গল্পঃ- সন্দেহকলমেঃ- তপন কুমার রায়তারিখ ঃ- ২৮/০৫/২২
মধুরা খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। সুজয় এখনও বাড়ী ফেরে নি। বেলা দুটো বেজে গেলো।মানছে সুজয়ের নানান এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ, দেরী হতেই পারে। তবে এত দেরী তো হয় না সাধার…
গল্পঃ- সন্দেহ
কলমেঃ- তপন কুমার রায়
তারিখ ঃ- ২৮/০৫/২২
মধুরা খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। সুজয় এখনও বাড়ী ফেরে নি। বেলা দুটো বেজে গেলো।মানছে সুজয়ের নানান এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ, দেরী হতেই পারে। তবে এত দেরী তো হয় না সাধারণত । কিন্তু মধুরারও তো ক্ষিদে পায় নাকি? অথচ শাশুড়ী র আমল থেকে এটাই নিয়ম স্বামী না খেলে স্ত্রী খেতে পারবে না। অন্তত একসাথে খেতে বসতে হবে। শ্বশুড়- শাশুড়ী অনেক দিন হল গত হয়েছেন,বলার কেউ নেই।কিন্তু মধুরা এটাকেই নিয়ম করে নিয়েছে। তার নিজেরও সুজয় খাওয়ার আগে খেয়ে নিতে ইচ্ছা করে না, একসঙ্গেই খায়। দেখতে দেখতে তিনটে বেজে গেলো, এখনো ফেরার নাম নেই। বার দুই ফোন ও করল।ফোন সুইচ অফ । কোন মিটিং এ থাকলে ফোন অফ করেই রাখে।তবে কি আজকে কোন মিটিং? মিটিং থাকলে তো খেয়েই বেরোয়। আজ হয়ত জানতো না, হঠাৎ মিটিং ডেকেছে। মধুরা রান্নাঘরের টেবিল থেকে উঠে শোবার ঘরের বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো টান টান হয়ে।
সকালে সেই চান সেরে কাজে লেগেছে। সকালের চা করো।বিছানা তোলো। জল খাবার করো। জলখাবারের পাট চুকলে রান্না ঘরে ঢোকো। এর মধ্যে কাজের মেয়েটা এসে যায়, -সে ঝাঁট দিয়ে ঘর মুছে দেয়। তারপর বাসনগুলো মেজে দেয়। বাড়ীর বাকি সব কাজই তো তাকেই করতে হয়।রোজ ওয়াসিং মেসিনে কাচাকুচি আছে, সেসব ছাদে নিয়ে গিয়ে শুকোতে দেওয়া আছে। পারলে সেগুলো উল্টে দেওয়া।শুকনো হলে তুলে পাট করা। যেগুলো আায়রণ হবে, তা সব আয়রণ করা।সুজয় আবার এবেলার তরকারী ওবেলা খেতে পারে না।তাই রাতেও রান্না ,আর খেতে বসলে গরম গরম রুটি করে পাতে দিতে হয়।মধুরা অবশ্য সব কাজ ই খুশী মনে করে। ভালবেসেই করে।এটা তো তার নিজের সংসার, সে তো করছে সুজয়ের জন্য, সুজয়ের ভালোলাগার জন্য। তাকে ভাল রাখতে মধুরার ভালোই লাগে। তাও তাদের ছেলে এবছর বোম্বে আাই আইটিতে পড়তে গেছে। তাই তার কোন ঝামেলা এখন আর নেই।
ক্লান্ত মধুরা শুয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙলো সুজয়ের ডাকে। ধড়মড়িয়ে উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বিকেল পাঁচ টা। পাঁচটা? সুজয়ের খাওয়া হয়নি এখনো? তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দিকে যায়। সুজয় জানায় সে খেয়ে এসেছে, আর এখন খাবে না। মধুরা না খেয়ে থাকলে খেয়ে নিক। না খেয়ে থাকলে মানে কি? কোন দিন মধুরা সুজয় না এলে খেয়ে নিয়েছে? মধুরা ভাতের হাড়িতে জল ঢেলে দিয়ে তরকারি পাতি সব ফ্রীজে তুলে চলে এলো। কাল কাজের মেয়ে বৈশাখী এলে সব দিয়ে দেবেক্ষণ।
