Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
গল্পঃ- পদ্মর জীবনকথাকলমেঃ- তপন কুমার রায়তারিখঃ- ০৪/০৭/২২
          দু'দিন ধরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে এক নাগারে। থামছেই না একেবারে। রাস্তা ঘাট জলে থৈ থৈ।কোনটা চাষের জমি, কোনটা রাস্তা আর কোনটা যে পুকুর বোঝবার উপ…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন


গল্পঃ- পদ্মর জীবনকথা

কলমেঃ- তপন কুমার রায়

তারিখঃ- ০৪/০৭/২২


          দু'দিন ধরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে এক নাগারে। থামছেই না একেবারে। রাস্তা ঘাট জলে থৈ থৈ।কোনটা চাষের জমি, কোনটা রাস্তা আর কোনটা যে পুকুর বোঝবার উপায় নেই। সব একাকার হয়ে গেছে। আকাশের কোন হুড়ুম দুরুম নেই, বাজ পড়া নেই, একঘেয়ে ঝমঝমিয়ে কেবল বৃষ্টিই পড়ে যাচ্ছে।রাস্তা ঘাট

ন ছাড়, একটা কুকুর বেড়ালেরও দেখা নেই, কোথা সব সেঁধিয়েছে কে জানে। আগেকার দিন হলে গোপাল তার খ্যাবলা জাল নিয়ে বেরিয়ে পড়ত এমন দিনে। জলে ভিজে ভিজে,এক কোঁচড় মাছ ধরে আনতো। আর ফিরেই একগাল হেসে বলতো--- "চারডিখানি মাছ ভেজে ফ্যাল দিনি পদি"।

             আজ তিন বছর হলো গোপাল নেই।মা মনসা তাকে তুলে নিয়েছে।চাঁদুনন্দীর মড়াই ভাঁঙতে গিয়ে শঙ্খচূড় একেবারে মাথায় ছোবল মেরেছিলো।আধঘন্টা ও বাঁচেনি। চাঁদু নন্দীর বউ শ্মশান খরচা ছাড়া পাঁচশো টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছিল মাত্র --"হবিষ্যি করিস"। কি আর হয় ওতে? দুটো ছেলের বড়টা পাঁচ বছর আর ছোটটা তিন তখন।ওই কটা টাকায় কদিন আর চলে।

          পদ্মরানী সেই তের বছর বয়সে বিয়ে হয়ে এ গ্রামে গোপাল বউড়ির ঘরে এসে ছিলো। গোপালই তখন কত আর, বড় জোর বছর আঠারো কুড়ি হবে, গায়ে মোষের শক্তি। লোকের চাষের জমিতেই কি, আর বাড়ীর নানান কাজেই কি, রোজদিন কিছু না কিছু কাজ করে রোজগার করত। বলতে নেই শ্বাশুড় শাশুড়ী সমেত চারটে পেট পালতে অসুবিধা হয়নি গোপালের কোনদিন।কিন্তু, তাদের বছর না ঘুরতেই মা ষষ্ঠীর কৃপায় বড় ছেলেটা হলো। আর শ্বশুর -শাশুড়ী ও একসাথে ওলাউটোয় মারা গেল সে বছরই। 

               গ্রামের প্রান্তে বাউরি পাড়া।পাড়ার শেষ বাড়ীটা তাদের,আর তারপর থেকেই পিছন দিকে ঝোপঝাড়,আর পোড়োজমি। তাদের বাড়ীর পাশেই তার মাকে নিয়ে থাকত গনেশ। গনেশ ছিল মেয়ে ন্যাকড়া। ছেলে হয়েও সব সময় শাড়ী ব্লাউজ পড়ে থাকতো।তবে হিজড়ে নয়,আর হিজরে গিরি কোনদিন করেও নি। পোষাক ছাড়া মেয়েলি ব্যবহার ও তেমন নেই। একমাত্র মেয়েদের সঙ্গে মেয়ে হিসেবেই মিশতে ভালোবাসতো, আর মেয়েলি গল্প করতো। মেয়েলি পোষাক পড়লেও সে চাষের কাজে খেটে খেতো। গনেশ ছিল গোপালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জাতে সাঁওতাল, বিশাল দশাসই চেহারার মানুষ। শাড়ী পরেই গোপালের সঙ্গে সমান তালে মাঠে ঘাটে কাজ করত। পদ্মর বিয়ের পর গনেশ এসে পরিচয় করেছিল-- "তু আজ থিকে আমার সতীন হলি বাপু, আমাকে সই বলি ডাকিস্।আমরা আজ থিকে সই হলুম বটে"।  

