 

রয়েছে  । তারপর ই   মাসী দিদা র বাড়ি  এসে যাবে  ।

বনি বলল---পিসি,  আমি  সুরঙ্গ  ভয় পাই  ।

আমি বললাম--বনি, ভয়  করবি  না  ।   তাহলে  পিসি 

আমাদের আর  কোন দিন  নিয়ে  আসবে  না  ।


চুপ করে  গেল  বনি  ।   হয়তো   পিসি আর  আনবে  না

তা ভেবেই বনি চুপ করল  ।  এক  মহিলা  আমাদের সিট  এ বসে আছেন  ।  কখন  যে  বসেছে  তাও দেখিনি ।   ওর  চোখের  দিকে চোখ  পড়তে  আমার গা

ছমছম  করে  উঠল  ।


মহিলা  খ্যান খ্যানে  গলায়  বলল---কিসের ভয়  রে  ছানা ?

আমার রাগ হল  ছানা কথা টা শুনে  ।  তবুও বললাম।

---ওর  সব  তাতেই  ভয়  !

বনি বলল---না গো , সব তাতেই  ভয়  পাই  না  । অন্ধকারে  ভয় পাই আমি   ।   অন্ধকারে  ভূত থাকে 

তো  তাই  ।

---হিঁ হিঁ হিঁ  করে  হেসে উঠল সেই মহিলা  ।   ভয়ে  সিঁটকে  উঠলাম  ।    পিসি  রনি বনি কে  কাছে  টেনে 

নিল  ।  একের  পর  এক   সুরঙ্গ  পার হচ্ছি  আমরা   ।

হঠাৎই  কামরা য়  আলো  নিভে  গেল  ।  চার দিকে 

অন্ধকার হয়ে  যাচ্ছে  ।  যাত্রীদের   হৈ হল্লা  ।  তারই 

সঙ্গে   গা ছমছম  করা হাসি  ।  কাঁপিয়ে দিচ্ছে  ট্রেন  ।

হৈহৈ  করে যাত্রীরা  এদিক   ওদিক খুঁজছে  কোথা থেকে  ঐ হাসি  আসছে  তা দেখতে  ।


পিসি বলল---এই তো  একটু  পরেই  আমরা  নামবো  ।

দেখলি  তো  বনি ,সবাই কেমন  আনন্দ  করছে  ?

আরকু  ভ্যালী  আসছে  ।   দেখবি কেমন  হিমেল হাওয়া  বয়ে  যাবে  চারদিকে। 


উঁচু পাহাড়ের ঢল নেমেছে।  তাতে  কচি ঘাসের জমিন । দারুণ লাগছে  দেখতে  ।   এঁকে বেঁকে পায়ে চলার পথ 

পাহাড়ের উপর উঠে গেছে। খুবই ভাল  লাগছে  । মনে 

হচ্ছ  ওখানে  চলে যাই  ।   সাঁওতাল  কয়েক জন মেয়ে কে  দেখা  গেল হেঁটে  চলেছে  ।   একেই বুঝি  উপত্যকা বলে  ।  ভ্যালী  বুঝি একেই  বলে  ।

আমি বললাম---পিসি তুমি ঠিকই  বলেছ  ।  কি  ঠান্ডা

বইছে  এখানে  । কে বলবে  এটা গরমের  দিন !


আরকু  তে  বেশির ভাগ লোকই নেমে  গেল  ।  আমরা

গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে রইলাম  ।   ঐ মহিলা  আমাদের দিকে  পিছন  ফিরে  বসে আছে  ।   আমার 

ভাল লাগছে  না  ওকে  ।  পিসির ও ভাল লাগছে  না তা

পিসির  মুখ  দেখেই  বুঝলাম  । ওকে  দেখতে  ইচ্ছে  না  করলেও  বার বার  চোখ চলে  যাচ্ছে  ওর  দিকে  ।

আমার মনে হল এতো  রোগা  কি মানুষ হতে  পারে  ?

মনে হচ্ছিল একটা  লাঠি কে  শাড়ি  জড়িয়ে  রাখা হয়েছে। 

পিসি বলল----বাবলু  এবার ওঠ  ।   কোরাপুট  এসে 

গেছে  । আমরা নামবো  ।  আমরা যেই  উঠে দাঁড়ালাম। 

সেই  হাড়গিলে মহিলাও উঠে  দাঁড়াল   ।   আমি পিসির 

কাছে গিয়ে  দাঁড়ালাম  ।


রেল গাড়ির থেকে নামলাম  আমরা  ।  পিছু  ফিরে দেখলাম সেই  মহিলা  ও  আমাদের পিছু পিছু আসছে। 

এবার সে পিসি কে  বলল---হ্যাঁ গো  মেয়ে  তোমাদের 

সঙ্গে  আমাকে নেবে  ?

চমকে উঠলাম আমি ।   এ  কি রে  বাবা  ।   এর থেকে 

ছাড়া  পাব কি করে ?  আমতা  আমতা করে পিসিকে 

বললাম---পিসি     তোমাকে কি বলছে?

পিসি ---কিছু  বলছেন?