সুজয় জিজ্ঞাসা ও করলো না সে কিছু খেলো কিনা। এটাই এ বাড়ীর ছেলেদের ধরন। কোনদিকে খেয়াল করবে না, ও সব বউরা খেয়াল করবে। ছেলেদের কাজ পয়সা উপায় করে আনা, আর বড়জোর বাজার দোকান এনে বা আনিয়ে দেওয়া।টাকা পয়সা দেওয়ায় অবশ্য কোন কার্পণ্য নেই সুজয়ের । রাখা আছে ড্রয়ারে, যা লাগবে নিয়ে নাও। যা খুশী কেনো, অবাধ স্বাধীনতা। কত গেলো, কত রইল হিসেবও রাখে না। কেনা কাটা সব তোমার দ্বায়িত্ব। এ জিনিস শ্বশুরমশাইয়ের আমল থেকেই দেখে আসছে।
সুজয় ফিরে টিভিটা চালিয়ে সোফায় বসেছিল। মধুরা দুকাপ চা বানিয়ে নিয়ে এসে বসলো পাশে। সুজয় বললো সে চা খাবে না বিরিয়ানি খেয়ে এসেছে। বিরিয়ানী? মিটিংএ? মধুরা অবাক হয়। সুজয় জানালো মিটিং এ নয়। সকালে কলেজ গেটে তার সাথে পৌলমীর দেখা হয়ে গিয়েছিলো। পৌলমীই জোর করে কোয়েষ্ট মলে সিনেমা দেখতে নিয়ে গিয়েছিল তাকে।ওখান থেকে বেরিয়ে রয়ালে বিরিয়ানি আর মটন চাঁপ খেয়েছে। মধুরা ভাবলো ওরা বিরিয়ানি খেলো, খাক।বাড়ীতে মধুরাকে খেয়ে নিতে বলার কথা একবার মনেও হল না! আশ্চর্য ।অবশ্য সুজয়ের কোনদিনই এটা মনে হয় না। মধুরা জিজ্ঞাসা করে-----" পৌলমী, মানে সেই তোমাদের কলেজের খারাপ মেয়েটা? ওর সাথে তুমি সিনেমা গেলে?
---- পৌলমী খারাপ মেয়ে হতে যাবে কেন? ও তো আমার বন্ধু।
---- খারাপ নয় মানে? তুমিই তো বলেছো ও কলেজের অনেক ছেলের সাথেই শুয়েছে।
---- শুয়েছে তো শুয়েছে।আমার কি। আমার খুব ভালো বন্ধু। আমাকে জান দিয়ে ভালবাসে।
----- বলো কি? না শুয়েই জান দিয়ে ভালবাসে, শুলে তোমাকে কি রকম ভালবাসতো কে জানে!
---- ইয়ার্কি মেরো না। ওর তো বর আছে,ছেলে আছে, ঘরসংসার আছে। ও তো আমার বন্ধু ই।
---- ছেলে-বর আছে ঠিকই তবে তাদের কে ও তোমার মতো জান কবুল ভালবাসে কি না সন্দেহ।
সুজয়ের মোবাইলে ফোন আসে। রিং হতেই সুজয় ফোনটা নিয়ে উঠে ব্যালকনিতে চলে যায়।
বাব্বা, এতোদিন ফোন এলে সুজয় তো সোফায় বসেই ফোন ধরত। ডিস্ট্রিবিউটারদের চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ফোন শুনতে শুনতে মধুরার কান ঝালাপালা হয়ে যেত। মধুরাই পাশ থেকে উঠে চলে যেত এতদিন। আজ সুজয়কে উঠে যেতে হচ্ছে। যাক, নিশ্চয়ই তেমন কোন দরকারী ফোন হবে।সে আদার ব্যাপারি, অত ভেবে কি করবে।