          পদ্ম প্রথম একটু ঘাবড়েছিল, তারপর বুঝে গিয়ে ছিল, গনেশ হলো গোপালের প্রিয় বন্ধু। তাই মজাই করেছে তার সাথে।সেই থেকে পদ্ম আর গনেশ দুজন দুজনকে সই বলেই ডাকে। তবে গোপাল মারা যাওয়ার পর থেকেই গনেশ ও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে।কাজেও তেমন বেরোয় না। পাড়ায় ও বেরোয় না, বাড়ীতেই থাকে,বসে বসে কেবল বিড়ি খায়। পদ্ম যায় মাঝে মাঝে কথা বলতে।গনেশের চোখে কি এক বিষন্নতা সবসময় ছেয়ে থাকে। পদ্মর মাঝে মাঝেই মনে হতো তার এই দূঃখ সবটা গোপালের জন্য নয়, পদ্মর জন্যও বটে। হতেই পারে বন্ধুর বউ তো।পরে মনে হয়ে ছিল, না এ যেন একটু অন্য রকম। তবে গনেশ তো শাড়ীপরা মেয়ে ন্যাকড়া। তার মনেও যে পদ্মর কোন ছায়া পড়তে পারে তা বুঝতেই পারে নি ঠিক করে । আর বুঝবেই বা কি করে,কতটুকুই বা বয়স তখন পদ্মর। প্রেম কি, তা না জানতে জানতেই তার ছেলে হয়ে গিয়েছিল। তারপর সংসারের নানান নাটা-ঝামটা তো চলতেই থেকেছে। পদ্ম নিজের কথা ভাবার সময়ই বা পেল কোথা। এখন গনেশের কাজল পরা কালো চোখে কখনও কখনও যেন নিজের ছায়া দেখে পদ্ম।তবে সামলেও নেয়।এ নিশ্চয় তার মনের ভুল । এক তো গনেশ মেয়ে ন্যাকড়া,তায় গোপালের প্রানের বন্ধু ছিল।

            

              এই একঘেয়ে বৃষ্টিতে পদ্মর ঘরে এক ফোঁটা চাল নেই। ছেলে দুটোর ছ -আট বছর করে বয়েস হয়ে গেলো। খিদেয় ছটফট করে। দু'দিন ধরে বেরোতে পারছে না বৃষ্টিতে। তার গতর না ছেঁচে কে আর তাকে পয়সা দেবে? 

           গোপাল মারা যাবার পর, প্রথম দিকে গনেশের সাথে লোকের ক্ষেতে চাষের কাজে বেরিয়ে ছিল কদিন। কিন্তু পদ্ম চাষের কাজ জানে না,পেরেও উঠত না। তাই ও কাজ আর তার দ্বারা হল না। বিয়ের সময় তো পদ্মর নারী শরীর ঠিক মত গঠনই হয়নি তখনও। সেই অল্পবয়সে ছেলে দুটে হয়ে যাওয়ার পর তার শরীরে অনেক পরিবর্তন এসেছে।বেশ ঢলো ঢলো ভাব একটা। তার এই তেইশ- চব্বিশ বছর বয়সে তার শরীরে যেন যৌবনের বান ডেকেছে। ইতর থেকে ভদ্র সব ঘরের ছেলেরাই তার পিছনে ঘুর ঘুর করে। কিন্তু তাদের কেলোয়াতি ওই দুটো সিটি দেওয়া, দুকলি গান গাওয়া পর্যন্ত। ঘাগু মাল হল চাঁদু নন্দী, বলাই শেঠ। সুযোগ পেলেই তাকে ইশারায় ডাকতো।প্রথম প্রথম সে কোনদিনই তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।দেবে ভাবেও নি,এড়িয়ে যেত ।কিন্তু সংসারে নীতিকথার অসারতা বুঝতে সময় নেয়নি পদ্ম। বুঝে গিয়েছিল, নীতি দিয়ে পেট চলবে না। তাই চাঁদু নন্দীর গোডাউন বা বলাই শেঠের মাঠবাড়ীতে সে মাঝে মাঝেই যেত,তবে সবই তার নিজের শর্তে। 