মহিলা---হ্যাঁ।   তোমাদের  সঙ্গে  যাব  ।  ছেলেটা  এল 

না ।   একা যেতে ভয় পাই  ।  তোমাদের  বাড়ি  থেকে 

যদি  কেউ  পৌঁছে  দেয়  খুব ভাল  হয়  ।

মহিলার কথা  শুনে  পিসি  বলল---ঠিক আছে  চলুন  ।


হেঁটেই  চললাম  আমরা  ।   বাড়ি  পৌঁছেই   ভুলে গেলাম  ঐ মহিলার  কথা  ।  মাসীদাদু আর  মাসী দিদা 

জড়িয়ে  ধরলেন  আমাদের  ।  আল্হাদে  আটখানা  হয়ে  আমরা  দেদার  লাফালাফি  করছি ।   এক  ছুটে 

চলে গেলাম   বাগানে  ।   কত আম, কাঁঠাল হয়েছে তা

দেখতে  হবে না  ?   তখনই দেখলাম রান্না ঘরের  জানালায়  সেই  মুখ  ।   এবার  যেন  নোলা  পড়া হাসি। 

সঙ্গে  সেই  হিঁ হিঁ হিঁ  করা হাসির  শব্দ  ।  ভীষণ  ভয়

পেলাম  ।  ছুটে  গেলাম  ঘরের  দিকে।  আমার ভয় 

পাওয়া  মুখ  দেখে  মাসী দিদা  বললেন---কি  হয়েছে 

বাবলু ? ভয় পেয়েছিস  মনে হচ্ছে?  কোথায় ছিলি  ?


আমি  বললাম---বাগানে  গেছিলাম দিদা  ।

মাসীদিদা বললেন--ভর দুপুরে  বাগানে  গিয়েছিলি?

আর  দুপুরে  বাগানে  যাবি না  ।

তখনই  ঘর কাঁপিয়ে কে যেন  খ্যাঁক খ্যাঁক  করে  হেসে 

উঠল।   চারদিক  তাকালাম  সবাই  ।   দিদা বললেন--

খুকু  ওদের  স্নান  করিয়ে  আন  ।   বাইরে  নিস  না  ।

ঘরের  বাথরুম এ  স্নান করা  ।

আমি পিসিকে  বললাম---পিসি,সেই  মহিলা  কোথায় ?


কি  জানি ,কোথায়  গেল  ?  ট্রেন এ  তাহলে  ঐ মহিলাই  হাসছিল  ।   পাগল টাগল  নাকি  ? --পিসি 

বলল   ।

আমি বললাম---আমার কিন্তু  ভয়  করছে  ।

দিদা---বোকা ছেলে,  অমন  গলা  অনেকের ই থাকে  ।

ভয়ের কি আছে?  চল  দেখি কোথায়  আছে  ?


আমরা সবাই রান্না ঘরের  দাওয়ায়  গেলাম  ।   দেখলাম  সিঁড়ি তে  বসে  চোখে  মুখে   আঁচল চাপা 

দিয়ে  কাঁদছে  সে  ।

দিদা বললেন--কাঁদছেন কেন?

--ছেলে স্টেশন এ  এল না ।  তাই  মন  খারাপ  লাগছে। কি করে  বাড়ি যাব  ?--বললেন সেই মহিলা ।


মহিলার কিন্তু  মুখ দেখা যাচ্ছিল  না ।  এক গলা ঘোমটা  দেওয়া  তার  ।

মাসী দিদা বললেন--   আগে  খেয়ে  নিন  ,তারপর  বাড়ি যাবেন  ।  আপনার  বাড়ি  কোথায়?

---চাদনী গাঁয়ে  ।আরে ঐ যে  কেউ কেউ  চাঁদের গাঁ 

বলে   ।  না না ,এখন  খাব না ।   এখুনি  যাব   ।


মাসী দিদা  মালী   হরেন কে  ডাকলেন  ।--হরেন  একে 

চাঁদের গাঁয়ে  পৌঁছে  দিয়ে  আয় তো  ।

কোথায়  পৌঁছে দেব  মা ?--হরেন বলল। 

মাসী দিদা --আরে ঐ চাঁদনী গাঁয়ে  ।

মাসী দিদার কথা  শুনে  হরেন এর টাক  খাওয়া অবস্থা।

 তাই সে বলল---সে তো  অনেক  দুর মা ।  আধ ঘণ্টার 

 মতো লেগে যাবে  সেখানে  পৌঁছতে  । 

 মাসী দিদা বললেন--যা বাবা, বাবুর বাইক টা নিয়ে  যা।

 

মাসী দিদার কথা মতোই ওরা  রওনা  দিল  ।  ওরা চলে 

যেতে দিদা বললেন---যত সব উটকো  ঝামেলা  !