সুজয় খুবই ভালো ছেলে এম বি এ করে একটা বিদেশী কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার হয়ে ঢুকেছিল।কাজের প্রতি তার অসীম নিষ্ঠা। কাজ পাগোলই বলা যায়। তাই কোম্পানি ও তাকে খুব তাড়াতাড়ি ই প্রোমোশন দিয়েছে। ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সে রিজিওনাল ম্যানেজার।সকাল থেকে রাত পর্যন্তই কাজ। অফিস থেকে ফিরে বাড়ীর নীচেই নিজের একটা অফিসে সে বসে।রোজ কত রিপ্রেজেন্ন্টেটিভ, ডিস্ট্রিবিউটর, কমিশন এজেন্ট আসে। কতো প্রজেক্ট রিপোর্ট বানাতে হয়। রাত এগারটা পর্যন্ত সুজয় নিজের অফিসে বসে।
মধুরার হয়েছে সমস্যা। সারা দিনটা কাজের মধ্যে কেটে যায়। কিন্তু সন্ধ্যের পর থেকে আর সময় কাটতে চায় না। ছেলে বুবাই যতদিন বাড়ী ছিলো এটা ওটা নিয়ে কাটতো।কিন্তু বুবাই বোম্বে চলে যাওয়ার পর থেকে সময় আর কাটতে চায় না। মধুরা টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না।সিরিয়াল তার খুব অপছন্দ। কি আর করে মোবাইল নিয়ে কখনও ফেসবুক,কখনও হোয়াটসঅ্যাপ, আবার কখনও বাপের বাড়ী, আত্মীয় বন্ধু দের সাথে ফোনে গল্প করে। ফোনে খুটুর- খাটুর করতে করতে প্রায়ই সে দেখে সুজয় হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইন রয়েছে। তার তো কাজের জন্য ফোন লাগে, মেল করা লাগে, কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে কি জন্য? কার সাথে কথা বলে? প্রায়ই টাইপিং দেখায়। কার সাথে কথাবার্তা চালায়? তবে হয়ত কোন কিছু ডক্যুমেন্ট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে হতে পারে, কাজের কথাও হতে পারে। এসব কাজের মধুরা কি বোঝে? যতটুকু বলে ততটুকুই শোনে।
একদিন ফিরে সুজয় বলল ব্যান্ডেল চার্চ আর চুঁচুড়ায় নিউ দীঘা ঘুরে এলাম।
----- নিউ দীঘা তো দীঘার পাশে। চুঁচড়োয় কোথা?
---- আরে সে নিউ দীঘা নয়।এটা একটা সাজানো গোছানো বড় রিসোর্ট ।ভেতরে থাকার ঘরও আছে।
---- সেখানে তোমার কি কাজ ছিলো?
---- দূর পাগোল, ওখানে কাজ কি হবে! পৌলমী অনেক দিন থেকে ঘ্যান ঘ্যান করছিলো --- চল্ একদিন দুজনে বেড়িয়ে আসি।তাই ঘুরে এলাম।
---- ওর সাথে বেড়াতে চলে গেলে? তুমি কি ওর প্রেমে পড়লে নাকি? একটা মেয়েকে নিয়ে রিসর্টে বেড়াতে চলে যাচ্ছ?
---- মন ছোট কোরো না মধুরা। বন্ধুত্বে আবার ছেলে মেয়ে বলে কিছু হয় নাকি? বন্ধু হল বন্ধুই। তুমি তো জানো ও আমার সাথে ছেলেদের মতই স্ল্যাং বলে -- সব কিছু খোলাখুলি আমাদের মধ্যে।
---- সেটাই তো মুশকিল। অত খোলাখুলি সব কথা তো তুমি আমার সাথেও বলো না।
---- তা বলি না। বউ আর বন্ধুর একটা তফাৎ তো হবেই। বন্ধুর সাথে যত খোলাখুলি কথা বলা যায়, বউয়ের সাথে কি বলা যায়?
----- পৌলমী কি তোমার কাছে বউয়ের চেয়েও বড়ো বন্ধু?
----- মরেছে, তুমি কি আমাকে পৌলমী কে নিয়ে সন্দেহ করছো?