        এ ছাড়া সে করতই বা কি? দুটো বাড়ন্ত ছেলে, তাদের মুখেও তো দুবেলা অন্ন তুলে দিতে হবে। গনেশের সাহায্য সে নিয়েছে বটে, কিন্তু কতদিন নেবে? আর, তার নিজের শরীরটাও কি মানুষের শরীর নয়? চাহিদা তো তারও আছে। সুযোগ থাকতে সব ইচ্ছার গলা টিপে মারতে মন ও চায় না। পদ্মর কথা গনেশ জানে সব। মেয়েছেলের মতই তো,তাই তাকেই সব গল্প করে পদ্ম।তবে গনেশের চোখে যে অসহায়তা ফোটে তখন, পদ্মর বুকে তা যেন বেশ বাজে বুকে। কিন্তু সই বলতে তো একমাত্র গনেশই। গনেশ যে তার এ কাজ একেবারই পছন্দ করে না, তা পদ্ম জানে, চোখ দেখেই বোঝে। তবে হয়ত সে তার মেয়েলি মন দিয়ে সইয়ের দুঃখটাও বোঝে। বোঝে পদ্মর অসহায়ত্ব, গরীবি। জানে ইচ্ছা থাকলেও সে পদ্মকে এ কাজ থেকে বিরত করতে পারবে না। তারই আর্থিক ক্ষমতা কতটুকুই বা, যে দুটো সংসার সে একার ঘাড়ে নেবে। তাও মা ভাচার কাজটা করে সংসার অনেকটা সামাল দেয়।

          বৃষ্টির মধ্যে মাথায় টোকা মাথায় দিয়ে ছপ ছপ করে একহাটু জল ভেঙে পদ্ম গনেশদের ঘর এলো। গনেশ দাওয়ার ওপর বসে, হাঁটুর ওপর শাড়ী তুলে,লোমশ পা গুলো বার করে বিড়ি টানছিলো। পদ্ম আসতেই সম্বিত ভেঙে, বিড়িটা মেঝেেতে টিপে নিভিয়ে পদ্মকে ডাকে--" উঠি আই, উঠি আই সই।এই বৃষ্টির মধ্যি,এভাবি ভিজি ভিজি? কি হইনঁচে?"

---- কি বলবো সই, কাল থিকে বাড়ীতে একেবারে চাল বাড়ন্ত।ছেলে দুটোও না খেঁইয়ে আছে। 

---- তা আমাকে বলতি হয়। বলিস্ লাই কেনে?

---- হ।তুমি ও ত রাজাধিরাজ বটো হে।

---- আরি সই, আমার মা লোকের বাড়ী থিকে ধান লিয়ে এসে ভাচা করে, ই টো জানতি ত। চালের ত অন্তত কুনদিন অভাব হয় লাই।আর ছেলে দুটাকে তু না খায়াঁয়ে রাখি দিছিস্?

---- মাসি কে দু কুনকে চাল ধার দিতি বলো দিনি।

         গনেশ তার মাকে ডেকে পদ্মকে এক সের চাল দিতে বলে।গনেশের মা বড়লোকদের বাড়ী থেকে ধান এনে, তাকে সেদ্ধ করে, শুকিয়ে, তারপর ঢেঁকিতে ভেঙে, সের প্রতি তিন পোয়া মাপে চাল ফেরত দেয়। তা থেকে খুদ ছাড়াও ভালোই চাল থাকে তাদের। গনেশের মা, দুলি মাসী পদ্মকে এক সের চাল দিয়ে দেয়।

           চালটা আঁচলের খুঁটে বেঁধে পদ্ম উঠে পড়ে। গনেশ ছাতা বার করে তাকে পৌঁছাতে যায়। পদ্ম বলে,

-----বৃষ্টি কমলি পরি, আমি বেরুতে পারলি চাল ফেরত দিই যাব।

---- ক'টি ফেরত দিতি পারবি সই। যা দিইচি সি সব ত আর ফিরত হয় না।

---- ঠিক বলিচ। আমার আরো কিছু সমিষ্যে আচে। তুমার কাচে আসতি হব্যে।

---- আমি তুর পথ চেঁইয়ে থাকবো সই।

একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে পদ্ম ঘরে ঢুকে কাঠকুটো জ্বেলে রান্না চাপায়।

          বৃষ্টির ধরার কোন লক্ষন নেই। একবার একটু কমে তো আবার তেড়ে বৃষ্টি নামে। চাঁদু- বলাই কারো কোন ডাক ই নেই। পদ্ম তো ভেবে পায় না, কোথা থেকে পয়সা পাবে সে, ছেলে দুটোর খাবার কি করে জোটাবে, নিজেই বা কি খাবে এরপর?

             এমন সময় জলের মধ্যে দিয়ে ছপ ছপ করে পেকে মাথায় গনেশ আসে হাতের ব্যাগে এক ব্যাগ চাল নিয়ে। দেকে অবাক হয় পদ্ম-

---- সই, তুমি? আবার এই বিসটির মধ্যি----

--- কেনে? চেঁদো- বলা কি তুকে চাল দিই গেইচে নাকি?