এতক্ষণে  আমরা  প্রাণ  ফিরে  পেলাম  ।  রনি,বনির 

লাফালাফি শুরু  হল  ।  দিদা  ওদের জড়িয়ে  আদর 

করলেন  ।    অমনি খুকু  পিসি বলল-- বাবলু দেখলি 

মা কেমন করে  দুষ্টমী করাটা বন্ধ  করে  দিল  ।

আমি বললাম---হ্যাঁ। আদর  করে  ।

দিদা বললেন---বাবলু এদিকে  আমার  কাছে আয়  ।


আমার লজ্জা করছিল  ।  দিদা  কি ভেবেছে, ভাই 

বোন দের আদর করেছে  বলে  আমার হিংসা  হচ্ছে?


দিদার কাছে বসলাম। দিদা  আমার মাথায়  হাত বুলিয়ে 

দিলেন  ।  তারপর  সব  খবরাখবর  নিলেন  ।   আমার 

পড়ার খবর ও নিলেন  ।

দুপুরে  খাওয়ার পর ঘুমের চেষ্টা  করতে  হয় নি । আপনিই  ঘুমিয়ে  পড়েছিলাম  ।  রনি,বনি দিদার  কাছে 

ঘুমাচ্ছে  ।   ঘুম  ভাঙতে  বুঝলাম  আমরা  কোরাপুটে

দাদু দিদার  বাড়িতে  এসেছি  ।  এক লাফ দিয়ে বিছানা

থেকে  নামলাম  ।  ছুটলাম  বাইরে  ।  তখন ও সূর্য 

ডোবে নি ।

হরেন  কাকু বাগানে  কাজ  করছিল  ।  আমায়  দেখে 

বলল---কি গো বাবলু  বাবু, তোমার ঘুম  ভাঙলো  ?


আমার সাথে কথা বলতে বলতেই  ফুল  গাছের  গোড়া 

খুঁড়ে দিচ্ছিল   আর ঝুড়ো  নুড়ি  পাথর  সরিয়ে দিচ্ছিল।  তখনই  আমার মনে হল  ঐ মহিলার কথা ।

হরেন কাকু কে বললাম---হরেন কাকু, তুমি কখন  ফিরলে  ?  অনেক  দূর  তাই না গো  ? ঐ যে  চাঁদের 

গাঁ  ?

---বাবা,এতো উত্তর  কেমন করে  দিই  বলতো ? শোন, 

যতটা  দূর  জানতাম  তা তো মনেই হল না ।  একেবারে

গেনু  আর  এনু  ।---হরেন কাকু বলল  ।

---ওর ছেলেকে  দেখলে  ?

---না গো, ভেতরে  ঢুকি নি । বিরাট  বাড়ি  ।  জমিদার 

গো, পাইক, পেয়াদা।    তবে  বাগান দেখনু ।  দেখলে 

  তোমার  তাক  লেগে  যাবে  ।  কমলা গাছে  কমলা, 

  আঙ্গুর গাছে  আঙ্গুর।   বেদনা, আপেল  সব  গাছের

  ফল  ঝুলছে  ।

  আমি বললাম---দারুণ।   জানো  হরেন কাকু  আমরা 

  কখনও  গাছে  আঙ্গুর, আপেল, কমলা  ঝুলতে দেখিনি।

---দেখবে  ওখানে  ।  তোমারে  বার বার যেতে  কয়েছে। 

আমি হরেন কাকু কে বললাম---তুমি,,দিদা কে বলেছ?

---হ্যাঁ। মা রাজি হন নি ।  বলেছে  জঙ্গলে  যেতে  হবে নি ।

আমি বললাম--ওটাই  কি কোরাপুটের  জঙ্গল ?

---হ্যাঁ। গো।   ওদের  জমিদার  বাড়ির  মুরগির লড়াই 

দেখার  মতো  ।  তারপর  ট্রাইব্যাল দের  দিমসা  নাচ 

দেখতে  পাবে  ।


মাথায়  আমার ঘুরছে  কোরাপুটের  জঙ্গলের  কথা ।

মুরগির লড়াই  ? কি করে  যাওয়া  যায়  সেখানে  ?

ছুটলাম  মাসী দাদুর কাছে। দাদু  বললেন--কি খবর 

বাবলু  বাবু?  ঘুম  হল  তোমার?  বল, কি বলবে?--দাদু

আমরা কোরাপুটের জঙ্গলে  যাব  ।

দাদু বলেন---কি সাংঘাতিক কথা  !   ঠিক  আছে  যাবে। 

লাফিয়ে উঠলাম আমি।--কি মজা!  কোন জঙ্গলে

দাদু ?

দাদু বললেন---এই তো দেখতে পাচ্ছিস  ।   সোজা ভালুক দের সঙ্গে চলে  যাব  জঙ্গলের ভেতর  ।

আমি--না না ।

দাদু বললেন--ঠিক আছে  ।  তবে  তোদের  দন্ড কারণ্যে   নিয়ে যাব।   আরে ওটাও  বন  ।


আমি বললাম---আমাকে   ঠকাতে  পারবে  না ।  আমি

জানি  কোরাপুটের  দন্ড কারণ্যে  রিফিউজি দের ঘর 

বাড়ি  দেওয়া  হয়েছে  ।   ওখানে  এখন আর  জঙ্গল

নেই  ।

দাদু---তাহলে  কোথায়  যাবি ?


--------------