---- সন্দেহ এতদিন তো করি নি। তুমি, তোমার কাজকর্ম এখন করাচ্ছে বোধহয় একটু একটু।
----- শোনো, পৌলমী প্রথমত ও আমার বন্ধু আর শেষ পর্যন্তও ও আমার বন্ধু।অতো কিছু ভাবার দরকার নেই।
মধুরাও ভাবতে চায় না।সুজয়ের সাথে তার সম্পর্ক ভালো।একটু উদাসীন প্রকৃতির বটে, তবে একেবারই নন- ইন্টারফেয়ারিং। তাদের শারীরিক সম্পর্ক গড়পড়তা কাপলের চেয়ে এখনো অনেক উষ্ণ। কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে সুজয় এক পায়ে খাড়া। সব কাজ ফেলেও নিয়ে যাবে। কত জায়গা তারা ঘুরেছে।কাল ব্যান্ডেল চার্চ নিয়ে যেতে বললে, কালই নিয়ে যাবে। সেটা কথা নয়, কথা হল পৌলমীর মত একটা নোংরা চরিত্রের মেয়েকে নিয়ে এতো ঘোরাঘুরি কিসের। বিশ্বাস তো আর রাখা যাচ্ছে না।
রাতে খেয়ে দেয়ে উঠে টিভিটা চলিয়ে সুজয় সোফায় বসে মোবাইলে খুট-খাট করে আজকাল। মধুরার ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক লাগে না। নিজের মোবাইল টায় হোয়াটসঅ্যাপ অন করে দেখে সুজয় অনলাইন আছে,কাউকে মাঝে মাঝে টাইপ করে কিছু লিখছে।
আজকাল রাতে সব কিছুর পর বিছানায় একবার শুলে মধুরার ঘুমিয়ে পড়তে দু মিনিট লাগে না। কখনও কখনও পাশ ঘুরতে গিয়ে দেখে সুজয় রাত বারোটার পরও হোয়াটসঅ্যাপ করে যাচ্ছে। তার এত রাতে কাকে কি বলার আছে? কে ই বা তার জন্য বারোটা -একটা পর্যন্ত জেগে মেসেজ করে যাচ্ছে? ভাবতে গিয়ে মধুরার ঘুম চটকে যায়। তাহলে কি পৌলমী? প্রেম? জেগে থেকে সুজয় ঘুমালে আাস্তে করে তার বালিশের পাশ থেকে ফোনটা টেনে অন করতেই দেখে হোয়াটসঅ্যাপ পৌলমীর সাথে গল্প করেছে সুজয়। কি নোংরা ভাষা! এটা ভদ্রলোকের ছেলের পক্ষে কি করে সম্ভব, ভাবতে পারে না? পৌলমীর সাথে সব কথা সিলেক্ট করে সুজয়ের ফোন থেকে মধুরা নিজের ফোনে সেন্ট করে। সুজয়ের ফোন থেকে তার নামের সেন্ট ম্যাসেজ মুছে দেয়। এরকম ভাবে সুজয়ের প্রতিদিনের পৌলমীর সাথে কথা বার্তা নিজের ফোন পাঠিয়ে রাখতে লাগল। কোনদিন ঝগড়া হলে প্রমান দেবে।
এরকম চলতে চলতে সুজয়ের বোধহয় সন্দেহ হয়েছিল বা নিজেই প্রিকশান নেওয়া উচিত মনে করে ফোন লক করে দিল। এতদিন দুজনের কেউই তারা ফোন লক করে নি। মধুরা যে এগুলো জমিয়ে রাখছে বুঝতে না দেওয়ার জন্য নিজের ফোন অনেক আগেই লক করে ছিল। এখন সুজয় লক করা শুরু করতে মধুরা আর খুলতে পারে না। মধুরা হিসেব করতে থাকে, তাদের সুটকেস কি নাম্বারে লক থাকে? ওয়াই- ফাইয়ের পাশওয়ার্ড কি? সুজয়ের ডেট অব বার্থ কি? মেল আইডির পাশ ওয়ার্ড কি? সুজয়ের মোবাইল নাম্বার কি? এসব দিয়ে ট্রাই করতে করতে, সুজয় বাথরুমে থাকা কালীন একদিন সুজয়ের ফোনটা মধুরা আনলক করে ফেললো। তাড়াতাড়ি হোয়াটসঅ্যাপ এ গিয়ে দেখে, পৌলমীর এ্যাকাউন্টটা ওপরেই।