---- না।উ শালারা উদের সময় মত ফুরতি মারবেক খালি।তুমি শালি, খাতি পেলি, না পেলি দেখতি আসবেক লাই!

---- এখুন ত খাতি হবে নাকি। গোপালের ছেইলে কি আমার ছেইলে লয়!

---- সই, তুমার সঙ্গি দুটা কতা ছেলো।

---- বল্ কেননে।

---- আমার মনে লিচ্ছে কি আমি পোয়াতি হইচি।

---- কে? বলাই না চাঁদু? গনেশ একটুও আশ্চর্য হয় না।

--- উটি কি করি বলবো সই! দু জনাই তো----

--- তু অখুন কি করতি চাস্ সই?

---- ই টো ভাবলি পরে আমার মাথা ট খারাপ খারাপ লাগতিছে।

 ----ঠিক আচে। ভাবনা চিন্তে করি কাল আই।বইলবোক্ষণ তুকে।

         গনেশের মা সাঁওতাল বুড়ী দুলারী অনেক শেকড়- বাঁকড়, জড়ি- বুটি জানে। কত দূরদূর থেকে লোক আসে কত অসুখের ওষুধ নিতে। কতলোক এসে গোপনে তার কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে যায়। অবৈধ কেস হলে বুড়ী অনেক পয়সা হাঁকে। গনেশ তার মাকে বলে রেখে ছিল---

---" মা,পদ্ম ট কার সাথে পেট বাঁধাইয়ে বসিছে।অর পেটট তু খসাঁয়ে দে"।

--_- "দিব, লিচ্ছয় দিব । দিব না কেনে? ওষুদ লিয়ে যা।খাওয়ায়েঁ দিলি পরে কাজ হঁইয়ে যাবে"

            পরের দিন গনেশ মায়ের দেওয়া বাটা ওষুধ নিয়ে গিয়ে পদ্মকে খাইয়ে দিল। একদিনের হেবি ব্লিডিং।পেটে অসহ্য পেন, দু- তিন ঘন্টার। তারপর সব পরিস্কার।

         গনেশ পদ্মকে নিয়ে মায়ের কাছে এসে পদ্মকে বিয়ে করার অনুমতি চাইলো। দুলী বুড়ী খুব খুশী। তার পাগল ছেলে, বিয়ে করে সংসারী হবে, এর চেয়ে ভাল খবর কি হতে পারে।

           গাঁয়েও খবরটা ছড়িয়ে পড়লো হু হু করে,-- 'হিজড়ে গনেশ, গোপাল বাউড়ির বিধবা টাকে বিয়ে করছে'। এ খবর যেন দাবানল। এই শুনেই বাউড়ি পাড়া থেকে, ভদ্রলোকের পাড়া সমান উত্তাল হয়ে ওঠে। জায়গায় জায়গায় গুলতানি। গুলতানি মেয়েদের পুকুরঘাটেও। এমন অনাছিষ্টি গ্রামে হতে দেওয়া যায় না।চাঁদু নন্দী,বলাই শেঠ থেকে বিশে পাল সবাই উত্তেজিত। গ্রামে থেকে, অনাচার করার একটা সীমা আছে তো নাকি,করলেই হলো? তারা সবাই বাউড়ি পাড়ার নিরাপদ, ভক্তি, হারাধন বাউড়িকে ডেকে এনে বোঝাল বাউড়ির সাথে সাঁওতালের বিয়ে অবৈধ। বাউড়ি রা "এসসি" আর সাওতাল হলো গিয়ে " এস টি"। তাছাড়া সাঁওতালরা হিন্দু নয়। অহিন্দুর সাথে হিন্দুর বিয়ে হতে পারে না।

                  বিয়ের কথা শুনে পদ্মই অবাক হয়ে গনেশকে জিজ্ঞেস করে,---

----- আমার ত সভাব চরিত্তির ভালো লয় সই। সি ট ত তুমার মা ও জানে বটে, মানি লিবে?

---- সই আমরা সাঁওতাল আছি।সুজা- সরল মন। কে কি করিছে, উ সব লিয়ে কেউ মাথাই ঘামাই না।আমদের সমাজে উ সব লাই। আর না করলি ই হলো

---- কিন্তুক সই, মেয়ে হইয়ে, মেইয়ের সাথে বিয়া কি করি হবেক আমার?"