খুলেই দেখে বিশ্রী রকমের সঙ্গম ভিডিও। তাড়াতাড়ি নিজের ফোনে সেন্ট করেই ফোন রেখে দিয়ে ছুট্টে রান্না ঘরে চলে যায়। হড়হড় করে বমি উঠে আসে। ছিঃ, ছিঃ,ছিঃ।ই- ম্যাগো, এই সব কোন ভদ্রলোকের মেয়ে কোন ছেলেকে পাঠাতে পারে? কোন রুচি বলে ব্যাপার থাকবে না?একেবারে নষ্ট মেয়ে ছাড়া একাজ কেউ করতে পারে? কি সব নিকৃষ্ট রুচি এদের। বড় বড় কথা-' আমরা বন্ধু'। বন্ধুর পিছনে এইসব? পরের দিন থেকে সব ব্লু ফ্লিম সে লুকিয়ে নিজের ফোনে সেন্ট করে রাখতে লাগলো। প্রিকশান হিসাবে তার আর একটা পড়ে থাকা ফোনেও সব পাঠিয়ে রাখলো। মধুরা কিছুতেই বুঝতে পারে না সুজয় আর পৌলমীর মধ্যে সম্পর্ক টা ঠিক কি।
তাদের বিয়ের বয়স একুশ বছরে পড়লো, সুজয়কে অবিশ্বাস বা সন্দেহ করতে একটুও ইচ্ছা করে না মধুরার। কিন্তু যা দেখছে তাতে আর যেন বিশ্বাস ও রাখতে পারছে না। তাদের ড্রাইভার শিবু অনেকদিন ধরেই কিছু একটা বলার জন্য যেন উসখুস করে। কিন্তু ড্রাইভারের সাথে এসব কথা বলার প্রবৃত্তি তার কোনদিন ই হয়নি। সব সময়েই শিবুকে এড়িয়ে গেছে। সেদিন শিবুকে বলে দিল-- "কোথায় স্যারকে নিয়ে যাচ্ছিস ফোনে বলিস তো। ওকে ফোনে পাই না সব সময়ে"। শিবু চালাক চতুর ছেলে, পৌঁছেই ও মধুরাকে ফোন করে সব বলে দেয়। শিবুকে মধুরা রোজই পেট ভরে জলখাবার দিত। গরীব ছেলে হয়ত ঠিক মত খাবার জোটে না।শিবুও কাকীমার সব কথা শোনে খুব।
সেদিন সুজয় সকাল সকাল খেয়ে বেরিয়ে গেল।হয়ত মিটিং আছে কোথাও। ঘন্টা তিনেক পরেই শিবুর ফোন এলো।---" কাকীমা, স্যার পৌলমী ম্যাডাম কে নিয়ে বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির ঘুরে রাজ হোটেলে উঠেছে"। মধুরার মাথা রাগে জ্বালা জ্বালা করতে লাগলো। পৌলমীকে নিয়ে হোটেলে ওঠে আর বড় বড় কথা--- 'বন্ধুর মধ্যে আবার জেন্ডার ডিফারেন্স হয় নাকি। বন্ধু বন্ধু ই।' ধোঁকাবাজ, চরিত্রহীন। খাওয়ার ইচ্ছা টাই চলে গেছে মধুরার। আগে সুজয় কে ফোন লাগালো--- কোথায় মিটিং আজ, বর্ধমানে?
---- হ্যাঁ।তুমি কি করে জানলে? সুজয় চুপসে যায়।
---- এই তো জিপিএস লোকেশন দেখাচ্ছে। তা রাজ হোটেলে পৌলমীকে নিয়ে কেমন মিটিং চলছে?
---- না। ওকে মন্দির দেখাতে এসেছিলাম।একটু হোটেলে রেস্ট নিয়ে ফিরবো।
---- আচ্ছা রেস্ট নাও। কন্ডোম নিয়ে গেছো?
---- মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?