---- হববে।হববে।সবই হববে। শরীলে আমি ত বিটিছ্যেইলে লই বটে।মরদ ই ত আছি।সি ট জানতো গোপাল।আর জানে আমার মা এই দুলী বুড়ী।

           সক্কাল বেলা গ্রাম ঝেঁটিয়ে সকলে এসেছে। গনেশের বাড়ী বিয়ে রুখতে বা রোখার তামাশা দেখতে। মেয়েরাও সব এসেছে।গনেশের বাড়ীর কাছে চেঁচামেচি জুড়েছে সকলে মিলে--- পদ্মকে বার করি দাও,ও নষ্ট মেয়েছেলের সাথে বিয়ে হতে পারে না।।  

     . পদ্ম ভয়ে ছেলে দুটোকে নিয়ে গনেশের বাড়ী চলে এসেছে। গনেশ তার বাপ শম্ভু হাসদার ধনুকটায় ছিলে পড়িয়ে শাড়ীতে মালকোচা মেরে, তীর নিয়ে বাইরে এসে হাঁটু গেড়ে বসলো।হাতে একটা লম্বা হাতলের ঝকঝকে টাঙ্গি। তারপর ধনুকে তীর লাগিয়ে একটিপে চাঁদুনন্দীর দাবনা এফোড় ওফোড় করে দিলো,অনেকদিনের পোষা রাগ আজ মিটিয়ে নিয়েছে। -----”কুন কুন শালা আইবি আয়। আমি সাঁওতাল বাচ্ছা আছি, একটিকেও ফিরি যেতি দিবক লাই।" 

          সেই শুনে সবাই চা্ঁদু নন্দী কে চ্যাং দোলা করে তুলে নিয়ে পালায়।থানায় গেলে,পুলিশ ঝামেলার ভয়ে আাদিবাসীর বিরুদ্ধে কেস নেবে না। ওদিকে দুলারী বুড়ী তার থান শাড়ীটা কোমরে গুঁজে সামনে এসে দাঁড়ায় । ওকে দেখে মেয়েদের মধ্যে একটা পালাই পালাই রব ওঠে। দুলী বুড়ী বলে--- "এই চেঁদোর বউ, শুন, কানু বাগ্দীর সঙ্গি তোর সতীগিরির কথা দিব নাকি সব বুলে?কে কে ক' বার করি পেট খঁসায়েছিস সব কথা বুলবো, বল? সব বুলে দুবো। গায়ের লোক তুদের সব কিত্তি জানুক। আজ আমার ছেইলেটর বিয়া রুকতে আইচিস?

                  এ কথা শুনে আর কেউ দাঁড়ায় না। দুলীবুড়ির লেজে পা পড়েছে, কার কথা না কার কথা সব বলে দেয়। সবাই হুড়মুড় করে দৌঁড়ায়।পালিয়ে যায়। 

        সবাই চলে যেতেও পদ্মর বুকের ধুক পুকুনি যেন থামতে চায় না। ভয়ে ভয়ে গনেশকে জিজ্ঞেস করে, ---তুমি সই হিন্দু নও?

---- হিন্দু লিয়ে কি ধুয়ে খাবি? আমরা সাঁওতালরা হিন্দু লই। আমাকে তু বিয়া করবি কি? না, অসুবিধে আছে, কইয়ে ফেল কেনে?

----- ই ট কেনে বলছো সই। বিয়ে তো করছিলমই।ই শালা খচ্চর গুলা এসে ঝামেলি পাকায়ে দিল তাই। কিন্তুক তোমার শাড়ী ব্লাউজ?

  --- দেখ্ পদ্ম, আমার মেয়েদের মতন থাকতি ভালো লাগতো এতদিন,তাই থাকিছি। আর থাকবোক লাই।ব্যাস। কাল ছোট করি চুল কাটায়ে লিয়ে জামা- প্যান্টুল পরি লিব।

          তা শুনে,পদ্ম ঢক করে গনেশ কে একটা প্রনাম করে বলে,-- সই তুমি আমাকে নরকের পাতকি থিকে উদধার করি দিলে।

----- পাতকি আবার কি করি হবি? ছেলে দুটোকে না খাঁয়ায়ে,নিজে না খেঁইয়ে মরলি পরে পাতকি হতি না?আর তর শরীলে কে গা ঘঁসে পয়সা দিয়েছে,সেই পয়সায় খেয়ে বাঁচেয়ে থিকে পাতকি হয়ে গেলি?শরীলটা কিছু লয় পদি, শরীলে কত কিচু নোংড়া লাগতি পারি, ঘঁসতে পারি, কাটতি পারি, জ্বলতি পারি।উ সব দুদিন পরি ভুলি যাবি। আসল কথা হলো মন।মন পাতকি না হলি পরে, কিচ্চু পাতকি হবেক লাই।