---- যা বলতে চাইছি, তা তো পরিস্কার বাংলায় বলছি। না বোঝার কি আছে। তুমি রোজ রাত জেগে পৌলমীর সাথে যেসব খারাপ খারাপ কথা বলেছো। যেসব ব্লু ফ্লিম দেওয়া - নেওয়া করেছো, সব তোমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করে দিলাম। এরপর তোমার মত নোংরা লোকের সাথে আমার আর থাকা সম্ভব নয়। আমি চলে যাচ্ছি, তুমি তোমার প্রেমিকা কে নিয়ে থাকতে পারো। ডিভোর্স নিলে বলবো এখন। বলে ফোন কেটে দেয়। সুজয় বার পাঁচ ছয় রিং করে মধুরার ফোনে। মধুর ফোন ধরে না।
স্যুটকেশ নামিয়ে নিজের শাড়ি জামাকাপড় নিয়ে সব ভরে নিয়ে 'উবার' ডেকে বালিগঞ্জে তার বাপের বাড়ী চলে যায়। মধুরাদের বিশাল বাড়ী।ওরা বনেদি বড়লোক। বাবার তিনটে বড় ফ্যক্টরি আছে, আর মধুরা একই মেয়ে। মা জিজ্ঞাসা করে--- কি রে হঠাৎ? সুজয়ের সাথে ঝগড়া করেছিস নাকি? কি হয়েছে বল। মধুরা মায়ের বুকে কান্নায় ভেঙে পড়ে।মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওরকম ভুল বোঝাবুঝি জীবনে অনেক হয়।চিন্তা করিস না। এখানেই থাক কিছুদিন। জলে তো পড়বি না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সুজয় বারবার ফোন করে, মধুরা একবারও ধরে না।দিন সাতেক একই রকম গেলো। একদিন সকালে মীনাদি এসে বললো, এক ভদ্রমহিলা তার সাথে দেখা করতে এসেছে। মধুরা গিয়ে দেখে পৌলমী।ওকে দেখেই মাথাটা গরম হয়ে যায় মধুরার বলে---" এখানে কি করতে এসেছেন? আরো কি চাই আপনার? যান চলে যান। এখুনি বেরিয়ে যান এখান থেকে"
---- মধুরা, তোমার চেয়ে আমি একটু বড়ই হবো। দিদি হয়ে আমি তোমার ক্ষতি করতে পারি? তুমি ভুল বুঝেছো আমাকে। সুজয়কেও।
---- যা নিজের চোখে দেখেছি তাকে আপনি ভুল বলছেন? নোংড়ামোর সীমাপরিসীমা থাকা উচিত।
---- যা দেখেছো, তা অস্বীকার করছি না। কিন্তু যা দেখা যায়, সবই সত্যি না ও হতে পারে ভাই। আসলেই দেখাটা সত্যি নয়। আমি খারাপ মেয়ে,তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমার আর সুজয়ের সাথে একে বারে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিশ্বাস করতে পারো। একচুল বেশী নয়। হ্যাঁ, ঠিক কথা আমরা রাত জেগে গল্প করতাম। আমাদের কথায়ও স্ল্যাং থাকতো, আমরা ব্লু পাঠাতাম। এ সব করে আমরা একটা মজাও, একট উত্তেজনা পেতাম। বিশ্বাস করো, আমাদের মধ্যে কোন প্রেম বা সেক্স কিচ্ছু নেই, কোনদিন হয়নি। আমার ছেলে বা স্বামীর দিব্যি দিয়ে বলতে পারি। যে কোন ঠাকুর ছুঁয়ে বলতে পারি। ছেড়ে দাও ঠাকুর ছুঁয়েও অনেকে মিথ্যে বলে। আমি তোমার পা ছুঁয়ে বলছি, বলেই, মধুরার পা টা চেপে ধরে , মধুরা চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারে না। পৌলমী বলে যায়-- আমি আর সুজয়ের সাথে কোনদিন দেখা করবো না। বরং আমাকে সুজয় আর কোনদিন দেখতেই পাবে না। ও আমাকে দেখতে পেয়েছে শুনলে তুমি আমাকে জুতো মেরো আমার মুখে। আমি আবার বলছি আমি খারাপ মেয়ে। কিন্তু প্রস্টিচিউটদেরও তো বাবা দাদা ভাই থাকে। সুজয়ও আমার সে রকমই বন্ধু। হয়ত কিছু রিভোলিউশনারী কিছু করছি ভেবে একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছিলাম। অন্যায় হয়েছে।তখন বুঝতে পারি নি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।সুজয়কেও ক্ষমা কোরো। আমি তোমার পা ধরে প্রতিজ্ঞা করছি সুজয় আর কোন দিন আমাকে দেখতে পাবে না।
মধুরা অস্বস্তি থেকে বলে --"ভেবে দেখবো"।